Friday, April 29, 2016

ডাক্তার আর ক্লিনিক অথবা আইসিউ সমার্থক নয়।

ডাক্তারদের সমালোচনায় একটা মুখরোচক ইস্যু হচ্ছে আইসিউ তে মৃত রোগীকে জীবিত দেখানো। এবং এভাবে বিল বাড়ানো। অভিযোগ খুবই গুরুতর। বড়ই অমানবিক। এ ধরনের ঘটনার কঠোর শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।

কিন্তু সাধারন মানুষের চোখে এ ঘটনার মূল দোষটা গিয়ে ডাক্তারের উপর পড়ছে। এবং তাদের এ ভাবনাটা কিন্তু খুবই স্বাভাবিক। আমি নিজে হলেও তাই ভাবতাম। অতএব সেটা নিয়ে খুব একটা কিছু বলার নাই। সমস্যাটা হল জাতির শ্রেষ্ট সন্তান, মেধাবী ও ক্রিয়েটিভ সাংবাদিক ভাইয়েরাও যখন এমন ভাবছেন তখন কষ্ট লাগছে। কারন যতদূর জানি সাংবাদিকতায় নূন্যতম কোন যোগ্যতা আইনত নির্ধারন করা না থাকলেও, অন্তত প্রতিষ্ঠিত পত্রিকা, টিভি চ্যানেলের সাংবাদিকরা যথেষ্ঠ শিক্ষিত,অন্তত গ্র্যাজুয়েট। তারা আসল বিষয়টা জানেন এবং ভাল ভাবেই জানেন। এই ধরনের অনেক হাসপাতালই সাংবাদিকদের ম্যানেজ করে চলে বলে শোনা যায়।

যাই হোক আসুন একটু মুল বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করি।

ডাক্তাররা হাসপাতালে চাকরি করেন। তার কিন্তু হাসপাতালের মালিক নন। ৯৯ ভাগ ক্ষেত্রেই মালিক পক্ষ নন মেডিক্যাল। এখন এই হাসপাতাল বা আইসিউ এর অনুমতি দেবার জন্য, তাদের কার্যক্রম দেখার জন্য আলাদা প্রতিষ্ঠান আছে। ডাক্তাররা শুধুমাত্র একজন চাকুরে এখানে। এখন হাসপাতালের মালিকরা যখন অসৎ পথে যেতে চান তখন ডাক্তার সেখানে অসহায়। এর প্রতিবাদ করলে চাকরি চলে যাবে। এখন বলুন তখন এই ডাক্তারের পিছনে কিন্তু কেউ এসে দাঁড়াবে না। কিন্তু চমৎকার হত যদি একজন ডাক্তার এর প্রতিবাদ করতেন। কিন্তুব বাস্তবতা তা হতে দেয় না।

আচ্ছা এবার একটু অন্য প্রফেশন থেকে ঘুরে আসি।

অর্থাৎ অন্যান্য প্রফেশনে যদি প্রতিষ্ঠান অন্যায় করে সেক্ষেত্রে পেশাজীবিদের ভূমিকাটা কেমন?

সাংবাদিকদের দিয়েই শুরু করি।

দৈনিক প্রথম আলো আর কালের কন্ঠের মাঝে বিরোধটা আমাদের অনেকেরই জানা। দুই পক্ষই একে অপরের বিপক্ষে রিপোর্ট করছিল পরস্পরকে হেয় করার জন্য। এবং এক্ষেত্রে কালের কণ্ঠই বেশি উদ্দেশ্যমূলক এবং মিথ্যা তথ্য দিচ্ছিল। যার প্রমান পরবর্তিতে প্রেস কাউন্সিল তাদেরকে সতর্ক করে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কালের কন্ঠে তো আওনেক সাংবাদিক কাজ করেন। তারা তো সবাই বিষয় টা দেখেছেন এবং জানেন। ওপেন সিক্রেট। কিন্তু কে প্রতিবাদ করেছেন? কালের কন্ঠের স্বম্পাদক ইমাদাদুল হক মিলন, যাকে সবাই এক নামে চেনে, মিডিয়ার এমন কেউ আছেন যিনি তাকে চেনেন না? সম্ভবত নেই। তিনি অসুস্থ হলে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রি ও সম্ভবত দেখতে যাবেন। আর মন্ত্রিরা তো অবশ্যই। তো এমন একজন প্রভাবশালী লোক ও চুপ মেরে থাকলেন। কিছু বললেন না। জ্বি, এর নাম চাকরি। এর নাম পেটের দায়।

আর আমরা সেখানে দু পয়সার এম বি বি এস ডাক্তার আর চার পইসার কনসালট্যান্ট এর কাছে প্রতিবাদ আশা করি। যারা মারা গেলে, যাদের কিছু হলে কারও চুলটাও (হিন্দিতে অনুবাদ) ছেড়া যাবে না। এই আমাদের বাঙ্গালির যুক্তি।

ঠিক একই রকম কথা বলা যাবে অডিট কোম্পানির বিরুদ্ধে। টাকা খেয়ে কি অডিট রিপোর্ট বদলে দেয়া হয় না?

অডিট কোম্পানি গুলোতে কাজ করা কে তার প্রতিবাদ করেন?


ভাইরে ডাক্তার ভিন্ন গ্রহ থেকে উড়ে আসা মানুষ না। তার ভাত খায়। তাদের ও পেট চালাতে হয়। আপনারা নিজ নিজ প্রফেশনে অন্যায়ের বিরুদ্ধে, কোম্পানির বিরুদ্ধে কিছু বলবেন না। কিন্তু ডাক্তাররা কেন বলছেন না,কেন করছেন না তার জন্য ডাক্তারদের সমালোচনা করবেন। তাদের গায়ে মনমত কলংকের কালিমা লেপন করবেন। কেন ভাই, কোন যুক্তিতে?

আইসিউ আর হাস্পাতেলের মান নিয়ন্ত্রনের প্রতিষ্ঠান আছে। তাদের সাথে কথা বলেন। তাদের মনিটরিং বাড়াতে হবে। হাসপাতালের লাইসেন্স দেয়া প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহিতা বাড়ান। আপনি কোন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স যারা দিয়েছে সেখানে অভিযোগ করেন। কেন লাইসেন্স দেয়া হল,কেন বাতিল করা হচ্ছে না, তা জানতে চান।

অনর্থক ডাক্তারদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জনের চেষ্টা জাতির জন্য শুভকর হবে না।

Source https://www.facebook.com/notes/624984094250908/

Wednesday, April 27, 2016

আসেন, ডাক্তারদের নিয়ে কথা বলি !

তারা ব্যস্ত বলেই আমরা সুস্থ থাকি...

আসেন, ডাক্তারদের নিয়ে কথা বলি ! আপনাকে আজ জানতেই হবে, ভুল চিকিৎসায় দেশে কতজন মারা যায়। আপনাকে জানতেই হবে, কতজন ডাক্তার দায়িত্বে অবহেলা করে। ডাক্তারদের বিরুদ্ধে একজোট আজ আমরা হবই ! ১৬ কোটি মানুষ, একলাখও ডাক্তার না, ওরা পারবেই না আমাদের সাথে !!

শুরুতেই তথ্যটা আরেকটু গুছিয়ে বলি, ২০১৩ সালের হিসেবে ডাক্তারের সংখ্যা ৬৭০০০ মাত্র ! ১৬ কোটি দিয়ে ভাগ করুন, ২৩৮৮ জনের জন্য একজন ডাক্তার। মুখে মুখে জানি ৬৮০০০ গ্রাম আমাদের, তাহলে প্রতি গ্রামের ভাগেও একজন ডাক্তার পড়ল না। কিন্তু আমাকে বলেন, দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন কি পরিমান মানুষ চিকিৎসা নেয়? মাত্র ৫ টাকা টিকেট কেটে একজন প্রফেসরের সাক্ষাৎ পান তারা। আর তাতে ৫ মিনিটের জায়গাতে ১৫ মিনিট সময় লাগলেই বিপত্তি, লাঠি এনে হাসপাতালে শো-ডাউন শুরু হয়ে যায়...

আমরা কী জানি? বা দেখার চেষ্টা করি? একজন ডাক্তার যে কিনা ঐ হাসপাতালে বসে সারাদিন রোগী দেখল, তার জীবনটা কেমন ছিল? তাকে এইচএসসির পরেই লাখ লাখ পরীক্ষার্থীকে মোকাবেলা করে সুযোগ করে নিতে হয়েছিল মেডিকেল কলেজে! এবার বলবেন, টাকা থাকলেই হয়! ভাই থামেন, বেসরকারিতে ভর্তি হতেও সিরিয়ালে নাম থাকতে হয়। আর যারা টাকা দিয়ে ভর্তিও হচ্ছেন যারা, সবার বাপের গার্মেন্টস নেই, জমি বিক্রি করেও অনেকে ভর্তি হচ্ছে। অতঃপর ভর্তি হয়েও কি শেষ? তাকে পাশ করেই সার্টিফিকেটটা পেতে হচ্ছে, আর সেই পরীক্ষা কেন্দ্রীয়ভাবেই হয় । যাই হোক, মেডিকেলে সব উৎরে যখন ভর্তি হয়, কেমন থাকে তাদের সেই জীবনটা? চলুন একটু জানার চেষ্টা করি...
আমি যখন মেডিকেলের কাউকে ভার্সিটির ক্যাম্পাসের গল্প বলি, তারা আফসোস করে বলেন, আর ক্যাম্পাস, আমাদের তো হাসপাতাল। আসলেই, যেই হাসপাতালে অসুস্থ্য থেকে অথবা রোগীকে দেখতে যেয়েই কিনা নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে আমাদের, সেখানেই তাদের পাঁচ বছরের পড়াশোনা। প্রথম বছর থেকেই শুরু সে এক অমানবিক জগৎ,আমি এমন অনেকের গল্প জানি, যারা কি না ডেডবডি দেখেই অজ্ঞান হয়ে গেছে, মাঝরাতে সেই মেডিকেলের হলগুলোতে ডেডবোডির চেহারা সামনে ভেসে ওঠায় চিৎকার করে কান্নার আওয়াজও পাওয়া যায়! আর নিত্যদিন শারিরীক অংগ নিয়ে কাজ করে, হাত দিয়ে ইচ্ছেয় অনিচ্ছেয় সেই জীবনগুলোকে নাড়াচাড়া করতে হয়। সব ছেড়ে বাড়ি ফিরে খেতে বসেও আর সে হাতে ভাত মেখে খাবার পেটে নামেনা। বাসায় থাকলে মা, হলে থাকলে চামচ নাড়তে নাড়তে অল্পতেই পেট ভরার চেষ্টা। মেডিকেল টুডেন্ট না আমি, তবুও গল্প শুনেই জানি, প্রাইমারি স্কুলের মতন সকাল থেকে দুপুর অব্দি ক্লাস, তাতে আবার আইটেম নামের এক জিনিস, একদম ছোটবেলার মাদ্রাসায় পড়া দেয়ার মতন তাদেরকে ভাইভা দিতে হয়। টিচারের মনে না ধরলে তাতে পাশ নেই, এভাবে কিছুদিন চললে সামনের প্রফ এক্সামটাও আর তাকে দিতে দেয়া হয় না। প্রফ হচ্ছে তাদের সেন্ট্রাল এক্সাম। আর পরীক্ষা বা ক্লাসের সময়টাতে কত রাত নির্ঘুম রেখে যে একজন মেডিকেল শিক্ষার্থীর জীবন পার হয় তার হিসেব থাকেনা। ১২ টা থেকে ২ টা পর্যন্ত ঘুম, আবার ২ টা থেকে ৫ টা পর্যন্ত পড়া, এ খুব নতুন কিছু নয় তাদের জীবনে। প্রফের আগের রাতে আত্মহত্যা করেছে, এরকম তথ্যও আমার কাছে আছে। এ তো গেল শিক্ষাজীবনের কথা।


এবার আসুন, একজন ডাক্তার এমবিবিএস পাস করেছে। ইন্টার্ন ডাক্তার দিনে কতঘন্টা ডিউটি করেন? সরকারি মেডিকেলে তাকে কত সময় থাকতে হয়? হিসেব আছে? ঈদের দিন কি সদলবলে হাসপাতাল ছুটি থাকে? রোগিরাও ছুটিতে যান? ঈদের নামাযের সময়টাতে কি ইমারজেন্সী বিভাগ বন্ধ থাকে? রমজানে ইফতারের সময়টাতে কি দূর্ঘটনায় আহত কেউ কাতরাতে কাতরাতে মেডিকেলে আসেন না? তাদেরকে ডাক্তাররা কি বলেন? সরি, এখন ইফতার করছি ! তাদেরকে কি এটা বলেন? বসুন, ঈদের নামাজটা পড়ে আসি ? আর এই যে ডাক্তাররা প্রাইভেট প্র্যাকটিস করে ফাটায় ফেলল বলে গালি দেই? আচ্ছা আমাকে বলেন, অমানুষিক পড়াশোনা শেষ করে বার ঘন্টা ডিউটিরত একজন ডাক্তার যখন সরকারি চাকরি করে ৩০০০০ টাকা বেতন পান আর ছেলেমেয়ে নিয়ে থাকতে অন্তত ১৫০০০ টাকা বাসা ভাড়াই লাগে, তাহলে সে খাবেন কই ? হাসপাতালে ? আর যদি না তারাই প্রাইভেটে না বসেন, তাহলে কোথায় এত ডাক্তার যে সেই অভাব মিটবে? তবে এক কাজে অবহেলা করে অন্যটা নেহায়েত যে কম হয় তা না, হলে সেটা দোষের। গ্রামে যে ডাক্তারকে পাঠানো হয়, সেখানে থাকার জন্য টিনশেড ঘরও থাকেনা, শহরে থাকলে আবার শো-কজ করা হয়, কেন থাকেন না সেখানে? একজন ডাক্তারকে কতদিক সামলাতে হয়? এরকম শুনেছি, এক ডাক্তার ছেলের দাফন ফেলে রেখে ওটিতে এসে ইমারজেন্সী অপারেশন করেছেন, তাও দেরি করাতে তাকে শুনতে হয়েছে কটু কথা। কাজেই একজন ডাক্তারের জীবনে এই সামাজিকতা গুলো কখনোই আর বাস্তব হয়ে ওঠেনা। আর সারাজীবন চিকিতসাবিজ্ঞানের সেরাটা জানতে পড়াশোনাটা চালিয়ে যেতেই হয়। চিন্তা করুন একজন ডাক্তার যখন একজন মা, যখন তিনি তার আদরের সন্তানকে অন্যের হাতে রেখে আরেকজনের সন্তানকে সুস্থ্য করতে ব্যস্ত, সেটা কি কেবলই টাকার জন্য ? তারা এদিক ওদিক সামলিয়ে ব্যস্ত থাকেন বলেই তো আমরা সুস্থ্য থাকি! তারা পারেনও। দুমিনিট বসেই ৫০০ টাকা যারা বলেন, তারা কি জানেন? দু মিনিটের এই ভাবনাটার পেছনে কতদিনের কত কষ্টের গল্প থাকে? কতগুলা আইটেম পেন্ডিং এর গল্প থাকে? কত নির্ঘুম রাতের গল্প থাকে? কত রাত আটটা থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত ক্লাস করার গল্প থাকে? আমরা এই গল্প জানি ও না, জানতে চাইও না আসলে, শুধু জানতে চাই, কিভাবে তাদের দোষটা ধরা যায়? তার আগে নিজেকে বিচার করে আসি না, কত দোষ পার করে আমি ডাক্তারের কাছে? ঢাকা মেডিকেলে আসার সময় যে আপনি রঙ রোডে বাইক চালিয়ে ঢুকেছিলেন বলে ট্রাফিককে দশ টাকা দিয়েছিলেন, সেটা ভুলে যান দিব্যি, কিন্তু হাসপাতালে ঢুকেই দিব্যি আমেরিকার নাগরিক মনে করবেন নিজেকে, আর হাসপাতালটাও নিউইয়র্কের মানের প্রত্যাশা করবেন, সেটা তো হবেনা। কেন ডাক্তার নেই, সেই কৈফিয়ত তলব করেন, আর নিজে যে অফিস ফাকি দিয়ে চলে এসেছেন, সেটা ভেবেছেন কখনও?

মনে রাখবেন, তারা এ হাসপাতাল, সে ক্লিনিক, ওমুক ওষুধের দোকান, এমনকি বাসাতেও ফোনে সেবা দিতে ব্যস্ত থাকেন বলেই সব জায়গার সবাই কমবেশি সেবা নিয়ে সুস্থ্য থাকেন। দিনরাত মৃত্যুর গল্প টিভিতে আসে, কত ক্রিটিকাল সিচ্যুয়েশনে রোগিকে বাচাতে ডাক্তাররা নার্সরা দলবেধে ওটিতে নেমে যান, সেই গল্প আমাদের কাছে আসেনা। কত ডাক্তার রোগিকে বাচাত না পেরে চোখের জল ফেলেন, সেই গল্প আমাদের শোনার সময়ই হয়না। কত জীবনের গল্পই না অজানা থেকে যায়... গল্পকারদের কথাও থেকে যায় নিভৃতে !

সাজেদুল ইসলাম শুভ্র
২৮/৮/২০১৪

Friday, April 15, 2016

আমাদের জীবন।চিকিৎসক জীবন।

বিসিপিএস আরেক দফা বাড়ালো এর পরীক্ষার ফি।অনেকটা ডেসা,ওয়াসা,তিতাসের মতো বছর বছর বিদ্যুত,পানি,গ্যাসের দাম বাড়ানোর মতোই পরীক্ষার ফি বাড়ানোটা রেওয়াজে পরিনত করেছে বিসিপিএস।ছয় মাস আগেও যে পরীক্ষার ফি ছিল দশ হাজার টাকা সেটা জুলাই থেকে পনের হাজার টাকা করা হয়েছে।পরীক্ষার ফির মূল্য বৃ্দ্ধির হার প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ।এই অস্বাভাবিক মূ্ল্য বৃদ্ধির কারন আমরা জানি না।

মানুষ মানবিক ডাক্তার খোঁজে।কিন্তু ডাক্তাররা যখন তাদের পেশার উৎকর্ষতা বৃদ্ধির জন্য পোস্ট গ্রাজুয়েশন ডিগ্রী অর্জন করতে চায় তখন তারা যে অমানবিক আচরনের শিকার হয় তা বর্ণনাতীত।ঢাকায় না আসলেও এম বি বি এস ডিগ্রী অর্জন করা যায়।কিন্তু ঢাকায় না এসে এফসিপিএস ডিগ্রী অর্জন করা যায় না।সেই ঢাকায় দশ-পনেরজন মিলে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে সপ্তাহে দুই/তিন দিন খেপ মেরে এম বি বি এস ডিগ্রীধারী ডাক্তাররা এফ সি পি এস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি শুরু করেন।পঁচিশ/ছাব্বিশ বছরের জীবনে এ এক নতুন জীবন শুরু হয়।যেখানে সবাই শেষ করে আমরা সেখান থেকে শুরু করি।

২০২২ সালে কাতারে ফুটবল বিশ্বকাপ হওয়ার কথা।সে বিশ্বকাপ আয়োজনের মহাযজ্ঞ সম্পাদনের জন্য কাতার বাংলাদেশসহ গরীব দেশ থেকে শ্রমিক নিচ্ছে।সেই মজুরদের সাথে অমানবিক আচরনের জন্য কিংবা হিউম্যান রাইটস এব-ইউজের জন্য কাতারে বিশ্বকাপ আয়োজনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে খোদ ফিফা।সেখানে এক রুমে ছয়-সাতজন শ্রমিক গাদাগাদি করে থাকে,দিনান্ত পরিশ্রম করে,এবং মজুরি কম পায় এই অভিযোগ মানবতাবাদী সংগঠনগুলোর।
আচ্ছা,আমাদের ডাক্তাররা এম বি বি এস ডিগ্রী শেষ করে যখন শাহাবাগের আজিজে আস্তানাগাড়ে তখন তাদের অবস্থা কি কোনো অংশে কম অমানবিক ঐ সকল মধ্যপ্রাচ্য শ্রমিকদের তুলনায়।আজিজ সুপার মার্কেটে্র একটি ফ্ল্যাটের সামনে দাঁড়ালে দেখা যায় শুধু স্যান্ডেল আর স্যান্ডেল।এই স্যান্ডেলের কয়েদীরা আর কেউ ই নন,তারা এই সমাজের অন্যতম মেধাবী ছেলেরা কিংবা মেয়েরা যারা এক সময় স্বপ্ন দেখতেন পড়াশুনা শেষ করে নিজেকে দ্বারিদ্র্যতার বেড়াজাল থেকে ছিন্ন করবেন।

সেই এম বি বি এস পাশ করা ডাক্তার নামের ছেলেটি পাশ করেই যেন দ্বারিদ্রতার পাশবিক ধর্ষনের শিকার হন।এক দিকে গ্রামে ফেলে আসা সংসারের ঘানি,অন্যদিকে ফ্ল্যাট মালিকের ভাড়া,নিজের ভরন-পোষন তার উপর ছয় মাস পর পর বিসিপিএসের পরীক্ষার ফি এর খড়গ!

এক সময়ে হোস্টেলে থাকা,বাড়ী থেকে আসা টাকায় খরচ চালানোতে অভ্যস্ত হওয়া ছেলেটি মধ্যপ্রাচ্যের সেই নির্মান শ্রমিকের চেয়ে কত টুকু ভালো থাকেন শাহাবাগের রাস্তায় রাস্তায়?মেডিক্যাল শিক্ষার সর্বোচ্চ ডিগ্রী ধারী ছেলেটি বন্ধুর বিয়েতে যেতে পারে না গিফট কিনতে পারবে না বলে,ঈদে বাড়ি যেতে পারেনা পরীক্ষার ফি যোগাড়ের জন্য অতিরিক্ত খেপ মারবে বলে।এ কোন সমাজে বাস করছি আমরা?জীবনের বাঁকে বাঁকে শুধু বৈপিরীত্য!

বি সি পি এস এর যারা হর্তা-কর্তা তারা সবাই আমাদের পিতার মতো।পিতা,একটু নিজের জীবনের পেছনে ফিরে তাকান?এটা ইয়াসিকা ক্যামেরায় তোলা কোনো ছবি নয় যে কস্ট করে মনে করতে হবে।আগুনে পোড়া দগদগে ঘা।চোখ পড়লে সে বাস্তবতা পিক্সেল বাই পিক্সেল ভেসে উঠে।পিতা,নিজের সন্তানকে কী দিতে পারবেন সে কস্টের স্বাদ যে কস্ট পেয়ে তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন নিজেকে।ডুবে যাওয়ার আগে হাত পা ছুঁড়েছেন বাঁচার আশায়।আপনাদের বেঁচে উঠার মতো করেই কি আমরা বেড়ে উঠবো?নাকি এর চেয়ে একটু বেশী সম্মানজনক এবং মানবিক হয়ে যাপিত হবে আমাদের জীবন।চিকিৎসক জীবন।

Collected

Friday, April 8, 2016

Report অনুযায়ী যা মনে হচ্ছে আর বাস্তবতা অনেক ভিন্ন। বিশেষ করে জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থা।
মোরাল অফ স্টোরিঃ যত দিন গাছের গোড়া কেটে আগায় পানি ঢালা বন্ধ না হবে তত দিন অবস্থার কোন পরিবর্তন আসবে না।