Saturday, February 4, 2017

ডাক্তাররা লোভী, কারন তারা ঈদ-পুজায় পরিবার ফেলে টাকার লোভে হাসপাতালে-চেম্বারে রোগি দেখে

ছোটবোন এস এস সি পরীক্ষা দিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করল- ভাইয়া, তুমি তো ডাক্তার, তুমি কি লোভী? আমার স্কুল শিক্ষক বললেন, যিনি যত বড় ডাক্তার, তিনি নাকি তত বেশি লোভী।
বললাম, হ্যা রে, আমি লোভী এবং যিনি যত বড় ডাক্তার, তিনি তত বেশি লোভী।
আমি_লোভী
কারন-
বড় ডিগ্রি করার লোভে, বিসিএসের লোভে ঢাকায় পড়ে আছি। বিনাবেতনে এফসিপিএস ডিগ্রির জন্য ট্রেনিং এর নামে সরকারি হাসপাতালে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস খাটছি। মাঝে মাঝে টাকার লোভে ক্লিনিকে কাজ করতে যাই। এভাবে ৫ বছর কাজ করব। ডিগ্রির মোহে মত্ত হয়ে পরিবারের কথা ভুলেছি। ছোটবোনের পড়ালেখার খোজ নিতে পারি না, মা-বাবা অসুস্থ হলে দেখতে পারি না, মা অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়ার আগে টাকার অভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারি না, বউকে বছরে একটা শাড়িও কিনে দিতে পারি না।
ছোটবোনকে এস এস সি পরীক্ষার এক মাস আগে পড়া দেখিয়ে দেয়ার সময় দেখি বিজ্ঞান, অংকে একেবারেই কাচা। কিন্তু সে তো সারাদিনই পড়ে। গত দুই বছরই প্রাইভেট পড়েছে। তাহলে কি সে কম মেধাবী? তাহলে পিএসসি আর জেএসসিতে এ প্লাস পেল কিভাবে?
আমি তাকে দুই দিন সময় দিলাম। দুই দিনে চার বিষয়ের মোটামুটি সব কঠিন বিষয় বুঝিয়ে দিলাম। দেখি সে সহজেই সব বুঝল। দুইদিন পর ঢাকায় আসার পর মনটা খারাপ হয়ে গেল এই ভেবে যে- কত ছাত্রকে পড়ালাম, কত ছাত্র আমার কাছে পড়ে মেডিকেলে চান্স পেল। আর আজ ছোট বোনকে আমি সময় দিতে পারলাম না, তার পড়ার খোজ নিতে পারলাম না। আমি ডিগ্রি, বিসিএস এর লোভে মত্ত হয়েছি।
কি করার আছে আমার?
বিনাবেতনে এমবিবিএস ডাক্তার হিসাবে এফসিপিএসের ট্রেনিং করেও এদেশে মানব সেবা হয় না, চেম্বারে রোগি দেখলে মানবসেবা হয় না। মানবসেবা করতে গেলে সরকারি ডাক্তারই হতে হবে।
বোনকে বললাম- আমি লোভী হব না তো কে হবে? আমি লোভী। আমাকে লোভী বলে গালি দিস। তাতেও যদি আমার নিজের পাপের প্রায়শ্চিত্ত হয়।
তাকে আরো লোভী ডাক্তারের গল্প বললাম, যেগুলো সত্য ঘটনা।
বড়_ডাক্তাররাও_লোভী
যেমন-
নাক_কান_গলা_বিশেষজ্ঞ
নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার চেম্বার শেষ করে ফিরছিলেন। এক দম্পতি আসলেন তাদের বাচ্চার গলায় কাটা বিঁধেছে। ডাক্তার বললেন, আজ আর রোগি দেখব না, রাত ১২ টা বাজে, বাড়ি যাব। আপনারা অন্য কোথাও যান। দম্পতি নাছোড়বান্দা। শেষে ডাক্তার তার চেম্বার খুলে বাচ্চাকে দেখলেন ও গলার কাটা বের করে কয়েকটা ওষুধ লিখে দিলেন।
দম্পতি ওষুধের দোকানে গিয়ে ওষুধ কিনছে আর বলছে- দেখেছ, ডাক্তাররা কত লোভী, একটা রোগি দেখে টাকা কামাই করার লোভও সামলাতে পারে না। ডাক্তার তখন পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এই নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞকে দেশের সবাই চেনে। কিন্তু তিনিও লোভী।
নিউরোসার্জন
একজন নিউরোসার্জন অপারেশন শেষ করে রাত ৩ টায় বাড়ি ফিরেছেন। কয়েকদিন হল, তার ছেলেটার সাথে দেখা হয় না। ভাবলেন, আগামীকাল ছেলেকে সময় দিবেন। কিন্তু রাত ৪ টায় ফোনকল আসল- স্যার, একজন রোগি গাড়ি এক্সিডেন্টে মাথায় আঘাত পেয়েছেন। অবস্থা খুব খারাপ, তারাতারি অপারেশন লাগবে, স্যার প্লিজ আসেন। সার্জন বললেন- না না আজ অনেক অপারেশন করেছি, আর পারব না। কিন্তু অনেক চাপাচাপিতে শেষ অবধি গেলেন ও অপারেশন করলেন।
রোগি সুস্থ হবার পর হাসপাতালের বিল পরিশোধের সময় রোগির আত্মীয়রা বলতে লাগল- এত টাকা এই ডাক্তার কি করে? ডাক্তাররা এত লোভী।
গাইনি_সার্জন
রাত ৪ টায় হাসপাতাল থেকে ফোন- ম্যাডাম, একজন প্রেগন্যান্ট রোগি এসেছেন। দেড় দিন ধরে ব্যথা কিন্তু ডেলিভারির কোন লক্ষণ নাই, বাচ্চার নড়াচড়া বোঝা যাচ্ছে না। ম্যাডাম, একটু আসবেন। ম্যাডাম বললেন- না না এত রাতে যেতে পারব না। আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন ঝামেলা করে। এমনিতেই আমার বাচ্চাকে সময় দিতে পারি না, এত রাতে যাব না। রোগিকে অন্য কোন হাসপাতালে পাঠাও। কিন্তু আশেপাশে কোন হাসপাতাল নাই। গাইনি ডাক্তার বাড়ির মানুষের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে হাসপাতালে গেলেন। বাচ্চার অবস্থা খারাপ দেখে সিজার করলেন। মা ও বাচ্চা দুজনেই এ যাত্রায় বাচল।
রোগি বাড়ি গিয়ে জানাল- গাইনি ডাক্তাররা কত খারাপ, রাত বিরাতে টাকার লোভে হাসপাতালে কাজ করে। টাকার লোভে সিজার করে বেড়ায়।
হৃদরোগ_বিশেষজ্ঞ
চেম্বার শেষ করে রাত ১২ টায় বাড়ি এসেছেন। সবে মাত্র ঘুমিয়েছেন। ফোনকল আসল, পাশের পাড়ার একজনের বুকে ব্যথা, তাড়াতাড়ি আসেন। ডাক্তার গেলেন, দেখে ওষুধ দিয়ে বললেন- দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হতে ( হার্ট এটাক হয়েছে)। ফেরার পথে রোগির আত্মীয় কৃতজ্ঞতায় ডাক্তারকে ভিজিট দিলেন।
ঘটনাস্থলের এক ব্যক্তি পরে বলে বেড়াতে লাগলেন- ডাক্তাররা কত লোভী দেখেছেন, কয়েক টাকা ভিজিটের লোভে এতদূর এসেছেন।
সার্জারি_বিশেষজ্ঞ
রোগির দুই পায়ে পচন ধরেছে। রোগির স্ত্রী তাকে ত্যাগ করেছে। কেউ একজন দয়া করে তাকে সরকারি হাসপাতালের বারান্দায় ফেলে গেছেন। চারদিকে মাছি ভনভন করছে। সার্জারি বিশেষজ্ঞ স্যার তাকে দেখা মাত্র নিজ উদ্যোগে হাসপাতালে ভর্তি করলেন। নিজে প্রতিদিন ড্রেসিং করলেন, নিজের টাকা দিয়ে ওষুধ কিনে দিলেন। কিন্তু ইনফেকশন কন্ট্রোল হয় না। শেষ অবধি পা আর রাখার মত অবস্থা না থাকায় সিদ্ধান্ত নিলেন, পা দুটি কেটে ফেলবেন, নইলে রোগিকে বাচানো যাবে না। অপারেশন করে পা কেটে ফেললেন। রোগির জীবন বাচল।
কিছুদিন পর রোগির আত্মীয় এসে হাজির। অভিযোগ – ডাক্তার সাহেব লোভি, ওষুধ কোম্পানির কমিশন খেয়ে অনেক দিন রোগিকে ওষুধ খাইয়ে পরে রোগির ভাল দুইটা পা কেটে ফেলেছেন।
মেডিসিন_বিশেষজ্ঞ
তিনি অনেক বড় মাপের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ। যেহেতু সাধারণ রোগগুলোর চিকিৎসা সবাই করতে পারেন। তাই তিনি শুধু জটিল রোগগুলো দেখেন অন্য কারো রেফারেলে। দিনে ২০ জন রোগিকে দেখেন, এর বেশি দেখেন না।
একজন ব্যক্তি এই ডাক্তারকে দেখাতে চান কিন্তু সিরিয়াল পাচ্ছেন না। তিনি এবার বলতে লাগলেন- যে ডাক্তার ২০ জনের বেশি রোগি দেখেন না, এই রকম বিশেষজ্ঞ এই দেশে থাকার কোন দরকার নাই। চারদিকে প্রতিবাদ শুরু হল। সিরিয়াল না পেয়ে অনেকে চেম্বার ভাংচুর করল।
এবার তিনি দিনে ৫০ এর বেশি রোগি দেখা শুরু করলেন। এবার আবার লোকজন বলা শুরু করলেন- দেখেছেন এই ডাক্তার কত লোভী, তার টাকার নেশা দেখেন। গাড়ি বাড়ি থাকার পরেও দিনে কতগুলা করে রোগি দেখে, কতগুলা করে টাকা কামাই করে।
ডাক্তাররা লোভী, কারন তারা ঈদে, পুজায় পরিবার ফেলে টাকার লোভে হাসপাতালে, চেম্বারে রোগি দেখে। তারা ঈদে, পুজায় শাড়ি, লুঙ্গি বিতরণ করে না। তারা সভা সেমিনার করে এ প্লাস প্রার্থীকে পুরষ্কৃত করে না। তারা মানুষের সেবা করে ফটো তুলে প্রচার করে না। কারন ফটো তুললে অমানবিক কাজ হয়।
সবশুনে ছোটবোন বলল- ভাইয়া, আমি লোভী ডাক্তারই হতে চাই।
আমি বললাম- একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিলি, সারাজীবন পস্তাবি।
লেখক ঃDr. Tarafdar Jewel,স্নাতকোত্তর (এফসিপিএস) শিক্ষার্থী,সাবেক ছাত্র- রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (২০০৭-০৮)।

> collected post

Thursday, February 2, 2017

ইন্ডিয়ান হেলথ ট্যুরিজমঃ একটি নীল নকশা


১.....
■■দয়ার্দ্র(!) ডাক্তারটিঃ
পেপারের পাতা উল্টাতে গিয়ে বিজ্ঞাপনটা নজরে পড়লো।এক প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালে ইন্ডিয়া থেকে আগত এক প্রখ্যাত চিকিৎসক আমাদেরকে নাকি ফ্রি চিকিৎসা দিবেন।চিকিৎসক মহাশয় নাকি বেশী রোগী দেখবেন না। ফোন নাম্বার দেয়া আছে, দ্রুত কল করে সিরিয়াল নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে....
বিষয়টা কি তা বোঝার জন্য একটু সময় নিলাম।ঘটনাটা কি! ইন্ডিয়া কি এখন স্বাস্থ্যখাতে স্বয়ংসম্পূর্ণ? যদি তা না হয় তবে নিজ দেশ ছেড়ে ইন্ডিয়ান ডাক্তার এদেশে কষ্ট করে এসে এদেশের মানুষকে ফ্রি সেবা দিতে চাচ্ছেন কেনো? কোনো কু-মতলব নেই তো?.....
কনস্পিরেসী থিওরী কোনো কাজের কথা না। নিজের উপর নিজেরই রাগ হলো।চিকিৎসক সাহেব হয়তো গ্লোবালাইজেশনে বিশ্বাসী, তাই এদেশে ফ্রি চিকিৎসা দিতে এসেছেন।আর আমি কিনা তার কু-মতলব নিয়ে চিন্তা করছি! কাজটা ঠিক হলো না, মনকে আরো উদার করতে হবে।পৃষ্ঠা উল্টাতে উল্টাতে আমি চিন্তায় ইস্তফা টানলাম......
২.....
■■কোলকাতার ফোন নম্বরটিঃ
এক ভদ্রলোক প্রায়ই চিকিৎসার জন্য আমার চেম্বারে আসেন।শুধু যে তিনি আসেন তা না, উনার ফ্যামিলির সবাই মোটামুটি আমার কাছেই চিকিৎসা নেন।ভদ্রলোক বেশ অবস্থাসম্পন্ন। তাদের প্রেক্ষাপট থেকে আমি অনেকটা তাদের ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান....
মাসখানেক আগে ভদ্রলোক তার Skin এর একটা সমস্যার(Urticaria) জন্য আমার কাছে এলেন।আমি চিকিৎসা দিলাম, উনি বিদায় হলেন....
ঘন্টাখানেক পর আবারো চেম্বারে এলেন।বললেন Skin এর এই প্রবলেমটা আগেও একবার হয়েছিলো। সেই সময়টায় পেপারে বিজ্ঞাপন দেখে এক প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালে সাময়িক সময়ের জন্য আগত এক ইন্ডিয়ান ডক্টরকে দেখিয়েছিলেন।
ভদ্রলোক ইন্ডিয়ান ডক্টরের প্রেসক্রিপশন বের করলেন, লেমিনেটিং করা।ইন্ডিয়ান ডক্টর তার প্রেসক্রিপশনের উল্টোপিঠে কোলকাতার একটি ফোন নাম্বার দিয়ে দিয়েছেন, ভবিষ্যতে এই সমস্যা দেখা দিলে নম্বরটিতে ফোন করে কোলকাতায় গিয়ে তার সাথে দেখা করার পরামর্শ দিয়েছেন....
সমস্যাটা যেহেতু আবার দেখা দিয়েছে, কাজেই ভদ্রলোক আমার কাছে জানতে চাচ্ছেন উনি এখন ইন্ডিয়ায় ঐ ডাক্তারের কাছে যাবেন কিনা?
Urticaria এর মত সাধারণ Skin problem এর চিকিৎসা এদেশেই সম্ভব।সাধারণ এই প্রবলেমের জন্য দেশের কারেন্সি খরচ করে ইন্ডিয়া যাবার কোনো প্রয়োজন দেখি না......
আমি ভদ্রলোককে কনফিউজড্ হতে নিষেধ করলাম, বললাম-'প্রয়োজন হলে আপনি BSMMU (প্রাক্তন পিজি হাসপাতাল) এর Skin specialist কে দেখাবেন....'
কিছুদিন পর উনি জানালেন, ঢাকা টু কোলকাতার টিকিট কাটা হয়েছে, ডিসিশনটা কেমন হয়েছে সেটা জানার জন্য আবার আমার চেম্বারে এলেন....
আমি পজিটিভ বা নেগেটিভ আর কিছু বলিনি, চুপ করে ছিলাম।তাকে কিভাবে বলি, "My silence doesn't mean I agree with you. It means your level of stupidity renders me speechless..... "
৩......
■■ধূর্ত পেইড এজেন্টঃ
এবার একটা রিসেন্ট ঘটনায় আসি.....
UK based একটা বাংলা টিভি চ্যানেলকে সাক্ষাতকার দিচ্ছিলাম।ইস্যু-Antibiotic Resistance, জ্ঞানগর্ভ আলোচনা চলছে। মোবাইল ভাইব্রেশন মোডে প্যান্টের পকেটে।সাংবাদিক সাহেবের সাথে কথা বলছি, রেকর্ডিং হচ্ছে।এমন সময় পকেটে মোবাইলে একটার পর একটা ভাইব্রেশন স্টার্ট হলো.....
সাক্ষাতকার শেষ হবার পর দেখলাম মেসেঞ্জারে মেসেজ ভর্তি।সাধারণত চেক করি না। এবার চেক করলাম।একটা ছেলে মেসেজ পাঠিয়েছে, মেডিকেলে Fifth year এ পড়ে।আমাকে কিছু তথ্য জানাতে চাচ্ছে, তার মনে হচ্ছে এগুলো আমার জানা দরকার।রেসপন্স করলাম.....
যে তথ্য আমি পেলাম তার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না।ছেলেটা একটা জবে'র অফার পেয়েছে।ধানমন্ডির এক অফিসে বসতে হবে।কাজ হলো- আগত পেশেন্ট ও পেশেন্টের লোকদের মোটিভেট করা যাতে তারা ইন্ডিয়ায় গিয়ে চিকিৎসা নেয়।স্যালারি মাসে ২৫০০০ টাকা, পেশেন্টকে ইন্ডিয়া পাঠাতে পারলে পার পেশেন্ট হিসেবেও একটা টাকা পাওয়া যাবে।Fifth year এ যে পড়ে এটা তার জন্য বেশ লোভনীয় একটি অফার বটে.....
৪.....
■■ফাইন্যালি পেইড মিডিয়াঃ
গত কয়েকদিনে Russia based একটি পেপার এবং UK based আরেকটি পেপারে বাংলাদেশের চিকিৎসকদের প্রশংসা করা হয়েছে।সেগুলো বাদ দিলাম। ঐদিন দেখি CNN এও একই ব্যাপার। আবুল বাজনদারকে( Tree man syndrome এ আক্রান্ত ছিলো) নিয়ে তৈরি করা একটা রিপোর্ট তারা বাংলাদেশের চিকিৎসকদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ.....
আচ্ছা, এদেশের অধিকাংশ মিডিয়া-যারা পান থেকে চুন খসলে ডাক্তারদের একরকম ধুয়ে দেয়, তাদেরকে কি সহসা কখনো এদেশের ডাক্তারদের প্রশংসা করতে দেখেছেন? নাকি এদেশের ডাক্তাররা কোনো ভালো কাজ করেনা? ঘটনাটা কি?
কবিতার দুইটা লাইন বলিঃ
"সুজনে সুযশ গায় কুযশ ঢাকিয়া
কুজনে কুরব করে সুরব নাশিয়া...."
৫.....
■■এবার অনুসিদ্ধান্তঃ
উপরে চারটা সেগমেন্টে চারটা ভিন্ন ধরনের তথ্য দিলাম। এবার এক কাজ করুন।ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করুন তো--ঘটনাগুলোর মাঝে কোনো যোগসুত্র আছে কিনা? কোনো অনুসিদ্ধান্ত কি টানা যায়?
যায়।আমি অনুসিদ্ধান্তটা টেনে দিচ্ছি....
" একটি সংঘবদ্ধ চক্র পেইড এজেন্ট ও পেইড মিডিয়ার মাধ্যমে এদেশের ডাক্তারদের দুর্নাম করে জনগণকে এদের প্রতি আস্থাহীন করে সুচিকিৎসার লোভ দেখিয়ে অহেতুক দেশীয় মুদ্রাকে বিদেশে পাচার করছে".....
৬.....
জাস্ট দুইটা তথ্য দেই.....
Spain এর সিমাগো রিসার্চ গ্রুপ ও USA এর স্কপাস এর পরিচালিত জরিপে সেরা হাসপাতালগুলোর মাঝে জায়গা করে নিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (BSMMU)। All India Medical Institute বাদে ইন্ডিয়ার আর কোনো হাসপাতাল BSMMU এর উপরে নেই। পিপড়ার মত দলে দলে যারা ইন্ডিয়া যায়-তাদের জন্য তাই সমবেদনা জানানো ছাড়া আর কিছু করার দেখছিনা।চ্যানেল আই কে ধন্যবাদ তথ্যটা আমাদেরকে জানানোর জন্য.....
দ্বিতীয় তথ্যটা WHO এর।তারা বলতে চায় বাংলাদেশ(৮৮ তম) নাকি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ভারতের(১১২ তম) চেয়ে এগিয়ে......
৭.....
আমাদের দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আহামরি টাইপের-সে কথা কিন্তু আমি বলিনা।অনেক উন্নতির প্রয়োজন আছে- সেটা আমরা স্বীকার করি।কিন্তু পঙ্গপালের মত চিকিৎসার জন্য ইন্ডিয়ায় যাওয়া কোনো কাজের কথা না।প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য পরিমাণে যে দেশীয় মুদ্রা অযথা এভাবে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে তার রাশ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে টেনে ধরা উচিত।আমি তিনটি প্রস্তাব দেইঃ
ক) নিজ দেশে ভাত না পাওয়া যে ইন্ডিয়ান চিকিৎসকরা এদেশে প্র্যাকটিস করতে আসবেন--তাদেরকে অবশ্যই এদেশে লাইসেন্সিং পরীক্ষায় উৎরাতে হবে। আপনি কি কল্পনা করতে পারেন যে-- ইন্ডিয়ায় তাদের লাইসেন্সিং পরীক্ষা না দিয়ে সেখানে আপনি প্র্যাকটিস করতে পারবেন? তারা যদি তাদের কোয়ালিটি এনসিউর করতে পারে, তবে আমরা কেনো নয়?
খ) ধুরন্ধর পেইড এজেন্ট ও পেইড মিডিয়াকে নিষিদ্ধ করা।এরা কন্টিনিউয়াসলি এদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টায় লিপ্ত। প্রয়োজনে জনগণের সাথে প্রতারণার এই ব্যাপারটা ইনভেস্টিগেট করা....
গ) The less people know, the more they think they know-এটাই Dunning Kruger Effect. চিকিৎসার জন্য ইন্ডিয়া কোনো বেহেশত্ খানা না।কিন্তু সাধারণ জনগণ কিন্তু ইন্ডিয়াকে চিকিৎসার জন্য বেহেশত্-ই মনে করে এবং অন্যজনকে সেটাই বোঝায়। ড্যাটা বেইজড্ কমপেয়ারেটিভ অথেনটিক তথ্যগুলো জনগণকে ইনফর্ম করতে হবে, তাদেরকে সচেতন করতে না পারলে মুদ্রা পাচার রোধ করা সম্ভব নয়....
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রস্তাবগুলো একটু ভেবে দেখবেন কি? দেশের মানুষগুলো প্রতারকের খপ্পরে পড়ে অসুস্থতা নিয়ে বর্ডার ক্রস করে।ইন্ডিয়ার হাসপাতালগুলো 'দাদা দাদা' ডেকে এদের পকেট কেটে রাখে।এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কান্ডারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া উচিত।" কান্ডারী! আজ দেখিব তোমার মাতৃমুক্তি পন....."
৮.....
দু'দিন আগে খবরে দেখলাম ভারতের একজন মন্ত্রী জনসভায় বলেছেন, গরু নাকি পরিবেশে অক্সিজেন সরবরাহ করে! এরকম আহাম্মকি কথা আমাদের দেশের কোনো মন্ত্রী বলবেননা সেই বিশ্বাস আমার আছে।যে দেশের নীতিনির্ধারকদের কনসেপ্ট এইরকম সে দেশ চিকিৎসা ব্যবস্থা আমাদের থেকে উন্নত?
যে দেশে গো-মূত্র দিয়ে ৩০ ধরণের রোগের চিকিৎসা পপুলারিটি পায় - আমাদের মিডিয়া সেই দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে পূজা করে,সেই দেশের ডাক্তারদের হাইলাইট করে, নিজ দেশের চিকিৎসককে এরা ভিলেন বানায়।এই আফসোস কোথায় রাখি?
মধুসূদনের কবিতাটি মনে করিয়ে দেইঃ
স্বপ্নে তব কুললক্ষ্মী কয়ে দিলা পরে—
“ওরে বাছা, মাতৃকোষে রতনের রাজি,
এ ভিখারী-দশা তবে কেন তোর আজি?
যা ফিরি, অজ্ঞান তুই, যা রে ফিরি ঘরে!”
৯....
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রলয়ঙ্করী এক লোকের নাম জেনারেল ফিল্ড মার্শাল রোমেল।উপাধি-Desert Fox।হিটলারের এই তুরুপের তাস জেনারেল রোমেলের একটি কথা আমার খুব পছন্দ...
কথাটি বলিঃ "সবাই চোখ -কান খোলা রাখে।আমি নাকও খোলা রাখি।গন্ধ শুঁকি।বিপদের গন্ধ শোঁকা যায়....."
এদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ধ্বংসের যে নীল-নকশা আঁকা হয়েছে-- সে বিপদের গন্ধ কিন্তু আমি পাচ্ছি। আপনি পাচ্ছেন তো?.....
- ডাঃ জামান অ্যালেক্স

>> কালেক্টেড পোস্ট <<