Thursday, May 26, 2016

পরিবেশ এতটা প্রতিকূল করতে নেই যাতে , যে আপনাকে বাচানোর চেষ্টা করবে সেই নিজের পশ্চাৎ দেশ বাচাতে ব্যস্ত থাকে।

বাংলাদেশে অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতিতেও ট্রেনিং করার একটাই অনুপ্রেরণা ছিলো যে , বাংলাদেশে প্রচুর কেইস এবং নিজ হাতে কাজ করার সুযোগ বেশি।
কিন্তু যেই চিকিৎসা সেবা আইন খসড়া করা হয়েছে, তাতে স্পষ্ট বলা আছে যে চিকিৎসায় যদি ন্যুনতম অবহেলার প্রমান পাওয়া যায় , তবে পাচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ।

এখানে আমার কিছু প্রস্ন আছে,
এক, অবহেলা হয়েছে কি হয়নি সেই সিদ্ধান্তটি কে দিবে? সাংবাদিক নাকি স্থানীয় রাজনীতিক নেতা?
দুই, ধরে নিলাম কারও বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ উঠলো এবং সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হলো। পরবর্তীকালে আদালতে প্রমানিত হলো যে তিনি নির্দোষ ছিলেন। তাহলে এই অবমাননা থেকে উনি কিভাবে মুক্তি পাবেন?
একজন চিকিৎসক জীবনে মূলত সুনাম উপার্জন করেন। এমনকি তার আর্থিক উপার্জনও নির্ভর করে তার সুনামের উপর।
সেখানে তিনি কি কোনভাবেই তার আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারবেন?
এই পরিস্থিতিতে বুদ্ধিমান চিকিৎসকগন কখনোই কোন ঝুকিপূর্ণ রোগীর চিকিৎসা করবেন না। গা বাচিয়ে রেফার করে যাবেন।

রোগী চিকিৎসকের ভুলে মারা যাবে না , এটা সত্যি। কারন তখন মারা যাবেন সবাই এম্বুলেন্স বা গাড়িতে।
তাহলে মোটের উপর লাভটা কোথায়?
ঝুকি নিলে হয় রোগী বাচবেন অথবা মারা যাবেন।
কিন্তু ঝুকি না নিলে সম্ভবত সেই রোগী মারাই যাবেন।
পরিবেশ এতটা প্রতিকূল করতে নেই যাতে , যে আপনাকে বাচানোর চেষ্টা করবে সেই নিজের পশ্চাৎ দেশ বাচাতে ব্যস্ত থাকে।

আর ফিস???
আমি নিশ্চিত এটার উপর যদি সরকার লাগাম লাগায় , তবে যারা সত্যিই কাজে ভালো , তারা সুযোগ পেলেই কাজ শিখে দেশ থেকে কেটে পরবেন।
দিনশেষে একটা প্রস্নই থাকবে,
লাভটা কার হলো???!!

সুত্র

Tuesday, May 10, 2016

যারা ডাক্তার না অথবা সন্তানকে ডাক্তার বানানোর অসীম ইচ্ছা বুকের ভেতর পোষণ করেন এই লেখাটি তাদের জন্য।

আমার বন্ধুটা বলল, এইবার একেবারে জানুয়ারি পর্যন্ত টার্গেট । এটা এপ্রিলের শুরুর দিকের কথা ।

বাক্স পেটরা গুছিয়ে সে এখন শাহবাগের আজিজে সুপার মার্কেটে শেকড় গেড়েছে , উইক এন্ডে ঢাকায় আসলে আড্ডায় ওকে পাই না ।
কারণ ওর এখনও পায়ের তলায় মাটি আসেনি ।

যারা ডাক্তার তারা এতক্ষণে বুঝে গেছেন আমি কি বলছি , যারা ডাক্তার না অথবা সন্তানকে ডাক্তার বানানোর অসীম ইচ্ছা বুকের ভেতর লুকিয়ে মাসে শ খানেকবার ডাক্তারদের কশাই বলে গালি দেন, এই লেখা তাদের প্রতি উৎসর্গ করে দিলাম ।

হ্যাঁ যা বলছিলাম , কেউ যদি আজিজ সুপার মার্কেটের ওপরে ডাক্তারদের ভাগাড়ে উঁকি না দেন......... হ্যাঁ ভাই ভাগাড়ে , আপনি ভুল পড়েননি......... তাহলে আপনি কখনো জানবেন না একজন নব্য ডাক্তার ডাক্তার হওয়ার কারণে কতটা আফসোস করে ।
আর আমার আফসোস ওই ডাক্তারের বাবা মায়ের প্রতি যারা ধারণা করে রেখেছিল ইন্টার্নি শেষ করেই তো আমার ছেলে চেম্বার দেবে এরপর কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা হাতে তুলে দেবে । রোগী দেখবে , পাঁচশ করে ভিজিট নেবে , গভীর রাত পর্যন্ত রোগী দেখবে ............

Ahhh ! what a bed of roses ......

ল্যাব এইড বা বড় বড় হাসপাতালে যেসব ডাক্তার দেখি হাজার টাকা ভিজিট , তাঁরা পুরো ডাক্তার সোসাইটির বিশ পার্সেন্টও রিপ্রেজেন্ট করে না ।

কাজের কথায় আসি ।

বন্ধুর কথা বলছিলাম , পায়ের তলায় মাটি আসেনি , অর্থাৎ এফসিপিএস পার্ট ওয়ানে চান্স হয়নি এখনও । লাইব্রেরিতে ছয় ঘন্টা পড়ে , এরপর রুমে গিয়ে ছয় ঘন্টা । কিন্তু জানা নাই , ভাগ্যে পার্ট ওয়ান তাও জুটবে কিনা , কারণ হাজারের ওপর পরীক্ষা দেয় আর চান্স পায় চল্লিশ, পঞ্চাশ , হয়ত বড়জোর শখানেক ।

এইত সেদিনও শুনেছিলাম পার্ট ওয়ান পরীক্ষা দিতে পাঁচ হাজার টাকা লাগে , কয়দিন পর সেটা সাত হাজারে উঠল , এখন সেটা এগার হাজার ।

অবশ্য ডাক্তারদের জন্য এই এগার হাজার তো কোন ব্যাপারই না , চেম্বারে বসবে পাঁচশ করে ভিজিট নেবে , গভীর রাত পর্যন্ত রোগী দেখে লাখ টাকা পকেটে পুরে নান্নার বিরিয়ানি কিনে ঘরে ফিরবে .......... সুখ ,

সেদিন এক জুনিয়র বলছিল ভাই ক্লিনিকে তো ডিউটি পাওয়া মুশকিল , এত ডাক্তার এখন , সপ্তাহে দুই দিন ডিউটি পাওয়া মানে আকাশের চাঁদ পাওয়া , দুই দিনে ইনকাম চার হাজার , মাসে সব মিলিয়ে আট থেকে নয় হাজার ।
কি ভাই , হেঁচকি দিলেন ?

আর রোস্টার ডিউটি করা ডাক্তারদের মাসিক ইনকাম গড়ে ছয় হাজার ।

আবার আজিজে পার হেড সিট ভাড়া চার হাজার শুনেছিলাম বহু আগে , এখন কত কে জানে ।

মাসে আট হাজার ইনকাম করা আজিজে পড়ে থাকা ডাক্তারদের বাবা মায়েদের জন্য দুঃখ লাগে , ছেলের বয়স পার হয় , ছেলের হাতের ইনকাম খাওয়ার স্বপ্নটা ঘোলা হয়ে যায় বারবার ।

এফসিপিএস দিতে এখন লাগে এগার হাজার , এই টাকা কোথা থেকে ম্যানেজ হবে বিসিপিএস চিন্তা করে না , সেদিন দেখলাম বিসিপিএস এর মূল গেটটা টাইলস করা ঝাঁ চকচকে । কোন ডাক্তার যদি বলে ওই পুরো গেট আমার বারবার ফেল করা পরীক্ষার ফি এর পয়সায় বানানো , খুব ভুল হবে না ।

এমডি এমএস পরীক্ষায়ও ভর্তি ফি পঞ্চাশ হাজারের মত , এই টাকা কোথা থেকে আসে ?
আর প্রতিবার পরীক্ষায় সর্বনিম্ন এগার থেকে পনের হাজার টাকা লাগে ফর্ম ফিলআপে ।
আর এই খরচ একজন পোস্টগ্র‍্যাজুয়েট ডাক্তারের প্রতি ছয় মাসের খরচ ।
আর ইনকাম ?
ওই যে........... চেম্বার ...... পাঁচশ টাকা ভিজিট ...... লাখ টাকা রাত শেষে ...... নান্নার বিরিয়ানি........
একজন বলছিল , মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের ডাক্তারি পড়াটা ঠিক না , অথবা বাবা মায়ের খুব শখ হলে অন্তত ছেলের বয়স চল্লিশ বছর পর্যন্ত এই আশা বাদ দেওয়া উচিৎ ছেলের ইনকাম এনজয় করবে ।

Collected

Monday, May 9, 2016

দিনশেষে ভুক্তভোগী

আপনি আপনার বাবাকে নিয়ে এসেছেন হাসপাতালে। দেখেশুনে বুঝলাম উনার হার্ট অ্যাটাক। দ্রুত টারশিয়ারি হাসপাতালে না পাঠালে তাঁর বাঁচার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কিন্তু রেফার করার আগে যদি অ্যাসপিরিন, ক্লপিডগ্রিল আর স্ট্যাটিন এর লোডিং ডোজ খাইয়ে দিই তবে বাঁচার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে। তবু আমি সেটা করবোনা কারন পথিমধ্যে রোগী মারা গেলে আপনি এসে আমার কলার চেপে বলবেন ঐ ঔষধগুলা দিয়ে আমি আপনার বাবাকে মেরে ফেলেছি। ক্ষতিটা কার হল শুনি?

আপনার স্ত্রীর প্রসব যন্ত্রণা উঠেছে মধ্যরাতে। আমাকে এসে ঘুম থেকে ডেকে তুললেন সাহায্য করার জন্যে। আমি গিয়ে দেখলাম চাইলেই নরম্যালি বাচ্চা ডেলিভারি করাতে পারব কিন্তু আমি করবোনা। মাঝরাতে বারো মাইল দূরের হাসপাতালে পাঠাবো কারন যদি সামান্য কিছু এদিক ওদিক হয়ে যায় আপনি আপনার গোষ্ঠীসহ আমার টুটি চেপে ধরবেন। ক্ষতিটা কার হল শুনি?

আপনার জ্বর হয়েছে এক সপ্তাহ ধরে। ফার্মেসি থেকে মাতবরি করে এন্টিবায়োটিক কিনে খেয়েছেন কাজ হয়নি। আমার কাছে এসে বললেন 'ডাক্তার... সাতদিনের জ্বর, এন্টিবায়োটিক খেলাম কিছুই তো হল না।' আমি জিজ্ঞাসিলাম ‘এন্টিবায়োটিক’ মানে কি? আপনি আমতা আমতা করে বললেন 'ঐ যে জ্বর হলে খায় আরকি' আমি আপনাকে মনে মনে আবাল টাইটেল দিয়ে চিকিৎসা শুরু করলাম। আবালদের চিকিৎসার নিয়ম ভিন্ন। ঠিকমত পরীক্ষা করে হয়তো বিশটাকার ডক্সিসাইক্লিন ক্যাপসুল দিলেই আপনার রোগ ভাল হয়ে যেত কিন্তু আমি তা করব না। কারন টেস্ট করতে দিলে তো বলবেন ‘সামান্য(!) জ্বরের জন্যে রক্ত পরীক্ষা করতে দিল। জ্বর কি রক্তে হয় নাকি? জ্বর তো হয় চামড়ায়। খালি কমিশন খাওয়ার ধান্দা’ তাই আমি আপনাকে চিকিৎসা শুরু করব ‘টেজোসিন’ দিয়ে। মশা মারতে হাইড্রোজেন বোমা দাগার মত। দ্রষ্টব্যঃ একেকটা টেজোসিন ইনজেকশনের দাম কয়েক হাজার টাকা, হয়তো ঠিক পথে চিকিৎসা দিলে বিশ টাকায় কর্ম সাধন হত। ক্ষতিটা কার হল শুনি?

আপনি সরকারী হাসপাতালে যাবেন না, কারন কি? ওখানে ডাক্তাররা ভাল করে দেখে না। লম্বা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আপনি আসবেন প্রইভেট চেম্বারে। আর চায়ের দোকানে বসে বড় বড় বুলি ঝাড়বেন 'আহারে দ্যাশে চিকিৎসা বলতে কিচ্ছু নাই, আম্রিকায় কত ভাল চিকিৎসা দেয় ডাক্তাররা।' এখন কথা হল আম্রিকায় একজন জিপি আট ঘণ্টার অফিস আওয়ারে যেখানে রোগী দখে পনেরো থেকে বিশজন সেখানে বাংলাদেশের একটা সরকারী হাসপাতালের আউটডোরে রোগী দেখতে হয় একশ থেকে দেড়শজন। এরপরেও আপনি আশা করেন আপনাকে কোলে বসিয়ে আপনার ঘর-গৃহস্থালির খোঁজ খবর নিবে ডাক্তার। না নিলেই ডাক্তার লোক খারাপ। আবার প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখলে বলবেন 'হায় হায় দ্যাখ শালা কত ট্যাকা কামায়া ফেলল! কসাই একটা।' যান প্রাইভেট চেম্বার বন্ধ; হাসপাতালে প্রতিটা রোগীকে পনেরো মিনিট করে দেখব। সে হিসাবে এক ঘণ্টায় চারজন। আট ঘণ্টায় বত্রিশজন। স্যরি ভুল বললাম... মাঝে এক ঘণ্টার লাঞ্চ ব্রেক আছে। তাহলে থাকল সাত ঘণ্টায় আটাশজন। আপনি আবার কালকে কাউয়া ডাকা ভোরে এসে লাইনে দাঁড়াইয়েন। নান অফ মাই বিজনেস; আই অ্যাম জাস্ট ডুয়িং একজ্যাক্টলি হোয়াট ইউ ওয়ান্টেড। এখন ক্ষতিটা কার হল শুনি?

আপনার হয়েছে টাইফয়েড, হাসপাতালের সরকারী সাপ্লাই আছে প্যারাসিটামল আর কৃমির বড়ি। আমি সেইটা দিয়েই আপনারে বিদায় করব। কারন বাইরে থেকে সঠিক ঔষধটা কিনতে বললে তো বলবেন কোম্পানির কমিশন খেয়ে লিখেছি। যান এখন জ্বরে কো কো করে কাটান আরও কয়েকটা দিন। আমার কি?

আরও বলব? সারাদিন বলতে পারব এরকম। দিনশেষে ভুক্তভোগী আপনি হবেন, আমি না। ডাক্তার ফেরেশতা না, মানুষ। ফেরেশতার চেয়ে আল্লাহ্‌র কাছে মানুষের মূল্য বেশি। নিজে মানুষ হন, ডাক্তারদেরকে মানুষ ভাবতে শিখুন। মানুষের সীমাবদ্ধতা আছে সেটা মনে রাখুন। আপনার বাবাকে মেরে ফেলে আমার লাভ নেই, আপনার অনাগত সন্তানের ক্ষতি করে আমার লাভ নেই। তাঁদের সাথে আমার কোন শত্রুতা নেই। বরং তাদের বাঁচাতে পারলেই আমার ভাল লাগে, আমি শান্তি পাই, আমার হাড়ভাঙা খাটুনি সার্থক হয়, জীবনটা অর্থবহ মনে হয়। আপনার আপনজনের মৃত্যুতে আমিও কাঁদি, সে কান্না আমার চোখে জলের স্রোত হয়ে নামে না, ঝর্না হয়ে রয়ে যায় অন্তরালে। সাদা অ্যাপ্রনের ভিতরটাতে এমন হাজারো কান্নার আনাগোনা নিয়ে তবু আমি আজরাইলের সাথে যুদ্ধে নামি আবার নতুন করে...
যদি একটিও প্রাণ বাঁচাতে পারি - এই আশায়।

লিখেছেন - ডাঃ সাইফুল ইসলাম (সুত্র)