গত বছর এক এ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারের প্লাজমা এক্সচেঞ্জ করেছিলাম।
প্রথমে তার কথাবার্তা পরিস্কার ছিলনা তাই বোঝাই যাচ্ছিল না আসলে কী বলতে চায়।
একদিন পর যখন পরিষ্কার হল, তখন জানতে পারলাম—ঢাকা মেডিকেল কেন্দ্রিক সে এ্যাম্বুলেন্স চালায়। বয়স মাত্র ২২। মানে জীবনের আসল এক্সপেরিমেন্টাল ফেজে আছে।
আত্মীয়স্বজনরা তার ডানপিটে স্বভাবের কারনে তাকে আরও পড়ালেখা না শিখিয়ে সোজা পাঠিয়ে দিয়েছে “লাইফ অ্যান্ড ডেথ ট্রান্সপোর্ট” সার্ভিসে! অভিজ্ঞতা? বছর খানেক আগে গাড়ি চালানো শিখেছে, আর কয়েক মাসের মধ্যে সরাসরি এ্যাম্বুলেন্স লাইনে।
উন্নত দেশগুলোতে যেখানে এ্যাম্বুলেন্স চালাতে হলে অন্তত ৩–৫ বছরের দুর্ঘটনাহীন ড্রাইভিং ইতিহাস থাকতে হয়, আমাদের দেশে শর্ত মনে হয় এমন:
“হ্যান্ডেল ঘোরাতে পারে? ব্রেক চাপতে পারে? আচ্ছা, এসো, এ্যাম্বুলেন্স চালাও।”
২০১৫ সালে ঢাকায় আমার হাঁটুর অপারেশনের পর চট্টগ্রামে যে এ্যাম্বুলেন্সে এসেছিলাম, সেটা ছিল একেবারে DIY (Do It Yourself) মডেল। টয়োটা হায়েস—ভেতরে সীট খুলে, কোনও রকমে একটা পাটাতন বসিয়ে, একখানা বালিশ আর একখানা স্ট্যান্ড ফিট করলেই ব্যস—এটাই এ্যাম্বুলেন্স!
গাড়ি যখন ব্রেক দিত, আমি গড়িয়ে চলে যেতাম ড্রাইভারের পিঠের কাছে। আবার যখন হঠাৎ টান দিত, তখন পিছনের দরজার কাছে গিয়ে ঠাস্ করে ধাক্কা। মনে হত আমি রোগী না, বরং লাইভ টেবিল টেনিস বল! পুরো যাত্রা ইয়া নাফসি পড়তে পড়তেই কেটেছিল।
আমাদের দেশের এ্যাম্বুলেন্সে এক আজব ব্যাপার আছে।
রোগী থাক বা না থাক, সাইরেন অবশ্যই বাজাতে হবে। আর সেটা এমন আওয়াজে—যেন ট্রাফিক পুলিশ না শুনলে, অন্তত আকাশে থাকা ফেরেশতারা শুনে যান। বিদেশে যেখানে সাইরেন মানে জরুরি পরিস্থিতি, এখানে সাইরেন মানেই—“আমি এ্যাম্বুলেন্স, আমাকে রাস্তা ছাড়ো, নইলে আজই ড্রাইভারের মেজাজ খারাপ হবে।”
আসলে এ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারদের নাকি কিছু মেডিকেল বেসিক জানা দরকার। যেমন—স্ট্রেচার কিভাবে ধরলে রোগী নিরাপদ থাকে, অক্সিজেন সিলিন্ডার কিভাবে সঠিক ব্যবহার করা লাগে, CPR দেওয়ার সময় হাত লাগানো ইত্যাদি।
কিন্তু আমাদের দেশের বাস্তবতা একটু ভিন্ন। তাদের সবচেয়ে বড় জ্ঞান হলো:
• রোগী কোন হাসপাতালে যাচ্ছে আর সেখানে কমিশন সিস্টেম কেমন চলছে।
• বেসরকারি হাসপাতালে পৌঁছে রোগীকে নামালেই “রেফারেল ফি”টা ঠিকঠাক বুঝে নেওয়া।
• যদি ঐ হাসপাতালে রেফারেল সিস্টেম না থাকে, তবে প্রাণপণ চেষ্টা করবে অন্য কোনো কমিশন-বান্ধব হাসপাতালে রোগীকে নিয়ে যাওয়ার।
• আর যদি সেটাও না মেলে, তবে মাশা আল্লাহ্, এমন গতিতে গাড়ি চালাবে—যেন প্রথম ট্রিপ শেষ করেই পরের ট্রিপ ধরতে পারে।
আমাদের এ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভাররা আসলে হাইব্রিড পেশাজীবী—
• চালক,
• ব্যবসায়ী,
• কমিশন এজেন্ট,
• আর অনেক সময় গাইড (কোন হাসপাতালে কোন ডাক্তার বসে আছেন তাও তারা ভালো জানে!)।
কিন্তু দুঃখের বিষয়—এইসবের মাঝে রোগীর সুরক্ষা আর আরামই থাকে সবচেয়ে উপেক্ষিত জায়গায়।
collected post from FB on