Friday, January 29, 2016

আলহামদুলিল্লাহ ফর এভ্রিথিং


(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক)
আমাদের আশেপাশের ডাক্তার সোসাইটি বিশেষ করে ইয়াংরা খুব হতাশ।কঠিন পড়াশোনা,আর্থিক অনটন,কতিপয় রোগী-রোগীর আত্মীয় স্বজনদের অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ব্যবহার সব মিলে খুব বাজে অবস্থা।

কিন্তু ভালর দিক টা কম না।আমি আমার কথা শোনাই।কয়েক বছর আগে আমার মায়ের একটা এক্সিডেন্ট হয়।ছোটো খাট মোটরসাইকেল এক্সিডেন্ট।একটা ছেলে মা-ভাইয়াকে কে পাশের বাড়িটাতে নিয়ে গেছিল।তেমন কিছু করে নাই।জাষ্ট নিয়ে গিয়ে একটু মাথায় পানি দিছে।

আমার মা খুব কনজারভেটিভ মানুষ।একটা লম্বা চুলের ছেলে মাথায় পানি দিচ্ছে দেখে মা ভড়কে গেছিল।ছেলেটা বলছে মা শুয়ে থাকেন।আমিও আপনার ছেলেই।

সেই থেকে আমরা ছেলেটার কেনা হয়ে গেছি।আমার কনজারভেটিভ মা ছেলেটার কথা অনেক বলেন।ছেলেটাকে যদি খুঁজে পাওয়া যেত সেই কথা বলেন।এমনকি ছেলেটাকে একটা আত্মীয়তায় বেঁধে ফেলার কথাও দুয়েকবার বলতে শুনেছি।

সত্য কথা হচ্ছে বিপদের সময় একটু সাহায্যের কথাও মানুষ ভোলে না।এটা হিউম্যান নেচার।

আমরা যারা ডাক্তারি পেশায় আছি তাদের টা বলি।ফলো আপ দিতে গিয়ে আমরা দুইটা ভাল কথা বললে,ওটির নার্ভাস টাইমটাতে সান্তনা দিলে,থার্ড ইয়ারে,ফোরথ ইয়ারে হিষ্ট্রি টা নিতে গিয়ে একটু সহানুভূতির সাথে কথা বললে রোগীরা ভুলে যাওয়ার কথা না।প্রচুর রোগী আছে যারা নিজে অনেক এষ্টাবলিশড লেভেলের হয়েও খুব শ্রদ্ধার সাথে স্যার বলে সম্বোধন করে।প্রচুর রোগী আছে যারা বাবা,মামনি ছাড়া কথা বলে না।এটা কম কিছু না।

হঠাত হঠাত একটু মন খারাপ হতেই পারে।কিন্তু আমাদের মত এত বেশি ভালবাসা পাওয়ার সুযোগ আল্লাহ কম মানুষকেই দিয়েছেন।রোগীদের ব্যবহারে নিজের সিনসিয়ারিটি কমিয়ে দেয়ার মানে নাই।অসুস্থ মানুষগুলোর ভালবাসার মূল্য ফেরত দেয়ার এই একটাই রাস্তা।এটাই ব্যবহার করা উচিৎ।

এখানে অনেক সিনিয়র,ডাক্তারি পেশায় অভিজ্ঞ লোকজন আছেন।আর আমি জুনিয়র মোষ্ট ডাক্তারদের সারির।ভুল কিছু যদি বলে থাকি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।তবে আমার কথা যদি শুনতে চান আমি বলবো,আমি হতাশ হই নি।
আলহামদুলিল্লাহ।ফর এভ্রিথিং।

collected

বিকল্প ভাবনা‬

তরুন ডাক্তারেরা গ্রামে থাকতে চান না কারন তাদের পোস্ট গ্রাজুয়েশন করতে হবে। গ্রামের মানুষ যাদের সামর্থ নেই অথচ প্রয়োজন আছে তারা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ পান না কারন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক উপজেলা পর্যায়ে নেই বললেই চলে। একইভাবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং ফ্যাসিলিটির অভাবে উপজেলার ইমার্জেন্সি কার্যত অকেজো হয়ে যায় অনেক ক্ষেত্রেই, নিকটস্থ রেফারেল সেন্টারে নেবার সামর্থ, সময় অনেকেরই হয় না। নতুন পাশ করা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও হতাশায় ভোগেন কারন শহরে পশার জমাতে ৫-৬ বছর লাগেই, সব রোগীই যায় পুরোনো স্যারদের কাছে। বাড়ছে নিত্য নতুন মেডিকেল কলেজ, অথচ বাড়ছে না শিক্ষার মান, মেডিকেল কলেজে নেই সকল বিষয়ের পর্যাপ্ত শিক্ষক। শিক্ষক নেই কারন ডাক্তারেরা কেউ বেসিক সাবজেক্টে আসতে চান না, গবেষনা ও অর্থ উপার্জনের সুযোগ কম বলে। সরকার চায় এই সব সমস্যা দূর হয়ে দেশের আনাচে কানাচে চিকিৎসাসেবা পৌছে যাক।
তো এই হল মোটামুটি চিকিতসাখাতের সমস্যার লুপ। একটু বিকল্পভাবে চিন্তা করে দেখলাম ব্যাপারগুলো এভাবে সমাধান করা যায় কিনাঃ

১) ডাক্তারদের বাধ্যতামূলক ২ বছর গ্রামে থাকতে হবে এই নিয়মটা করা হোক বিশেষজ্ঞ চিকিতসকদের ক্ষেত্রে (MD/MS, FCPS, Diploma): অনেকে ক্ষেপে উঠতে পারেন, এতে লাভ কোথায় আমি দেখাচ্ছি। প্রথমত সদ্য পাশ করা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক উপজেলায় ২ বছর থেকে যথেষ্টই উপার্জন করতে পারবেন যা সে শহরে থেকে পারতেন না এবং ২ বছর শেষে শহরমুখী হলেও সাপ্তাহিক ছুটিতে শহরের বাইরে এই প্র্যাকটিসের যায়গাটা তার থেকেই যাবে। দ্বিতীয়ত, রোগীরা সর্বোচ্চ সেবা পাবে, যাদের সামর্থ নেই দূরের রেফারেল সেন্টারে যাওয়ার (যেটা আগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে করা হত)।

২) তরুন চিকিৎসক সরকারি চাকরিতে ঢোকার সাথে সাথেই ট্রেনিং পোস্ট বা রেসিডেন্সিতে ঢোকার সুযোগ পাবেন এই শর্তে যে তারা পোস্ট গ্রাজুয়েশন শেষ করা মাত্রই ২ বছর পেরিফেরিতে পোস্টেড হবেন। এতে লাভ হলো শহরের সব হাসপাতালে প্রচুর ট্রেইনী ডাক্তার পাওয়া যাবে, পোস্ট গ্রাজুয়েশন ট্রেনিং দ্রুত শেষ হবে, ফলে পোস্ট গ্রাজুয়েশন ও দ্রুত শেষ হবে, ফলে তরুন ডাক্তারদের শহরমুখী হবার সবচেয়ে বড় কারন এর নিরশন হবে।

৩) ইন্টার্নশীপ ২ বছর হবার কথা শুনেছিলাম। এটা ভালো না মন্দ সে তর্কে যাবো না তবে এটাকে অন্যাভাবে কাজে লাগানো যেতে পারে। ইন্টার্নশীপ এক বছর মেডিকেল কলেজে এবং এক বছর উপজেলা পর্যায়ে করা হোক। প্রস্তাবিত পদ্ধতিতে যেহেতু উপজেলায় কনসালটেন্ট থাকবে তাই কনসালটেন্ট এর অধীনে ইন্টার্নশীপ গ্রহনযোগ্য করতে অসুবিধা হবার কথা নয়। সেই সাথে তরুন ডাক্তারেরা গ্রামে থাকার ব্যাপারে আগে থেকেই সেনসিটাইজ হবে এবং ক্লিনিক্যাল বিষয় ছাড়াও সিচুয়েশোন হ্যান্ডলিং শিখবে। যেহেতু উপজেলায় ইন্টার্ন থাকবে তাই উপজেলায় ডাক্তারের অভাব হবে না, রোস্টার ডিউটি কনসালটেন্টদের করতে হবে না (অন কল থাকতে পারে)। যেহেতু এই ১ বছর সে কনসালটেন্ট এর অধীনে থাকবে তাই এটাকে পোস্ট-গ্রাজুয়েশন ট্রেনিং এর অন্তর্ভূক্ত করা যেতে পারে তাহলে অন্তত ১ বছর বিনা বেতনের অনারারি বর্বরতার সময় কমবে। অথবা পোস্ট-গ্রাজুয়েশন ট্রেনিং এর অংশ হিসেবে বাধ্যতামূলক ৬ মাস বা ১ বছর উপজেলায় কনসালটেন্ট এর অধীনে ট্রেনিং করার ব্যবস্থা রাখতে হবে। মূল উদ্দেশ্য একটাই, উপজেলায় ডাক্তার এর সংখ্যা ও মান বৃদ্ধি।

৪) উপরের কাজগুলোর মাধ্যমে যেহেতু উপজেলা পর্যায়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং বেশ কিছু সংখ্যক ট্রেইনী ডাক্তার নিশ্চিত করা গেল সেহেতু পেরিফেরি থেকে টারশিয়ারী হাসপাতালে রেফারাল এর সংখ্যা কমবে। ফলে টারশিয়ারী হাসপাতালে রোগীর চাপ ও কমবে। চাপ কমলে ডাক্তারের কাজের প্রেসার কমবে, রোগীকে সময় দেবার সুযোগ বাড়বে, সেবার মান বাড়বে। জটিল রোগের চিকিৎসা নিয়ে গবেষনার সুযোগ পাওয়া যাবে। হয়ত রোগীকে বারান্দায় মাটিতে শুয়ে থাকতে হবে না বা ডাক্তারকেও একটানা ২-৩দিনের নির্ঘুম রাত কাটাতে হবে না।

৫) বেসিক ও প্যারাক্লিনিক্যাল সাবজেক্টে শিক্ষক বাড়াতে বিশেষায়িত গবেষনা প্রতিষ্ঠান, মেডিকেল কলেজে গবেষনার সুযোগ, গবেষনা ভাতা, নন-প্র্যাকটিসিং এলাউয়েন্স, বাধ্যতামূলক পেরিফেরি বাতিল, উচ্চতর শিক্ষা ও ট্রেনিং এর জন্য স্কলারশিপসহ উন্নত রাষ্ট্রের বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে প্রেরন ইত্যাদি প্রচলন করা যেতে পারে। এতে আরো বেশি ডাক্তার বেসিক সাবজেক্টে আসতে উৎসাহী হবে। ফলে শিক্ষক সংকট কমবে, মেডিকেল কলেজে শিক্ষার মান বাড়বে, ভালো ডাক্তার তৈরি হবে, তারা শহরে-গ্রামে সর্বত্র উন্নত সেবা নিশ্চিত করতে পারবে, হয়ত নিজেদের স্বাস্থ্য সেবার চাহিদা মিটিয়ে আমরা প্রচুর ডাক্তার দেশের বাইরেও পাঠাতে পারবো।
এ সবই হয়ত ছোট মুখের বড় কথা। তবুও মনে হয়, মানুষ কখনো বোঝা নয়। অন্তত ৬৭% তরুনের এই দেশে কাজে লাগানোর মত মেধা ও মননের অভাব নেই। একটু সুষ্ঠ পরিকল্পনাই হয়ত আপাত সমস্যাকে সুযোগে পরিনত করে দিতে পারে।
collected