Saturday, May 30, 2015

আসুন নিজ দেশের ডাক্তারকে কসাই ডাকি, শ্রীলেদার্সে শপিং করে আসি।


এই বিজ্ঞাপনটা বাংলাদেশের একটি জাতীয় দৈনিক ছাপে কিভাবে? বিজ্ঞাপনে দুটো সোনালী রঙের জুতার ছবি-তার উপর লেখা ডাক্তার দেখাতে কলকাতা যাচ্ছেন? শ্রীলেদার্সে-এ অবশ্যই আসবেন।
হ্যাঁ ডাক্তার, দেবতারূপী ডাক্তার, কলকাতার ডাক্তার। কেন যাবেন কলকাতার ডাক্তার দেখাতে? কারণ বাংলাদেশী ডাক্তার তো কসাই। বাংলাদেশী ডাক্তাররা রেপ করে (দু দিন আগেই জাতীয় দৈনিকে জনৈক স্যাকমো-চিকিৎসা সহকারীর অপকর্ম ফলাও করে ডাক্তার নাম দিয়ে প্রচার করলো), বাংলাদেশী সরকারি হাসপাতালে ডাক্তাররা ভুল চিকিৎসা দেয়, ১০-২০ বছর ডাক্তারি পড়া ডাক্তারের ভুল ধরে মেট্রিক ফেইল আইডি কার্ড সর্বস্ব সাংবাদিক, হাসপাতালের টয়লেটে বদনা ফুটো, বিছানার চাদর নাই, লিফটে লম্বা লাইন এই অভিযোগে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ইন্টার্নদের পেটায়-শাসায়, বারডেম-ল্যাব এইডের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে তো প্রাণটা বাঁচাতে হবে এসব কষাইখানা থেকে। তাই কলকাতা, মাদ্রাজ, বোম্বেই সমাধান। আসুন আমরা মন ভরে ডাক্তারদের গালি দেই, পকেট ভরে টাকা নিয়ে কলকাতার শ্রীলেদার্স, বিগ বাজারে শপিং করে আসি।
লেখার এ অংশে আজ থেকে দুই-তিন-চার বছর আগের আমার নিজেরই কিছু লেখা কাটপেস্ট করছি- ১ " নবীন চিকিৎসকেরা মানুষ, দেবতা নন, তাদের ত্রুটি বিচ্যুতি আছে । তবে সাংবাদিকদের মত পত্রিকার কাটতি বাড়াতে, চ্যানেলের দর্শক বাড়াতে অথবা কর্পোরেট-বিদেশী হাসপাতালের দালালী করতে গিয়ে ইচ্ছেকৃত শয়তানী ছড়ায় না, দেশের দরিদ্র মানুষদের ভারত/ব্যাঙ্কক হাসপাতালের গ্রাহক বানাতে বাংলাদেশের চিকিৎসকদের মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে যায় না, জনগণের শত্রু হিসেবে বিজ্ঞাপন দেয় না ।" -ইস্যু বারডেমে যখন একজন মহিলা চিকিৎসক কে বাথরুমের সিরামিকের বেসিনে মাথা ঠুকে পেটানো হয়েছে তখন লেখা।
২ "সাংবাদিকদের সাথে চিকিৎসকদের সরাসরি কোন দন্দ্ব নেই । তবে ঢালাওভাবে নেতিবাচক উপস্থাপনা , স্বাস্থ্য সেবায় নন্দ ঘোষের মত সব দোষ চাপিয়ে দেয়া , টেকনিক্যাল বিষয়গুলোতে নূন্যতম জ্ঞান না থাকার পরেও অযাচিত নাক গলানো এসব কারণে চিকিৎসকদের সাথে সাংবাদিকদের এই রেষারেষি । সাংবাদিকরা যতটা সাধারণ মানুষের মুখপত্র হিসেবে কাজ করছে তার চেয়ে বেশী কাজ করছে এপোলো-স্কয়ার-ফাইভ স্টার হাসপাতালের বিজ্ঞাপন দিতে এবং অবশ্যই ভারত-সিঙ্গাপুর-চীন-মালয়শিয়ার এদেশীয় দালাল হিসেবে রোগী ধরতে । বাংলাদেশের হাসপাতাল খারাপ,চিকিৎসক খারাপ প্রমাণ হলে কার লাভ হচ্ছে , সেটার প্রতিবাদ করতে গেলেই চিকিৎসকেরা সাংবাদিকদের নির্লজ্জ অপপ্রচারের শিকার হচ্ছে সেটা বুদ্ধিমান মানুষের বুঝতে বাকী থাকবেনা ততক্ষণে ক্ষতি যা হবার হবে, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবা নষ্ট হবে ।- রাজশাহী মেডিকেল কলেজে একজন জীবিত রোগীকে ইন্টার্নরা মেরে ফেলেছে গুঁজব ছড়িয়ে ইন্টার্নদের উপর হামলার প্রেক্ষিতে লেখা।
৩" স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে যা কিছু ভাল চলেছে যা কিছু মাথা তুলে দাঁড়াতে পেরেছে তারই পেছনে লেগেছে এক বিশেষ শ্রেণী । চিনিশিল্প , T & T TELEPHONE এবং সর্বশেষ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সব কছু নষ্ট হয়েছে । সরকার বারবার হার মেনেছে এদের কাছে । প্রশাসন দালালী করেছে । এখন বাকী রইলো স্বাস্থ্য । যা কিছু প্রাইভেট হয়েছে সব সরকারী সে সেক্টর ধ্বংস হয়েছে ।বাংলাদেশের মত গরীব দেশ কিভাবে স্বাস্থ্য খাতে এভাবে সেবা দেয় ? MDGর লক্ষ্য আগেই পূরণ করে ফেলে , গণ্ডা গন্ডা পুরষ্কার পায় । তখনই-MIDDLE CLASS রে বুঝায় বেবাক ডাক্তার কসাই । কয়েকটা চিহ্নিত মিডিয়া সে উদ্দেশ্যে(স্বাস্থ্য সেবা ধ্বংস করতে) আমাদের ভিলেন বানাচ্ছে । ডিয়াগুলোতে ডাক্তারদের সম্পর্কে ইতিবাচক কথা কখনো আসেনা । তার উপর ডাক্তারদের সম্পর্কিত বিভিন্ন খবরে কমেন্ট মডারেশনে বাদ দেয় । কী আসহ্য পক্ষপাতিত্ব ।"
এতকাল বলে এসেছি এদের পর্দার আড়ালে থেকে ফান্ডিং করে ইন্ডিয়া-চায়না-মালয়শিয়া। আজকের এই একটা বিজ্ঞাপনই সেই ফান্ডিং পর্দার আড়াল থেকে লোকচক্ষুর (অবশ্যই বিবেক-বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের) সামনে নিয়ে আসলো।
আসুন নিজ দেশের ডাক্তারকে কসাই ডাকি, শ্রীলেদার্সে শপিং করে আসি।

সংগৃহীত 

Wednesday, May 27, 2015

বাংলাদেশ বনাম ভারতঃ রোগীর সেবা, একাউন্টিবিলিটি ও পোস্টগ্রাজুয়েশন


আমার কাছে সব সময়ই এটা একটা ধাঁধা ছিল কেন বাংলাদেশের রোগীরা ভারতে চিকিৎসা করতে যায়? কেন বাংলাদেশের চিকিৎসকদের নামে এতো অভিযোগ? কেনই বা চিকিৎসা প্রার্থী রোগীদের বিদেশ গামী মিছিল ক্রমবর্ধমান?
এই বিষয়ে একটা ইন্টারেস্টিং আলাপ করার সুযোগ হল আমার দুই সহপাঠীর সঙ্গে। যারা বাংলাদেশে চিকিৎসক হিসেবে প্রশিক্ষিত, বাংলাদেশেও ডাক্তারি করেছে এবং এখন ভারতে ডাক্তারি করছে। এই দারুণ অভিজ্ঞতা পরিস্থিতির মূল্যায়নে কাজে লাগতে পারে জন্য ওদের এই একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলাম। দুজনেই দুই দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং চিকিৎসার মান নিয়ে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল। আমি দুজনের নাম উল্লেখ করছিনা, দুজনেই ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ। একজন ভারতের একটি নামকরা ক্যান্সার হাসপাতালের বোন ম্যারো ট্র্যান্সপ্লান্ট ইউনিটের প্রধান এবং আরেকজন হেড অ্যান্ড নেক ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ।
প্রথমেই দুজন বলে নিল, "যে সাধারণভাবে পশ্চিম বঙ্গে বাঙালি চিকিৎসকদের মান সর্ব ভারতীয় মান থেকে অনেক পিছিয়ে। তারপরেও সেটা বাংলাদেশের সার্বিক মান থেকে ভালো।" আমি জানতে চাই, ঠিক কোথায় কোথায় ভালো? কেন ভালো?
আমার হেড অ্যান্ড নেক ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ বন্ধু বলতে শুরু করলো।
১/ আমরা এখানে এককভাবে কোন চিকিৎসা সিদ্ধান্ত নেই না। হেড অ্যান্ড নেক ক্যান্সারে সেটা নেয়ার সুযোগ নেই। আমরা একসাথে রেডিয়েশন অনকোলজি, মেডিক্যাল অনকোলজি আর সার্জিক্যাল অনকোলজি বিশেষজ্ঞ একসাথে রোগী দেখি প্ল্যান অব ট্রিটমেন্ট একসাথে করি আর রোগী এবং রোগীর সাথের মানুষকে একসাথে কাউন্সেল করি। আমরা ব্যাড নিউজ চেপে রাখিনা। যেই রোগীর ভালো হওয়ার সম্ভাবনা আছে তাঁর চিকিৎসা শুরু করার জন্য উৎসাহিত করি, আর যেই রোগী ভালো হবেনা তাঁর শুধু ব্যাথা বেদনা উপশমের চিকিৎসা করার উপদেশ দেই। সেকারনেই রোগী একেকজনের কাছে থেকে একেকরকম সাজেশন পায়না। ফলে রোগী বা রোগীর মানুষ বিভ্রান্ত হয়না।
২/ রোগীর পুর্নাংগ চিকিৎসায় কত টাকা করচ হবে সেটার ধারনা দেই। রোগীর যদি সেই আর্থিক সামর্থ্য না থাকে তবে আমরা সেই রোগীর চিকিৎসা শুরু করিনা। কারণ চিকিৎসা শুরু করে মাঝপথে থেমে যাওয়ার কোন অর্থ নেই।
এবার দুজনেই বলতে শুরু করলো। আরো কিছু বিষয় আছে যেগুলো ভারতীয় চিকিৎসকদের আলাদা দক্ষতা তৈরি করেছে। যেমন সুপার স্পেসালাইজেশন। ধরা যাক একজন ক্যান্সার সার্জন বা অনকোলজি সার্জন হবেন। তাঁকে আগে জেনারেল সার্জারিতে পৌস্ট গ্রাজুয়েশন করে তার পরে ক্যান্সার সার্জারিতে সুপার স্পেসালাইজেশন করতে হবে। মোট সময় লাগবে কমপক্ষে ছয় বছর এম বি বি এসের পর। বাংলাদেশে এটা নেই। কেউ কেউ ব্যাক্তিগতভাবে এভাবেই সুপার স্পেসালাইজেশন করে থাকেলও প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে জেনারেল সার্জারি না করে কেউ ইউরোলজি সার্জন হয়ে যেতে পারে। মেডিসিনে স্পেসালাইজেশন না করেও বক্ষ ব্যাধি বিশেষজ্ঞ হয়ে যেতে পারেন। এর ফলে যেটা হয়; সেটা হচ্ছে সুপার স্পেসালাইজেশনের সুফল রোগী পায়না। পৃথিবীর কোন দেশে এভাবে সুপার স্পেসালাইজেশন ডিগ্রি নিতে পারেনা, বাংলাদেশ ছাড়া। আগে মেডিসিন স্পেশালিষ্ট না হয়ে কার্ডিওলজিতে ডিগ্রি নেয়া অসম্ভব।
বাংলাদেশে এম বি বি এসের পরে রাষ্ট্র লেখাপড়ার কোন দায়িত্ব নেয়না। যারা সরকারি চাকরিতে ঢুকল তারা বাধ্যতামূলক দুই বছর গ্রামে কাটানোর পরে পৌস্ট গ্রাজুয়েশনে ঢোকার সুযোগ পায়। আর ভারতে যারা নিজস্ব মেধায় পৌস্ট গ্রাজুয়েশনে ভর্তির সুযোগ পায় তাঁরা মাসে ভারতীয় টাকায় ৫০ হাজার রুপি ভাতা পায়। তাই লেখাপড়া ছাড়া আর কোন কিছুর চিন্তা করতে হয়না তাঁদের। আর বাংলাদেশে বেসরকারি ডাক্তাররা রাত্রে নাইট ডিউটি করে সকালে পৌস্ট গ্রাজুয়েশনের ক্লাস করতে যায়। দুই জনের আউট কাম তো একরকম হবেনা।
ভারতে মেডিক্যাল এডুকেশনের কোয়ালিটি কন্ট্রোল আরেকটা বিষয়। সরকারি মেডিক্যাল কলেজ গুলোকেও দুই বছরের জন্য মাত্র ছাত্র ভর্তির অনুমতি দেয়া হয়। দুই বছর পরে আবার ইন্সপেকশন হবে, সেই ইন্সপেকশনে কোয়ালিফাই করলে আবার পরবর্তী দুই বছরের জন্য ছাত্র ভর্তির অনুমতি দেয়া হবে। ভারতে অনেক নামকরা সরকারি মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র ভর্তির অনুমতি মাঝে মাঝেই বাতিল হয়ে যায়।
আরেকটা বিষয় হচ্ছে ভারতের ডাক্তারদের অ্যাকাউন্টেবিলিটি। ভোক্তা অধিকার সেখানে রাষ্ট্র দারুনভাবে সংরক্ষণ করে। চিকিৎসা অবহেলার অভিযোগে রাষ্ট্র রোগী বান্ধব অবস্থান নেয়, ফলে চিকিৎসকেরা একটা নিয়ত চাপের মধ্যে থাকে এবং নলেইজ আপ ডেইট থেকে শুরু করে ও অতি সতর্কতার সঙ্গে রোগীর চিকিৎসা চালায়। আমার সেই বন্ধুদের হাসপাতালে সেই সময়ে ডাক্তারদের বিরুদ্ধে চলমান মামলা ছিল ১১ টি। একটি হাসপাতালেই এই সংখ্যা। সারা ভারতে তাহলে কতগুলি? বাংলাদেশে চিকিৎসা অবহেলায় স্বাধীনতার পরে মাত্র একজন চিকিৎসক শাস্তি পেয়েছে, তাও একজন চাকমা চিকিৎসক। সবচেয়ে ক্ষমতাহীন সম্প্রদায়ের মানুষ, তাই শাস্তি দেয়া সহজ। ভারতে প্রত্যেক বছর অসংখ্য চিকিৎসক শাস্তি পায়।
শেষে আমার বন্ধুটি কয়েকদিন আগেই পাওয়া রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের একজন প্যাথলজির অধ্যাপকের দেয়া লিম্ফোমার রিপৌর্টের কথা জানালো। তিনি আমাদের দুজনেরই শিক্ষক ছিলেন। তিনি এফ এন এ সি করে লিম্ফোমা বলে রায় দিয়েছেন। আমার বন্ধুটি বলল, “ স্যার এটা জানেন না যে এফ এন এ সি করে লিম্ফোমা ডায়াগনোসিস করা যায়না, ইম্মিউনোহিস্টোকেমিস্ট্রি করতে হয়, এটা আমি মানতে পারিনা। স্যার কে এই কথা কে বুঝাবে?”
আজকের দিনে কোন মানুষ বদ্ধ দুনিয়ায় বাস করেনা। সারা পৃথিবী তাঁর জন্য খোলা। ইন্টারনেট উন্মুক্ত করে দিয়েছে তাঁর সামনে পুরো পৃথিবী। সে নিজেই বিচার করে নিতে পারবে সেরা চিকিৎসাটি সে পাচ্ছে কিনা? বিন্দুমাত্র সন্দেহ দেখা দিলে সে আর সেই চিকিৎসকের কাছে ফিরেও আসবে না। এই হতাশা জনক অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে জরুরি ভিত্তিতে বাংলাদেশে চিকিৎসা শিক্ষার এবং সাথে সাথে চিকিৎসা সেবার মান বাড়াতে হবে। আর সেটা না পারলে রোগীর বিদেশ মুখিন মিছিল ঠেকানোর সাধ্য কারো নেই।
----------
ডাঃ পিনাকী ভট্টাচার্য

মানবসেবার দায়ভার - ডাক্তারদের একার ?

চারটা বাস্তব ঘটনা

দৃশ্যপট ১

মঞ্জু একটা ছোট চাকরি করে
মাসে মাইনে পায় তিন হাজার দুইশ টাকা।
গত মাসে অসুখ হয়েছিল খুব, এক হাজার টাকা ধার হয়ে গেল।
কিভাবে পাওনা দেবে, দিয়ে কিভাবে চলবে বাকি মাস ভাবছিল সে। হঠাত মায়ের কথা মনে পড়ে গেল।
মা বলছিল, বাবা এই মাসে বাড়িত হাজারটা টাকা পাঠাইস, ঘরে চাল নাই।
আমেনা আপার বাড়ি হইতে ভাতের মাড় নিয়ে খাই। তোর ছোটভাইটার অসুখ খুব "
মঞ্জু ভেবে পায়না তার এখন কি করা উচিত।
সারা পৃথিবীর অন্ধকারগুলো তাকে ঘিরে ধরছে ক্রমশ

দৃশ্যপট ২

ভোরবেলা দরোজায় হালকা আওয়াজ শুনে ঘুমঘুম চোখে দরজা খুললেন সুরাইয়া বেগম।
সামনে হাড় জিরজিরে চৈতার মা দাড়িয়ে আছে।
তার চোখমুখে ফুটে উঠেছে অসহায়ত্ব।
শরীরে জড়ানো এক ছেড়া শাড়ি, কোন ভাবে লজ্জা ঢেকে রেখেছেন।
কে বলবে এই চৈতার মা একসময় সুরাইয়ার সহপাঠী ছিলেন!
সুরাইয়া শহুরে ছেলের সাথে বিয়ে করে বিয়ে করে শহরে পাড়ি জমালেন, চৈতার মা থেকে গেলেন গ্রামে।
"আপা, এই ছাগল টা পাচ দশ টাকায় কিনে নেন আপা। বন্যায় ঘর ভাইসা গেছে। চারদিন ধরে সজিনাডাঁটা সিদ্ধ করে খাই। এই ছাগলের বাচ্চাডা কিনেন আপা।''
সুরাইয়া দেখেন, ছোট্ট এক ছাগলছানা, খুব বেশি হলে চার পাঁচদিন বয়স হবে হয়ত, এখনো মায়ের দুধ না খেয়ে কিভাবে বেঁচে আছে কে জানে।
ছাগল ছানার চোখে ভয়, চৈতার মার চোখে অসহায়ত্ব

দৃশ্যপট ৩

বোয়ালিয়ার জমিদারের আদরের মেয়ে আসিয়া বেগমের বিয়ে হয়েছিল একজন সাধারন চাকুরীজীবীর সাথে।
বর ধার্মিক মানুষ।
জগতে টাকা পয়সা জমিয়ে রাখার পক্ষপাতী ছিলেন না।
ভবিষ্যতে কি হবে জিজ্ঞেস করলে উনি অমায়িক হাসি দিয়ে বলতেন, সব উপরওয়ালার ইচ্ছা।
একদিন দশজন ছেলেমেয়ে আর ধারদেনা মাথায়নিয়ে উনি হুট করে মারা গেলেন ।
আসিয়া বেগমের মাথায় পাহাড় ভেঙে পড়ল।
দশ ছেলেমেয়ের ভেতর বড় দুইটা মেয়ে ছাড়া সবাই ছোট, পড়াশোনার খরচ দেওয়া দূরের কথা, এই দশটা মুখকে খাওয়াবেন কি?
বড় ছেলেটা এবার মেডিকেলে ভর্তি হয়েছে, বাপের খুব শখ ছিল ডাক্তার বানাবে বড় ছেলেকে। সেই ছেলেটার কি হবে?
উনি নিজের আত্মমর্যাদা কে কবর দিয়ে ছুটলেন মায়ের বাড়ি, ততদিনে বাপ মা কেউ বেঁচে নেই।
ভাইরা জায়গা জমি নিজেদের ভেতর ভাগ করে নিয়েছে।
আসিয়া বেগম ভাইদের পা ধরলেন, মাথার ঘোমটা ফেলে সদর দরোজায় আলুথালু চুলে বসে পড়লেন এককালের অভিজাত আসিয়া বড়ভাইরা তামাশা করলেন, ভাবীরা ঘাড়ে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিলেন।
গলায় দড়ি দিতে যেয়েও দিতে পারলেন না আসিয়া, ঘরে যে দশটা ছোটছোট বাচ্চা রেখে এসেছেন!
অভুক্ত সন্তানের কথা ভেবে নিজ বাড়ির পথে হাটা ধরলেন।
পথে মানুষ হাততালি দেয়," দেখ দেখ, ভাত পায়না ব্যডাক দাক্তরী পড়াবে। জগতের কুফা। স্বামীডারে খ্যাছে, নিজের ছোলগুলাক না খিলে থুছে ডাইনী কোথাকার।"
আসিয়া নীরবে চোখের জল ফেলেন।

দৃশ্যপট ৪

রাজশাহী মেডিকেলের ১৪ নাম্বার ওয়ার্ড।
ফুটফূটে একটা ছেলে বেডে শুয়ে আছে, তার মা হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছেন পরম মমতায়
ছেলেটার ক্যান্সার ধরা পড়েছে।
চিকিৎসা করতে খরচ লাগবে প্রচূর।
সদ্য ওয়ার্ড করতে আসা মেয়েটা জিজ্ঞেস করল, চিকিৎসা করাবেন না?
ছেলেটার মা হাসিমুখে বলে, মা, আমি গ্রামে স্কুলের মাস্টার, ছেলের বাবা আমাকে ছেড়ে সিলেটে অন্য এক মহিলাকে বিয়ে করেছেন। উনি কোন যোগাযোগ করেন না। যেই বেতন পাই, খাওয়াই জোটে না ঠিকমত, ছেলের চিকিৎসা কিভাবে করি বল মা? ঘরে আরেকটা ছোট ছেলে আছে। সোনার একটা নাকফুল ছিল। বেঁচে কিছু টাকা পাইছি। ছেলেটার জন্য ভালমন্দ কিছু কিনে দেই যতদিন বাঁচে। ছেলেটার আংগুর খুব পছন্দ মা। ''
মায়ের কন্ঠস্বর ভারী হয়ে ওঠে।
ছেলেটার শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুত হতে থাকে, মা আরো জোরে জোরে বাতাস করতে থাকেন "
চারটা ঘটনা লেখলাম।
প্রথম টা একজন ফেসবুক বন্ধুর ঘটনা, দ্বিতীয় গল্প আমার নানি সুরাইয়া বেগমের,তৃতীয় গল্প আমার দাদী আসিয়া খাতুনেরর এবং চতুর্থ গল্প সরাসরি আমার চোখে দেখা বাস্তব।
বাংলাদেশের অত্যন্ত স্বাভাবিক চিত্র এই চারটা ঘটনা
এরকম হাজার হাজার ঘটনা ঘটে চলেছে প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত।
মানুষ কতটা অসহায় হতে পারে, তার উদাহরণ বাংলাদেশের।
পৃথিবীতে মানবাধিকার ক্ষুন্ন করা নিয়ে অনেক হইচই হয়, আর বাংলাদেশে মানবাধিকারের অস্তিত্বই নেই।
দেশের এই দারিদ্র্য কে যদি অসুখের সাথে তুলনা করি, আর দরিদ্র জনগন কে অসুস্থ ধরি
আর অবস্থাপন্ন জনগনকে সুস্থ
এখন, আপনিই বলুন, একজন অসুস্থ, একজন রোগীর চিকিৎসা কি রোগী নিজে করবেন, না তার চিকিৎসায় সুস্থ মানুষ কে এগিয়ে আসতে হবে?
এই অসুস্থ জনগনের চিকিৎসার দায়িত্ব কি অবস্থাপন্ন মানুষের নেওয়া কর্তব্য না??
সমাজে একজন ডাক্তারের কাছে মানুষ অনেক অসহায় অবস্থায় যায়, একজন দরিদ্র সেরকম একজন ধনীর কাছে অসহায়। সেক্ষেত্রে একজন এমবিবিএস ডাক্তার যেমন চিকিৎসক, একজন মানবতাবোধসম্পন্ন ধনীও চিকিৎসক। একজন রোগের চিকিৎসা করেন, আরেকজন দারিদ্রের।
দেশে রোগের ডাক্তার অনেক, দারিদ্রের ডাক্তার কজন??
দেশে ধনীদের সংখ্যা আন্দাজ করার জন্য রাজধানীতে রিকশার চেয়ে বেশি গাড়ি আর নান্দোসের দশ হাজার টাকা দামের মুরগীর মাংসের আইটেম ই সবচেয়ে ভাল উদাহরন।
মানবসেবার ঠিকাদারি শুধু MBBS FCPS পাশ করা কয়েকজন মানুষের না, মাইকে গলা ফাটানো কয়েকজন নেতার না , জায়নামাজে বসা মানুষগুলার না, এই দায়িত্ব সবার
ডাক্তারদের গ্রামে যাওয়া নিয়ে কটাক্ষ করে যাওয়া মানুষ,সুযোগ পেলেই মাথা ফাটিয়ে রক্তাক্ত করে দেন,খুন করে পুকুরে পুতে ফেলেন, রেপ করেন। আমজনতা শুধু ডাক্তারের প্রতি তিলে তিলে জমা রাগ ক্ষোভ আর প্রতিহিংসার বশে ডাক্তারের নিরাপত্তার জন্য এগিয়ে আসেন না। গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকা মেডিকেল ঃ ডাক্তার মার খেলে, খুন হলে সবাই ডাক্তারের দিকে সবগুলা আঙ্গুল তাক করেন।
একবার নিজেকে আয়নার সামনে ধরে দেখেন, নিজে কতবার গ্রামে যেয়ে অসহায় দুঃস্থ মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন
ডাক্তারদের দিকে আংগুল তোলার আগে একবার ভেবে দেখেন, নিজেও একজন মানুষ হয়ে জীবনে কতটুকু করেছেন মানুষের জন্য?
মানবসেবার দায়ভার - ডাক্তারদের একার ?
----------
নিসর্গ অমি

Tuesday, May 5, 2015

বোধদয়

তার সাথে তখন প্রায় চার বছর পরিচয়।
ভাল ছেলে।
পাচ বেলা নামাজ পড়ে।
......
তখন ও আমি ব্যাপারটা জানতাম না।
....
দীর্ঘ চার বছর পর অন্য আরেক জনের কাছে জানলাম, " সে হাফেজ। কোরানে হাফেজ"
...
আমরা বিস্মিত হলাম। এতদিন ধরে পরিচয় কখনো ঘূর্নাক্ষরে জানতে ও পারলাম না!!!!
......
তাকে বললাম, " কিরে ভাই, এতদিনের সম্পর্ক। কই কখনো তো শুনলাম না তোমার মুখে.....
.........
তার জবাব ছিল আমার জন্য একটা ধাক্কা, বিস্ময় এবং রিয়ালাইজেশন।
.......
....
সে জবাব দিল- ভাই কথা সত্য। আমি হাফেজ। কিন্তু একজন হাফেজের যেভাবে জীবন যাপন করা উচিত আমি সেভাবে পুরোপুরি পারি না। কাজেই আমি হাফেজ পরিচয় দিলে, মানুষের হাফেজ সম্পর্কে ভুল ধারনা হবে।
.....
....
এই বোধদয় এখন আস্তিক, নাস্তিক, শিক্ষিত,অশিক্ষিত...... অনলাইনে, অফলাইনে দরকার। ভীষণ দরকার।

সংগৃহীত