Tuesday, December 27, 2016

সামনে খারাপ দিন আসতেছে জুনিয়র ডাক্তারদের.;

সামনে যে খারাপ দিন আসতেছে জুনিয়র ডাক্তারদের, তা বলে শেষ করা যাবে না।
আগে ডাক্তাররা প্রাইভেট হাসপাতালে চাকুরি করতো বেতনের জন্য। আর সরকারী হাসপাতালে অনারারি ট্রেইনিং (HMO) করতো কাজ শিখার আশায়।।

চারিদিকে হাসপাতাল গুলোতে ধন্না দিচ্ছে চিকিৎসকরা CV নিয়ে মেডিকেল অফিসার পোস্টের জন্য। ।
কিন্তু সিট খালি নাই।।
 তাই প্রাইভেট হাসপাতাল গুলো, মেডিকেল অফিসারদের ট্রেইনিং নামে বেতন বন্ধ করে অবৈতনিক প্রথা চালু করতে যাচ্ছে ।।
 প্রাইভেট হাসপাতালে HMO নিয়োগ নবীন ডাক্তারদের ভবিষ্যৎ শেষ করে দিবে।।

এক সময় দেখা যাবে - যারা বেতনে চাকুরি করছেন, তাদের সবাইকে চাকুরিচ্যুত করা হচ্ছে।। কারন HMO দিয়েই প্রাইভেট হাসপাতালে কাজ চললে, বেতন দিয়া ডাক্তার রাখার কি দরকার। ।

প্রশাসন লাইনের চিকিৎসক ও BMA এর অনুরোধ - কোনো ভাবেই যেন প্রাইভেট হাসপাতাল এই প্রথা শুরু করতে না পারে।।
 চিকিৎসকদের পড়াশুনা ও পরিবারের স্বার্থ, পাশাপাশি ডিগ্রী করার অবলম্বন এইসব মেডিকেল অফিসার পোস্ট গুলো। তা যদি অনারারির ভীড়ে হারিয়ে যায়, ভবিষ্যৎ চিকিৎসকদের না খেয়ে মরতে হবে।।

আমাদের কিছু লোভী প্রফেসর এর কারসাজীতেই এমন দুই নাম্বারী করার সুযোগ পাচ্ছে প্রাইভেট হাসপাতাল গুলো।।
কারন - তারা ওটি করবে ওয়ার্ড বয়, সিস্টার দিয়া। জুনিয়র ডাক্তার ডাকবে না, যদি 500 টাকা বেশী দেয়া লাগে।। তারা চায় - জুনিয়র ডাক্তার রা পথে বসুক।। তারা এটা ভাবে না - তারা যদি এই জুনিয়রদের না ডাকে, একদিন জুনিয়রের হাতেই বলি হবে বুড়া গুলা। ।
:( :(
(প্রমাণ -
)

>> কালেক্টেড পোস্ট <<

Sunday, December 25, 2016

ডিশোল্ডারিং ইফেক্ট ও রিক্তের বেদন


১......

■■প্রায় ৬ বছর আগের কথা। অভিজাত পাড়ার এক ঝলমলে প্রাইভেট হাসপাতালে মর্নিং ডিউটি করছি....
আমি ছিলাম CCU এর দায়িত্বে। হঠাৎ খবর এলো হাসপাতালের VIP কেবিনে দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপ্রধান ভর্তি হয়েছেন।আমি রিলাক্সড্ ফিল করলাম, কেবিনের দায়িত্ব আমার না....
রিলাক্সড্ অবস্থা বেশীক্ষণ স্থায়ী হলো না, মিনিটখানেকের ভেতরে কেবিনের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকদ্বয় এসে জানালেন তারা আজকে CCU দেখবেন।দু'জনই আমার সিনিয়র। কাজেই ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চা হিসেবে আমাকেই আগুনের মাঝে ঝাঁপ দিতে হলো.....

■■পান্থপথের এক বিশেষায়িত হাসপাতালের কোন এক ছুটির দিন।কোনো এক ব্যক্তির মেজর অপারেশন হবে।মেইন সার্জন ওয়াশ নিয়ে বসে আছেন।যার অপারেশন হবে-তিনি এই দেশের আইন কাঠামোর সাথে সংশ্লিষ্ট এক শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি। অন্য সময় অ্যাসিট্যান্ট সার্জনের অভাব হয় না, এবার অভাব দেখা গেলো। ......
হাইপ্রোফাইল ব্যক্তি ও প্রাইভেট হাসপাতাল বাদ দেই।সরকারী হাসপাতালে আসি....

■■সকাল সকাল হাসপাতালে ঢুকে গত রাতে ইমার্জেন্সী ডিউটি করা ডাক্তারের সাথে কথা বলে মনটা খারাপ হলো।কথায় কথায় জানতে পারলাম,গতরাতে হার্ট ফেইলিউরের এক রোগীকে প্রয়োজনীয় একটি ইনজেকশন্( Frusemide) না দিয়েই উচ্চতর হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।ডাক্তারের সাথে কথোপকথনের কিছু নমুনাঃ
আমিঃ আর কিছু না হোক, ইনজেকশন ফ্রুসেমাইড'টা দিতে পারতা, রোগীটা শ্বাসকষ্টে রাস্তায়ই মারা যেতে পারে.....
নাইট ডাক্তারঃ আরে রাখেন, রোগীর অবস্থা যায় যায়, ইনজেকশন দিমু ভালোর জন্য, পরে রোগী মারা গেলে মাইর তো খামুই, পরদিন পেপারেও 'ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু'তে আমার নাম থাকবো....
আমিঃ নিজের বাপ হইলে কি করতা?
নাইট ডাক্তারঃ ধূর মিয়া, আপনে ইনজেকশন দিয়েন।আমি দিমু না, নিজে বাঁচলে বাপের নাম.....


২.....

উপরের ঘটনাগুলোয় একটা জিনিস স্পষ্ট।অধিকাংশ চিকিৎসক পেশেন্ট ম্যানেজ করার আগে এখন নিজের Safety ও Security-এর কথা আগে চিন্তা করছেন, পরে পেশেন্ট ম্যানেজম্যান্ট। ঘটনা কিন্তু এরকম হবার কথা ছিলো না, আজ থেকে ১৫ বছর আগেও অবস্থা কিন্তু এমন ছিলো না.....

■■Bronchial Asthma( এক ধরণের শ্বাসকষ্ট) তে চিকিৎসক Hydrocortisone ইনজেকশন দেবার পর রোগী মারা গেলো।চিকিৎসাটি সঠিক ছিলো।পরদিন পেপারে খবর বের হলো, ' ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু'। চিকিৎসককে থানায় নিয়ে যাওয়া হলো....

■■এক নায়ক মারা গেলো।চিকিৎসকরা জরুরীভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছিলেন, নায়কসাহেব তা অগ্রাহ্য করে বিদেশে যাবার মনস্থির করেছিলো, বিধাতা অবশ্য তাকে সে সময় আর দেন নি...
ফলাফলঃ বছরের পর বছর অতিক্রান্ত হবার পরও কিছু চিকিৎসককে এখনো ঘন্টার পর ঘন্টা আদালত প্রাঙ্গনে হাজিরার জন্য বসে থাকতে হয়...

■■এক শিশু মারা গেলো।শিশু বিশেষজ্ঞ সঠিক চিকিৎসাই দিয়েছিলেন। জনতার প্রহারের সাথে তাঁকে হজম করতে হয়েছিলো অপসাংবাদিকতার রিপোর্টিংকেও......

এহেন অবস্থায় চিকিৎসকরা আগে নিজের পিঠ বাঁচাবেন, সেটি কি অস্বাভাবিক?.....


৩....
আপনারা বুঝবেন কিনা জানিনা-তবে একটা কথা বলি।কোন চিকিৎসকই চান না যে তার রোগী মারা যাক, এটা তার জন্য ডিসক্রেডিট....
এই অনন্ত নক্ষত্রবীথি যিনি সৃষ্টি করেছেন, তাঁর তুলনায় মানুষের ক্ষমতা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র। সেই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সামর্থ্য নিয়ে চিকিৎসকেরা মানুষের জন্ম ও মৃত্যুর সময় পাশে থাকেন, যেটা সরাসরি ডিল করেন মহাক্ষমতাবান সৃষ্টিকর্তা।
সেই ক্ষুদ্র সামর্থ্য নিয়েই এই চিকিৎসকেরা সময় সময় আপনাদের জন্য এক বুক সাহস নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন।এটা কি তুচ্ছ করার মত কোনো বিষয়?
এখন যদি প্রশ্ন করিঃ এদেশে চিকিৎসকরা কি Freely রোগীদের উপর রোগীর স্বার্থে তাদের অর্জিত জ্ঞান প্রয়োগ করতে পারছেন? যদি না পারেন, তবে কি বুঝতে পারছেন--তাদের কুণ্ঠাবোধের উৎস কোথায়?


৪....
কিছুদিন আগে পেপার পড়ছিলাম। 'চিকিৎসকের নৈতিক স্খলন'--শিরোনাম দেখে ভিতরে পড়া শুরু করলাম। পরকিয়া সংক্রান্ত রসালো ব্যাপার-স্যাপার।সাংবাদিক সাহেব যাকে চিকিৎসক বলে অভিহিত করেছেন, তিনি আদতে কোন চিকিৎসকই নন, একজন কোয়াক!
মৃত্যুশয্যা থেকে চিকিৎসকদের অক্লান্ত প্রচেষ্টা আর মহান আল্লাহ'র ইচ্ছায় খাদিজা ফিরে এলো, পেপারে একটার পর একটা হেডলাইন।সাংবাদিক সাহেবেরা একেকদিন একেকজনের প্রশংসা করেন।চিকিৎসকদের প্রসংশা করতে কোনো সাংবাদিক সাহেবকে এগিয়ে আসতে দেখিনি, এটলিস্ট আমার চোখে পড়েনি......
যে চিকিৎসক নয় তাকে চিকিৎসক বানিয়ে পরকীয়ার রসালাপ তৈরি করে চিকিৎসক সমাজের সুনাম নষ্ট করতে সাংবাদিক সাহেবদের দ্বিধা নেই( ব্যতিক্রম আছে), তাদের দ্বিধা হয় ভালো কাজের প্রশংসা করতে। হলুদ সাংবাদিকতা আর কাকে বলে!
সাংবাদিক সাহেবদের বলি--"ভুল চিকিৎসা"র কচকচানি বাদ দিন, চিকিৎসা ভুল না সঠিক ছিলো--সেটা এ বিষয়ের এক্সপার্টদের উপরে ছেড়ে দিন।তার চেয়ে বরং এক কাজ করুণ, লিখুন, "চিকিৎসকের অক্লান্ত চেষ্টার পরও রোগী মারা গেলো"....বিলিভ মি অর নট, আমি বাজি ধরে বলতে পারি, এদেশের চিকিৎসকরা তাদের ক্ষুদ্র লজিস্টিক সাপোর্ট নিয়েই রোগী বাঁচানোর জন্য ঝাঁপিয়ে পড়বেন.....


৫....
সাংবাদিকদের কথা বললাম, এবার এদেশের জনগণের কথা বলি....
প্রখ্যাত এক ব্যক্তিত্ব দেশের বাইরে মারা গেলেন।দেশে এসে তার নিকটাত্মীয়রা ভুল চিকিৎসার অভিযোগে কানাঘুষা শুরু করলেন, আমেরিকার ঐ হাসপাতালের বিরুদ্ধে মামলা করার কথাও শুনলাম। বলে রাখি, ঐ হাসপাতাল ও তার চিকিৎসকদের টিকিটিও তারা স্পর্শ করতে পারেন নি।সেটা বাংলাদেশ না....
বিদেশে কোটি টাকা খরচ করে মারা গেলেও সমস্যা হয় না, এদেশে পান থেকে চুন খসলে ডাক্তারদের লাঞ্ছনা করা হয়। এদেশের জনগণ ভুলে যায়-এদেশের প্রত্যেক চিকিৎসক কত সীমাবদ্ধতার মাঝে থেকে শত-শত রোগী দেখতে বাধ্য থাকেন।চিকিৎসকদের রূঢ আচরণ তারা করতে দেখেন, তার পেছনের কারণ তারা খুঁজতে যান না। এদেশের জনগণ ভুলে যায়, তারা ও তাদের দেশের চিকিৎসকেরা এই দেশেরই আলো-হাওয়া-মাটিতে বড় হওয়া। এদেশের জনগণ কেন এমন মনে করে যে, এদেশের চিকিৎসক থেকে বিদেশী চিকিৎসকদের দরদ বেশী হবে? মায়ের চেয়ে মাসীর মমতা কি কখনো বেশী হয়?

বিদেশে রোগী মারা গেলে মাথা নিচু করে এদেশে ঢোকেন, দেশে মারা গেলেই ডাক্তারের দোষ! হিপোক্রেসীর একটা লিমিট রাখুন। যে আচরণ বিদেশে গিয়ে করেন, তা এদেশে চিকিৎসকদের সাথে করে দেখুন, সে ভালোবাসার শতগুণ আমরা ফেরত দিব, We promise......


৬....
'জন্মিলে মরিতে হইবে'...কাজেই চিকিৎসক হিসেবে Sometimes we have to stop. কিন্তু সার্বিকভাবে চিকিৎসকরা এখন এতোটাই Insecured ফিল করেন যে, তারা এখন মৃত্যুপথযাত্রী রোগীকেও ডি-শোল্ডারিং করে চলছেন।এ অবস্থা সামগ্রিকভাবে শুভ নয়, কাম্য নয়....

শরৎচন্দ্রের দেবদাসে'র শেষ কয়েকটি লাইন আমার খুব পছন্দের।লাইনগুলো বলিঃ " মরণে ক্ষতি নাই, কিন্তু সে সময় যেন একটি স্নেহকরস্পর্শ তাহার ললাটে পৌঁছে-যেন একটি করুণার্দ্র স্নেহময়মুখ দেখিতে দেখিতে এ জীবনের অন্ত হয়।মরিবার সময় যেন কাহারও এক ফোঁটা চোখের জল দেখিয়া সে মরিতে পারে"......
চিকিৎসক হিসেবে মানুষের সেবায় আমরা নিরন্তর ছুটে চলি।একটা সময় মৃত্যুর কাছে আমাদের থামতে হয়।এই সময়টা রোগীর সাথে সাথে চিকিৎসকেও এই দেশের প্রেক্ষাপটে এক কঠিন সময় পার করতে হয়।আমরা চাই, ' একটি করুণার্দ্র স্নেহময় মুখ দেখিতে দেখিতে রোগীর জীবনের অন্ত হোক'।আমরা চাই একটি Dignified end of life এর। এদেশ কি আমাদের সে অবস্থা নিশ্চিত করার সুযোগ দিবে?

>> কালেক্টেড পোস্ট <<

Monday, December 19, 2016

সবার বোধদয় হোক।

১.
মাদ্রাসার ছাত্র, পড়া না পারায় হুজুরের মার খেয়ে ১ দিনের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে এসে আর মাদ্রাসায় যায় না। তার মা জিজ্ঞেস করে কি হল তুই মাদ্রাসায় যাস না কেন, ছেলে বলে পেট ব্যাথা, এই বলে ২ দিন হয়ে গেল, তাকে এলাকার বাজারের খুচরা ডাক্তার থেকে হরেক রকমের ড্রাগস এনে খাওয়ানো হল, কিন্তু পেট ব্যথা আর ভাল হচ্ছে না। তখন সেই খুচরা ডাক্তার বলে এপেন্ডিসাইটিস হতে পারে, জেলা সদরের বড় সার্জনকে দেখাতে হবে। এবার খুচরা ডাক্তার, ছেলে, ছেলের মা মিলে রওয়ানা দিল জেলা সদেরের উদ্দেশে। যাওয়ার আগেই খুচরা ডাক্তার ফোন করে সার্জনকে বড় একটা সালাম দিয়ে বলল, চেম্বারে আছেন তু, একটা এপেন্ডিক্স নিয়ে আসতাছি। (হাহা, একটা Appendix :D :D )
চেম্বারে নেয়ার পর সার্জন দেখে আল্ট্রাসহ কিছু ব্লাড টেস্ট করাল,
আল্ট্রা নরমাল উল্লেখ করেও কুশলী রেডিওলজিস্ট কমেন্টস এর নিচে লিখে দিল 'USG abdomen normal findings, please correlate clinical sign symptoms with Acute Appendicitis' (সার্জন কে একটু তেল মারা আর খুশি রাখা আর কি, পেট ব্যাথা যাহার আল্ট্রা নরমাল সে কি শুধু এপেন্ডিসাইটিস-ই হতে হবে?)

এনিওয়ে, এবার সব রিপোর্টস এক করে বিজ্ঞ সার্জন চতুর্দিক থেকে এপেন্ডিক্সের ঘ্রাণ পেয়ে পেয়ে নিজেও বললেন ছেলের-মা ছেলের এপেন্ডিক্সের ব্যাথা, অপারেশান করে এপেন্ডিক্স ফেলে দিতে হবে। কথামত ভর্তি হয়ে গেল তারা, অপারেশনের ঘন্টা খানেক আগে ছেলে কে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। একি কান্ড, ছেলে কই গেল,কেউ খুজে পাচ্ছে না। হঠাত মাদ্রাসার হুজুরের ফোন, পালিয়ে মাদ্রাসায় ফিরে গেছে ছেলে, তার কোন ব্যথাই ছিল না, হুজুরের মারের ভয়ে পেট ব্যথার বাহানায় মাদ্রাসায় না যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল মাত্র।

যে ছেলে বেতের ভয়ে মাদ্রাসা ছেড়ে ছিল, সে অহেতুক অপারেশনের ভয়ে হাসপাতাল ছেড়ে আবার মাদ্রাসায় পালিয়ে গেছে।


২.

রুগী শুক্রবারে Acute Tonsillitis নিয়ে প্রথমবার ডাক্তার দেখাতে আসল, তাকে জিজ্ঞেস করা হল টাকা পয়সা কেমন আছে সাথে। সে বলল টাকা আছে, সার্জন বলল চলো ওটি তে চলো.....
Tonsillectomy এর ইন্ডিকেশনটা সবাই জানল, শুধু জানল না অসাধু ই.এন.টি সার্জনরা।
Believe me, ill comes ill goes.
And someday you as a doctor will have to pay for your malpractice, not to people BUT to the Almighty.
এসব ম্যলপ্রাক্টিস করব না, করব না, এই হোক আমাদের শপথ, আমরা নতুন প্রজন্ম, এদেশের ডাক্তাদের গতানুগতিক ভুল-প্রাক্টিসকে ধিক্কার দিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানের নির্ভুল প্রাক্টিস করব, এই হউক আমাদের বিজয় দিবসের অংগিকার।

সবাই কে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা...

>> কালেক্টেড পোস্ট <<

Tuesday, December 13, 2016

'অনারারী ট্রেনিং' নামক অমানবিক 'দাস-প্রথা'

এই সভ্য সমাজে এখনো ডাক্তার নামক সমাজের প্রথম শ্রেনীর নাগরিকদের জন্য 'অনারারী ট্রেনিং' নামক অমানবিক 'দাস-প্রথা' চালু আছে এটা ভাবলেই বিস্ময়ে আমার হাত-পা গুলিয়ে আসে|

একজন মানুষ তার সারাটা দিন হাসপাতালে ব্যয় করবেন,সারা মাস অমানবিক পরিশ্রম করবেন,রোগীর লোকজন এবং সিনিয়রদের সকল অপমান-মানসিক অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য করবেন কিন্তু মাস শেষে এক টাকাও পারিশ্রমিক পাবেন না,এটাই এই দাস-প্রথাটির মূল নীতি|

অনেকে বলতে চাইবেন, তাঁকে তো 'সাকসেস্ফুল ট্রেনিং ' শেষ করার পর সার্টিফিকেট দেয়া হবে যেটি দিয়ে তিনি পোস্ট-গ্রাজুয়েশনের শর্ত পূরন করবেন অথবা প্রাইভেট প্র্যাক্টিস করে মাসে 'কোটি -কোটি' টাকা কামাই করবেন|
এই সার্টিফিকেট দিয়ে তিনি কি করবেন সেটা উনার কষ্টের বাই-প্রোডাক্ট,আপনি তো তাঁকে তাঁর ন্যায্য পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত করলেন,কাজটা কি অমানবিক নয়?

ধরুন,আপনি রিক্সায় করে সারা ঢাকা শহর ঘুরে দিন শেষে নেমে গিয়ে ভাড়া না দিয়ে সোজা হাঁটা ধরলেন! পেছন থেকে ডাক দিয়ে বেচারা ভাড়া চাইতেই আপনি বললেন,
...চাচা আপনার তো ডায়াবেটিস আছে,তাই না?
....আছে|
....প্রেশারও আছে,তাই না?
....হুম
...আপনার চিকিৎসা কি জানেন?
...না বাবা|
....প্রচুর কায়িক প্ররিশ্রম করা| আমি আপনাকে এতক্ষন তা-ই করালাম|আপনার রোগের চিকিৎসা করে দিলাম| তা ভাড়া চান কেন?

এটা করা কি ঠিক হবে?এরকম করতে গেলে নিশ্চয়ই বেচারা ডায়াবেটিস,হাইপারটেনশনে মরার আগে না খেয়ে অপুষ্টিজনিত কারনেই পরিবার-পরিজন সহ মারা যাবে|

অনারারী ডাক্তারদের অবস্থা কিন্তু অনেকটা সেরকমই| কবে পোস্ট-গ্রাজুয়েশন শেষ করবেন আর কবে প্রাইভেট প্র্যাক্টিস করে তথাকথিত 'কোটি -কোটি' টাকা কামাবেন,তার আগে তো এটলিস্ট উনাকে সপরিবারে বেঁচে-বর্তে থাকতে হবে,নাকি?

>> কালেক্টেড পোস্ট <<

হাল ছেড় না বন্ধু যেতে হবে অনেক দূর

এইলেখাটি একান্তই নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে লেখা,লেখাটি টাইপ করতে সাহায্য করেছে এক ছোটবোন কাম ফ্রেন্ড।
বিশেষ করে যে সকল জুনিয়র সিনিয়র বা ব্যাচমেটরা ডাক্তারী জীবনে কঠিন সংগ্রামের পথে হাটছে তাদের প্রতি উৎসর্গ লেখাটি।সময় থাকলে যে কেউ পড়ে দেখতে পারেন,অনুপ্রেরণা পেলেও পেতে পারেন।

একজন নবীন ডাক্তারের সংগ্রামের গল্প

এম,বি,বি,এস এর শেষবর্ষে থাকাকালীন সময়ে দেখতাম অনেকে সিনিয়রা পাশ করার পর বড় ডিগ্রী নিয়ে (এফ,সি,পি,এস / এমডি/এম,এস) মেডিকেলে রেজিস্ট্রার বা অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার হিসাবে জয়েন করছেন । তখন তাদের দেখে আলাদা ইন্সপিরেশন পেতাম এবং স্বপ্ন দেখাতাম বড় বড় ডিগ্রী নেয়ার। যথারীতি সবার মত আমারও স্বপ্ন ছিল যে পাশ করে বের হয়ে ঢাকায় যাব, পিজির লাইব্রেরিতে পড়ব এবং এফ,সি,পি,এস বা এমডি করব। পাশ করে বাসায় চলে আসার পর যখন আব্বুকে বললাম যে আমি আগামী ৬ মাস ঢাকায় দিলিপ স্যার এর কোচিং করতে চাই এবং এই কয়টা মাস আমার খরচ চালিয়ে দাও তাহলে আমি ভাল ভাবে পড়ে তারাতারি চান্স পেতে পারব। স্বপ্ন পূরণের পথে প্রথম বাঁধা পরল এখানে। আব্বু বললেন এম,বি,বি,এস পর্যন্ত তোমাকে চালিয়েছি, এখন আর চালানর সামর্থ নেই। তুমি পাশ করেছ এবং নিজে উপার্জন করার ক্ষমতা হয়েছে তাই নিজে এখন নিজেরে চালাও। এই অবস্থায় ইন্টারনী থেকে জমানো বিশ হাজার টাকা নিয়ে ঢাকায় চলে আসলাম। ঢাকায় এসে ডাক্তারদের বস্তি আজিজ সুপার মার্কেটে একটা রুমে একটা সিট নিলাম এবং কোচিং এ ভর্তি হলাম। এখন নিজের খরচ চালানর জন্য খ্যাপ যোগার করার জন্য ৩০ থেকে ৪০ টা সিভি দিলাম ঢাকায় এবং ঢাকার আসেপাশে বিভিন্ন হাসপাতালে, ক্লিনিকে এবং মেডিকেল কলেজে। অনেক দিন হয়ে যায় সিভি থেকে কোন ডাক আসেনা, আবার বড় কোন ভাইয়ের কাছ থেকেও ঢাকার আশেপাশে কোন খ্যাপ যোগার করতে পারছিনা যেখানে ৩/৪ দিন ২৪ ঘণ্টা ডিউটি করব। এদিকে আবার জমানো টাকাও শেষের পথে। তার ওপর কোচিং, পড়ালেখা, পেট চালানোর চিন্তা সব মিলিয়ে দুর্বিশহ অবস্থা এবং চারিদিকে তখন অন্ধকার দেখতাম শুধুই। তখন শুধু কোচিংইয়ে যেতাম এবং কোচিং থেকে বের হয়েই বড় ভাইদের কাছে ছুটতাম খ্যাপের আশায় যেন সাপ্তাহিক খরচটা যোগাড় হয়। এভাবে ছুটতে ছুটতে মাঝে মাঝে পেয়ে যেতাম বড় ভাই, সিনিয়রদের কাছ থেকে খ্যাপ। খ্যাপে যেতাম নোয়াখালী, নরসিংদী, মাওনা, গাজীপুর সহ আরো অনেক জায়গায়। এতে করে পড়ালেখা থেকে অফ- ট্র্যাক হয়ে গেলাম। কোচিং করতাম ঠিকই কিন্তু রুমে এসে আর পড়ালেখা করার এনার্জি থাকতো না। খ্যাপে যাওয়া বাদও দিতে পারতাম না কারন এখন বাদ দিলে পরে আর ডাকবেনা। এভাবে চলতে চলতে আমার প্রথমবার এফ,সি,পি,এস পরীক্ষার সময় চলে আসলো। সাতহাজার টাকা দিয়ে ফর্ম পূরণ করলাম। পরীক্ষার হলে বসে বুঝতে পারলাম আমার পরীক্ষার প্রস্তুতি কোনভাবেই যথাযথ না,এমন কি কোথা থেকে প্রশ্ন হল তা ই বুঝলাম না। কোচিংয়ে শুধু ক্লাসই করে গেছি কিন্তু বাসায় পড়তে পারিনি এবং কোচিং এর পরীক্ষাতেও ভাল করতে পারিনি। তখন প্রথম বুঝতে পারলাম এই বড় বড় ডিগ্রী পাওয়া আসলে এত সোজা না, অনেক পড়তে হবে এবং এম,বি,বি,এস পাশ করার পরের লাইফটা খুবই সংগ্রামময় ।

বিভিন্ন জায়গায় সিভি দেয়ার ৬ মাস পর আমি প্রথম ডাক পাই বনানীর প্রেসক্রিপশন পয়েন্টে এবং চাকরিটা হয়ে যায়। এর মাঝে আরও ডাক পাই মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে এনাটমি এর লেকচারার হিসাবে। কিন্তু সপ্তাহে ৬ দিন শাহবাগ থেকে উত্তরা যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না, তারপর বেতন ছিল মাত্র ১৭৭০০ টাকা। এর মধ্যে আরও কিছু প্রাইভেট মেডিকেলে সিভি দিলাম কিন্তু কোথাও থেকে ডাকেনা। উপায় না পেয়ে খ্যাপ মারতে থাকলাম এবং এভাবে মোটামুটি অর্ধেক বাংলাদেশ ঘোরা হয়ে গেছে। এর ফাকে ফাকে পিজির লাইব্রেরীতে পড়া শুরু করলাম। এই অবস্থায় আমি আমার বড় ভাবির কাছে গেলাম যিনি নিজেও ডাক্তার। উনাকে বললাম ভাবি আমাকে কিছু দিন চালিয়ে দেন যেন আমি একটানা পড়ালেখা করতে পারি এবং উনি রাজি হয়ে গেলেন। এতদিন যেহেতু খ্যাপের গণ্ডি বড় হয়ে গেছে এবং দেখা যায় একটানা ১০ দিন ডিউটি করলে প্রায় ২০০০০ হাজার টাকার মত পাওয়া যায় তাই এটার একটা নেশা চলে এসেছিল। যারফলে দেখা যেত পড়ালেখা করতাম অল্প অল্প এবং খ্যাপমারা ও চাকরিও করতে থাকলাম। এভাবে আমি দ্বিতীয়বার পরীক্ষায় বসলাম। পরীক্ষা মোটামুটি ভালই হল কিন্তু রেজাল্ট যখন দিল তখন দেখালাম যে আমার ফিজিওলজি পার্টটা একটু খারাপ হয়েছিল এবং ফেল আসল। কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা হিসাবে দেখলাম যে আমার অনেক বন্ধুরই চান্স হয়ে গেছে এবং পুরো দুনিয়া তখন বিতৃষ্ণা লাগত। জীবনটা আরও দুর্বিষহ করে দিত আমার গার্লফ্রেন্ড। সে সরাসরি তার হতাশা প্রকাশ করত। বলত যে সবার ডিগ্রী হয়ে যাচ্ছে, তার ফ্রেন্ডদের বয়ফ্রেন্ডদের হয়ে যাচ্ছে ডিগ্রী শুধু আমার কেন হচ্ছে না। জীবনটা তখন অন্ধকার লাগত, কোনদিকেই কোন আশা দেখতাম না। একদিকে চাকরি সংর্ঘষ, বাসা থেকে কথা শোনায় চান্স না পাওয়াতে আবার অন্য দিকে গার্লফ্রেন্ড দাম দেয়না ডিগ্রী না হওয়াতে।

এরপরের বার ঠিক করলাম যে এবার শুধু পড়ালেখাই করব এবং আর কিছুই করবনা। শাহবাগে যেহেতু থাকতাম সেহেতু পিজির লাইব্রেরীতে যাওয়া শুরু করলাম। পিজির লাইব্রেরী সকাল খুলত ৮ টায়, সকাল ৭:৩০ টায় ঝাড়ু দেয়ার জন্য খুলত। আমি দেখা যেত ঐ ধুলার মধ্যেই চোখ মুছতে মুছতে ঢুকে যেতাম যেন ভাল একটা জায়গায় সিট পাই। কথায় আছে অভাগা যেদিকে যায় সাগর শুকিয়ে যায়, সেরকমই লাইব্রেরী কার্ডের দাম ৮০০ টাকা থেকে এক লাফে ২৫০০ টাকা করে দিল। ৬ মাসের জন্য শুধু পড়ব লাইব্রেরীতে তার জন্য এত টাকা দেয়াও কষ্টকর লাগল। সারাদিন লাইব্রেরীতে পড়তাম শুধু দুপুরে খাওয়ার সময় বিরতি নিতাম। খ্যাপ যেহেতু কমিয়ে দিয়েছিলাম তাই টাকাও ছিল কম তাই খেতাম পিজির লাইব্রেরীর ওপরে ক্যান্টিনে যেখানে খুব কম টাকায় খাওয়া যেত। ৩০ টাকার মত মিল চার্জ ছিল তখন। পিজির লাইব্রেরীতে পড়া শতকরা ৭০ ভাগ ডাক্তারই ওখানে খেত ওখানকার বিস্বাদ খাবার শুধু মাত্র টাকা বাঁচানোর জন্য। এইরকম একদিন সন্ধ্যায় নাস্তা করে আসার পর দেখলাম কিছু দূরে বসে পড়ছে আমার এক জুনিয়র। তাকে দেখে বললাম কিরে তোর ক্ষুধা লাগে না ? নাস্তা টাস্তা করবি না ? এই প্রশ্নের এমন এক উত্তর পেলাম যা শুনে আমার অনেক খারাপ লাগল। সে বলল, “ভাই,নাস্তার টাকা পাব কই ? আমি তো খ্যাপ দেইনা এবং বাসা থেকেও টাকা দেয়না তাই আমার অনেক হিসাব করে চলতে হয়”। তখন বুঝলাম যে একজন সদ্য পাশ করা নবীন ডাক্তারকে কতটা সংগ্রাম করতে হয় পাশ করার পর। এভাবে ২ মাস পড়ালেখা চলল। সকাল ৭ টায় ঢুকতাম, দুপুরে রেস্ট নেয়ার জন্য একটু বের হতাম আবার রাত ১০ টায় বের হতাম লাইব্রেরী থেকে। এরপর আবার পরীক্ষায় বসলাম। পরীক্ষা শুরু হল এনাটমি দিয়ে, এনাটমি প্রিপারেশন যেহেতু ভাল ছিল তাই পরীক্ষাও অনেক ভাল হল, ভাবলাম এবার ৮০ এর ওপর নাম্বার থাকবে। কিন্তু ফিজিওলজি পরীক্ষা এর দিন প্রশ্ন এত কঠিন হল যে মনে হচ্ছিল হল থেকে সসম্মানে বের হতে পারলে বাঁচি। আর প্যাথলজি ভালই হল। সব মিলিয়ে মনে হল পাশ এবার হবে। এরপর বিকালে যখন আমার নামের পাশে ফেল লিখা দেখলাম তখন এতটাই খারাপ লাগল যে, মনে হল আল্লাহ বলে কেউ নাই, থাকলে আমার কষ্টের প্রতিদান দিল না কেন। তখন আল্লাহর ওপর থেকে বিশ্বাসই উঠে গিয়েছিল, মনে হত এই যে এত অমানবিক কস্ট করলাম আল্লাহ কেন ফল দিলনা। তখন মনে হত বেঁচে থেকে লাভ নেই। না হচ্ছে একটা ডিগ্রী , না হচ্ছে ভাল চাকরি, বন্ধুরা মোটামোটি সবাই চান্স পাচ্ছে, পরিবারে অনেক কথা শুনতে হয় বাবার কাছ থেকে তার ওপর গার্লফ্রেন্ডের সাথে সম্পর্ক তখন চরম খারাপ। সব মিলিয়ে একেবারে করুণ অবস্থা । এর ভেতর একটাই মাত্র আশার বানী ছিল এই যে বি,সি,এস এর লিখিত পরীক্ষা দিয়ে বসে ছিলাম তখন। এই অবস্থায় মনে তখন একটাই প্রবল ইচ্ছা ছিল যে যেভাবেই হোক ডিগ্রী আমাকে একটা নিতেই হবে এবং এরই মাঝে আমার বিসিএস হয়ে গেল এবং আমি গ্রামে চলে আসলাম। এরপরের বারের পরীক্ষাটা আর দিলাম না। ভাবলাম যে আপাতত আগে পড়ালেখাটা করে নেই এবং একটু সামর্থবান হয়ে নেই তারপর আবার দিব।

জানুয়ারি ২০১৬ এর এফসিপিএস পরীক্ষাটা দেয়ার কোন ইচ্ছাই ছিলনা তাও কি ভেবে যেন ফর্ম পূরণ করেছিলাম খুবই গোপনে। পড়ালেখা তেমন করিনি, টুকটাক দিলিপ স্যার এর বই ঘেটেছি শুধু। পরীক্ষার আগের দিন রাতেও বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারলাম। বাসায় বললাম যে আমার ট্রেইনিং আছে ৩ দিনের ঢাকায় এবং চলে আসলাম ঢাকায়। কোন আত্মীয়ের বাসায় না উঠে উঠলাম আমার সিনিয়র এক বড় ভাই এর সাথে মহাখালীর এক হোটেলে। ওখানে টানা ৩ দিন পড়ালেখা করে পরীক্ষা দিলাম। পরীক্ষাটা এভারেজ হল এবং একটু আফসোস লাগল যে এবার যে প্রশ্ন হয়েছে তাতে আরও একটু ভাল করে পড়লে হয়ত চান্স হয়ে যেত। পরীক্ষা দিয়ে চলে গিয়েছিলাম আমার বড় আপার বাসায়। বড় আপার বাসা থেকে মহাখালী হোটেলে আসার পথে , ঐদিন বিকালে আমার এক বান্ধবী ফোন করে বলল যে, “দেখতো তোমার পাশ হয়েছে কিনা ? আমার হয়নি” আমি বললাম যে আমার কোনদিনও হয়না এবারও হবে না। এরপর আমার এক রুমমেট ফোন করে বলল যে তার চান্স হয়ে গেসে, তারও অনেক দিন চান্স হচ্ছিলনা। তখন খানিকটা ঈর্ষাবোধ হল যে ঐ বেচারারও হয়ে গেল শুধু আমারই হল না, আমার কি কোনদিনও হবে না ? জানতাম যে পাশ হবে না তাই কোনমতেই রেজাল্ট দেখতে রাজি ছিলাম না, কিন্তু তারপরেও মনকে অনেক বুঝালাম যে বেশি কি আর হবে ফেলই তো হবে, জীবনতো আর থেমে থাকবেনা বা শেষ হয়ে যাবেনা। এভাবে অনেকক্ষণ মনকে বোঝানোর পর মোবাইল এর নেট টা অন করলাম এবং আমার রোলটা ইনপুট করলাম। এরপর রোলের পাশে যখন লিখা দেখলাম পাশ তখন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না এবং নিজের অজান্তেই মনে হল যে চোখে ২ ফোটা পানি চলে আসল। বিশ্বাস হলনা তারপরও। সাথে সাথে স্ক্রীনশট নিলাম এবং কমপক্ষে ১৫ বারের মত সাইটে গিয়ে চেক করলাম আসলেও আমি ঠিক দেখছি কিনা। তারপর আমার এক বান্ধবিকে রোলটা দিয়ে বললাম, ‘দেখতো আমি কিছু বুঝতে পারছি না’। সাথে সাথেই সে দেখে বলল যে আমার চান্স হয়েছে এবং খোঁচা দিয়ে বলল যে, “ তোমার তো চান্স হয়ে গেছে ,আমার তো এরপরের বার একাই পরীক্ষা দেয়া লাগবে’। এরপর আমার খানিকটা বিশ্বাস হল যে আমি চান্স পেয়েছি। তখন আমি ভাবলাম এই যে আমি, কিছুদিন আগেও চান্স পাইনি আর এখন চান্স পেলাম। কি পরিবর্তন হল আমার ? হাত একটা বেশি হয়নি , চোখ একটা বেশি হয়নি কিন্তু মানুষ হিসাবে দাম বেড়ে গেছে। এতদিন ডিগ্রী হয়নি দেখে কেউ আমাকে দাম দেয়নি না পরিবারের কেউ, না বন্ধুবান্ধব, এমনকি নিজের গার্লফ্রেন্ডও অনেক দূরে সরে গেছে কারণ তার মনে হয় আমার ক্যারিয়ার ভাল না বিসিএস হওয়া সত্ত্বেও। এরকম অনেকরকমের স্মৃতি মাথায় ভেসে আসল এবং এই ঘোরের মাঝেই মহাখালীর হোটেলে চলে আসলাম। ঐ সিনিয়র ভাই যার সাথে হোটেলে উঠেছিলাম তারও হয়নি তাই অনেকক্ষণ দুঃখ টুঃখ করার পর আস্তে করে তাকে বললাম যে আমার চান্স হয়ে গেছে। যেহেতু আমরা একই হেলথ কমপ্লেক্সের তাই উনি জানত যে আমি বেশি পড়ালেখা করিনি তাই উনি মহাআশ্চর্য যে কিভাবে চান্স পেলাম এবং অনেক কংগ্র্যাচুলেট করলো। এরপর আমি আমার বাকি ২ জন রুমমেট মেডিকেলের যাদের চান্স হয়নি তাদের জানালাম তারাও প্রথমে আশ্চর্য হল এবং পরে অনেক খুশি হল। তখন তাকে বললাম যে এবারের রেজাল্ট আমার বিশ্বাস হচ্ছে না, কারণ যেবার আমি সব থেকে বেশি কষ্ট করে পড়েছিলাম সেবার হয়নি কিন্তু এবার প্রিপারেশন ভাল ছিলনা কিন্তু হয়ে গেল। এরপর আমার ঐ বন্ধু বিসিপিএস ভবনে টাঙ্গানো রেজাল্ট শীট এর ছবি তুলে যখন পাঠাল তখন আমার বিশ্বাস হল যে আমি আসলেও চান্স পেয়েছি। এরপর গার্লফ্রেন্ডকে জানালাম, সে হল দায়সারা খুশি, এরপর জানালাম বাবা মাকে। বাবা তো আলহামদুলিল্লাহ বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলার মত অবস্থা। এরপর আস্তে আস্তে অন্যান্যদেরও জানালাম। তখন নিজেকে অন্য রকম একটা মানুষ মনে হল। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলাম কারণ উনি আমার কষ্টটা দেখছেন।

পোস্ট গ্রাজুয়েশনে একটা কথা ঠিক যে প্রিপারেশন আপ-টু-দা মার্ক না হলে চান্স হবে না। আর প্রিপারেশন ভাল হলে চান্স যে কোনবার হবে তা আল্লাহ ছাড়া কেউ ভালতে পারেনা। লাক কখন কাকে ফেভার করবে বলা যায়না কিন্তু প্রেপারেশন থাকতে হবে ভালমতো। এই জন্য ২/৩ বার পরীক্ষায় ফেল করলেও হতাশ হওয়ার কিছু নাই। অনেক কঠিন সময় পার করে এসেছি এবং আমার থেকেও আরও কঠিন সময় মানুষ পার করে। এই ডিগ্রীর জন্য আমার পার্সোনাল লাইফ অনেক চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আমার যে জুনিয়র যার পিজির লাইব্রেরীতে খাওয়ার টাকা ছিলনা তার কার্ডিওলজিতে এফসিপিস , এমডি হয়ে গেছে ঢাকাতে।

আমার মতো প্রতিটা সদ্য পাস করা ডাক্তারকে অনেক কস্ট করতে হয় একটা চাকরি জোটাতে, খাবারের টাকা জোটাতে। এইরকম অনেক বাঁধা পার হয়ে আমি বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেলের সহকারী রেজিস্ট্রার হিসাবে নিয়োগ পেলাম, আস্তে আস্তে হয়তো আমি মেডিকেল এর টিচার হতে পারব অথবা বড় পোস্টে যেতে পারব। তাই এখন মনে হয় যে আল্লাহর কাছে যাই চাই তার প্রতিদান আল্লাহ কোন না কোন বার দিবে।

আমার মত প্রতিটা ডাক্তারেরই এইরকম স্ট্রাগল করতে হয়, কিন্তু কথা হল একটাই যে হাল ছাড়া যাবেনা, হতাশ হওয়া যাবেনা ঠিক মত প্রিপারেশন নিতে হবে এবং লাইনে থাকতে হবে। অনেক ব্যক্তিগত সমস্যা, পারিবারিক, মানসিক এবং পারিপার্শিক সমস্যা থাকার পরও হতাশ হওয়া যাবেনা । ঠিকমত চেস্টা করে গেলে সফল হওয়া সম্ভব। তাই তো বলি হাল ছেড় না বন্ধু যেতে হবে অনেক দূর।

>> কালেক্টেড পোস্ট <<

Saturday, December 3, 2016

অবৈতনিক চিকিৎসক – একটি বর্বর শোষণ প্রক্রিয়ার নাম।

হেডলাইন দেখে অনেকেই অনেক বুঝেছেন আবার অনেকেই কিছু বোঝেন নাই।
 বিশেষত যারা নাকি চিকিৎসক তারা ধরতে পেরেছেন। আর অন্যরা হয়তো ভাবছেন “অবৈতনিক চিকিৎসক”? এইটা আবার কি? আগে তো শুনি নাই!!! আসুন একটু শুনি, একটু দেখি আর একটু জানি।

 অবৈতনিক চিকিৎসক কাকে বলে? নামের মাঝেই কাজের পরিচয় পাওয়া যায়।
 অর্থাৎ এরা হচ্ছে সেই সব চিকিৎসক যারা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন কিন্তু তার বিনিময়ে একটি পয়সাও পান না। বরং নিজের টাকা দিয়ে যাতায়াত আর হাসপাতালে খাওয়ার খরচ চালাতে হয়।
 মজা লন নাকি ভাই, রূপকথার গল্প শোনান? জ্বি হ্যাঁ, রূপকথার গল্প শোনাই। দেশের নাম বাংলাদেশ।
 তবে ঘটনা সত্য। এখন সারা বাংলাদেশে বিভিন্ন মেডিকেলে প্রায় পাঁচ হাজার এমন বিনা বেতনের চিকিৎসক আছেন। সংখ্যাটা আরও বেশি হতে পারে। তবে কম নয়।

 ডাক্তাররা করে ক্যান? মাথায় কি ছিট আছে নি? জ্বি না। মাথায় ছিট নাই। করার অন্যতম একটা কারন হচ্ছে-- এফসিপিএস পরীক্ষা এবং এমডি,এম এস,এম ফিল (মেডিকেলের বিভিন্ন পোশটগ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রির নাম এ গুলো) এই সব পরীক্ষার ফাইনালে অংশগ্রহন করার জন্য যোগ্যতা হিসেবে প্রশিক্ষনের জন্য তাদের বিনা বেতনে কাজ করতে হয়।


 ঠিকই তো আছে, ডিগ্রির জন্য বিনা বেতনে কাজ করে— না ভাই, ঠিক নাই। কারন পৃথিবীর আর কোন দেশে বিনা বেতনে প্রশিক্ষনের সিস্টেম নাই। (তথ্যটা যাচাই করতে পারেন) কিন্তু তাদের দেশেও পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি আছে এবং তার মান ও ভাল।

  ডাক্তাররা তো কাজ শিখে অভিজ্ঞতার ঝুলি ভারী করছেন— জ্বি করছেন। এবং পৃথিবীর সব দেশের চিকিৎসকরাই কাজ করেই অভিজ্ঞতার ঝুলি ভারী করেন। কিন্তু বিনা বেতনে কোথাও নয়।

ডাক্তারদের অভিজ্ঞতা বাড়ানোই এ সিস্টেমের লক্ষ্য— জ্বি না, ডাক্তার অভিজ্ঞতার উপর “মূত্র বিসর্জন” করার সময় কার ও নাই। সরকারি হাসপাতাল চালাতে হবে। কিন্তু চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হবে না। অতএব পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনের কালা নিয়মে ফেলে চিকিৎসকদের বাধ্য করা।

 আচ্ছা এরা কি সিম্পলি “ প্রশিক্ষনার্থী” চিকিৎসক? অনেকেই ধারনা করতে পারেন, এই সব ডাক্তাররা কিছু পারে না। এদের শিখিয়ে পড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। ভুল, সবই ভুল। এরা যদি কিছুই না পারতো তাহলে শুধু এদের উপর নির্ভর করে প্রফেসররা রাতে বাসায় গিয়ে ঘুমাতে পারতেন না। হাজার হাজার রোগী মারা যেত। এরাই রোগীকে জরুরি চিকিৎসা দেন। প্রাথমিক ঝুকিমুক্ত করেন। প্রয়োজনে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এরা জরূরী অপারেশন ও করেন। কাজেই সরকার মূলত শেখানোর নামে চিকিৎসকের দক্ষতাকে ব্যাবহার করছে বিনা পারিশ্রমিকে।

 আচ্ছা অন্য প্রফেশনের দিকে একটু তাকাই— বাংলাদেশে অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ আছে। সেখানেও বিভিন্ন বিষয় এর উপর ছাত্র ছাত্রীরা গ্র্যাজুয়েট হয়ে বের হয়। 
তাদের জন্য কি এমন কোন সিস্টেম আছে? যেখানে তাদের বিনা বেতনে কাজ করতে হয়? না, উত্তর টা হচ্ছে না। তাহলে চিকিৎসকরা কি অমানবিক বৈষম্যের শিকার নন?

 এভাবে কি ভাল চিকিৎসক তৈরি হওয়া সম্ভব? ভাল চিকিৎসক তৈরি হবার অন্যতম প্রধান পূর্বশর্ত হল ভালভাবে পড়াশোনা করা। একটা দিনকে আমরা তিন ভাগে বা রোস্টারে ভাগ করি- সকাল,বিকাল ও রাত। তাহলে সপ্তাহে রোস্টার মোট একুশ টা। এখন বিনা বেতনের ডিউটিতে মোটামুটি ছয়টা রোস্টার করতে হয়। বাকি থাকল ১৫ টা। যেহেতু এই বিনা বেতনের চিকিৎসক “সুপারম্যান” নন। তাকেও খেতে হয়, পরতে হয় এবং সংসার চালাতে হয়। অতএব অর্থ উপার্জনের জন্য তাকে বাইরে ডিউটি করতে হয়। বর্তমানে ঢাকা শহরে প্রতি রোষ্টার কম বেশি ছয়শ টাকা। সপ্তাহে ছয়টা রোস্টার করলে তিনি মাসে পনের হাজার টাকার কাছাকাছি উপার্জন করতে পারবেন। তাহলে তার আর রোস্টার বাকি থাকে ৯ টা।

 এখন প্রশ্ন নাম্বার এক – এই চিকিৎসক সপ্তাহে সাত টা রাত ঘুমার জন্য সময় পাবেন কি? প্রশ্ন নাম্বার দুই- তাহলে এই চিকিৎসক পড়াশোনা করবেন কখন? প্রশ্ন নাম্বার তিন- এই চিকিৎসক তার পরিবারকে সময় দেবেন কখন? আর পনের হাজার টাকায় ঢাকা শহরে পরিবার সহ তার বাজেট ও আশা করি তৈরি করে দেবেন। যেখানে আপনাকে প্রতি ছয়মাসে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন পরীক্ষা দেবার জন্য প্রায় ১২ হাজার টাকা যোগ করতে হবে। মেডিকেলের দামি বই কেনার টাকা হিসাব করতে হবে। বিনা বেতনের ডিউটিতে যাবার এবং খাবার খরচ হিসাব করতে হবে।

 সবশেষে বলি- অবাক করার বিষয় এই প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। পত্রিকার পাতায় এ বোবা কান্নার খবর আসে না। পাস না করানোর হুমকিতে চিকিৎসকরাও বলতে দ্বিধাবোধ করেন। আমাদের মত এই সব অসহায় বোবাদের মনের ভেতর লুকিয়ে থাকা একরাশ কষ্টের গল্প টিভির টক শো কিংবা পত্রিকার পাতা অথবা আলোচনা অনুষ্ঠানে উঠে আসে না। কারন এতে হয়তো কাটতি তেমন হয় না। এর চেয়ে খবর হিসেবে “চিকিৎসকের অবহেলায় রোগীর মৃত্যু” অনেক বেশী আকর্ষনীয় আমাদের কষ্ট বোঝার কেউ কি আছেন বাংলাদেশে?

 এই নির্মম দাস প্রথার অবসান চাই। শেয়ার করতে বলা আমার অভ্যাস নয়। চিকিৎসক ও যারা সমব্যাথী হবেন তাদের শেয়ার করার অনুরোধ জানাচ্ছি। চিকিৎসকদের জীবনের এই অংশটা মানুষ জানে না। জানানো দরকার।

>> কালেক্টেড পোস্ট <<

Friday, December 2, 2016

জীবনই শুরু থার্ড জেনারেশন দিয়ে.

পেরিফেরিতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যে সব বাচ্চা আমরা পাই তারা নামী বেনামি কোম্পানির থার্ড জেনারেশন খেয়ে আসে! সেফিক্সিম (থার্ড জেনারেশন সেফালোস্পোরিন) তিন দিন খেয়ে আপনার কাছে আসল। আপনি কি করবেন?


কন্টিনিউ করবেন নাকি সুইচ করবেন, 
নাকি কোম্পানি চেইঞ্জ করবেন, 
নাকি ইঞ্জেক্টেবলে যাবেন, 
নাকি ফার্স্ট জেনারেশনে ফিরে যাবেন?

আমাদের বেশিরভাগ ভাল ছাত্রের জীবনের লক্ষ্য ডাক্তার হওয়া আর বেশিরভাগ ডাক্তারদের জীবনের লক্ষ্য বিজি প্র‍্যাকটিশনার হওয়া। দিনে ৫০-৬০ টা পেশেন্ট না দেখলে স্ট্যাটাস থাকেনা। পেশেন্টতো শুধু দেখলেই হবে না রোগও সারাতে হবে। রোগ সারাতে গিয়েই বিভিন্ন অষুধের অপপ্রয়োগ করা হয়। সব থেকে ডেঞ্জার জোনে আছে পেডিয়াট্রিক পেশেন্ট।

কিছু প্রশ্ন

তিন মাসের নিচে সালবিউটামল দিয়ে কোন লাভ হয়?
হুইজ না থাকলে কি প্রেডনিসোলন দেওয়ার দরকার আছে? অথবা ছয়মাসের আগেই কি এটা দেওয়া যায়?
সিপ্রোফ্লক্সাসিন কি বাচ্চাদের কোন ক্ষতি করে। রিস্কের চেয়ে বেনিফিট বেশি না হলে কি এটার ব্যবহার যুক্তিসংগত?

বেশি প্রশ্ন করে লাভ নেই। যে কোন পেডিয়াট্রিক্স আউটডোরে এক ঘন্টার প্রেস্ক্রিপশন ফলো করলেই দেখা যাবে বেশিরভাগ ড্রাগই পেশেন্টের বয়সে নির্দেশিত নয়। প্রাইভেট চেম্বারে এটা আরো বেশি হয়।

তাহলে ডাক্তাররা কেন লিখছেন। ঐযে বলেছিলাম "অমুক ডাক্তারের চিকিৎসায় রোগ ভাল হয়। উনি চেম্বারে দিনে ৫০ টার কম রোগী দেখেন না" এই সুনাম অর্জনের জন্য।

আমার পরিচিত পেডিয়াট্রিক্সের একজন প্রফেসর ছিলেন যার চেম্বারে খুব একটা রোগী আসতো না। কারণ তিনি রেশনাল প্র‍্যাক্টিস করতেন, কাউন্সেলিং বেশি করতেন, অষুধ কম লিখতেন অথবা লিখতেনই না। বাচ্চার সুস্থ হতে সময় লাগতো। তাই বাবা মারা আস্থা পেতেন না।

ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ভয় হয়। ওরা জীবনই শুরু করছে থার্ড জেনারেশন দিয়ে। এন্টিবায়োটিক রেসিস্টেন্ট হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে সিম্পল জ্বর ঠান্ডা কাশিই মহামারি হয়ে দেখা যাবে একসময়!

Wednesday, November 30, 2016

চিকিৎসকের সম্মান তলানীতে ঠেকেছে, এবার পাত্র ফুটা হয়ে শূণ্য হবার বাকি

ডা. আবদুন নূর তুষার

______________________________


এস এস সি, এইচ এস সিতে ভালো ফলাফল করার পর দেশের সবচাইতে কঠিন একটি ভর্তি পরীক্ষা পার হয়ে তাকে শুরু করতে হয় চিকিৎসা বিজ্ঞানের পড়াশোনা।

এমবিবিএস হতে তাকে পাঁচ বছর জীবনপণ করে পড়তে হয়।

প্রতি সপ্তাহে পরীক্ষা দিয়ে , কঠিন পেশাগত পরীক্ষা দিয়ে সে ডাক্তার হবার পর ইন্টার্ণ করে একবছর।

এর মধ্যে এফ সি পি এস বা এম ডি করলে তার আরো লম্বা সংগ্রাম !

তারপর বেসরকারী খাতে তার সর্বোচ্চ বেতন ১৫ থেকে ২০ হাজার।

আর সরকারী বেতন ২৩ হাজার ১০০ যোগ বাড়ী ভাড়া ও অন্যান্য ...মোট বড়জোর ৩২ হাজার টাকা

টাকাটা অনেক মনে হচ্ছে?

ঢাকা শহরে একজন চিকিৎসক বাড়ী ভাড়া পাবেন মূল বেতনের ৫৫% , অন্য সিটি কর্পোরেশনে ৪৫% আর বাকি সব শহরে ৪০%।

সর্বোচ্চ ৯৬০০ টাকা। ঢাকা শহরে মেসে থাকা যায় এই টাকায়।

একজনেরই জায়গা নাই, স্বামী বা স্ত্রী, সন্তানসহ, ডাক্তার কোথায় থাকবেন এই টাকা দিয়ে?

আর বেসরকারী খাতে বাড়ীভাড়া , চিকিৎসা ভাতা, কিছুই নাই। নাই বোনাস।

একটা নিয়োগপত্রও অনেক ক্লিনিক দেয় না।

ডাক্তারদের ভিজিট বা ব্যক্তিগত সম্মানী ধার্য্য করে দিচ্ছেন সরকার।

প্রাইভেট প্র্যাকটিস সবার সমান হয় না।

এটা অনেকটা গানের শিল্পীদের মতো।

সবাই গান গায় কিন্তু সবার জনপ্রিয়তা ও সম্মানী এক না।

কোন ডাক্তার যদি অতিরিক্ত পয়সা চান, রোগীরা তার সম্মানীর চাপ নিতে না পারলে তার প্র্যাকটিস কমবে।

তার চাহিদা কমে যাবে।

এটা সরকারীভাবে ধার্য্য করলে, সকল ব্যক্তিগত পেশাগত কাজের মূল্যও ঠিক করে দেয়া উচিত।

যেমন গানের শিল্পী মমতাজ আপা বা রুনা লায়লা কত টাকা নেবেন- বা একজন উকিল, ব্যারিস্টার রফিকুল হক বা কামাল হোসেন কত নেবেন- বা একজন স্থপতি খালিদ মাহমুদ পলাশ বা ইকবাল হাবিব কত নেবেন- সেটাও বলে দেয়া দরকার।

এটা ঠিক হবে না, কারণ এদের মতো মানুষ খুব বেশি নেই, এরা ইউনিক, একমে-বা- দ্বিতীয়ম !

সবচেয়ে মজার বিষয় হলো ডাক্তারদের চাকুরী, বেতন, সুবিধা বা দাবী দাওয়া নিয়ে গত ২০ বছর ডাক্তারদের কেন্দ্রীয় সংগঠন বিএমএ কি করেছে, তার বিবরন লিখতে বললে ডাক্তাররাই লজ্জা পাবেন।

আরো লজ্জা হলো, ভিআইপি রোগী হাসপাতালের বারান্দায় দাড়িয়ে মোবাইলে কথা বলার সময় জনৈক অধ্যাপক তার বুকে স্টেথো দিয়ে হৃদযন্ত্রের শব্দ শুনছেন, এমন ছবি ভাইরাল হয়েছে ফেসবুকে।

চিকিৎসাবিদ্যার প্রাথমিক জ্ঞান আছে এমন লোকেরাও জানেন, রোগী কথা বলবে আর ডাক্তার তাকে পরীক্ষা করবে বারান্দায়, এটা অমার্জনীয়।

এটা চিকিৎসাবিদ্যার অপমান।
যারা নিজেরা নিজেদের সম্মানের জন্য লড়েন না, তাদের জন্য অন্যরা লড়বে কেন ? সম্মানই বা দেবে কে ?

চিকিৎসকের সম্মান তলানীতে ঠেকেছে, এবার পাত্র ফুটা হয়ে শূণ্য হবার বাকি ।
____________________________
ডা. আবদুন নূর তুষার । সুলেখক। কলামিস্ট। জনপ্রিয় টিভি উপস্থাপক।

>> কালেক্টেড পোস্ট <<

Sunday, November 27, 2016

হ,বেশি কইরা ডা. হ

ঘটনা-১:

বাংলাদেশ ব্যাংক ডাক্তার নিচ্ছে।২০০৯সালের ৯ম স্কেল(১১,৯০০টাকা),কোন ডেপুটেশন নাই।আসন ৩টি।যাতায়াতের পথে পরীক্ষার্থীদের সাথে উৎসুক হয়ে কথা বল্লাম।ইডেন কলেজ ডাক্তার দিয়ে সয়লাব।

ঘটনা-২:

প্রতি বছর বুয়েটে পরীক্ষা দিতে দেখা যায় বড় ডাক্তার হবার জন্য।এবার ইডেন অব্দি সিট ফেলতে হয়েছে।এবং রেসিডেন্সির অনেক সুবিধাও হ্রাস করা হয়েছে।কিন্তু বর্তমান বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে এই পরীক্ষাটাই সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতার পরীক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে,১:২০।

ঘটনা-৩:

বাসার পাশে আলহেলাল হাসপাতাল,বেতন দেয় প্রায় ২মাস পরপর,সবাই জানে সে কথা,তবু ১৮০০০টাকার চাকরির সিরিয়াল পাবেননা সেখানেও।প্রতি বছর অংবংচং ও তথাকথিত ভাল মেডিকেল দিয়ে গিজগিজ করছে ডাক্তার।
৩৩০০জনে ১জন হলেও,বিখ্যাতরাই ধরে আছেন ১জনে ২০হাজার জন করে রোগী।
নতুন মেডিকেল প্রতি কোটি টাকা ঘুষের লেনদেন চলছে অনুমোদনের
আর ১০টা বছর এইভাবে যাইতে দেন,
দেখেবেন ৮হাজার টাকার চাকরির জন্য লড়াই করবে ৮হাজার "মাবাবার বেকার সন্তান=এমবিবিএস"
এবং
 ১৫বছরের মধ্যে উপজেলা দখলের জন্য বেপরোয়া হয়ে যাবেন কনসালট্যান্টরা

হ,বেশি কইরা ডা. হ

রোদ্দুর ডা.নূরুল হুদা খান to প্ল্যাটফর্ম

Tuesday, November 22, 2016

আমাকে আর ছোট করোনা এই দেশের মানুষের কাছে।

#আমাকে নার্সের সমপরিমাণ ১৮ হাজার টাকা বেতন দিয়ে, আমার কাছ থেকে ডাক্তারের সার্ভিস আশা করো না।

#আমাকে ৪ বছর বিনা বেতনে ডিউটি করিয়ে, আমার কাছে থেকে উদারতা আশা করোনা।


#আমাকে রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে কার্যসিদ্ধি করে, আমার কাছে বৈষম্যহীন আচারন চেওনা।

#আমাকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে ফর্ম ফিল আপ করিয়ে, ১০ টাকার বোতলের ফ্রেস পানি দিয়ে ক্ষুধা নিবারণ করে, ফ্রি রোগী দেখতে বলোনা।

#আমাকে আজিজের বদ্ধ রুমে রেখে সামাজিকতা শিখতে বলোনা।

#আমাকে ৫০/১০০ টাকা ভিজিট দিয়ে, আমাকে ফিজিশিয়ান স্যাম্পল বিক্রিতে বাধা দিওনা।

#আমাকে সরকারি পানিঝরা ছাদের তলায় আর ফ্যানহীন উত্তপ্ত রুমে রেখে, মাথা ঠান্ডা রাখতে বলোনা।

#আমার হাস্পাতালে সব ইনভেস্টিগেশন সুবিধা না রেখে, আমাকে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী পাঠাতে বারণ করোনা।

#আমাকে লোকাল বাসে উঠিয়ে, ২৪ জায়গায় থেমে ঠিক সময়ে আসতে বলোনা।

#আমাকে তদবির করে চাকরি দিয়ে, সততার বাস্তব উদাহরণ হতে বলোনা।

#আমাকে হাজার টাকা খরচ করে কোর্স করিয়ে সেটা নামের পাসে লিখতে বারণ করোনা।

#আমাকে ১০,০০০ টাকায় মাস চলা রেসিডেন্স বানিয়ে, অন্য চাকরি করতে মানা করোনা।

#তুমি আমাকেই না ভালোবাসে, রোগীকে ভালোবাসতে শিখিয়ো না।

সর্বোপরি আমাকে আর ছোট করোনা এই দেশের মানুষের কাছে।না হয়, আমি যেদিন তোমাদের চেয়ারে বসবো, আমি তোমাদের চেয়েও খারাপ মানুষ হব, হয়ে উঠবো উন্নত মস্তিস্কের লোভী একজন প্রতিষ্ঠিত মানুষিক রোগী।

>> কালেক্টেড পোস্ট <<

Thursday, November 17, 2016

সত্য ঘটনার উপরে ভিত্তি করে লেখাটা লিখা (অতি গোপনীয়)

শুনলাম, ট্রেনিং পোশট নিয়ে ভানুমতির খেলা শুরু হয়েছে। এ জিনিসটা অনেক আগেই আন্দাজ করেছিলাম। অনেক মেডিকেল কলেজ কিন্তু ট্রেনিং পোশট নেই।পোশট গেল কই? অনেক পুরানো এই লেখায় জবাব পেতে পারেন।
 ২ মার্চ , ২০১৫ সালের লেখা এটি।
..........................................................................................................

আইজকে আমি আপনাদের যেই গল্পটা বলবো সেইটে আপনেরা সকলে জানেন। হয়ত অনেকে জানেও না।
আমি মেলা হীশাব নিকাশ কইরে দ্যাখলাম, ডাক্তার আছে তিন পদের। একপদ এম বি বি এস পাস দিয়া বিসিএস দেয়, গেরামে যাইয়া কাচা টেকা পয়সা দেইখখা লোভ সামলাইতে পারে না , এইডা করে ,ওইডা করে , আল্ট্রা করে, ফোড়া কাডে আর মাল কামায়। এগো জীবনের মকছদ আর কিছুই থাকে না। শেষ বয়সে উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর চীফ হয়, নাইলে সিভিল সার্জন হয়।

গল্পের সুবিধার জন্য মনে করি , দ্বিতীয় শ্রেনীর প্রতিনিধি একজন এর নাম "লাবনী" আর তৃতীয় শ্রেনীর একজনের নাম "জাফর "
দ্বিতীয় পদের ডাক্তার (লাবনী) হইলো বাপ মা এর আদরের দুলাল আর দুলালী। বাপের বেশুমার কালো টেকায় তারা ভিকারুন্নেছায় পড়ে , নটরডেমে পড়ে ,ইন্টার পাস সরকারী কুনু জায়গাতে চান্স পায়না। শেষে গিয়া ভর্তি হয় হয় ব্রাক ভার্সিটিতে নাইলে একটা বেসরকারী মেডিকেলে।

তৃতীয় পদের ডাক্তার (জাফর) হইলো , মধ্যবিত্ত পরিবারের যাগো আব্বা ছোট খাট চাকুরী কইরা অনেক কস্ট কইরা পোলা মাইয়ারে ডাক্তার বানাইছে নিজের মানসিক শান্তির জন্য, আর পোলাটা / মাইয়া টা যেন দুধে ভাতে থাকে সেই জন্য নিজে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম কইরা পোলাপানরে মানুষ করে।

প্রথম পদের ডাক্তারদের কথা বাদ। তারা সিভিল সার্জন হইবো, তারা গ্রামে টাকা কামাইতেছে, কামাইতে থাকুক।
দ্বিতীয় শ্রেনীর ডাক্তাররা (লাবনী) কিভাবে তৃতীয় শ্রেনীরে ( জাফর) শোষন করতেছে আজ তার গল্প বলি। যারা বেসরকারী মেডিকেলে ভর্তি হয়, স্বাভাবিক ভাবেই তারা সরকারীতে পরুয়াদের থেকে মেধায় অনেকাংশে দূর্বল ( তবে বেসরকারীতে প্রচুর ভালো ছাত্র আছে যারা এফ সি পি এস / এম ডি তে চান্স পাচ্ছে) ।

দূর্বল মেধার এত বিপুল সংখক চিকিতসক প্রতি বছরই নামসর্বস বেসরকারী মেডিকেল থেকে পাস করে বের হচ্ছে। এরা এত বছর কোন পোস্ট গ্রাজুয়েশন পরীক্ষায় কিছু করতে পারতো না। এদের সময় কাটতো বিভিন্ন ক্লিনিকের খ্যাপ বা ডিউটি নিয়ে কামড়া কামড়ি করে।

৩৩ তম বিসিএস এই বিশেষ শ্রেনীর জন্য আশীর্বাদ নিয়ে আসে। ৬৫০০ জনের বিপুল সঙ্খ্যক নিয়োগের জন্য ,যারা হয়তো জীবনেও কোনদিন বিসিএস এ কোয়ালিফাই করতে পারতোই না, তারাও চাকরী পেয়ে যায়। চাকুরী হইলো, এইবার পোস্টিং যখন হবে তখন এই লাবনীর মনে অনেক দুর্ভাবনা। কারন তার দেশের বাড়ী সন্দ্বীপ। সেখানে পাঠাইলে তার ঢাকার ঠাটবাট আর থাকবে না। আর জাফরের বাড়ি হইলো সাভারে। পোস্টিং এর সময় লাবনী প্রতাপশালী পিতার অঙ্গুলীহেলনে নিজ নিজ থানায় পোস্টিং এর নিয়মকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে লাবনীর পোস্টিং হয় জাফরের উপজেলায়, সাভারে। আর জাফরকে যাইতে হলো সন্দীপে।

সাভারে কিছুদিন থাকার পরেই লাবনীর আর ভালো লাগেনা, ঢাকা থেকে সাভার অনে এ এ এ ক দূরে, আর কেমন যেন ময়লা ময়লা লাগে সবকিছু। সে ডিজি হেলথে যায় । তার অনেক সখ ছিলো ঢাকা মেডিকেলে পড়ার। পড়তে যেহেতু পারে নাই, এসিস্টেন্ট রেজিস্ট্রার হইয়া সে দেখাইয়া দিবে যে খবিরুন্নেছা মেডিকেল থেকে পাস করেও ঢাকা মেডিকেলে ঢোকা যায়। কিন্তু মাত্র চাকরির ৬ মাস অতিক্রান্ত হোওয়ায় এবং এফ সি পি এস/ এম ডি পার্ট ১ না থাকায় ডিজি তারে দিলো ফিরাইয়া। তখন লাবনী গেল তার আব্বুর কাছে, আব্বু আবার তার জাদু দেখাইলো। ফলে ৩৩ বি সি এস সহকারী সার্জন লাবনী চাকরীর ৬ মাসেই , কোন পার্ট ১ ছাড়াই সরাসরী ঢাকা মেডিকেলের রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ পেয়ে গেল।

এইবার আসেন দেখি, জাফর কি করে? সে দুই বছর সাগর পাড়ি দিয়া লাবনীর এলাকার লোকজনকে সেবা দিয়া গেল । তারপরে যখন দুইবছর শেষ হইলো, সিলেট মেডিকেলের সাবেক ছাত্র , মেডিসিনে এফ সি পি এস পার্ট ১ পাস করা জাফর গেল ঢাকা মেডিকেলে একটা ট্রেইনিং পোস্ট এর জন্য । কিন্তু সেখানে কোন পোস্ট খালি ছিলো না। যা খালি ছিল, তা লাবনীরা সব দখল করে রেখেছে দেড় বছর আগেই। জাফরদের এখন দীর্ঘদীন গ্রামেই থাকতে হবে। ট্রেনিং ? সে তো দুরাশা

( সত্য ঘটনার উপরে ভিত্তি করে লেখাটা লিখা। গত ৩ মাসে ৩৩ বিসিএস প্রায় ৩৩ জন চিকিতসক নিয়ম বহির্ভুত ভাবে বিভিন্ন মেডিকেলে পোস্টিং নিয়েছেন। এমনকি গতকালও তায়রেন্নুছা মেডিকেলের সাবেক ছাত্রকে আই এম ও পদের একটি সরকারী মেডিকেলে পদায়ন করা হয়। এই সব অর্ডার অতি গোপনীয়। হাতে হাতে তৈরী করে হাতে হাতেই দিয়ে দেয়া হয় )

Sunday, November 13, 2016

কারন আমি মরে যাবো। আজ নয়তো- কালই।

১.
-বাবা ক্লাস ফাইভে কিন্তু ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেতেই হবে।না হলে জীবন বৃথা।
-আচ্ছা পেলাম।
২.
-ক্লাস ফাইভে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছো। অবশ্যই ক্লাস ৮ এ পেতে হবে।মিস করা যাবেনা।
-পেলাম না।
-তুই নষ্ট হয়ে গেছিস। লজ্জা করেনা তোর।
তোর তো মরে যাওয়া উচিত। চামার।
৩.
-এসএসসি তে তোর ভালো রেজাল্ট না হলে লোক হাঁসবে। ৮ এ বৃত্তি পাসনি এমনি তেই তুই নষ্ট। এবার তো প্রমাণ কর গোল্ডেন প্লাস পেয়ে।
-আচ্ছা পেলাম।
৪.
-ওসব অনেকেই এসএসসি তে পায়। তারপর কই হারায়ে যায়। পেয়ে দেখা না গোল্ডেন ইন্টারে কেমন পাড়িস?? আর না পাড়লে গার্মেন্টস এ যাহ। কাজ করিস।
-আচ্ছা গোল্ডেন পেলাম।
৫.
-মেডিকেল চান্স পেয়ে দেখা। তারপর দেখবি জীবন টা কত সুখের। চান্স না পেলে কি ছিড়বি? ওসব রেজাল্ট অনেকেই করে। না হলে আইএসএসবি দে লং কোর্সে যা।
-লং কোর্সে আই এসএসবি তে অ্যাটেন্ড করলাম না।চান্স ও পেলাম না।
-আরে তুই তো নষ্ট হয়ে গেছিস। বলেছিলাম না???
তোর চুলের যোগ্যতাও নাই বেঁচে থাকার। তুই তো বস্তির বখাটেরও অধম।আত্নহত্যা কর।
৯৯.৯৯% সিউর থাক তুই কোথাও ই চান্স পাবিনা আর।
৬.
-ঢাকা ডেন্টাল,
-পাবনা মেডিকেল কলেজ।
৭.
এমবিবিএস একবারেই পাশ করতে হবে।
- জানিনা।
তারপর??
৮.
-বিসিএস
তারপর??
৯.
-এফসিপিএস/এমডি/এম এস
পোস্টগ্রাজুয়েশন না করলে তোর আবার পরিচয় কিরে??
-তুই তো নষ্ট হয়ে গেছিস। পড়াশুনা করিস না। এমবিবিএস টা
পাশ করতে পারবি তো সারাজীবনে?
-পেটের ভাত টা তোর কই থেকে আসবে জানিস তো??
তোর মত আবালের/ফাঁকিবাজের ভবিষ্যৎ কি হবে জানিস তো??
১০.
-আচ্ছা ধরেন সব হলো।
এমবিবিএস,পোস্ট গ্রাজুয়েশন??? তারপর??
তারপর কি??
মরে যাবো না?
মরে যাবো তো?? না কি??
আর কত্ত চাপ??
কবে সুখ???
কিসের সুখ???
কিসের ভেতরে সুখ???
সম্মান??? মুখ দেখানো যাবেনা আমাকে নিয়ে??
নিজের মুখ টা দেখালাম না হয়???
আচ্ছা সব চান্স পেয়ে পরদিন যদি খুন হয়ে যাই??
অমিত ভাই এর মত রাতের আঁধারে সামান্য কিছুর লোভে কেউ যদি মেরে রেখে দেয়??
এই যে রাস্তায় মরছে?? প্রতিদিন।
পাতি নেতার মাস্তানি তে থাপ্পড় খেয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছে...
জীবন কই??সম্মান??? কিসের সম্মান??
সুখ কই?? এসবে??
১১.
সেই তো ছোটবেলা থেকে বলে এসেছেন। পড়।
কলেজে গেলে তোর অই ভাইয়ার মত ভালো কলেজে পড়বি। অনেক সুখ পাবি।
-আমার বাল,বালের সুখ পাইছি।
তারপর শুনেছি,ভালো জায়গায় চান্স পেলে সুখ পাবি।
তোর অই চাচা বুয়েটে পড়ে।তোর অই মামা ডাক্তার।
-কই?? কই সেই অধরা শান্তি???
আমার মন জুড়ে এখন অশান্তি,বিষিয়ে ওঠা নরক যন্ত্রণা।
অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ আর উদর পূর্তির ভাবনা ভেবেই কাটালাম চিরকাল।
-আমার আর ভালো লাগেনা এসব।
আমি মন ধরে বেধে চেয়ার টেবিলে বসি কুত্তার মত পড়তে।
আমি পারিনা।
আমার সব ছেড়ে চলে যেতে ইচ্ছে করে।
আমার কিছুই ভালো লাগেনা।
-আমি সভ্য নই।
আমার স্থান মানুষ্যলয়ে নয়।
-আমি দুর্বল।
আমার স্থান ওপাড়ে।
#সফলতার আলো ঝলমলানির মেকি হাঁসি,
একটার পর একটা লক্ষ্যের পেছনে পশুর মত ছুটে চলা।
পকেট ভর্তি কাঁচা টাকা,
ব্যাংক ব্যালেন্স,নিজের বাড়ি, পার্সোনাল কার। আমার না বিন্দু মাত্র টানেনা কিছুই।
কারন আমি মরে যাবো। আজ নয়তো- কালই।
(Collected)

Monday, October 24, 2016

বাংলাদেশের প্রসূতি সেবা ও সিজারিয়ান ডেলিভারি

আপনি কখনো শুনেছেন হলিউড/বলিউডের কোনো নায়িকার সিজার করে বাচ্চা হয়েছে? আত্মীয় বন্ধু যারা ইউরোপ/আমেরিকায় বউ নিয়ে থাকে, তাদের বউয়ের ও সিজারে বাচ্চা হয়েছে শুনি নাই।
 তার কারন ওদের বাচ্চা হইবার আগে গাইনি ডাক্তার আত্মা শুকানো ভয় দেখিয়ে বলে না, পানি শুকিয়ে গেছে, নুচাল কর্ড (নার) প্যাঁচিয়ে গিয়েছে, পজিশন উল্টায়া গিয়েছে।
-
বিশ্বের কোথাও দাঁড় করানো অজুহাতে পেট কেটে বাচ্চা বের করে না, একমাত্র বাংলাদেশে বাচ্চা জন্ম দিতে গেলে গাইনি ডাক্তারদের হাজারো অজুহাত। আপনাকে এমন সব ভয় দেখাবে যে, অনাগত বাচ্চার সামনেই কাল্পনিক কাঠ-গড়ায় দাঁড় করিয়ে দিবে। বলবে, এ মুহুর্তে সিজার না করলে বাচ্চা বাঁচানো যাবে না, দায় দায়িত্ব আপনার। এছাড়াও ডেলিভারি পেইন নিয়ে ক্লিনিকে যাবেন তো দিবো
একটা ইঞ্জেকশন দিয়ে ব্যাথা শেষ, এইবার এ অজুহাতেও পেট কাটো।
-
এখনতো আবার গাইনি ডাক্তাররা অজুহাতও দেখায় না, ডাইরেক্ট বলে দেয় আমি নরমাল ডেলিভারি করাই না।
-
কী আজব দেশ রে ভাই, এত সিজার ডেলিভারি বিশ্বের আর কোনো দেশে হয় কি?? অনেক মায়েরা ও কম যায় না, আগেই চুজ করে সিজারে বাচ্চা নিবে, একটুও কষ্ট সহ্য করবে না, এটা হল ডি-জি-টা-ল ফ্যাশন/ইস্টাইল।
-
আজব এই দেশে, জন্ম নিয়ন্ত্রণ, শিক্ষার হার, বৃক্ষ রোপন, টিকা দান, শিশু মৃত্যু হার রোধ, এসব কিছুতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সবুজ মার্ক পেলেও সিজার ডেলিভারি নিয়ে লাল দাগ খেয়ে বসে আছে অনেক বছর, সরকার কিন্তু স্পিকটি নট।
-
স্বঘোষিত নরমাল ডেলিভারি না করনেওয়ালা গাইনি ডাক্তারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া ওয়াজিব হয়ে গেছে। এক বন্ধুর কাছে শুনলাম আমেরিকাতে নাকি বাইশ ঘন্টা ডেলিভারি, পেইনের পরেও ডাক্তার সিজার করে নাই, সুস্থ বাচ্চা হয়েছিলো, মা ও সুস্থ ছিল।
-
আমার পরিচিত এক গাইনি ডাক্তার (MBBS, DGO) পঁচানব্বই ভাগ নরমাল ডেলিভারি করাতো বিধায় কোনো ক্লিনিক তারে নিতে চায় না। এই ডাক্তার এ-ক্লিনিক ওই-ক্লিনিক, এ-জেলা ওই-জেলা ঘুরে ঢাকার মিরপুরের এক অখ্যাত ক্লিনিকে।
-
কিছুদিন আগে মহাখালীর আয়েশা মেমোরিয়াল হসপিটালে গিয়েছিলাম একজন ডোনার নিয়ে, হঠাৎ করেই রিসিভশনের দিকে নজর গেলো, দেখলাম একজন সিজারের পেসেন্টের স্বামী কাঁদতেছে। কাছে গিয়ে বিষয়টা জানতে চাইলে সে বলল, ভাই আমার বাসায় বউয়ের নরমাল ডেলিভারিই হইতো, কিন্তু রক্তস্বল্পতা ছিলো বলে নিয়ে আসলাম এখানে, ভাবলাম এখান থেকে রক্ত দিয়ে নিয়ে যাবো। কিন্তু নিয়ে আসার পর তাদের (ডাঃ) এমন অবস্থা, মনে হচ্ছে যেনো সোনার খনি পেলো। রক্ত দেয়ার পুর্বে এই টেস্ট সেই টেস্ট, অবশেষে বলে সিজার না করালে আপনার বাচ্চাকে বাঁচানো যাবে না। কি আর করমু কন, এখন তারা সিজার করাইয়া ১,৪২,০০০টাকার একটা বিল ধরাইয়া দিছে।
-

  সিদ্ধান্ত আপনার, আপনি এখন আপনার স্ত্রী/বোন/মাকে কি সিজার ডেলিভারি করাইবেন, নাকি নরমাল???

---Collected---

Wednesday, October 5, 2016

সব আনন্দ জগানন্দের...(মেডিক্যাল ভর্তি ইচ্ছুকদের প্রতি এই লেখাটি উৎসর্গকৃত)



সব আনন্দ জগানন্দর ই।তা না হলে এ ইঁদুর মারার কলে লেজটা সবার আগে ও ই বাড়িয়ে দেবে কেন ? ইঁদুর মারার কল মানে মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার কথা বলছি।আজকে ভর্তি পরীক্ষায় আমাদের হলে যে ছেলেটি সবার আগে প্রবেশ করে তার নাম জগানন্দ রায়।

শার্টে শরীরটা আঁটছেও না সাঁটছেও না।বাংলা কিংবা তামিল ছবির নায়কের মতোই ফেটে ফেটে বেরিয়ে আসতে চাইছে।
আমি ওকে বললাম ‘পাঁচ মিনিট পড়ে ঢুকো’।

মাজা মোচড়াতে মোচড়াতে সে খানিকটা দূ্রে গেল ঠিক ই।ঘাড়ের একটা রগ ত্যাড়া হলে কিংবা কলেজের ভিপি হলে যা হয়,তাই হল। সে সাথে সাথেই ফিরে এল ‘ঐ রুমে যে সবাই ঢুকছে?’

এমন ভাবে চোখ পাকালাম ভিপি জগানন্দ আর রা করলো না..
আমরা হাতের কাজ শেষ করে দরজা খুলে দিলাম...
দুদ্দাড় সবাই পরীক্ষার হলে প্রবেশ করলো...অগ্যস্ত যাত্রার রিহার্সেল।
নির্বাক আটপৌ্রে দর্শক আমি।




নিষেকের পর ডিম্বক যে দশা প্রাপ্ত হয়-তাকে কি বলে ?
খাতা সাইন করতে করতে চোখ আটকে গেল কোশচেন টা তে।যেন কুয়োর মধ্যে নিজের প্রতিবিম্ব দেখছি।আজ থেকে ১৪ বছর আগে আমিও এমন এক ডিম্ব কে নিষিক্ত করে মেডিক্যাল লাইফের ভ্রুনের জন্ম দিয়েছিলাম।
যার ঘানি এখনও টানছি।

কুয়োর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তের নিশ্চিত ‘কামড়া-কামড়ি’র ভবিষ্যতটা দেখতে পাচ্ছি।চাইছিলাম ‘সাদিয়া জাহান টুম্পার’ সব গুলো এন্সার যেন ভুল হয়।সে যেন গ্রে-গাইটনের দিস্তা দিস্তা কাগজের কালো অক্ষরে চাপা না পড়ে...
চাইছিলাম, সে যেন না পড়ে ‘চিকিৎসকের অবহেলায় রুগীর মৃত্যু’ নামক হলুদ সাংবাদিকতার পাতা ফাঁদে।
আশ্চর্য হয়ে খেয়াল করলাম এই অর্থহী্ন চাওয়া টা আমার পাপবোধের ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরিতে কোন লাভাকে উপর-মুখ করতে পারলো না।




জগানন্দের খাতাটা সাইন করছি...
হলে ঢোকাতে তার যত না তাড়া ছিল ‘গুলতি’ পূরনে যেন ততটাই অনীহা।
এন্সার শীট যেন সাইবেরিয়ার তুন্দ্রা অঞ্চল।বসতি-হীন।
অনেককে দেখলাম ঢাকা শহরের বস্তির মত পুরোশীট ভরে ফেলছে কালো কালো গোল্লা গোল্লা খুপড়িতে।তাদের জন্য মায়া হল।

নির্ঘাত জগানন্দকে বাসা থেকে জোর করে পাঠানো হয়েছে।

মনে মনে ভাবছি মেডিক্যালে চান্স না পেলে সিউরলি সে জগতের কোন আনন্দ থেকেই বঞ্চিত হবে না।
বন্ধুর বিয়ে খাওয়ার আনন্দ,অফিস শেষে পেট চেদরিয়ে শুয়ে থাকার আনন্দ,ডাক্তারের পিণ্ডি চটকানোর আনন্দ।রাত-বিরেতে ঘুম না ভাঙ্গার আনন্দ।আইটেম পেন্ডিং না খাওয়ার আনন্দ।সাপ্লি না খাওয়ার আনন্দ।
কোন আনন্দ থেকেই বঞ্চিত হবে না জগানন্দ।

এ হাতেই হয়ত ভাংগবে ডাক্তারের চেম্বার।




জানের ভয়ে হয়তো জুতা ফেলেই দে-দৌড় দিবে এ হলেরই কেউ একজন।
ব্যস্ত ডাক্তার।
ভাংচুর হবে তার চেম্বার
কারন রোগীর মৃত্যুর জন্য আজরাইল না ডাক্তার সাব দায়ী, তিনি তো 'অমরত্ব' নিয়ে পৃথিবীতে এসেছিলেন।
আমি তার খাতাটাই সাইন করতে খুঁজছি।
কে সে ?

>> কালেক্টেড পোস্ট <<

Wednesday, September 28, 2016

আমাদের ভারতপ্রীতি ও হে বঙ্গ ভান্ডারে তব বিবিধ রতন


প্লট-১(#পিঁপড়ার_দল)

ওয়াইফ MRCPCH(UK) পরীক্ষা দিবে, এক্সাম সেন্টার হয় কোলকাতা অথবা মুম্বাই বা চেন্নাই।ভিসা সংক্রান্ত কাজ কমপ্লিট করার জন্য মতিঝিলের #State_Bank_of_India তে গেলাম।সিরিয়ালে আটকা পড়লাম, আমার আগে আরও প্রায় ১৫ জন লোক।সিরিয়ালে আমার সামনে থাকা লোকের সাথে টুকটাক কথা বলে সময় পার করছি ।

কথায় কথায় জানলাম উনিও উনার ওয়াইফকে নিয়ে ইন্ডিয়া যাচ্ছেন, ওয়াইফ Ankylosing Spondylitis( এক ধরণের বাতব্যাথা রোগ) এ আক্রান্ত।আমি একটু আমতা আমতা করে বললাম,'ইন্ডিয়া যাচ্ছেন কেন? যতদূর জানি এর চিকিৎসা তো এদেশেই হয়, আমার মামাতো ভাইতো এদেশেই চিকিৎসা নিচ্ছে'।

উনি বলে উঠলেন, "দূর, দূর, আর বইলেন না, এদেশের ডাক্তাররা কিছু জানে নাকি! সব মূর্খের দল।দেখেন না, আমার সামনের জন সেও চিকিৎসার জন্য ইন্ডিয়া যাইতেছে"।তার সামনের ভদ্রলোক মাথা নেড়ে এই কথায় সায় দিলেন, যতটুকু বুঝলাম Hepatitis B virus carrier, এর পারফেক্ট চিকিৎসা এদেশেই আছে, তারপরও যাচ্ছেন।এবার সে লোকের কথায় জানলাম তার সামনের লোকও চিকিৎসার জন্য ইন্ডিয়া যাচ্ছে, আমি ভিমরী খেলাম।

আমি মোটামুটি নিশ্চিত হলাম, আমার সামনের ১৫ জনের মধ্যে মিনিমাম অর্ধেক চিকিৎসার জন্য ইন্ডিয়া যাচ্ছেন।আমি এদের সাথে আংশিক কথাবার্তায় এটাও নিশ্চিত হলাম এদের অধিকাংশের চিকিৎসা এদেশেই সম্ভব ছিলো।

আমার সামনের জন আমি কেন ইন্ডিয়া যাচ্ছি তা জানতে চাইলেন।এই দেশের ডাক্তারদের যে লোক একটানে মূর্খ বলে রায় দেয়, তার কাছে কিভাবে বলি যে চিকিৎসা বিদ্যার উচ্চশিক্ষার জন্যই আমার এই মুভমেন্ট।মূল ঘটনা চাপা দিয়ে বললাম, 'ঘুরতে যাচ্ছি'।এবার ভদ্রলোকের চোখ চকচক করে উঠলো, বললো, "যান, যান, ঘুইরা আসেন, আহাহা! কি সুন্দর দেশ ! কয়েকবার গেছি।কোন কোন জায়গায় ঘুরবেন, সেইটা একটু বলি......"


প্লট-২(#ঝড়ে_বক_মরে)

আম্মু ESRD (#Irreversible, দীর্ঘমেয়াদী কিডনী জটিলতার শেষ পর্যায়) এর পেশেন্ট।আমার আত্মীয় সজনের বধ্যমূল ধারণা আম্মুকে ইন্ডিয়া নিয়ে গেলে উনি সুস্থ হয়ে যাবেন, আমি অবহেলা করে নিচ্ছিনা।একজন তো মা'র সামনেই বলে ফেললেন, "ছেলেটা আপনেরে ইন্ডিয়া নিলে বাঁইচা যাইতেন।সঠিক শিক্ষা দেন নাই, তাই বাপ-মায়ের দিকে নজর কম"।

বার বার বললে অসত্য তথ্যও সত্যের মত শোনায়। বাইরের লোকদের কথায় একসময় আম্মু মোটিভেটেড হলেন, বললেন, 'ইসহাক সাহেবেরও তো #ক্রিয়েটিনিন(এক ধরণের কিডনী ফাংশন মার্কার) ১২ ছিলো, ইন্ডিয়া গিয়ে ভালো হইছে।আমারে একটু ইন্ডিয়া নিয়ে দেখবি?' আমি বিরক্ত হলাম, বললাম, 'বাইরের লোকের কথা বিশ্বাস কর, আর আমার উপর বিশ্বাস নাই? ঠিক আছে, ইসহাক সাহেবকে কাগজপত্র নিয়া আসতে বল, দেখি ইন্ডিয়া কি ম্যাজিক দেখাইছে'।

ইসহাক সাহেবের কাগজপত্র আসলো।যা ভেবেছিলাম তাই--উনার ডায়াগনোসিস ছিল AKI( এক ধরণের #Reversible কিডনী ইনজুরী), Proper চিকিৎসা পেলে উনি এদেশেও ভালো হতেন।Reversible এই রোগের নামকাওয়াস্তে চিকিৎসা দিয়ে ইন্ডিয়ান ডাক্তরারা পার্টটা ভালোই নিয়েছে, --'কেউ পারতো না, যা ব্যাটা, তোরে ভালো কইরা দিলাম'।--"ঝড়ে বক মরে, হুজুরের কেরামতি বাড়ে"--কথাটা জানতাম, ঐদিন নিজ চোখে ইন্ডিয়ার হুজুরদের কেরামতি দেখলাম।


প্লট-৩(#বাটপারী_ওভারলোডেড)

আমি যে জায়গায় পেশেন্ট দেখি সে জায়গাটা হিন্দু অধ্যুষিত, কিছু হলেই এখানকার রোগীদের একটা বড় অংশ ইন্ডিয়া ছোটে।

চেম্বারে রোগী দেখছিলাম।রোগী ঠিকমত হাটতে পারে না।ইন্ডিয়াতে গিয়েছিলো, কাগজপত্র দেখলাম। মিনিমাম ৫০ টা পরীক্ষা, আই রিপিট, মিনিমাম ৫০ টা ইনভেস্টিগেশন করানো, Serum Trypsin লেভেলও করা।রোগী হাটতে না পারার সাথে Serum Trypsin লেভেলের ইহকালে বা পরকালে কোন সম্পর্ক আছে বা থাকতে পারে বলে আমার জানা নেই।
ক্লিনিক্যাল এক্সামিনেশন শেষে প্রেসক্রিপশনে ডায়াগনোসিস #CIDP( এক ধরণের নার্ভের রোগ) লিখে রোগীকে পরবর্তী চিকিৎসার জন্য আগারগাঁ Neuroscience Institute এ রেফার করলাম।

এতক্ষণ পরে চোখে পরলো, রোগীর স্ত্রী যক্ষের ধনের মত কি একটা যেন হাতের মধ্যে আগলে রেখেছেন।এক্সপ্লোর করে দেখি রোগীকে প্রেসক্রাইব করা ইন্ডিয়ান মাল্টিভিটামিন।৫০ পরীক্ষা শেষে মাল্টিভিটামিন!!! বাটপারির একটা সীমা থাকা উচিত--ভারতীয় মুভির একটা ডায়ালগ মনে পড়ে গেল--"ইন্ডিয়া, তুসি গ্রেট হো!"


প্লট-৪(#ইন্ডিয়ান_রামধরা)
 
এবারের কাহিনী কিংবদন্তী এক নিউরোলজিস্ট স্যারের,ঘটনাটা অনেক ডাক্তারই জানেন।এক আমলা নিউরোলজিস্ট স্যারের কাছে রোগী হিসেবে এলে স্যার ক্লিনিক্যালি ডায়াগনোসিস করলেন #GBS( এক ধরণের নার্ভের সমস্যা)।
আমলা সাহেবের তাতে মন ভরলো না।আমলা সাহেব ইন্ডিয়াতে গিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করবার পর তাকে জানানো হলো তার রোগ-GBS...." নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস,ওপারেতে সর্ব সুখ আমার বিশ্বাস"...আমলা সাহেব ওপারের সুখের স্বাদ নিতে গিয়ে রামধরা খেলেন.....


#Bangladesh_vs_India
 
(হায়রে কপাল মন্দ, চোখ থাকিতে অন্ধ)
World Health Organization(WHO) ২০১৬ সালে Health Sector এর সামগ্রিক দিক বিবেচনা করে যে ১৯০ টি দেশের World Ranking প্রকাশ করে সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৮ তম।ইন্ডিয়ার পজিশনটা জানা আছে?--১১২ তম(Screenshot কমেন্টে)।WHO এর কর্তাব্যক্তিরা ঘাস খেয়ে এই Ranking তৈরি করে নাই। এই Ranking দেখার পরও ইন্ডিয়াতে গণহারে যারা চিকিৎসার জন্য যান, তাদেরকে দেখে একটা কথাই আমার মাথায় ঘোরে-'#হায়রে_কপাল_মন্দ, #চোখ_থাকিতে_অন্ধ....'

ভারতের #নোবেল_বিজয়ী অর্থনীতিবিদ #অমর্ত্য_সেনের কথাগুলো হুবহু তুলে ধরি, “ভারত অর্থনৈতিকভাবে অনেক এগিয়ে থাকলেও তারা স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সংক্রান্ত সূচকে বাংলাদেশের তুলনায় অত্যন্ত পিছিয়ে।........ভারত স্বাস্থ্য সমস্যাকে জটিল করেছে। কিন্তু বাংলাদেশে এটি হয়নি। বাংলাদেশ গত এক দশকে এই খাতে ভাল উন্নতি করেছে।....... ভারতের মাথাপিছু জিডিপি বাংলাদেশের দ্বিগুণ, কিন্তু বাংলাদেশের গড় আয়ু ভারতের চেয়ে বেশি।”

যে কথা ভারতের সজ্জন ব্যক্তিরা স্বীকার করেন, জানেন ও বোঝেন, জাতিগতভাবে বেশী বুঝদার বাঙালীর সেটা বুঝতে সমস্যা হয়।যে দেশে এখনও millions of people- Open air defecation( সোজা বাংলায় -খোলা ময়দানে মলমূত্রত্যাগ) করে, আমাদের দেশের একশ্রেণীর লোক সেদেশে গিয়ে চিকিৎসা নিয়ে আনন্দিত হয়, তৃপ্তির ঢেকুর তোলে।ভালোই.....

যে দেশের অবস্থান WHO ranking এ ইন্ডিয়ার আগে, যে দেশের বিশেষজ্ঞরা খোদ ভারতে গিয়ে ভারতকে দ্বিতীয় বানিয়ে নিজেরা প্রতিযোগীতায় প্রথম হয়(APLAR আয়োজিত প্রতিযোগিতায়), যে দেশে Kidney transplant এ নবদিগন্ত রচিত হচ্ছে, যে দেশের চিকিৎসকরা Tree man syndrome( Epidermodysplasia verruciformis) নামক rarest রোগের চোখধাঁধানো অপারেশনের নেতৃত্ব দেয়, যে দেশের চিকিৎসকরা মাতৃগর্ভে গুলি খাওয়া শিশুকে তাদের প্রজ্ঞা ও ধী-শক্তির সহায়তায় আবার তার মায়ের কোলে ফিরে যাওয়াকে নিশ্চিত করে--সে দেশ থেকে চিকিৎসার জন্য পিপীলিকার মত লোক ইন্ডিয়াতে কেন যায়?


#কারণগুলো_কিন্তু_পরিষ্কারঃ


১. #কাউন্সেলিং_এর_অভাবঃ আমি জানি, এদেশের চিকিৎসকরা রোগ ধরতে যথেষ্ঠ পারদর্শী, কিন্তু ৫ মিনিট রোগীর সাথে রোগ নিয়ে কথা বলতে তাদের বাঁধে।এ সুযোগটাই ইন্ডিয়া নেয়।ওপার বাংলায় যাওয়া মাত্রই "ওপার থেকে দাদা এসেছেন" বলে হাত ধরে তারা যখন আমাদের দেশের রোগীকে হাসপাতালে ঢোকান, তখন এই বাঙালির নরম হৃদয় আবেগে আপ্লুত হয়। ভুলেও এই বাঙালি বুঝতে পারে না যে "দাদা, দাদা" বলে ওনারা অলরেডী গাছের গোড়া কাটা শুরু করেছেন....

২.#পেইড_মিডিয়াঃ এটাও কি বলে দিতে হবে যে কোন্ কোন্ মিডিয়া এই পেইড দলের অন্তর্ভুক্ত? যদি ধরতে না পারেন তবে epic fantasy novel series-- "A Song of Ice and Fire" এর একটি ডায়ালগ মনে করিয়ে দেই- "You know nothing, Jon Snow".....

৩.#পেইড_এজেন্টঃ ইন্ডিয়ায় পোষ্ট গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট হয় ৩ বছরে, যেখানে আমাদের দেশে লাগে ৫ বছর।৩ বছরে তৈরি হওয়া এই দুর্বল বিশেষজ্ঞের কিছু অংশ নিজ দেশে ভাত না পেয়ে আমাদের দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দুর্বলতায় এদেশে আসন গাড়ে।হাজার হাজার টাকা ভিজিট নিয়ে একসময় বলে পরবর্তী চিকিৎসা হবে ইন্ডিয়ায়, ইন্ডিয়ার ভিজিটিং কার্ডটাও ধরিয়ে দেয়।কি বিশ্বাস হয় না? লিঙ্ক লাগলে বলবেন, খবরটা ধরিয়ে দেব।

একটা কথা না বললেই নয়--এই পেইড মিডিয়া ও পেইড এজেন্টের জন্যই আজ বাংলাদেশে Kidney Transplant বন্ধ হবার দশা, কিছু চিকিৎসকদের অনৈতিকতাও দায়ী।ইন্ডিয়াতে গেলে এই অপারেশনের খরচ পড়ে ১৫-২০ লাখ টাকা, এর ঝুটা একটা অংশ এই পেইড মিডিয়া ও এজেন্ট পায়।বাংলাদেশে এই অপারেশন শুরু হবার পর "ঝুটা" বন্ধ হবার উপক্রম হলো, কাজেই প্ল্যান করে Kidney Transplant বন্ধ করা হলো।বাংলাদেশে এই অপারেশনের খরচ পড়তো ২ লাখ টাকা।নিজ দেশের হাজার হাজার লোকের জীবন তো বাঁচতোই, কম খরচের জন্য এসব দক্ষ চিকিৎসকদের কাছে দেশের বাইরে থেকেও রোগী আসারও সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিলো।এদেশের টাকা এদেশে থাকার সাথে সাথে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের এ খাতটি এখন ধংসপ্রায়।


৪.#সংশ্লিষ্ট_কর্তৃপক্ষের_আশ্চর্যজনক_নীরবতাঃ পেইড মিডিয়া ও পেইড এজেন্টের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সন্দেহজনকভাবে নীরব। নীরবতার কারণটা কি?


৫.সাধারণ জনগণের #তুলনামূলক_তথ্যর_অভাবঃ তুলনামূলক দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভালো নাকি ইন্ডিয়া ভালো -সে তথ্য সাধারণ জনগণের অজানা।এ ব্যাপারে তারা নির্ভর করে আরেক সাধারণ লোকের মনগড়া তথ্যকে।চায়ের দোকানদারও চা-বানাতে বানাতে বলে," ইন্ডিয়ার চিকিৎসার উপ্রে কিছু নাই"....আমরা চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বলি, "কথাডা মিছা না, কথা সত্য"।

৬.#আমি_তো_এমনি_এমনি_যাইঃ হরলিক্সের একটা বিজ্ঞাপনে এক বাচ্চাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো সে কেন হরলিক্স খায়? উত্তরটি ছিলো--" আমি তো এমনি এমনি খাই"....ঠিক তেমনি কিছু লোককে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, 'চিকিৎসার জন্য ইন্ডিয়া কেন যান?' উত্তর -"আমি তো এমনি এমনি যাই, ভালো লাগে"।এ গর্দভকুলের সংখ্যা কম নয়।


#পরিশেষ

"হে বঙ্গ, ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন;—
তা সবে, (অবোধ আমি!) অবহেলা করি, পর-ধন-লোভে মত্ত, করিনু ভ্রমণ...... "
স্পেসিফিক কিছু ডিজিজের সমাধানে ইন্ডিয়া এই দেশ থেকে বেটার হতে পারে, এ কথা অস্বীকার করি না।কিন্তু তা বলে ঢালাও ভাবে এদেশ থেকে চিকিৎসার জন্য ভারতে যাওয়া যুক্তিহীন। এ ধরণের উদ্ভট কর্মকান্ড নিজের দেশপ্রেমকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, নিজের মূর্খতাকে উন্মোচিত করে। আমি জানি বাংলাদেশ এখনও চিকিৎসা শাস্ত্রে কাঙ্খিত অর্জন থেকে দূরে আছে।কিন্তু ইন্ডিয়া তার বিকল্প নয়।এই বঙ্গ-ভান্ডারে অনেক চিকিৎসক রত্ন রয়েছেন।তাদের উপর আস্থা রাখুন, তাদের সেবা নিন।দেশের কারেন্সি দেশেই রাখুন, দেশকে সমৃদ্ধ করুন.....


কার্টেসি- ডা: জামান অ্যালেক্স

Wednesday, September 21, 2016

রোগীরা এভাবে হুমড়ি খেয়ে পড়লে তো এমন হবেই।

যে ডাক্তার প্রতিদিন ৮০-১০০ জন রোগী দেখেন , রোগীরা তাঁকে দেখানোর জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ে। এমনকি ওই ডাক্তারের ভিজিট ফি ৮০০ টাকা হলে, তাঁকে দেখানোর জন্য তাঁর পিওনকে ১০০০ টাকা ঘুষ দিয়ে হলেও দেখাতে চেস্টা করে! এতে করে ওই ডাক্তার রোগীদেরকে ঠিকমতো সময় দিতে পারেন না। ঠিকমতো সময় দিতে হলে রোগীকে ৩০ দিন পরে আসতে বলা হয়! ততদিনে রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। রোগীরা এভাবে হুমড়ি খেয়ে পড়লে তো এমন হবেই, তাই না?

 অন্যদিকে একই রকম যোগ্যতার এবং সচ্চরিত্রবান অন্য অনেক ডাক্তার তাদের চেম্বারে খালি বসে থাকেন বা বড় জোর ৫ -৬ জন রোগী দেখেন!

আমি আমার কোন আত্মীয় স্বজনকে কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাতে হলে যে ডাক্তারের চেম্বারে রোগী কম সেই ডাক্তারকে দেখাই।

তাছাড়া নিজে নিয়ত করেছি, ভবিষ্যতে আল্লাহ কোনদিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হওয়ার সুযোগ দিলে (আল্লাহর রহমতে সে পথেই আছি) রোগীকে অত্যানুকুল সময় দিয়ে প্রতিদিন যে কয়জন সম্ভব , তার চেয়ে বেশি রোগী দেখবোনা।
কেননা আমার সমান বা বেশি যোগ্যতা বিশিষ্ট আমার সহকর্মীর অভাব নেই সারা দেশে । অন্য রোগীরা আমার অন্য সব সহকর্মীদের কাছে যাক। কারন বিবেক আর রিজিক বলে একটা কথা আছে।

আর কোন রোগীকে কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাতে হলে বিশেষ ব্যতিক্রম ছাড়া আমি সদ্য পাস করা ডাক্তারদের কাছেই পাঠাতে চেস্টা করি;
 কেননা (১) মাছি মারতে কামান দাগা লাগে না, এবং
 (২) এই ডাক্তারের আত্মীয়-স্বজন এবং পরিবারের সদস্যরা অনেক দিন ধরে আর্থিক সহযোগিতা পাওয়ার আশায় বসে আছে।

লেখক > ডাঃ মোঃ মাকসুদ উল্লাহ

Monday, September 19, 2016

একটি মেধাবী পেশাগত শ্রেণী

সম্পদে ও সম্ভাবনায় ভরপুর আমাদের প্রিয় দেশ আজ থেকে ৪৬ বছর আগে একটি সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে স্বাধীন হলেও স্বাধীনতার পূর্ণ স্বাদ আমরা আস্বাদন করতে পারছি না। দেশ কাঙ্ক্ষিত গতিতে এগুতে পারছে না। ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে নানা রাজনৈতিক সঙ্কট তো আছেই, এর সাথে যোগসাজশ আছে এদেশের শিক্ষিত মানুষদের একাংশের তৈরি আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থার। আমলাতন্ত্রের চরিত্র নির্ধারণ করার কথা সংশ্লিষ্ট সমাজের। কিন্তু বাংলাদেশে আমলাতন্ত্রই যেন সমাজ ও রাজনীতির চরিত্র নির্ধারণ করতে চলেছে! আমলাতন্ত্রের কোন কোন অংশ আজ এতটাই আধিপত্যবাদী হয়ে উঠেছে যে স্বাস্থ্যের মত মহা জনগুরুত্বপূর্ণ খাতেও নানা খাদ এবং খুঁত লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দাফতরিক আমলাতন্ত্র যখন একটি  দেশের ক্ষমতা, মর্যাদা আর সুযোগ সুবিধার স্থায়ী কেন্দ্র হয়ে যায়, তখন সমাজের মেধাবী মানুষগুলোর একটা বিরাট অংশ যথাযথ রাষ্ট্রীয় এবং সামাজিক মূল্যায়ন পান না। তেমনি একটি মেধাবী পেশাগত শ্রেণী হচ্ছে সরকারী ডাক্তাররা। সবচেয়ে মেধাবী হয়েও যারা এই রাষ্ট্রের সবচেয়ে কম সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন চাকরি করে থাকেন তারা হলেন এদেশের সরকারী ডাক্তারগণ।

একটি জাতির অন্যতম দরকারি মানব সম্পদ হচ্ছে চিকিৎসকগণ। দুর্বল স্বাস্থ্যের জনতা দিয়ে কোন জাতি উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে পারেনি। জনতার শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রেখে একটি উৎপাদনশীল জাতি যারা নির্মাণ করবেন সেই ডাক্তারদের যারা সিভিল সার্ভিসে আসেন তাঁদেরকে রাষ্ট্র এবং সমাজ কী হালতে রেখেছে তা নিয়ে আজকের আমার এই লেখা। একজন পড়তে-লিখতে জানা নাগরিক হিসেবে আমি যা প্রত্যক্ষ করেছি, যা জেনেছি, অনুধাবন করেছি তার উপর ভিত্তি করে এই লেখা।

যারা ডাক্তার হিসেবে সিভিল সার্ভিসে আসেন তাঁদের অভিজ্ঞতা, সুবিধা-অসুবিধা অন্য কোন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সাথে মেলেনা। ডাক্তারদের অবস্থা দেখে বোধ করি স্বয়ং ঈশ্বরও দেশের রাজনীতি ও জনপ্রশাসনের মুন্সিয়ানায় (!) অবাক না হয়ে পারেন না। এই ডাক্তাররা চাকুরীতে জয়েন করার আগের জীবন এবং  পরের জীবন কোনভাবেই মেলাতে পারেননা। বিশেষ করে সদ্য এমবিবিএস পাশ করা মেডিক্যাল স্টুডেন্টরা বিসিএসে জয়েন করার আগে কল্পনাও করতে পারেননা সামনের দিনগুলোতে জীবন কতবার, কীভাবে রঙ পালটাবে!

স্কুলের যে ছেলে/মেয়েরা ট্র্যাডিশনালি সবচেয়ে মেধাবী তাদেরকে বিজ্ঞান শাখায় পড়াশুনার জন্য অভিভাবক এবং শিক্ষকরা বেছে নেন। অঙ্ক, বিজ্ঞান, সমাজ, সাহিত্য ইত্যাদি বিষয়ে বেশি পারদর্শী হন বলেই এরা অন্যদের তুলনায় মেধাবী বলে বিবেচিত হন। সবচেয়ে মেধাবীদের মধ্য থেকে অনেকে ডাক্তার/ইঞ্জিনিয়ার হন। বিজ্ঞান ভালো বুঝেন এমন কেউ যদি সাহিত্য বা সিনেমা-নাটকেও আসেন তাহলে কীরকম সৃজনশীল এবং উৎপাদনশীল হতে পারেন বাঙ্গালীর জগতে তাঁর বড় উদাহরণ তো আমাদের দেশের হুমায়ূন আহমেদই আছেন। যাইহোক মূলকথায় আসি। এই সবচেয়ে মেধাবীরা যতদিন পড়াশুনা করেন ঠিক আছে, কিন্তু যখনি সরকারি চাকুরীতে আসেন শুরু হয় দুর্গতি। এ লেখায় ফরেন ক্যাডাররা আলোচনায় আসবেন না। কারণ তাঁদের কাজের ধরণ এবং ধারণা এমনি এলিট যে ঢাকায় সদর দফতরে অফিস করেও ওনাদের মন খারাপ থাকে। ইউরোপ এবং মার্কিন মুল্লুকে পোস্টিং পাওয়াকেই এখানে ভালো পোস্টিং হিসেবে ভাবা হয় ।ফলে আমার আলোচনা ঘুরপাক খাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যারা কাজ করছেন তাদেরকে নিয়ে। জুডিশিয়াল সার্ভিসে আসার পরীক্ষা-পদ্ধতি ভিন্ন হলেও এ সার্ভিসের অফিসাররাও এ আলোচনায় আসবেন।

জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ বা তথ্য কর্মকর্তার পোস্টিং হয় জেলা লেভেলে; নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের পোস্টিং হয় উপজিলা লেভেলে। প্রকৌশলীদের পোস্টিংও হয় উপজিলা লেভেলে। সবার জন্য গোছানো অফিস থাকে; যার যার কর্মচারীর বহর থাকে। বিশেষ করে জুডিশিয়াল ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের অফিস স্ট্যাটাস আর স্টাইলের সাথে বাকিদের কোনভাবেই মেলানো যায়না। অফিসিয়াল নিরাপত্তা, খেদমতে ওস্তাদ কর্মচারী বাহিনী, সন্ধ্যা হলে টেনিস কোর্ট, গাড়ি, জনমানুষে এবং জনমানসে অবতার-সম ‘শ্রদ্ধা’ অথবা ‘ভয়’- কী নেই এই মহামহিমদের জীবনে!   
 
এই প্রশাসনিক অভিজাতদের সাথে সরকারি ডাক্তারদের জীবন একটু মিলিয়ে দেখুন। অনেক সরকারি ডাক্তার চাকুরী জীবনের প্রথম দু বছর যেসব জায়গায় পোস্টিং পান, যে ধরণের স্থাপনায় বসে অফিস করেন, সেখানে একজন এএসপি/জুডিশিয়াল/নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এর জীবনে গাড়ি নিয়ে ঘুরতেও যাওয়ার কথা না। অনেক জায়গায় গাড়ি নিয়ে যেতেও পারবেন না। কারণ রাস্তা নাই। অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদেরও সেখানে যাওয়ার কথা না। ইউনিয়ন লেভেলে কমিউনিটি ক্লিনিক কিংবা সাব-সেন্টারে অফিস থাকে সিভিল সার্ভিসে আসা ডাক্তারদের। এসব অফিসের অনেকগুলোতে আবার  আসবাবপত্র থাকে ভাঙ্গাচোরা। তিনপেয়ে চেয়ার আর ভাঙ্গা গ্রিলের জানালা এসবের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। অনেক  ক্ষেত্রে অফিসে বিদ্যুৎ থাকেনা। যেখানে অফিস থাকে সে এলাকায় গ্যাস নাই, ইন্টারনেট নাই, হোটেল নাই, রেস্টুরেন্ট নাই, পার্ক, খেলার মাঠ কিছুই নাই। সাব-সেন্টারের সবকিছুর ‘মালিক’ থাকেন একজন ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার ভিজিটর (এফডব্লিউভি) নামে পরিচিত একজন সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী যার সাথে এই ডাক্তারদের অফিস শেয়ার করতে হয়।

এফডব্লিউভিরা আবার স্বামী-স্ত্রী নিয়ে সাব-সেন্টারের উপরেই বসবাস করেন। তদুপরি, এই এফডব্লিউভিরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীন কেউ নন।ইনারা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের আওতাধীন। ফলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিসিএস কর্মকর্তা হিসেবে একজন ডাক্তার এফডব্লিউভিকে কোন কিছুর জন্য অধিকার বা নিয়ন্ত্রন নিয়ে কিছু বলবেন, সে সুযোগ থাকেনা বললেই চলে। আর অব্যবস্থাপনা দেখে ডাক্তার যদি কোন কিছুর শেকায়েত করেও বসেন সবসময় তার মনোলোভা উত্তর পাবেন তার নিশ্চয়তা নাই। অথচ, একজন এফডব্লিউভি আমলাতান্ত্রিক হিসেবে সম্ভবত তৃতীয়/দ্বিতীয় শ্রেণীর একজন কর্মচারী।

কী পরিমাণ কষ্ট করে, সময় ব্যয় করে একজন ডাক্তার তাঁর কর্মস্থলে পৌঁছান স্বচক্ষে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে বলে আমার বিশ্বাস হয়না। এমন জায়গায় অনেকে পোস্টিং পান যেখানে শুধু হেলিকপ্টারে গিয়ে প্যারাসুট দিয়ে নেমে অফিস করে আবার হেলিকপ্টারে করে ফিরে আসা যাবে। সরকারি কোন ট্রান্সপোর্ট সুবিধা থাকেনা। হয় হেঁটে অফিসে যান, নতুবা সারাদিনের জন্য রিক্সা ভাড়া করে নিন। অনেক জায়গা আছে যেখানে যেতে হলে নৌকা ছাড়া যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। হবিগঞ্জের আজমিরিগঞ্জ কিংবা শেরপুরের ঝিনাইগাতির পাহাড় আর জঙ্গলে যাদের পোস্টিং হয় তারা আমার কথাগুলো ভালো অনুধাবন করতে পারবেন।
শেরপুরের পাহাড়ের কোলে যেখানে গোধূলির সাথে নেমে আসে বুনো হাতির পাল কিংবা আরেকটু অন্ধকারে ‘ক্রান্তিকারি’দের দল, সেখানে পোস্টিং হয়েছিল আমার পরিচিত এক প্রেমিক সাংবাদিকের সদ্য মা হওয়া স্ত্রীর। ৫/৬ মাসের নবজাতককে নিয়ে সেই ডাক্তার মা না-জানি কীভাবে বিদ্যুৎবিহীন একেকটা রাত পার করেছিলেন! জীবনে প্রথমবারের মত বাবা হওয়া সেই সাংবাদিককে তখন দেখেছি ফ্যাকাশে মুখ নিয়ে ঢাকায় কাজ করে যেতে। অন্য কোন ক্যাডারের কর্মকর্তা পারবেন ঐ জঙ্গলের মধ্যে এভাবে একা থেকে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করতে? সার্কিট হাউজের এসি রুমে বসে বিভূতিভূষণের ‘আরণ্যক’ পড়ে হলিডে উদযাপনের পরিকল্পনা করা আর ঝি ঝি পোকা আর শিয়ালের পিলে চমকে দেয়া ডাকসমেত বসবাস করে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করা এক জিনিস নয়।

বাংলাদেশের বেশিরভাগ উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের দাফতরিক এবং অবস্থানগত অবস্থা প্রায় একইরকম। সাধারণত কর্মকর্তারা যেখানে অফিস করেন সেখানে, বা তার আশেপাশে সরকারি থাকার বন্দোবস্ত থাকে। অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য থাকেও। উপজেলা লেভেলে থানার ওসি কিংবা এসিল্যান্ডের ভালো থাকার জায়গা নেই একথা কেউ বলবেনা, বললে বিশ্বাসও করবেনা। জেলা লেভেলে তো নির্বাহী/জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, এএসপিরা বেশ ভালো জায়গায় থাকেন। আর সরকারি সব থাকার জায়গাতো প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দখলেই থাকে। তারা যাকে যতক্ষণ থাকতে দেন ততক্ষণই থাকা যায় সেগুলোতে। নতুন যারা বিসিএস ক্যাডার হিসেবে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে যোগদান করেন তাঁদের কোন ধরনের সরকারি থাকার ব্যবস্থা থাকেনা। উপজেলা/জেলা লেভেলের হাসপাতালের কিছু কোয়ার্টার থাকে কিন্তু সেগুলো আগে থেকেই সিনিয়র সরকারি ডাক্তারদের দ্বারা ফিল-আপ থাকে। আর ইউনিয়ন লেভেলে সরকারের ব্যবস্থায় থাকার কিছু আছে বলে আমার জানা নেই। একটা ছেলে তাও লজিং মাস্টারের মত গ্রামের মেম্বার বা চেয়ারম্যানের বাসায় থাকার ব্যবস্থা করতে পারলেও মেয়েদের জন্য কি এটা সম্ভব?

আমাদের প্রশাসনিক অভিজাতরা কাদেরকে সেবা দেন? এএসপি বা এসপি দূরের কথা, সাধারণ মানুষ একজন ওসির কাছেই কি খুব সহজে পৌঁছাতে পারেন? বিচারকদের কাছেতো আমাদের মত উচ্চশিক্ষিত মানুষই কথা বলা বা যোগাযোগ করার আগে একশবার ভেবে কথা বলেন। অন্যভাবে কথাটা বলা যায়। সাধারণ মানুষের তো প্রতিদিন প্রতিনিয়ত পুলিশ কিংবা বিচারকের কাছে যাওয়ার দরকারও পড়েনা। অনেক মানুষ আছে বাংলাদেশে যারা জীবনে একবারের জন্য হলেও থানায় কিংবা আদালতে যাননি। দেশে নানামাত্রায় এবং প্রকৃতিতে অপরাধ প্রবণতা থাকেলও আমাদের সমাজব্যবস্থায় সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখনো বেশ শক্তিশালী। সাম্প্রতিককালে দেশে জঙ্গিবাদী তৎপরতা থামাতে পুলিশ, র‌্যাব বেশ পরিশ্রম করছেন, শহীদ হচ্ছেন এটা সত্যি। আবার এটাও সত্যি যে, মুষ্টিমেয় কিছু অপরাধী বাদ দিলে দেশের প্রায় সব মানুষই শান্তিপ্রিয় এবং প্রগতিশীল বলেই বাংলাদেশ টিকে আছে এবং এগিয়ে যাচ্ছে। যাই হোক স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের কথায় ফিরে আসি।

বাঁশ বাগান, পাড়ভাঙ্গা পুকুর; আধা নেংটা, ময়লা কাপড় আর অপুষ্টির শিকার ময়লা-নাকের একদল ছেলে-মেয়ে আর তাঁদের জীর্ণদশার মা-বাবা নিয়ে অফিস কাটে কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন সাব-সেন্টার কিংবা উপজেলা সদরে কাজ করা স্বাস্থ্য ক্যাডারের বিসিএস কর্মকর্তাদের।

ইউনিয়ন সাব-সেন্টার, কমিউনিটি ক্লিনিকে কাজ করতে গিয়ে বিচিত্র সব অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন পেরিফিরিতে কাজ করা এসব ডাক্তার। ক্লিনিকে আসতে দেরী হলে বা ওষুধ না থাকলে গ্রামের মেম্বার পর্যন্ত ঝাড়ি মারে, বাজারের একমাত্র ফার্মেসির মালিক ডাক্তার দেখলে নিজের ভবিষ্যৎ সঙ্কটাপন্ন ভেবে প্রমাদ গুনে পায়ে হেঁটে আসা-যাওয়া করা সরকারি ডাক্তারদের দিকে দু/একটা তির্যক মন্তব্যও ছুঁড়ে দিতে কার্পণ্য করেন না । গ্রামের রাস্তায় পায়ে হেঁটে একজন ম্যাজিস্ট্রেট বা এএসপি অফিস করতে যাচ্ছেন, এ কথা কেউ ভাবতে পারবেন?

উপজিলা বা জেলা লেভেলের হাসপাতালে সকাল ৮ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত আউটডোরে প্রতিদিন কী বিশালসংখ্যক গরীব মানুষের সমাগম ঘটে তা কি আমাদের জনপ্রশাসনের বড় কর্মকর্তা বা এমপি, মন্ত্রীরা ভাবতে পারেন? আর যেসব রোগী আসেন তারা প্রায় সবাই একেবারে দরিদ্র প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর। কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে শুরু করে জেলা হাসপাতাল সবখানে একই চিত্র। যাদের পকেটে বৈধ/অবৈধভাবে উপার্জিত টাকার অভাব নেই তারাতো পারতপক্ষে সরকারি হাসপাতালের দিকে খুব একটা যান না। সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডাক্তাররা সীমিত সুযোগ-সুবিধার মধ্যে যাদেরকে সেবা দেন তাদের মধ্যে ভিক্ষুক থেকে শুরু করে রিকশাওয়ালা, সুইপার, সরকারি-বেসরকারী অফিসের নিম্নপদস্থ কর্মচারী, গ্রামের গরীব কৃষক ও তাদের ছেলে-মেয়েরা, ফুটপাতের ফলের দোকানী, পান-সিগারেট বিক্রেতা, কাজের বুয়া, আহত গরীব মুক্তিযোদ্ধা ইত্যাদি অভাবগ্রস্থ মানুষজনই বেশী আসে।

ডাক্তারের কাজটাই এমন যে ‘ব্যক্তিগত সহকারীর কাছে কাগজ রেখে যান’ টাইপের কথা বলে সেবা প্রত্যাশী মানুষকে এড়িয়ে চলার সুযোগ নেই। একজন ডাক্তার নিজ হাতে সরাসরি এসব গরীব মানুষকে সেবা দিয়ে যান। বিশেষ করে কমিউনিটি ক্লিনিকে এমন সব মানুষ আসেন যাদের সেবা করা অবস্থায় কোন ডাক্তারকে দেখলে মনে হয় মাদার তেরেসা আবার পৃথিবীতে কাজ করতে এসেছেন। হয়ত পাশের ক্ষেতে কাজ করছিলেন কোন কৃষক ভাই, ডাক্তার দেখে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। গ্রামের মধ্যেও যারা সবচেয়ে গরীব তারা আসেন কমিউনিটি ক্লিনিকে। এরা এমন সব মানুষ যারা নিজে থেকে কোনদিনও হাসপাতালে যাবেন না। এরা খুবই গরীব। এদের পকেটে নগদ অর্থ খুবই কম থাকে।

জেলা/উপজেলা পর্যায়ে যাওয়া-আসার মত, দরকারি- অদরকারি নানা টেস্ট করানোর জন্য অনেক টাকা-পয়সা এদের কাছে থাকেনা। চিকিৎসা না পেতে পেতে অনেক ক্ষেত্রে এরা বিনা চিকিৎসায় জীবন কাটিয়ে দিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। গ্রামীণ নারীদের অধিকাংশই স্বামীর ভয়ে কিংবা সংসারের খরচ বেড়ে যাবে ভয়ে শহরে ডাক্তারের কাছে যেতে চান না। ঘরের পাশে বড় ডাক্তার এবং ফ্রি ওষুধ পেয়ে গ্রামীণ দরিদ্র নারীদের সিংহভাগ এই কমিউনিটি ক্লিনিক বা সাব-সেন্টারে আসেন।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশে অবকাঠামোগত এবং অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের কাজে হাত দেয়ার পাশাপাশি দেশজুড়ে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের কাজ শুরু করেছিলেন। জাতির পিতা হিসেবে তিনি অনুধাবন করতে পেরেছিলেন যে, স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে জাতির অর্থনৈতিক এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন টেকসই হবেনা। ১৯৭৫ এর ১৫ই আগস্ট দেশীয়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক অশুভ শক্তির ষড়যন্ত্রে বঙ্গবন্ধু শাহাদাত বরণ করলে অন্যান্য প্রতিটি উন্নয়ন পরিকল্পনার মত কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পও বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ অচলাবস্থার পর ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ আবার ক্ষমতায় এসে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো আবার চালু করার কাজ হাতে নেয়া হয়। বিএনপি-জামাত জোট ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে এই কমিউনিটি ক্লিনিকসমূহ আবার বন্ধ করে দেয়। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে জিতে আওয়ামীলীগ আবার ক্ষমতায় এসে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো চালু করে। বর্তমানে এগারো হাজারেরও বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করা হয়েছে। গরীব মানুষের দোরগোড়ায় মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে এসবের বিকল্প নেই।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এমনও পরিকল্পনা করেছিলেন যে, ঢাকার বড় বড় ডাক্তাররা ছুটির দিনে বাধ্যতামূলক ভাবে গ্রামে যাবেন এবং গরীব মানুষকে ফ্রি চিকিৎসা দিয়ে আসেবেন। ১৯৭২ সালের ৯ অক্টোবর তৎকালীন পিজি হাসপাতালে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়) এ এক অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “যখন ছুটি দেওয়া হবে, যে বড় ডাক্তাররা আছেন, যারা স্পেশালিষ্ট, তারা গ্রামের দিকে কেন যাবেন না। গ্রামে তো শতকরা ৯৫ জন লোক বাস করে। তারাই তো সম্পদ দিয়ে আপনাদের সবকিছু দেখেছে।...তাদের দিকে কেন নজর দেবেন না?”
ডাক্তারদের কাজই হল মানুষের সেবা দেয়া। তবে আজ এত বছর পরেও কেন এত অসংগতি? সরকারী ডাক্তারদেরকে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা প্রদান না করলে তাঁরাও যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হবেন না। সরকারের প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা হয়েও যারা প্রায় ঘরে ঢুকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে বিশেষজ্ঞ সেবা দেন তাদের প্রতি রাষ্ট্র বাড়তি যত্ন নিবেন এটাই কাম্য। কিন্তু বাস্তবে রাষ্ট্রের কাছ থেকে মাস শেষে বেতন ছাড়া আর কিছু এই প্রান্তিক সরকারী ডাক্তাররা যথাযথভাবে পান না। বসবাস, নিরাপত্তা এবং যাতায়াতের সুবিধা বাদ দিলাম, চাকুরী জীবনে প্রোমোশনটা পর্যন্ত পান না ঠিকমত। শুধু কি সার্ভিস দেন তাঁরা? ভালো চিকিৎসক হওয়ার পথে এমবিবিএস তো এদের কাছে প্রাথমিক কোন ডিগ্রী। আসল পড়ালেখা শুরু হয় তো পরে। কী অমানবিক প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে এফসিপিএস, এমএস/এমডি’র মত ডিগ্রী অর্জনের জন্য সংশ্লিষ্ট কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে হয় তা শুধু ডাক্তাররাই জানেন।  আর কিছুটা টের পান তাদের পরিবার পরিজনরা।

সোনার বাংলা গড়তে হলে সরকারী ডাক্তারদেরকে যথাযথ সুযোগ সুবিধা দিতে হবে। রাষ্ট্র এবং সমাজ পরিচালিত হতে হবে মেধা এবং সেবার হিসেবে। সমাজকে যে যত সেবা দিবেন, যে ধরণের সেবা দিবেন, তার উপর ভিত্তি করে সেবা প্রদানকারী রাষ্ট্রের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন- এটাই হবে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলমন্ত্র। একদল আমলা সব সুযোগ সুবিধা ভোগ করবেন, আর বাকি কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সাধারণ মানুষ যথাযথ সুযোগ সুবিধা পাবেন না, সন্মান পাবেন না- এটা হতে পারেনা। বঙ্গবন্ধু  এ জন্য বাংলাদেশ স্বাধীন করেননি। তিনি সিস্টেম বদলাতে চেয়েছিলেন।

১৯৭৫ সালের ১৯ জুন তারিখে বঙ্গভবনে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) এর কেন্দ্রীয় কমিটির প্রথম বৈঠকে দলীয় চেয়ারম্যান রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভাষণ প্রদান করেন। সেখানে তিনি বলেছিলেন, “যে সিস্টেম আজকে আমরা দেখি, সেই সিস্টেম ব্রিটিশ কলোনিয়াল সিস্টেম, এতে দেশের মঙ্গল হতে পারেনা।...সেই এডমিনিস্ট্রেশন, সেই সিস্টেম, সেই আইন, সেই সব কিছু পরিবর্তন করার নামই বিপ্লব”।  চলুন সবাই একটু চিন্তা করি, বঙ্গবন্ধু যে সিস্টেমের সমালোচনা করে তাকে বদলাতে চেয়েছিলেন, সেই সিস্টেম কতখানি বদলেছে? আরাম আয়েশ আর দাফতরিক আনুগত্যের সিস্টেম বদলেছে নাকি দিন দিন আরও শক্তিশালী হচ্ছে?

>> কালেক্টেড পোস্ট <<

Saturday, September 17, 2016

ঢাল নেই, তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার--- ডাক্তার


সাংবাদিক গোলাম মোর্তোজার সাম্প্রতিক একটি ফিচারে উনি বলেছেন সরকারী হাসপাতালের ঢাল তলোয়ারবিহীন নিধিরাম সর্দার হোল ডাক্তার। জীবনে এই প্রথম বোধ হয় একজন ননমেডিকেল ব্যক্তির মুখে এ চরম সত্যি কথাটা শুনলাম। 

মনে পড়ে তখনকার কথা। যখন সরকারী হাসপাতালের সি এ ছিলাম। এপ্রোনের বাইরে, উপর নীচে চারটা এবং ভিতরে দু' টো, মোট ছয়টা পকেটে ইমারজেন্সী ঔষধ নিয়ে ঘুরতাম। কারন হাসপাতাল ঔষধ দিতে অপারগ ছিল। তাই ব্যক্তিগত ফান্ড কালেকশন থেকে নিজ সংগ্রহে রাখতাম। সবার যাকাতের টাকা সংগ্রহ ছিল একটি বিশেষ যোগ্যতা।

১। একরাতে তিনটি প্লাসেন্টা প্রেভিয়া একই সাথে এল প্রচুর রক্তক্ষরন নিয়ে। তিনজনাই ছিল অসহায়। কান্না পেয়ে গেল। রোগীর জন্য নয়। নিজের জন্য। নিজের অসহায়ত্ত্বের জন্য। ক্যামনে কি করব তাই ভেবে। রক্তের ব্যাগ ছিল তখন তিনশত টাকা। একজনার স্বামী মুখের উপর বলে গেল " তিনশত টাকা দিয়েতো আর একটা বিয়েই করতে পারব। সরকারী হাসপাতালে আসছি যেমনে পারেন আপনারা কাজ করবেন।" ডাক্তার থাকে তোপের মুখে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যখন নাকে তেল দিয়ে ঘুমায়।
সংগৃহীত যাকাতের টাকাই ছিল অবলম্বন। তিনজনকেই রক্ষা করা গেল। কোথায় ছিল সরকার আর তার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আজও সেকথা মনে রেখে ঢাকা মেডিকেল ও মিটফোর্ড মেডিকেলে রক্ত কেনার জন্য যাকাতের অংশ দিয়ে থাকি।

২। ইমারজেন্সি গেটের বাইরে ফেলে যাওয়া বেওয়ারিশ সেপটিক এবরশনের মুমূর্ষু মহিলাকে ভর্তি করল আমাদের ইউনিটে। ইনজেকশন রসিফিন দরকার। হাসপাতাল অপারগ। আবারও ব্যক্তিগত ফান্ড।

৩। বেসরকারী প্রতিষ্ঠান। পোস্টঅপারেটিভ খারাপ প্রফাইলের পেসেন্ট, হঠাৎ রেসপিরেটরী ডিস্ট্রেস। সরকারী মেডিকেলে ট্রান্সফার করা আবশ্যক। কিন্তু পথে মারা যাবার সম্ভাবনা অথবা হাসপাতালে আই সি ইউ পাওয়া না গেলে শতভাগ মৃত্যুর সম্ভাবনা এড়াতে প্রাইভেটের আই সি ইউ তে ট্রান্সফার। বিনে খরচে পেসেন্টের ভাল হয়ে বাড়ী যাওয়া। আবারও নিজস্ব ফান্ড।

গল্পগুলো বলার উদ্দেশ্য কি? উদ্দেশ্য হোল এইসব গরীব পেসেন্টের চিকিৎসা সামগ্রী যোগাড় করার দায়িত্ত্ব কার?
 নিশ্চয়ই চিকিৎসকের নয়। এ দায়িত্ত্ব সরকারের।
 কিন্তু এই জোড়া তালির অভিজ্ঞতা নেই এমন কোন সি এ রেজিস্ট্রার পাওয়া যাবেনা। এই ঢাল তলোয়ারবিহীন ডাক্তাররা কিভাবে হাসপাতাল চালায় তা বোঝার জন্য মোর্তোজার মত বিচক্ষন ও নিরপেক্ষ হতে হবে।

পক্ষান্তরে বিদেশী চিকিৎসা।সব খরচ সরকার বহন করে। চিকিৎসক শুধু মগজ খাটায় আর হুকুম করে। মগজ খাটিয়ে এই হুকুমটি দেবার জন্য জীবনে যত কাঠ খড় তাকে পোড়াতে হয়েছে তা অন্য কোন প্রফেশনে হয়নি। তাই এই হুকুমটিই মহামূল্যবান। নার্সরা সব পুং্খানু পুং্খভাবে তা পালন করে। নার্স হাত বাড়ায় আর সব জিনিস চলে আসে। এবং তাদের ম্যানেজমেন্ট নিম্নরূপ।

অস্ট্রেলিয়ান ইমারজেন্সি : খুব কাছের লোক। একসিডেন্টে মাথা ফেটে গেছে। কিছু রক্তক্ষরনও হচ্ছে। ঘন্টার পর ঘন্টা বসিয়ে রেখেছে এই বলে " তুমিতো মারা যাচ্ছ না। তোমার চেয়ে খারাপ পেসেন্ট আছে। ওকে আগে ম্যানেজ করে নেই"।

কানাডার ইমারজেন্সি : খুবই কাছের লোক।পি পি এইচ এর পেসেন্ট। হাসপাতালে ব্লাড দিতে হয়েছে। বাড়ী আসার পরে আবার ব্লিডিং হওয়াতে ইমারজেন্সি এপয়ন্টমেন্ট নিল সন্ধ্যে সাতটায়। নিউবর্ন বেবীসহ সেই পেসেন্টকে দেখল ভোর চারটায়।

এমন প্রেক্ষাপটে আমাদের দেশে ভাংচুর এবং চিকিৎসক পিটানো অনিবার্য।

যদিও এই সস্তা এবং সহজলভ্য ডাক্তারদের দেশে এভাবে ইমারজেন্সি পেসেন্ট বসিয়ে রাখা হয় বলে আমার জানা নেই।
এই চিকিৎসক পিটানো এবং অকারনে চিকিৎসকদের হাজতে ঢুকানোর যে ট্রেন্ড চলছে এর পরিসমাপ্তি কোথায়? যে ছেলে মেয়ের গায়ে জীবনে কোন শিক্ষকও হাত তুলতে পারেনি ভাল ছাত্র, ছাত্রী বলে তাদের আজ মাস্তানের মার খেতে হচ্ছে পেশাগত কাজ করার সময়ে-- এ লজ্জা অপমান কি করে সহ্য করছে চিকিৎসক সমাজ? চিকিৎসকদের একতাব্দ্ব হয়ে কিছু করার সময় এসে গেছে। ডাক্তারদের অন্যায় ভুল ত্রুটির বিচার ডাক্তাররাই করবে। তাদের রক্ষা করার দায়িত্ব ও নিজেদেরই নিতে হবে।

কিন্তু গলদটা কোথায়?

>>কালেক্টেড পোস্ট<<

Wednesday, September 14, 2016

আপনার স্বপ্ন কি?

নেপথ্য

পর্ব-১
জনৈক রুগী চেম্বারে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখানোর পর ভিজিট কত জিজ্ঞেস করলে ডাক্তার বললেন ৬০০ টাকা। রুগী ডাক্তারকে ভিজিটের টাকা পকেট থেকে বের করে দিতে দিতে বললেন, "আপনাদের ডাক্তারদের ভিজিট অনেক বেশি কেন?"

ডাক্তার সাহেব রুগীকে বললেন, "আপনার এই প্রশ্নের উত্তর এক কথায় দেয়া সম্ভব নয়। আর আপনাকে ব্যখ্যা দিয়ে বুঝিয়ে বললেও আপনি হয়তো শুনবেন, কিন্তু উপলব্দি করতে পারবেন না। আচ্ছা, আপনার বয়স কত?"
-৩৫ বছর।

কি করেন?
-প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করি।

আপনার ছেলেমেয়ে কয়জন?
-এক ছেলে নির্ঝর আর এক মেয়ে নাঈমা।

তাদের বয়স?
-মেয়েটার পাচ বছর আর ছেলেটা তিন।

তাদের নিয়ে আপনার স্বপ্ন কি?
-মেয়েটাকে ডাক্তার বানানোর ইচ্ছা আর ছেলেটাকে ইঞ্জিনিয়ার।

তাহলেতো হয়েই গেল। দোয়া করি আপনার মেয়ে যেন অনেক বড় বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হয়। যেহেতু আপনি আপনার মেয়েকে ডাক্তার বানাতে চাচ্ছেন আর তার বয়স এখন পাচ বছর, ভিজিট সংক্রান্ত এই প্রশ্নের উত্তর আপনি ৩৫/৪০ বছর পরে বেচে থাকলে পেয়ে যাবেন। এই নিন আমার ব্যক্তিগত সেলফোন নাম্বার। ততদিন যদি আমি বেচে থাকি, আর আপনি যদি আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যান তাহলে দয়া করে আমার সাথে দেখা করে জানিয়ে যাবেন।
জ্বী আচ্ছা বলে রুগী ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেরিয়ে এল।

পর্ব ২

পাচ বছরের সেই ছোট্ট নাঈমা এখন বেশ বড় হয়েছে। এইতো কিছুদিন আগে তার এইসএসসি রিটেন এক্সাম শেষ হলো। প্রাকটিক্যাল এখনও শুরুই হয়নি। এরই মধ্যে মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য কোন কোচিং এ ভর্তি হবে তার তোরজোর শুরু হয়ে গেছে। পরীক্ষার পরে কোথায় বিশ্রাম নিবে কিংবা বেড়াতে যাবে সেসব চিন্তা বাদ। বাবা মা আত্নীয়স্বজন সকলের স্বপ্ন তাকে ডাক্তার হতে হবে। আর এই স্বপ্ন পূরনের ধারাবাহিকতায় তাকে এক এক করে অনেকগুলো ধাপ পেরিয়ে আসতে হয়েছে। প্রাইমারী স্কুল পরীক্ষায় সে বৃত্তিও পেয়েছে। জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষাও বৃত্তিসহ উত্তীর্ণ হয়েছে। ভালো রেজাল্ট করেছে এসএসসিতেও। আশা করছে এবারও রেজাল্ট ভালো হবে। বাবা মা বলেছে এইবারই শেষ কষ্ট। মেডিকেলে চান্স পেলে আর কষ্ট করতে হবে না। আর পিছন ফিরে তাকাতে হবে না। বাবা মা আর নিজের স্বপ্ন পূরনের লক্ষ্যে দৃঢ় থাকে নাঈমা।

এরপর প্রাকটিক্যাল এক্সাম শেষ করে, একটি কোচিং সেণ্টারে ভর্তি হয়ে দিন রাত আগের থেকেও বেশি পরিশ্রম করে অবশেষে পেয়ে যায় সেই কাংখিত সাফল্য। একটি সরকারী মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়ে যায় সে। নাঈমার পুরো পরিবারে আনন্দের বন্যা। প্রায় পঞ্চাশের কাছাকাছি বয়সের নাঈমার বাবার চোখে তখন স্বস্তির আশ্বাস। মেয়ে তার ডাক্তার হবে। এইতো দেখতে দেখতেই পাচটি বছর কেটে যাবে।

মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়ে কিছুদিন নাঈমার ভালোই কাটলো। এপ্রোন পড়ার আনন্দ, নতুন নতুন বন্ধু, নতুন পরিবেশ, নতুন নতুন রঙ্গীন বই। জীবনটাকেই তার রঙ্গীন লাগছে। আরও বেশ কয়েকমাস যেতেই নাঈমা আবিষ্কার করলো তার রঙ্গীন জীবনের রংয়ে সাদাকালোর প্রোলেপ পরতে শুরু করেছে! নিয়মিত ক্লাশ, একের পর এক আইটেম, কার্ড ফাইনাল, প্রফের ধাক্কা সামলাতেই তাকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সে খোজ নিয়ে দেখলো তার ননমেডিকেল বন্ধুরা যখন বিকেলের সোনালী রোদে আড্ডা দিয়ে কিংবা ঘুরাঘুরি করে বেড়াচ্ছে তখন সে কিংবা তার মেডিকেলের বেশিরভাগ বন্ধুরাই লাইব্রেরীর চারদেয়ালে টিউব লাইটের আলোয় বইয়ের পাতায় ডুবে আছে। সেখানে বিকেলের সোনালী রোদ স্পর্শ করে না! নাঈমার বাবা নাঈমার এই অবস্থা কিন্তু ঠিকই দেখছিল। আর তার কাছে পাচ বছরটাকে শুধু দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতরই মনে হচ্ছিল।

কিন্তু অন্ধকারের পরতো আলোর দেখা মিলবেই। ঠিক তেমনিই অনেক অনেক কষ্টের পর নাঈমাও পেয়ে গেল মেডিকেল সাইন্সে গ্রাজুয়েট ডিগ্রী। আরেকবার হাসলো তার পঞ্চাশোর্ধ বাবা। এইবার বুঝি তার কষ্টের দিন শেষ হতে চলল। ইণ্টার্নশীপ শেষ করতে করতে মেয়ের বিয়েও দিলেন। ছেলেরও ততদিনে ইঞ্জিনীয়ারিং শেষের পথে। যদিও ছেলে মেয়েকে এই পর্যায়ে নিয়ে আসতে তাকে কি কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে তা একমাত্র তিনিই জানেন।
একদিন নাইমাকে ডেকে তিনি বললেন, "মারে, ইণ্টার্নীতো শেষ করলে। এখন কি ভাবছো?

-বাবা, সামনে বিসিএস প্রীলিমিনারী পরীক্ষা। আর জানুয়ারীতে এফসিপিএস পার্ট-১ পরীক্ষা। এইসব পরীক্ষার প্রস্তুতি নিব।
আচ্ছা মা। ঠিক আছে। পড়াশুনাটা চালিয়ে যাও।

এভাবেই একটি ক্লিনিকে পার্ট টাইম চাকরী করে বিসিএস আর এফসিপিএস এর প্রস্তুতি নিতে নিতেই দিন পার করছিল নাঈমা। কিন্তু দুটোর প্রস্তুতি নিতে গিয়ে কেমন যেন গোলমেলে মনে হচ্ছিল তার কাছে। দুটো পরীক্ষার প্রস্তুতি যে দুই রকম। নাহ! এভাবে হবে না। দুটো একসাথে চালানো যাবে না। অতঃপর একটার মায়া তাকে ছাড়তে হয়। এরই মাঝে সে দেখছে তার কোন কোন বন্ধু অনারারী (বিনা বেতনে) ট্রেনিংএ ঢুকেছে কোনও কোনও হাসপাতালে। তা যেন আরেক দূরহ জীবনের অধ্যায়। বিএসএমএমইউ এর লাইব্রেরীর এক একটা দিন যেন এক একটা পূর্ণদীর্ঘ চলচিত্রের কাহিনী। যা সকাল আটটায় শুরু হয়ে ৩৫ টাকার দুপুরের খাবারের মধ্য দিয়ে রাত দশটায় শেষ হয়। নাঈমা নিশ্চিত তার অনেক আত্নীয়স্বজনও এই খাবার এক বারের বেশি দুইবার মুখে দিতে পারবে না। পরীক্ষা পড়াশুনার চাপে সামাজিক অনেক অনুষ্ঠানেও আজকাল নাঈমার যাওয়া হয়ে ওঠেনা। আত্নীয়স্বজন বন্ধুবান্ধব কেউ কেউ বলছে, ডাক্তার হয়ে নাঈমার ভাব বেড়ে গেছে। কেউ কেউ আবার তাকে অসামাজিকও ভাবতে শুরু করছে। গ্রাম থেকে অনেকে আসেন বেশ আশা করে। ডাক্তার দেখানোর ব্যপারে নাঈমা সাহায্য করবে বলে। ডাক্তারের সিরিয়াল দিয়ে দেয়া, ডাক্তারের চেম্বারে নিয়ে যাওয়া, হাসপাতালে ভর্তি করানো। আরও কত কি। মাঝে মাঝে নাঈমা করে ঠিকই কিন্তু সব সময় একইভাবে করা সম্ভব হয় না। তার পড়াশুনা কিংবা পরীক্ষার চাপ অন্যরা কিভাবে বুঝবে? তারা শুধু ভুলই বুঝতে পারে।

দেখতে দেখতে নাঈমা সন্তানের মা হয়ে যায়। জীবনে আনন্দের ধারা নেমে আসে। কিন্তু সমান তাল বেড়ে চলে কষ্টের ধারাও। ধীরে ধীরে সময় বেড়ে চলে। বয়স বাড়ে নাঈমার। তবুও থেমে থাকে না জীবনে বড় ডাক্তার হবার স্বপ্ন। সদ্য অবসরে যাওয়া নাঈমার বাবাও চোখের সামনে দেখতে থাকে মেয়ের জীবনযুদ্ধ। তার আশার মাঝেও যেন মেঘ জমতে শুরু করেছে ততদিনে। সবাই যেন অধৈর্য্য হয়ে পড়ছে। নাঈমার ডাক্তারী পড়া কেন শেষ হয় না! নাঈমার ভাইও যে ততদিনে ইঞ্জিনীয়ার হয়ে চাকরী শুরু করে দিয়েছে। সবার ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটলেও শুধু নাঈমারই ধৈর্য্যের বাধে ফাটল ধরে না। সংসার, সন্তান লালন-পালন, চাকরী, পড়াশুনা সমান তালে এগিয়ে নিয়ে যায় সে। শুধু হারিয়ে যায় বিকেলের সোনালী রোদ, জীবনের ছন্দ, গান, কবিতা, একটুখানি অবসর। নিজেকে নিয়ে কিংবা নিজের জন্য একটুখানি সময় হয়ে ওঠে না আর নাঈমার। এক রোবটিক জীবনে অভ্যস্ত হয়ে যায় সে।

এভাবেই বছরের পর বছর কেটে যায়। ভারী ভারী বইয়ের ব্যাগ বইতে যেয়ে পিঠের মাংশপেশীর ব্যথাটাও জানান দেয় মাঝে মাঝে। পয়ত্রিশোর্ধ নাঈমা একদিন নিজেকে আবিষ্কার করে একজন পোস্ট গ্রাজুয়েট ডাক্তার হিসেবে। অতঃপর চেম্বার প্রাকটিস শুরু করে নাঈমা। তার ভিজিট ১০০০ টাকা। সেই পাচ বছর থেকে শুরু করে এই পর্যন্ত উঠে আসা নাঈমার প্রতিটা দিনের কালের স্বাক্ষী হয়ে থাকল পয়ষট্টিরও বেশি বয়সী তার বাবা।

পর্ব ৩ (শেষ পর্ব)

সকাল আটটা বেজে দশ। বাইরে বেশ রোদ উঠেছে। সাথে ঝিরঝিরে বাতাসও বইছে হালকা আমেজে। একটু দূরে নিম গাছে একটা কাক ডাকছে সমানে। মিরপুরের বর্ধিত পল্লবীর ২ নং রোডে খন্দকার ভিলার দোতালার বারান্দায় বসে দিনের পত্রিকায় চোখ বুলাচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ডাঃ খন্দকার মোস্তফা খালেদ। দেশের নাম করা বিশিষ্ট কিডনী রোগ বিশেষজ্ঞ। বয়স আশির কাছাকাছি। এখন আর রোগী দেখেন না। ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, প্রোস্টেট গ্লান্ড বড় হওয়া ইত্যাদি রোগে ভুগছেন তিনি। তবে মাঝে মাঝে এই বয়সেও দেশ বিদেশের বিভিন্ন সেমিনারে বক্তৃতা দিয়ে থাকেন। চায়ের কাপে চুমুক দিবেন এমন সময় সেলফোনে রিং বেজে উঠলো। তিনি রিসিভ করে বললেন, হ্যালো, কে বলছেন?

-স্যার আমি সাজ্জাদুর রহমান। আপনি হয়তো আমাকে নাও চিনতে পারেন। আবার চিনতেও পারেন। স্যার, আমি আপনার সাথে দেখা করতে চাই। আপনি কি আমাকে একটু সময় দিবেন?

"হা হা হা। আমার সময়ের কোন অভাব নাই।" এই বলে বাসার ঠিকানা দিয়ে খন্দকার সাহেব ফোন রেখে দিলেন।
বিকেল বেলা খন্দকার সাহেবের ড্রয়িং রুমে দুই জন বৃদ্ধ মুখোমুখি বসে আছেন। বয়সের ব্যবধান পনের বছর। দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছেন। কারও মুখে কোন কথা নাই অনেক সময় ধরে। অবশেষে সাজ্জাদুর রহমান নিরবতা ভাংগলেন।

স্যার, আজ থেকে অনেক বছর আগে আমি আপনার চেম্বারে গিয়েছিলাম। তখন আমার মেয়ের বয়স ছিল পাচ বছর। আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে আপনাদের ডাক্তারদের ভিজিট এত বেশি কেন? আজ আমার মেয়ে একজন প্রতিষ্ঠিত ডাক্তার। কিন্তু তার এই প্রতিষ্ঠিত হয়ে ওঠার পিছনে যে গল্প তার প্রতিটা লাইনে আমি আমার প্রশ্নের উত্তর পেয়েছি। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে আপনারা যা ভিজিট নেন তা হয়তো ঠিকই আছে। আমরা দূর থেকে আপনাদের শুধু ভুলই বুঝি। কিন্তু আপনাদের একজন ডাক্তার হবার পিছনে যে শ্রম, মেধা, সময় ব্যয় করেন সেই তুলনায় আপনাদের ভিজিট সত্যিই কম স্যার। এরপর সাজ্জাদুর রহমান ডাক্তার সাহেবকে সালাম দিয়ে বললেন,
স্যার আসি।

বলেই দেরী না করে দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেলেন। ডাঃ খন্দকার মোস্তফা খালেদ চুপচাপ খোলা দরজার দিকে তাকিয়ে রইলেন।

©Rasel sheikh.