Thursday, March 28, 2024

এতটা জব ক্রাইসিস আমার কল্পনাতেও ছিলো না.

 1

 

উচ্চপদস্থ কর্পোরেট জব করেন এমন এক ব্যক্তি প্রায়শই আমার চেম্বারে আসেন। পরিচয়ের প্রথম দিকে তিনি অনেকটা গর্ব করে আমাকে জানাতেন যে তার বড় মেয়ের জামাইও ডাক্তার, তবে তার জামাই এখন লেখাপড়া ছাড়া আর কিছু করছে না, মাঝেমধ্যে আমাকে তার জামাইয়ের জন্য একটি চাকরী খুঁজে দেবার অনুরোধও করতেন... এর মাঝে তিনি দু'তিন বার আমার চেম্বারে এসে দেখিয়ে গেলেন, কিন্তু তার সেই চিকিৎসক জামাইয়ের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা আর শুনি না। 

শেষে একদিন আমি নিজেই চিকিৎসা লিখতে লিখতে জিজ্ঞেস করলাম, 'আপনার জামাইয়ের কি খবর?'... উনি অনেকটা ইতস্তত ভাবে বললেন, 'ভালো কোন চাকরী- বাকরী নাই, মেয়েকে খাওয়াবে কি! মেয়ের সাথে এডজাস্টও হচ্ছে না। দেখি কি করা যায়...' 

যা বুঝলাম সেটা হলো ডাক্তারদের অঢেল টাকার যে স্বপ্ন উনি দেখে মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন, বাস্তবে সেটার কোন মিল তিনি পান নাই। এর ফলাফল আমার কাছে খুব সুখকর কিছু হবে বলে মনে হচ্ছে না...

 

 ২...

 

 এক টেলিমেডিসিন কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর একদা আমাকে ফোন দিলেন। তিনি আমার পূর্বপরিচিত, কোভিডের শুরুর দিকে একটা মেডিকেল টিম আমি তাকে তৈরি করে দিয়েছিলাম, যারা সম্পূর্ণ বিনে পয়সায় এদেশের মানুষকে ২ মাস নিরবচ্ছিন্ন চিকিৎসা দিয়ে গিয়েছিলো...

 However, উনি আমাকে যে কারণে ফোন দিয়েছিলেন, সেই কারণটা বলি। উনি উনার টেলিমেডিসিন কোম্পানিতে ১০ জন ডাক্তার রিক্রুট করতে চান, উনি চাচ্ছেন এই ১০ জন ডাক্তারকে আমি যেন সিলেক্ট করে দেই... 

পেমেন্টের কথা জিজ্ঞেস করলাম। উনি জানালেন যে, যেহেতু অনলাইন সার্ভিস এবং দিনে ৮ ঘন্টার জব, কাজেই উনারা ১০ হাজার টাকা করে দিবেন... আমি হতচকিত হলাম! বললাম, 'দশ হাজারে তো ডাক্তার পাওয়া যাবে না!' 

উনি বললেন পাওয়া যাবে, ওনারা নিজেরাই যোগাঢ় করে নিতে পারতেন, কোয়ালিটি মেনটেইন করার জন্য জাস্ট আমার হেল্পটা নেয়া হচ্ছে... অবশ্য তিনি আমার হতচকিত অবস্থা দেখে ভরসা দিলেন যে উনি ইন ফিউচারে তাদের স্যালারী ইনক্রিজ করবেন... 

 আমি অনেকটা দ্বিধান্বিত এবং কিছুটা লজ্জিত অবস্থায় চিকিৎসকদের একটা গ্রুপে স্যালারী স্ট্রাকচার উল্লেখ করে ১০ জন চিকিৎসক চাইলাম। আমি ধরে নিয়েছিলাম আমি আমার কম্যুনিটিতে বেইজ্জতি হবো... 

আশ্চর্যের ব্যপার হলো পোস্টে ডাক্তার চাইবার ১০ মিনিটের মাথায় সেই পোস্ট আমাকে রিমুভ করতে হলো, কেননা অলরেডী ১০ মিনিটে ৪০-৫০ জন ডাক্তার আমাকে চাকরীটা করতে চেয়ে ইনবক্সে নক করেছেন... 

সেই প্রথম দিন আমি বুঝতে পারলাম যে এদেশে ডাক্তারদের বিপদ ঘটে গেছে।

 এতটা জব ক্রাইসিস আমার কল্পনাতেও ছিলো না... 

 

৩. 

 

এবার পোস্ট গ্রাজুয়েট কমপ্লিট করা ডাক্তারদের ব্যপারে আসি। আমার এক সিনিয়র ভাই মেডিসিনে পোস্ট গ্রাজুয়েট কমপ্লিট করে ঢাকার এক বিখ্যাত কর্পোরেট হাসপাতালে স্পেশালিষ্ট হিসেবে ঢুকলেন। প্রথম কয়দিন ভালোই চললো, উনি বেশ বাতাসে উড়লেন, টপাটপ গাড়ীও কিনে ফেললেন ... 

 একদিন রাতে সেই ভাই ফোন দিলেন, কোথাও পোস্ট গ্রাজুয়েট ডাক্তার নিলে তাকে যেন জানানো হয়। কর্পোরেট হাসপাতালটি নাকি যেকোন মুহূর্তে ডাক্তার ছাঁটাই করবে, কেননা তার থেকে কম স্যালারীতে এখন একই বিশেষজ্ঞ পাওয়া যাচ্ছে। এই হলো সিচুয়েশন! ওহ, আরেকটা কথা বলতে ভুলে গেছি, উনি গাড়ীটা সেল করে দিতে চাচ্ছেন... 

প্রাইভেট হাসপাতালে বেসিক এবং প্যারাক্লিনিক্যাল সাবজেক্টের বিশেষজ্ঞদের স্যালারী স্ট্রাকচারের কথা আর নাই বা বলি, বললে সবাই লজ্জা পাবেন। 

জেনারেল লাইনে যারা লেখাপড়া করেছেন তারা একই পরিমাণ কষ্ট করে উনাদের তুলনায় ঢের ভালো আছেন... 

 মূল কথায় চলে আসি... অত্যন্ত সচতুর এবং সুনিপুণ ওয়েতে এদেশে চিকিৎসকদের জব সেক্টরটাকে ধ্বংস করা হয়েছে।

 কিভাবে সেই ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে সেটা আমরা অনেকেই জানি। জুনিয়র চিকিৎসকদের তো এখন ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা, সামনে চিকিৎসকদের জব সেক্টরের অবস্থা আরো ভয়াবহ হবে, The Tsunami is coming ...

 

 

 "A clear rejection is better than fake promise..."

-ডা.জামান অ্যালেক্স

Tuesday, February 20, 2024

বুড়া বয়েসে টাকা কামায় কি বাপ-মায়ের কবরের উপরে তাজমহল বানাবি?? ( যারা ডাক্তার হতে স্বপ্ন দেখে দিন পার করছেন , তাদের জন্য)

 দরিদ্র মেধাবীদের মেডিকেলে চান্স পাওয়ার সুসংবাদ দেখতে পাচ্ছি। তাদের জন্য শুভকামনা।


ক্লোজ সার্কেলের কেউ হলে বলতাম গরীবের সন্তানের সাত বছরে গ্রাজুয়েশন করে পঁচিশ হাজার টাকার চাকরি করা পোষায়না। এগুলো সচ্ছল পরিবারের ব্যাপার স্যাপার। তারা ছেলে-মেয়ের পরে নাতি-নাতনিও পুষতে পারে। চল্লিশ বছরে গিয়ে ইনকাম শুরু করলেও ক্ষতি নাই। 


তোর পরিবার পাশ দেয়ার সাথে সাথেই আশা করে বসে থাকবে তুই নতুন ঘর তুলবি, টিউবওয়েল বসাবি, পায়খানা পাকা করবি। গ্রাজুয়েশন করার পরে পোস্টগ্রাজুয়েশন করতে আরো সাত-আট বছর লাগবে। 

এই চোদ্দ বছরের সংগ্রামের কথা তুইও জানিস না, তোর বাপ-মাও জানেনা। বুড়া প্রফেসরের পসার দেখে ছেড়া কাথায় শুয়ে মনে মনে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখিস। পাশ দেয়ার পরে ক্লিনিকে কাজ করে যে টাকা হয় তাতে বাচ্চার দুধের টাকা হয়না বলে অনেক ডাক্তার ভাই উবার চালায়। তুই গরীবের বাচ্চা, তোর এই ROI বা রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট কোন হিসাবেই মেলেনা।

 অনেক বড়লোক ডাক্তার আপ্পি প্রাইভেটে জব করে পুরা স্যালারিই সিএনজি-ওয়ালাকে দিয়ে দেয় জাস্ট এটা বলার জন্য যে অমুক জায়গায় আছি। এগুলা স্ট্যাটাস সিম্বল। তুই গরীবের বাচ্চা, তোর মাসকাবারি খরচ জোটেনা, মেডিকেলের বই কিনতে এলাকায় চান্দা তোলা লাগে, তোর এগুলা সাজে?!


মেডিকেলে চান্স পেয়েছিস মানে লেখাপড়ায় ভালো এবং পরিশ্রম করতে পারিস। তোর যাওয়া উচিত ত্রিশের আগে টাকা কামানো যায় এমন কোন রাস্তায়। বুড়া বয়েসে টাকা কামায় কি বাপ-মায়ের কবরের উপরে তাজমহল বানাবি??


এগুলো  সেন্টিমেন্ট বাদ দে। 

বাপ-মায়ের ওষুধ না কিনে, ঘরের বউকে নতুন কাপড় না দিয়ে আর বাচ্চার দুধ, ডায়াপারের কৌটা জোগাড় করতে না পারলে কেউ মানবসেবা করতে পারেনা। তুইও পারবিনা। দিন শেষে হতাশ হবি। মানুষের প্রতি বিরক্ত হবি। এই প্রসেস দিয়ে বের হতে হতে মানবসেবার মানসিকতা থাকবেনা। কসাই হয়ে যাবি।


ক্লোজ সার্কেলের জুনিয়র ভাই হলে এইসব বলতাম। কিন্তু, পাবলিক প্লাটফর্মে এরকম জঘন্য, কদর্য, অমানবিক ক্লাসিস্ট কথাবার্তা বলা যাবেনা। তাই কিছু বললাম না।


©Kaiser Anam

Sunday, November 26, 2023

যারা মেডিকেলে পড়ার চিন্তা করছো,তাদের জন্য কিছু বাস্তব উপদেশ

 ইন্টারমেডিয়েট এ পড়া ছোট ভাইদের জন্য এই লেখাটা লিখছি। 

যারা মেডিকেলে আসার চিন্তা করছো, 

তাদের জন্য স্পেসিফিক ভাবে যদি তোমাদের একদম মনের ইচ্ছা, সেই লেভেলের প্যাশন যে মেডিকেল সাইন্স নিয়ে পড়বে, ভয়ানক লেভেলের আগ্রহ, বায়োলজি খুবই এনজয় করো- তবে মেডিকেলে আসতে পারো। 

আর যদি এমন হয় যে- এই ধারণা নিয়ে আছো যে- মেডিকেলে একবার ঢুকলেই লাইফ সেটেল, প্যারা নাই, ফুল চিল, লাইফ/ফিউচার জিংগালালা, পাশ করলেই খালি টাকা আর টাকা, তাহলে বলবো- ছোট ভাই, আইসো না। 

 একটা কমন প্রশ্ন, সেকেন্ড টাইম দিবো নাকি দিবো না?

আমি মনে করি লস প্রজেক্ট। খুব সিরিয়াস আগ্রহ থাকলে + ফ্যামিলি সাপোর্ট থাকলে ট্রাই করা যেতে পারে, আদারওয়াইজ আমি ডিস্কারেজ করবো।

 সরকারি মেডিকেলে পড়বে নাকি প্রাইভেট?

 আমার পারসোনাল অপিনিওন হলো- দেশের প্রথম সারির ১০-১২ টা মেডিকেলের মধ্যে হলে আসো, আদারওয়াইজ দরকার নাই। প্রাইভেটের ব্যাপারে বলবো যে ফ্যামিলি খুবই সলভেন্ট/রিচ হইলে, পাশ করার পর ফ্যামিলি কে সাপোর্ট দেওয়া লাগবে না, এমন যদি হয় + নিজের ভয়ানক আগ্রহ থাকে- তবে প্রাইভেটে আসতে পারো, তাও টপ ৪/৫ টা প্রাইভেট এ হলে আসো, আদারওয়াজ আসার দরকার নাই। 

কিছু জিনিস মাথায় রাখা জরুরী 

 ১. মেডিকেলের বইপত্রের দাম বেশি। অন্যান্য ভার্সিটির চেয়ে খরচ বেশিই হবে এখানে। 

২. ১ম বছরেই বোন্স কেনা লাগবে। এটা আসলে বেচতে পারবে না, বোন্স বেচা আসলে হারাম। আমরা বাধ্য হয়ে কিনি, তবে শরয়ী ভাবে বেচা নিষেধ। সর্বোচ্চ দান করে দিতে পারো। ইভেন আমার ছোট ভাইও দানই করে দিসে, যদিও তাকে অনেক টাকা দিয়েই ফুল সেট কিনতে হইসে।

 ৩. মেডিকেলে পড়া অবস্থায় টিউশন করে কাপায় দেওয়া + পড়ালেখা ঠিক রাখা খুবই ডিফিকাল্ট। পড়ালেখা ঠিক রেখে একটা থেকে দুইটার বেশি টিউশন করানো যায় না। বেশি করলে নিজের পড়ার বারোটা বাজে।

 ৪. মেডিকেলের পড়া ৫ বছর আন্ডারগ্র্যাড ,এরপর এক বছর ইন্টার্নশিপ, এরপর আসলে পোস্ট গ্র্যাডে এন্ট্রি আরকি নেওয়ার জন্য আরেক নতুন সংগ্রাম, সেটায় এন্ট্রি নেওয়া, পাশ করে বের হওয়া৷ বিশাল ধাক্কা। ধরে নাও এভারেজ ১২-১৫ বছরের স্ট্রাগল।

 ৫. মেডিকেল হলো দিল্লীকা লাড্ডু। যারা চান্স পায় তারাও কাঁদে, যারা পায় না, ওরাও কাঁদে৷ বাস্তবতা জেনে বুঝে এরপর আসো। সবচেয়ে ভালো হয় যে- যদি জেনুইন আগ্রহ থাকে, তবেই আসো। আদারওয়াইজ দরকার নাই।

সংগৃহীত লেখা( ফেসবুক হতে)

Wednesday, April 5, 2023

আপনার সন্তানের নামের পাশে ডাক্তার লেখার মোহ থেকে বের হয়ে একবার শান্তভাবে চিন্তা করুন।

সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তি প্রায় শেষ। এদেশে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা, পরীক্ষার রেজাল্ট এবং সরকারি মেডিকেলে চান্সপ্রাপ্তদের নিয়ে যে উচ্ছ্বাস, সেটা অভাবনীয়। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের আমজনতা থেকে শুরু করে নীতিনির্ধারণী লেভেলে এই ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে এতো ক্রেজ অথচ ডাক্তারদের নিয়ে উন্নাসিকতা আছে কিনা জানি না।

আজকের এই লেখাটি অবশ্য অন্য প্রসঙ্গে। 

অনেকেই হয়তো খেয়াল করেছেন, এবারের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার শিক্ষার্থী। এর মধ্যে পাস করেছেন প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষার্থী। সরকারি মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন ৪ হাজার ৩০৫ জন। বাকি প্রায় সাড়ে ৭৫ হাজার শিক্ষার্থী সারা দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তির যোগ্য। 

আজকের লেখাটা মূলত সাড়ে ৭৫ হাজার শিক্ষার্থীদের জন্য। যারা সরকারি মেডিকেলে টিকেনি, কিন্তু পাস করেছেন এবং বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মালিক পক্ষের সম্ভাব্য ছাত্র হওয়ার অপেক্ষায় আছেন, তাদের অভিভাবকদের জন্য। আপনার সন্তানকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি করানোর আগে আরও একবার চিন্তা করুন।

গতবছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য সরকার ২০ লক্ষ টাকা ঠিক করে দিয়েছিলো। এই বছর এই অংকটা আরও বাড়বে। যারা বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়েন, তারা জানেন আইসবার্গের ভাসমান অংশের মতোই এই টাকা হচ্ছে দৃশ্যমান অংশ। এই টাকা দিয়ে কেউই বেসরকারি মেডিকেল থেকে পাস করে বের হতে পারবেন না। এর বাইরেও নানা ধরনের ফি যুক্ত হয়ে এই খরচ ত্রিশ লাখ পেরোবে।

এখন প্রিয় অভিভাবক, এই ত্রিশ লাখ টাকা দিয়ে আপনার সন্তানের নামের পাশে ডাক্তার লেখার মোহ থেকে বের হয়ে একবার শান্তভাবে চিন্তা করুন। কেন, আপনি সন্তানকে চিকিৎসক বানাতে চান। যাবতীয় আদর্শিক বাকোয়াজ আর ছোটবেলার রচনার কথা ভুলে আপনি যদি সৎ হন, আপনি স্বীকার করবেন, স্রেফ স্বচ্ছলতার জন্য, সম্মানের জন্য।

এদেশে কালকে যদি কেউ আবিষ্কার করে পালি কিংবা সংস্কৃত পড়ালে প্রচুর টাকা আর সম্মান মিলবে, দলে দলে সন্তানদের সবাই পড়াবে। 

সম্মানের কথাতো আপেক্ষিক বিষয়। তারপরও অনলাইনে চিকিৎসকদের নিয়ে যে, মুখরোচক আলোচনা হয় আর আপনার কাছের ডাক্তার আত্মীয়কে শুনিয়ে শুনিয়ে অধিকাংশ চিকিৎসকের নামের আগে যেভাবে কসাই বসিয়ে দেন, তাতে সম্মান কতটুকু আছে, অনুমান করে নিন। বাকী বিষয়টাতে আসি। আপনার আদরের সন্তানকে এতো টাকা খরচ করিয়ে পড়ানোর পরে তার বেতন কতো হবে জানেন?

ছয় বছর আগে, যেসব অভিভাবক ত্রিশ লাখ টাকা খরচ করে সন্তানকে ডাক্তারি পড়তে পাঠিয়েছিলেন, বেসরকারি হাসপাতালে তাদের এখন বেতন ১৫ হাজার থেকে ২৫ হাজারের মধ্যে।

 তিন বছর আগে আমি যখন বের হই, তখনও এই বেতন ছিল, এখনও এই বেতন।

 পৃথিবীতে অনেক পরিবর্তন ঘটবে,  সম্ভব, সবই সম্ভব। 

শুধু একটা ব্যাপার আমি জানি অসম্ভব।

 সেটা হচ্ছে, বাংলাদেশে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে কর্তব্যরত ডাক্তার নামক যে, অসম্মানের মধ্য দিয়ে তরুণ চিকিৎসকরা যাচ্ছে, তার কোনো পরিবর্তন হবে না। আগামী তিন বছর পরেও তাদের বেতনের তেমন কোনো হেরফের হবে না।

সরকারি মেডিকেলে আমরা যারা পড়ে এসেছি, তাদের জন্য এটা মেনে নেওয়াটা সহজ। কারণ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা ছেলে যে, টাকা দিয়ে পড়াশোনা করেছে, আমিও মোটামুটি একই খরচে পড়াশোনা করেছি। কষ্টটুকুর কথা আপাতত ভুলে গেলাম। কষ্ট ভুলে যাওয়া অনেক সহজ। কিন্তু মধ্যবিত্ত (আসলে বেসরকারি মেডিকেলে পড়ুয়া অধিকাংশ ছাত্রই মধ্যবিত্ত পরিবার থেকেই আসে) পরিবারের ত্রিশ লাখ টাকা খরচ করে পড়া চিকিৎসক তরুণের সামনে যে, অনিশ্চয়তা পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকে, সেটা উপেক্ষা করা সহজ নয়।

বেসরকারি মেডিকেলে পড়তে থাকা এবং পড়া শেষ করে ডাক্তার হয়ে বের হয়ে পোস্ট গ্রাজুয়েশনের দীর্ঘ বন্ধুর পথে খাবি খেতে থাকা অনেক তরুণের সাথে আমার পরিচয়। এদের মধ্যে অনেকেই প্রচন্ড মেধাবী। অনেকেই কষ্ট করে তাদের এই প্যাশান এবং ভালবাসার পেশাটায় সফলতার জায়গা তৈরি করে নিচ্ছেন।

 কিন্তু অধিকাংশই পারছেন না।

 প্রচুর ধার দেনা করে ফ্রি ভিসায় মধ্যপ্রাচ্য গিয়ে গ্রামের তরুণটি দেখে তার চাকরি নেই।
যে দালালের হাত ধরে সে বিদেশে এসেছে, সে পকেটে কয়েক দিনার ঢুকিয়ে দিয়ে সটকে পড়েছে। বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পরিবারের সঞ্চিত এবং কষ্টার্জিত ত্রিশ লাখ টাকা খরচ করে যে তরুণ চিকিৎসক বের হয়, তার চোখে মধ্যপ্রাচ্যে দালালের হাতে প্রতারণার শিকার হওয়া তরুণটির চাইতেও আমি বেশি অনিশ্চয়তা এবং হতাশা খেলা করতে দেখেছি। দালালটি অন্তত পকেটে কিছু টাকা দিয়ে যায়। বেসরকারি মেডিকেলের মালিকপক্ষকে আমি এর চেয়েও অমানবিক হতে দেখেছি।

ডা. জাফরুল্লাহ সাহেবের গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজ থেকে যে তরুণটি ২৫ লাখ টাকা খরচ করে চিকিৎসক হয়েছে, তাকে ইন্টার্নির সময় সম্মানি দেওয়া হয় সাত হাজার টাকা। ইন্টার্নি শেষে লেকচারারদের বেতন বিশ হাজারের উপরে উঠে না।

এই রাষ্ট্রের আরও কত চিকিৎসক দরকার? কেন এই দুরবস্থা চিকিৎসকদের, কিভাবে ব্যাঙের ছাতার মতো এতো বেসরকারি (কিছু সরকারি মেডিকেলও) মেডিকেল গড়ে উঠেছে- এই প্রশ্নগুলো অনেক বিতর্ক তৈরি করবে, মন্ত্রীমশাই অনেক অনেক চোখ রাঙাবেন, লিজেন্ডারি অধ্যাপকরা সরকারি মেডিকেলে থাকা অবস্থায় বেসরকারি মেডিকেল থেকে পড়ে সরকারি মেডিকেলে অবৈতনিক ট্রেনিং করতে তরুণটির দিকে অবজ্ঞার দৃষ্টিতে তাকাবেন, চূড়ান্ত অপমান করবেন এবং অবসর গ্রহণ করার পর একটা বেসরকারি মেডিকেলে অধ্যক্ষ হয়ে বসবেন।

এসব বড় বড় বিষয় নিয়ে আসলে আমার আপনার কিছুই করার নাই। বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে চূড়ান্তভাবে গণবিরোধীরূপে গড়ে তোলা এবং মেডিকেল ব্যবস্থাকে চূড়ান্তভাবে ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়ার জন্য নীতিনির্ধারকদের আপাতত অভিশাপ দেই।

কিন্তু আপনি আপনার সম্ভাবনাময় সন্তানটিকে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে কেন এই অনিশ্চয়তার মুখোমুখি দাঁড় করাতে চাচ্ছেন? নচিকেতা নীলাঞ্জনার দুঃখে দাম দিয়ে যন্ত্রণা কিনে। 

আপনি ত্রিশ থেকে চল্লিশ লাখ টাকা খরচ করে সন্তানের জন্য এ কোন যন্ত্রণা কিনতে চান?

 

ডা. শরীফ উদ্দিন

এমবিবিএস (সিএমসি), সিসিডি (বারডেম) ডি-অর্থো (নিটোর),
হাড়-জোড়া, বাত ও ব্যথা বিশেষজ্ঞ অর্থোপেডিক ও ট্রমা সার্জন

 

Thursday, August 4, 2022

বাংলাদেশের মানুষ চেন্নাই কেন যায়?

বাংলাদেশের মানুষ চেন্নাই কেন যায়?
 
চোখের সমস্যা নিয়ে টানা তিনমাস চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে দৌড়ঝাঁপ করার পর অনেকটা বাধ্য হয়ে, জীবনে প্রথমবারের মতো, চিকিৎসার উদ্দেশ্যে চেন্নাই গিয়েছিলাম সপ্তাহদুয়েক আগে। সেখানে শংকর নেত্রালয়, অ্যাপেলো হাসপাতাল এবং আরও একাধিক প্যাথলজিক্যাল সেন্টারে (প্রসঙ্গত বলা দরকার, শংকর নেত্রালয় থেকে যেখানে আমাকে মস্তিষ্কের ঝুঁকিপূর্ণ এমআরআই করতে পাঠানো হয়েছিল তা শ্যামলীর রোগী ধরা প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ে কোনো অংশে কম ভয়াবহ নয়) চরকির মতো ছুটোছুটি করে প্রায় শূন্য হাতে ঢাকায় ফিরে যে-প্রশ্নটি আমাকে বেত্রাঘাত করছে তাহলো: বাংলাদেশের মানুষ চেন্নাই কেন যায়?
 
না, ঠিক বললাম না। প্রশ্নটি শুরু থেকেই আমাকে উত্যক্ত করছিল পদে পদে। আমি বহু কষ্টে তাকে দমিয়ে রেখেছিলাম। প্রথমদিন শংকর নেত্রালয়ে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে একজন চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য আমাকে ৭০ থেকে ৮০ জন রোগীর পেছনে কাতারবন্দি হতে হয়েছিল। একজন চিকিৎসক কীভাবে একদিনে এত বিপুল সংখ্যক জটিল রোগীকে চিকিৎসা দেবেন-- তা কিছুতেই আমার বোধগম্য হচ্ছিল না। কঠিনতম এক ধৈর্যপরীক্ষার শেষে যা পাওয়া গেল তাহলো ঝড়ো গতিতে চিকিৎসকের কিছু পরামর্শ-- যার মুখ্য অংশই হলো আরও কিছু টেস্ট। এবং সেসঙ্গে (ভাগ্য সুপ্রসন্ন না হলে) বাড়তি পাওনা হিসেবে রূঢ় ব্যবহার তো আছেই।
 
দ্বিতীয় দিনের অভিজ্ঞতাও ভিন্ন নয়। 
আবারও টেস্ট। এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতাল। সবচেয়ে ভয়াবহ হলো অ্যাপেলো হাসপাতালের অভিজ্ঞতা। ভারতীয় রুপিতে প্রায় দু হাজার টাকা দিয়ে সেখানে নানা চেষ্টা-তদবির করে একঘন্টা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকার পর (অপেক্ষমান রোগীদের বসার কোনো ব্যবস্থা নেই) যে কনসালটেন্ট ভদ্রলোকের সাক্ষাৎ পেলাম তিনি টেস্ট ছাড়া কোনো কথাই শুনতে রাজি হলেন না। শুধু তাই নয়, মাত্র একমাস আগে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল থেকে করা টেস্ট রিপোর্টটি ছুঁয়ে দেখতেও রাজি হলেন না তিনি। ফলে বিপুল অর্থ ও শ্রম ব্যয় করে বলতে গেলে শূন্য হাতেই আমাকে ঢাকায় ফিরতে হয়েছে। আর যেটুকু চিকিৎসা বা পরামর্শ তারা দিয়েছেন তা আমাদের চক্ষু বিজ্ঞান কিংবা বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালের চেয়ে বিন্দুমাত্র ভিন্ন বা নতুন কিছু নয়।
 
 
ফেরার পথে বাংলাদেশের একজন পেশাদার কূটনীতিক ও চিকিৎসকের কাছ থেকে যা শুনলাম তা অবিশ্বাস্য। জানা গেল, ভারত বছরে প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলার আয় করে এ খাত থেকে।
 তার মধ্যে বাংলাদেশের অবদান অর্ধেকের কাছাকাছি।
 নিয়মিতভাবে বাংলাদেশের প্রায় ১০ হাজার নাগরিক অবস্থান করে চেন্নাইতে--যার প্রায় পুরোটাই চিকিৎসাগত কারণে।
 টাকার অঙ্কটার সত্যাসত্য সম্পর্কে আমি নিশ্চিত নই। তবে আমার পর্যবেক্ষণও ভিন্ন নয়। শংকর নেত্রালয় বা অ্যাপেলো হাসপাতালে যে উপচে পড়া ভিড় দেখেছি (যা আমাকে বারবার ঢাকার পাবলিক হাসপাতালগুলোর কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছিল) তার সিংহভাগই বাংলাদেশের। এর মধ্যে জমিজমা বিক্রি করে চিকিৎসা নিচ্ছে এমন মানুষের সাক্ষাতও আমি পেয়েছি। শুনেছি গ্রেড ফোরের এক ক্যান্সার রোগীর ৫০ লক্ষ টাকা বিলের ইতিবৃত্তও।
 
 
বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোতে ব্যবস্থাপনা ও আচরণগত কিছু সমস্যা আছে-- একথা অসত্য নয়। কিন্তু চেন্নাইয়ে শংকর নেত্রালয়ের ক্যান্টিন থেকে শুরু করে অ্যাপেলো হাসপাতালের বিল কাউন্টার পর্যন্ত কোথায় না আমরা রূঢ় ব্যবহার কম পেয়েছি! দেখেছি সিরিয়াল ভঙ্গ করে দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখতে! দুএকটি ব্যতিক্রম ছাড়া চিকিৎসকদের আচরণও খুব একটা ভিন্ন মনে হয়নি। 
 
বাংলাদেশে জনসংখ্যার তুলনায় হাসপাতাল, চিকিৎসক-নার্স ও চিকিৎসা-সরঞ্জামের ঘাটতি আছে। ফলে চিকিৎসকদের অনেক চাপের মধ্যে কাজ করতে হয়। 
তারপরও চক্ষু বিজ্ঞান ও বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালের চিকিৎসক ও নার্সদের মধ্যে আমি যে দরদি মনোভাব দেখেছি তার কোনো তুলনা হয় না।
 পোশাক শিল্পসহ অনেক ক্ষেত্রে আমরা বিস্ময়কর সাফল্য দেখিয়েছি। আমার মনে হয়েছে, চিকিৎসা খাতেও সেটা সম্ভব।
 বিশেষ করে বৈদেশিক মুদ্রার এ সংকটকালে যত দ্রুত সম্ভব দেশের মধ্যেই উন্নতমানের বিশেষায়িত চিকিৎসা ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। 
বিদেশিরা না আসুক, দেশের মানুষের বিদেশ যাওয়া বন্ধ করা গেলে কেবল যে হয়রানি ও দুর্ভোগের লাঘব হবে তাই নয়, সাশ্রয় হবে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রাও।
 
ঢাকা: ২৯ জুলাই ২০২২

 

Wednesday, April 27, 2022

পল্লী চিকিৎসক নামক একটা ভয়ঙ্কর দালাল শ্রেণী

 


পল্লী চিকিৎসক নামক একটা ভয়ঙ্কর দালাল শ্রেণী গড়ে উঠেছে। এদের কাজ হলো শহরে গরীব রোগীদের বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যাওয়া এবং পরীক্ষা নিরীক্ষা খরচের ৫০% পকেটে ঢুকানো। প্রমান চাইলে এদের কাউকে সাথে নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে যাবেন। 
 
মানহীন, প্রয়োজনহীন,এবং হিসেবছাড়া অসংখ্য ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠছে, অলিতে গলিতে।  এইসব মানহীন প্রতিষ্ঠান টিকে থাকার জন্য এইসব দালাল শ্রেণী গড়ে তুলেছে,যাদের নাম দিয়েছে মার্কেটিং।
 
আজ কোন একটা বিভাগীয় শহরে যদি ৩কোটি টাকার
ল্যাব ইনভেস্টিগেশন হয়,তার ১.৫ কোটি টাকাই চলে যায় এইসব পল্লী চিকিৎসক নামের দালাল শ্রেণীর পকেটে।
একটা অদৃশ্য বাজার গড়ে উঠেছে,লক্ষ লক্ষ টাকা লেনদেন হচ্ছে।
 
এই টাকার যোগান দিচ্ছেন সাধারণ রোগীরা, বিশেষত গরীব রোগীরা,যারা কখনোই শহরমুখী ছিলেন না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এইসব দালাল শ্রেণী চিকিৎসক কে রোগী দেখানোর আগেই রোগীকে বুঝিয়ে শুনিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ফেলে,যেগুলো বেশীরভাগ ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয়।
 
এসব অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষার ফলাফল দিয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগ নির্ণয়ে চিকিসকরা অসুবিধায় পড়েন।
 
কোন চিকিৎসক যদি এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করেন কিংবা রোগীকে বোঝান, পরেরদিন থেকেই সেই চিকিৎসক এর উপর চাপ তৈরি হয় সেই নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পক্ষ থেকে।
 
এইসব দালাল শ্রেণী র আরেকটা কাজ হলো চিকিৎসক সম্পর্কে রোগীর মধ্যে অহেতুক ভীতি তৈরি করা, রোগ সম্পর্কে ভয় দেখানো। যাতে করে রোগীর সাথে চিকিৎসা ব্যবস্থার একটা দূরত্ব তৈরি হয়।
সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে এই দালাল শ্রেণীই সবচেয়ে বেশি মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়ায়, রোগীদের হাসপাতাল বিমুখ করে।
 
এরা নামকরা চিকিৎসক, কিংবা ভালো চিকিৎসক দের ভয় পায়,কুৎসা ছড়ায়।
 
অথচ এদেরকে তৈরি করা হয়েছিল যখন এমবিবিএস চিকিৎসকের সংকট ছিল।
গ্রামের সাধারণ মানুষ এর সর্দি জ্বর, পাতলা পায়খানা র কিংবা সাময়িক চিকিৎসা দেবার জন্য এদের তৈরি করা হয়েছিল। 
 
বর্তমান সরকার অনেক এমবিবিএস ডাক্তার নিয়োগ দিয়েছেন।
যারা বিভিন্ন হেলথ কমপ্লেক্স, এবং সদর হাসপাতালে কর্মরত আছেন। আউট ডোর সেবার জন্য এখন অপেক্ষায় থাকার কোন সুযোগ নেই।
 
রোগীদের জন্য পরামর্শ হলো সরকারি হাসপাতালে সেবা নিন, বেসরকারি জায়গায় চিকিৎসা নিতে চাইলে নিজে খোঁজ খবর নিয়ে যাবেন।
সহযোগিতা র নামে দালালদের পকেটে টাকা ভরবেন না।

Wednesday, February 23, 2022

পিঠে ব্যথাঃ কারণ ও করণীয়

 

পিঠে ব্যথা নিয়ে কতটা চিন্তিত হওয়া উচিত?

সবচেয়ে খারাপটা অনুমান করবেন না। প্রায় প্রত্যেকেরই কোন না কোন সময় পিঠে ব্যথা হয়। নিম্ন পিঠে ব্যথা ভীতিকর হতে পারে। তবে ব্যথা তীব্র হলেও, এটি সাধারণত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নিজেই চলে যায়। জরুরী যত্ন বা অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন এমন ক্ষেত্রে বিরল।


পিঠে ব্যথা হলে কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যাবশ্যকীয়?

  • সকালে ঘুম থেকে উঠার পর যদি আপনার পিঠে ব্যথার তীব্রতা বেড়ে যায়,
  • আপনার পায়ে যদি অসাড়তা বা দুর্বলতা থাকে,
  • মূত্রাশয় বা অন্ত্র নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হলে,
  • ওজন হ্রাস পেলে,
  • জ্বর বা অন্য কোন অসুস্থতা বোধ করলে,
  • নিয়মিত স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ (যেমন- করটান/ ডেলটাসন) সেবন করে থাকলে,
  • ডায়াবেটিস বা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দূর্বল করে এমন রোগ থাকলে,
  • ক্যান্সার বা অস্টিওপোরেসিসের ইতিহাস থাকলে।

কখন আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে?

  • আপনার পিঠের ব্যথা এতটাই তীব্র আপনি দৈনন্দিন সাধারণ কাজগুলি করতে পারছেন না,
  • আপনার পিঠে ব্যথার ৪ সপ্তাহের মধ্যে উন্নতি হতে শুরু না করলে।

পিঠের অংশগুলো কি কি?

● কশেরুকা – হাড়ের স্তুপ যা মুদ্রার স্তুপের মতো একে অপরের উপরে বসে থাকে। এই হাড়গুলির প্রতিটির কেন্দ্রে একটি ছিদ্র রয়েছে। স্ট্যাক করা হলে, হাড়গুলি একটি ফাঁপা টিউব তৈরি করে যা মেরুদণ্ডকে রক্ষা করে।

●ডিস্ক – কুশন যোগ করতে এবং নড়াচড়ার অনুমতি দিতে প্রতিটি কশেরুকার মধ্যে রাবারি ডিস্ক বসে থাকে।

●স্পাইনাল কর্ড এবং স্নায়ু – মেরুদণ্ড হল স্নায়ুর হাইওয়ে, যা মস্তিষ্ককে শরীরের বাকি অংশের সাথে সংযুক্ত করে। কশেরুকার মাঝের ছিদ্রের মধ্য দিয়ে মেরুদণ্ড যায়। মেরুদণ্ড থেকে স্নায়ু-শাখা পাশাপাশি কশেরুকার মধ্যে দিয়ে সরু পথে বের হয়। তারা বাহু, পা এবং অঙ্গগুলির সাথে সংযোগ স্থাপন করে। (এই কারণেই পিঠের সমস্যার কারণে পায়ে ব্যথা বা মূত্রাশয় বা অন্ত্রের সমস্যা হতে পারে।)

●পেশী, টেন্ডন এবং লিগামেন্টস – পেশী, টেন্ডন এবং লিগামেন্টগুলিকে একসাথে পিঠের “নরম টিস্যু” বলা হয়। এই নরম টিস্যুগুলি পিঠকে বলবান করে এবং এটি একসাথে ধরে রাখতে সহায়তা করে।

পিঠে ব্যথার কারণ কী?

অনেক ভিন্ন কারণে নিম্ন পিঠে ব্যথা হতে পারে। বেশিরভাগ সময় সঠিক কারণ জানা যায় না। যদি আপনার পিঠের পেশী টান খায়, তাহলে পিঠে ব্যথা হতে পারে। এটি প্রায়শই ঘটে থাকে যখন একজন ব্যক্তি ভারী কিছু তোলে বা পিঠ বাঁকিয়ে কাজ করে। এই ব্যথা সাধারণত শারীরিক কার্যকলাপের পরে হঠাৎ শুরু হয়।

এছাড়াও পিঠে ব্যথা হতে পারে, যদি:

  • ১। ডিস্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফুলে যায়, বা ছিঁড়ে যায়,
  •  ২। মেরুদণ্ডের জয়েন্ট এ আর্থ্রাইটিস হয়,
  • ৩। মেরুদণ্ডে হাড় বেড়ে যদি কাছাকাছি স্নায়ুগুলিকে চাপ দেয়,
  • ৪। কশেরুকা জায়গার বাইরে বেরিয়ে আসলে,
  • ৫। মেরুদণ্ডের পথ সরু হয়ে গেলে,
  • ৬। টিউমার বা ইনফেকশন হলে (কিন্তু এটি খুব বিরল)।

পিঠে ব্যথায় কখন একটি ইমেজিং পরীক্ষা (যেমন এক্স-রে, সিটি স্ক্যান বা এমআরআই) করতে হবে?

বেশিরভাগ লোকের ইমেজিং পরীক্ষা, যেমন এক্স-রে, সিটি স্ক্যান বা এমআরআই প্রয়োজন হয় না। পিঠে ব্যথা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কয়েক সপ্তাহ পরেই চলে যায়। অস্বাভাবিক কিছুর লক্ষণ না থাকলে ডাক্তাররা সাধারণত ইমেজিং পরীক্ষার পরামর্শ দেন না। আপনার ডাক্তার একটি ইমেজিং পরীক্ষার আদেশ না দিলে, চিন্তা করবেন না। তাঁরা শুধুমাত্র আপনাকে দেখে এবং আপনার সাথে কথা বলে, আপনার ব্যথা সম্পর্কে অনেক কিছু বুঝতে পারেন।

শুধুমাত্র আমার সাথে কথা বলে ডাক্তার কি রোগ নির্ণয় করতে পারে?

আপনার লক্ষণগুলি ডাক্তারকে আপনার ব্যথার কারণ সম্পর্কে অনেক কিছু বুঝতে সাহায্য করে। উদাহরণ স্বরূপ:

  • যদি নির্দিষ্ট কিছু করার পরে আপনার ব্যথা শুরু হয়, যেমন একটি ভারী বস্তু তোলা বা আপনার পিঠ মোচড়ানো, তাহলে আপনার পেশীতে টান পড়ে থাকতে পারে।
  • যদি আপনার ব্যথা এক উরুর পিছনের দিকে ছড়িয়ে পড়ে, তবে এটি একটি চিহ্ন হতে পারে আপনার পায়ে যে স্নায়ুগুলি যায় তার মধ্যে একটিকে, বেড়ে যাওয়া বা ছেঁড়া ডিস্ক দ্বারা চিমটি করা হচ্ছে।
  • যদি আপনার ব্যথা উভয় পায়ের নিচের দিকে চলে যায়, তাহলে এটি চিহ্ন হতে পারে আপনার একটি সরু মেরুদণ্ডের খাল রয়েছে। এটি প্রায়শই আপনার মেরুদণ্ডে হাড়ের বৃদ্ধির কারণে হয়।

 

কিভাবে পিঠের ব্যথার চিকিৎসা করা হয়?

কম পিঠে ব্যথার একটি পর্বে আক্রান্ত বেশিরভাগ লোকেরই কোন গুরুতর সমস্যা থাকে না, এবং সাধারণ চিকিৎসায় এটি সেরে যেতে পারে। যেমন:

  • সক্রিয় থাকা – আপনি যা করতে পারেন তা হল যতটা সম্ভব সক্রিয় থাকা। যাদের পিঠের ব্যথা আছে তারা যদি সক্রিয় থাকে, দ্রুত সেরে ওঠে। যদি আপনার ব্যথা তীব্র হয়, তাহলে আপনার এক বা দুই দিন বিশ্রামের প্রয়োজন হতে পারে। তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাঁটা এবং চলাফেরা করা গুরুত্বপূর্ণ। আপনার পিঠে ব্যথার সময় ভারী কিছু উত্তোলন এবং খেলাধুলা এড়িয়ে চলা উচিত। আপনার স্বাভাবিক দৈনন্দিন কাজকর্ম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন।
  • তাপ – কিছু রোগী হিটিং প্যাড বা উত্তপ্ত মোড়ক ব্যবহারে আরাম পেতে পারে। ত্বক পোড়া প্রতিরোধ করতে উচ্চ তাপ সেটিংস এর ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
  • ঔষধ – প্রথমে, আপনি ব্যথার ওষুধ ব্যবহার করে দেখতে পারেন যা আপনি প্রেসক্রিপশন ছাড়াই পেতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রে, ডাক্তাররা প্রথমে ননস্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ড্রাগ বা “NSAID” ব্যবহার করার পরামর্শ দেন। এগুলি পিঠের ব্যথার জন্য প্যারাসিটেমল এর চেয়ে ভাল কাজ করতে পারে। যদি প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধগুলি সাহায্য না করে, আপনার ডাক্তারকে জানান। কিছু ক্ষেত্রে, ডাক্তাররা পেশী শিথিল করার জন্য একটি ওষুধ লিখে দেন (যাকে “পেশী শিথিলকারী” বলা হয়)। কিন্তু মনে রাখবেন যে পেশী শিথিলকারী সাধারণত ৬৫ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিদের মধ্যে ব্যবহার করা হয় না। বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে, এই ওষুধগুলি প্রস্রাব করতে সমস্যা বা বিভ্রান্তির মতো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

যদিও পিঠের ব্যথা সাধারণত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে চলে যায়, কিছু মানুষের দীর্ঘকাল এই ব্যথা থাকে। এই ক্ষেত্রে, অতিরিক্ত চিকিৎসার অন্তর্ভুক্ত হতে পারে:

  • নিজের যত্ন – এর মধ্যে আপনার ব্যথা সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরী। আপনার যখন প্রয়োজন তখন আপনার বিশ্রাম নেওয়া উচিত, যতটা সম্ভব সক্রিয় থাকা গুরুত্বপূর্ণ। তাপ প্রয়োগ করা এবং মৃদু প্রসারিত করার মতো জিনিসগুলিও আপনাকে আরও ভাল বোধ করতে সহায়তা করতে পারে।
  • ব্যায়াম- আপনি যে ব্যায়াম চেষ্টা করতে পারেন তার মধ্যে হাঁটা, সাতার কাটা বা ব্যায়াম বাইক ব্যবহার করা অন্তর্ভুক্ত। কিছু লোক দেখতে পায় যোগব্যায়াম তাদের পিঠের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। আপনি যে কার্যকলাপগুলি উপভোগ করেন তা সন্ধান করা আপনাকে সক্রিয় থাকতে সাহায্য করতে পারে।

  • চাপ কমানো – “মননশীলতা-ভিত্তিক স্ট্রেস হ্রাস” বলে কিছু চেষ্টা করতে সহায়তা করে। এটি শিথিলকরণ এবং ধ্যান অনুশীলন করার জন্য একটি গ্রুপ প্রোগ্রামে অংশ নেওয়া যেতে পারে।

আপনার পিঠের ব্যথা যদি আপনাকে উদ্বিগ্ন বা বিষণ্ণ বোধ করায়, আপনার ডাক্তার বা নার্সের সাথে কথা বলুন। এই সমস্যাগুলির সাথে সাহায্য করতে পারে এমন অন্যান্য চিকিৎসা রয়েছে। পিঠের ব্যথার চিকিৎসার জন্য অল্প সংখ্যক লোকেরই অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়।

পুনরায় পিঠে ব্যথা হওয়া থেকে বাঁচতে আমরা কী করতে পারি?

আপনি যা করতে পারেন তা হল সক্রিয় থাকা। আপনার পিঠকে শক্তিশালী এবং প্রসারিত করার জন্য ব্যায়াম করা। আপনি আরোও যা করতে পারেন:

  • আপনার পিঠের পরিবর্তে আপনার পা ব্যবহার করে তুলতে শিখুন।
  • বেশিক্ষণ একই অবস্থানে বসা বা দাঁড়ানো এড়িয়ে চলুন।

পিঠে ব্যথা হওয়া হতাশাজনক এবং ভীতিকর হতে পারে। কিন্তু নিয়মগুলি জানলে এবং মেনে চললে আপনার পুনরায় ব্যথার ঝুঁকি কমাতে পারে।

 

ডা. শাদাব সানী
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ
৪৩ প্রজন্ম

 

[রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।]

Thursday, December 2, 2021

স্কেলিং -- সঠিক বা ভুল, চলুন জানার চেষ্টা করি

 

, অনেকের কাছে এটি "দাঁত ওয়াশ" নামেও পরিচিত। এই চিকিৎসাটির ব্যাপারে মানুষের মধ্যে বিভিন্ন নেতিবাচক ধারণার প্রচলন আছে। অপেশাদার লোকদের কাছ থেকে এসব বিভ্রান্তিকর তথ্য পেয়ে অনেকেই এই চিকিৎসা নেওয়া থেকে বিরত থাকেন এবং নিজের ক্ষতি করেন। এসব ধারণা কতটুকু সঠিক বা ভুল, চলুন জানার চেষ্টা করি-
 
প্রথমেই জানবো, স্কেলিং(scaling) কী?
 
দাঁতের ওপর সাধারণভাবে যে সাদা/হলদে সাদা পরত(dental plaque) জমে, সেটিই শক্ত হয়ে calculus বা পাথর তৈরি হয়। আর মাড়ির ওপর ও নিচ থেকে সেই calculus অপসারণ করার চিকিৎসার নামই হলো স্কেলিং। 
 
 ধারণা- ১
"স্কেলিং করালে দাঁত পাতলা হয়ে যায় বা ক্ষয়ে যায়।"
 
আল্ট্রাসনিক স্কেলার মেশিন কম্পন সৃষ্টির মাধ্যমে পাথর অপসারণ করে থাকে। যথাযথ কৌশল জেনে এবং মেনে স্কেলিং করলে দাঁতের ক্ষতি হওয়ার কোনও ঝুঁকি থাকে না। 
 
ধারণা- ২
"স্কেলিং করালে দাঁত আরও বেশি শিরশির করে।"
 
দাঁত ও মাড়ির মধ্যবর্তী স্থানে পাথর জমতে জমতে একসময় মাড়ি দাঁত থেকে আলগা হয়ে যায়। স্কেলিংয়ের সময় এই পাথর সরিয়ে ফেলায় দাঁতটা সাময়িকভাবে উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। তাই স্কেলিং করানোর পর কিছুদিন দাঁত শিরশির করতে পারে। মাড়ি স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরে এলেই এই সমস্যা কেটে যায়। সুতরাং আমরা বুঝতে পারলাম, অল্প পাথর জমা হতেই যদি স্কেলিং করিয়ে ফেলি, তাহলে চিকিৎসা পরবর্তী শিরশিরে ভাব দ্রুত কেটে যাবে।
 
ধারণা- ৩
"স্কেলিং করলে মাড়ি আলগা, দাঁত ফাঁকা ও নড়বড়ে হয়ে যায়।"
 
অনেকদিন ধরে মাড়িতে প্রদাহ (gingivitis) ও দাঁতের গোড়ায় পাথর (calculus) বিনা চিকিৎসায় পড়ে থাকলে এক সময় দাঁতের সকেটের হাড় ক্ষয় হয়ে দাঁতের শিকড় আস্তেআস্তে উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। দাঁতকে সকেটের সঙ্গে আটকে রাখা পেরিওডন্টাল লিগামেন্ট ক্ষতিগ্রস্থ হয়, ফলে দাঁত হারায় তার অবলম্বন। কিন্তু calculus দিয়ে ঢেকে থাকার কারণে এই ক্ষয়ক্ষতিগুলো তেমন চোখে পড়ে না। স্কেলিং করে এই calculus অপসারণ করলে ভেতরের দুরবস্থা তখন প্রকটভাবে চোখে ধরা দেয়। অর্থাৎ স্কেলিংয়ের কারণে মাড়ি আলগা বা দাঁত ফাঁকা ও নড়বড়ে হয় না বরং প্রদাহের কারণেই এগুলো হয়ে থাকে, স্কেলিংয়ের ফলে সেটা প্রকাশ পায় মাত্র। 
 
ধারণা- ৪
"স্কেলিংয়ে ব্যথা পাওয়া যায়।"
 
সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে স্কেলিং করলে এতে ব্যথা পাওয়ার কোনও আশংকা নেই। হ্যাঁ, কিছুটা ঘষা লাগা এবং শিরশিরে অনুভূতি পারে, প্রদাহ বেশি হলে শিরশির ভাবও বেশি অনুভূত হয়। তাই প্রদাহ অল্প থাকতেই চিকিৎসা করানো উচিত। 
 
ধারণা- ৫
"স্কেলিং হচ্ছে দাঁত সাদা করার চিকিৎসা"
 
স্কেলিংয়ের ফলে plaque, calculus এর পাশাপাশি দাঁতের কিছু superficial stain থাকলে তা-ও দূরীভূত হয়। এতে দাঁত আগের চেয়ে পরিস্কার দেখাতে পারে, কিন্তু তাই বলে এটি "দাঁত সাদা করার চিকিৎসা" নয়। 
 
ধারণা- ৬
"জীবনে একবার স্কেলিং করালেই যথেষ্ট"/"একবার স্কেলিং করালে বারবার করাতে হয়"
 
মুখে Calculus জমলে স্কেলিং করাতে হবে - সহজ কথা। কয়বার, কতদিন পরপর স্কেলিং করানো লাগবে, তার কোনও সার্বজনীন হিসেব নেই। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে মুখগহ্বরের যথাসাধ্য যত্ন নেওয়া এবং ৬ মাস পর পর ন্যুনতম BDS ডিগ্রিধারী রেজিস্টার্ড ডেন্টাল সার্জনের কাছে চেকআপ করানো। স্কেলিংয়ের প্রয়োজন মনে করলে তিনিই সেটার পরামর্শ দেবেন।
 
কারও কারও হয়তো মনে প্রশ্ন জাগতে পারে- দাঁতের গোড়ায় পাথর জমেছে, স্কেলিং করালাম না। ক্ষতি কী? 
 
ক্ষতি এই যে, gingivitis তখন তীব্রতর প্রদাহ periodontitis এ রূপ নেবে। আগে যেখানে মাড়ি দিয়ে রক্ত আসতো, দাঁত শিরশির করতো, এখন পুঁজ জমে যন্ত্রণাদায়ক ফোঁড়া (abscess) সৃষ্টি হতে পারে। মুখের দুর্গন্ধ কিছুতেই পুরোপুরি দূর হবে না। প্রদাহ বাড়তে বাড়তে একসময় দাঁত যখন নড়তে শুরু করবে, তখন খাওয়াদাওয়া স্বাচ্ছন্দ্যে করা যাবে না, যার প্রভাব পড়বে সারা শরীরে। এরপর একসময় দাঁত পড়ে যেতে শুরু করবে। শুধু তা-ই নয়, periodontitis এর সঙ্গে রক্তনালীতে চর্বি জমা, হৃদরোগ, রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে না আসা, গর্ভাবস্থার ৩৭ সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার আগেই শিশু প্রসব, কম ওজনের শিশু জন্ম নেওয়া- এসব জটিলতারও সংযোগ থাকতে পারে বলে মনে করা হয়। 
 
অনেকেই calculus এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উপসর্গগুলো দেখা দিলে ঔষধের দোকান থেকে ইচ্ছেমত ঔষধ নিয়ে খাওয়া শুরু করেন! একটু ভাবুন তো, মুখ ভর্তি calculus যদি ভেতরে ভেতরে এত বড় ক্ষতি করে ফেলতে থাকে, তাহলে ডেন্টাল সার্জনের কাছে গিয়ে calculus দূর না করিয়ে এভাবে শুধু ঔষধ খেয়ে যাওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত?
 
 
- ডা. ইফফাত সামরিন মুনা।

Wednesday, May 26, 2021

বাড়তি টাকা ব্যাংকে স্তূপের মত জমতে থাকে অথবা সম্পদের পর সম্পদ জমতে থাকে যেগুলো হয়তো জীবনে কখনোই ভোগ করা হয় না!

খুঁজলেও কোন ডালের কনা পাওয়া যায় না, 
হাতে বানানো সালাদ 
সব মিলিয়ে জম্পেশ ঠাসিয়ে খেতাম! 
 শুরুর দিকে 10-12 টাকা লাগতো,পরে 14 টাকা বা 16 টাকার মত লাগতো...
 
 
এরপর চাকরি হলো, প্রাকটিস করতে শুরু করলাম! 
 
হোস্টেলে যা টাকা ছিল তার চেয়ে বহু গুণ বেশি টাকা ইনকাম করি... অনেক টাকা বেড়েছে কিন্তু খাওয়া কি বেরেছে?? 
 তখন যে রকম জামা কাপড় পড়তাম ওরকমই পরি... 
সত্যি কথা হচ্ছে এই শহরে কেউ 20,000 ইনকাম করে কেউ 50,000 ইনকাম করে কেউ 100,000 করে কেউ আরো বেশি করে
 এই বাড়তি টাকা দিয়ে যে বেশি খায়,বেশি পরে,বেশি ভোগ করে, বিষয়টি তা নয়, 
বাড়তি টাকা ব্যাংকে স্তূপের মত জমতে থাকে অথবা সম্পদের পর সম্পদ জমতে থাকে যেগুলো হয়তো জীবনে কখনোই ভোগ করা হয় না! 
অথচ কেউ সবকিছু ছারখার আর তছনছ করে এই টাকা ইনকাম করতে মরিয়া। 
 
কাউকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় জীবনে কেন পড়াশোনা করেন? টাকার জন্য নাকি সম্মানের জন্য? অধিকাংশই বলবে সম্মানের জন্য... 
 
তবে সম্মান নষ্ট করে টাকা উপার্জন কেন?....


 

Monday, March 8, 2021

কোভিড ভ্যাকসিন নিয়ে কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর

 

1. কভিশিল্ড - এটা কি ভারতীয় ভ্যাকসিন? 
 
না! এটা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এর বিখ্যাত ভ্যাকসিন রিসার্চ কেন্দ্র - জেনার ইনস্টিটিউটে ডেভেলপ করা অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন যার কমার্শিয়াল ম্যানুফ্যাকচারিং কন্ট্রাক্ট বহুজাতিক ঔষধ কোম্পানি এস্ট্রাজেনেকার| ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট এস্ট্রাজেনেকার নামের প্রোডাক্ট AZD1222 ও এস্ট্রাজেনেকার লাইসেন্স নিয়ে সিরাম ইন্সটিটিউট কভিশিল্ড নামে একই প্রোডাক্ট বাজারজাত করছে| শুধু বাংলাদেশ নয় - ধারণা করা হচ্ছে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন টার সারাবিশ্বের সাপ্লাই এর ৬০ % এর বেশি সাপ্লাই ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকেই যাচ্ছে! 
 
2. আমার ডায়বেটিস কন্ট্রোল এ নেই - আমার কি ভ্যাকসিন নেয়া ঠিক হবে?
 
আপনার ডায়বেটিস কন্ট্রোল এ থাকে আর না থাকে - ভ্যাকসিন নিন! ভ্যাকসিন এর সাথে ডায়বেটিস এর কোন সম্পর্ক নেই! কিন্তু ডায়বেটিস এর সাথে কোভিড এর সম্পর্ক আছে, ডায়বেটিস থাকলে সিরিয়াস কোভিড বা কভিডে মৃত্যুর হার বেশি! তাই ডায়াবেটিক রুগীদের ভ্যাকসিন নেয়া নেয়া অতিবেশি জরুরি!
 
3. আমার এজমা, হাঁচি, নাকে এলার্জি, সর্দি কাশির ক্রনিক সমস্যা! আমার কি ভ্যাকসিন নেয়া ঠিক হবে ? 
 
অবশ্যই! এই ধরণের এলার্জি ভ্যাকসিনে কোনো সমস্যা করবে না! অনেকের লাইফ থ্রেটেনিং এলার্জিক এনাফাইলেক্টিক শক হয় চিংড়ি মাছ ইত্যাদি তে| এই গ্রূপের মানুষ জন সাথে একটা এপিনেফরিন ইনজেকশন রাখতে পারে অথবা টিকা কেন্দ্রে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন! 
 
4. যাদের ইম্মিউন সিস্টেম উইক - যারা স্টেরয়েড, ইম্মিউনোসাপ্রেসিভ ঔষধ এর উপর নির্ভরশীল অথবা যার বোন ম্যারো বা অন্যান্য ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট রিসিপিয়েন্ট - তারা কি এই ভ্যাকসিন নিতে পারবেন? 
 
- হ্যা পারবেন! এই ধরণের রুগীদের কভিড এ মৃত্যুর হার অনেক বেশি! এরা ভ্যাকসিন এর জন্য হাই প্রায়োরিটি গ্রূপ! 
 
5. ক্যান্সারের রুগী বা যারা কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশন থেরাপি পাচ্ছেন তারা কি এই ভ্যাকসিন পেতে পারেন? 
 
অবশ্যই! কভিড এ ক্যান্সার এর রুগীদের মৃত্যুর হার অনেক বেশি| ক্যান্সার রুগীদের সবার আগে গিয়ে ভ্যাকসিন নেয়া দরকার| 
 
6. ভ্যাকসিন নেয়ার পর অনেক মানুষের মৃত্যুর খবর শোনা যাচ্ছে| আমি এ নিয়ে উদ্বিগ্ন! 
-
এব্যাপারে শঙ্কার কিছু নেই| আজ পর্যন্ত সারা বিশ্বে ১৪ কোটি মানুষ কোভিড ভ্যাকসিন পেয়েছেন! এখন পর্যন্ত কোভিড ভ্যাকসিন এর কারণে একটি মৃত্যু হয় নি! কেউ মারা যেতে পারেন ভ্যাকসিন নেয়ার কিছুদিন পর - কিন্তু ভ্যাকসিন এর কারণে না| 
 
7. অনেকে বলছে ভ্যাকসিন নিলে পুরুষত্ব চলে যায় অথবা অনেকে বলছে এই ভ্যাকসিনের এফেক্টে বাচ্চা কাচ্চা না হতে পারে! 
 
এগুলো পুরোপুরি ভিত্তিহীন ও বাজে কথা! এর মধ্যে সত্যের লেশমাত্রও নাই! 
 
8. আমার এক মাস আগে কোভিড হয়েছিল - আমি কি ভ্যাকসিন নেবো? 
 
অবশ্যই! কোভিড হোক আর না হোক, যত আগেই কোভিড হোক, এক মাস হোক আর এক বছর হোকে, আপনি ভালো হয়ে গিয়েছেন - ভ্যাকসিন নিন! এমন কি প্রথম ডোজের পর কোভিড হয়েছে - তারপর ও সেকন্ড ডোজ নিন | তবে কোভিড নিয়ে অসুস্থ অবস্থায় টিকা কেন্দ্রে গেলে অন্যান্য দের ইনফেক্ট করার সম্ভাবনা| তাই সুস্থ হবার পর ইনফেকসাস পিরিওড শেষ হবার পর সেকন্ড ডোজ নিন| 
 
9. কোভিড ভ্যাকসিন থেকে কি কোভিড হতে পারে? - না! 
 
10. কোভিড ভ্যাকসিন নিলে কি এর এফেক্টে পরে কোভিড টেস্ট পজিটিভ আসতে পারে? - না! 
 
11. প্রেগন্যান্ট বা নার্সিং মা রা কি ভ্যাকসিন নিতে পারবেন ?
 
 - হ্যা পারবে! ( অনেক সরকারি সাইট বলছে ডাক্তারের পরামর্শ নিন! আমার পরামর্শ : আমি হ্যা বলছি! যুক্তরাষ্ট্রে এ প্রেগন্যান্ট হেলথ কেয়ার ওয়ার্কার রা সবাই এই ভ্যাকসিন নিয়েছেন| হাজার হাজার!
একটা সরকার ও সংগঠনের অনেক লিগ্যাল সীমাবদ্ধতা থাকে - তাই কিছু ক্ষেত্রে বলতে হয় আপনার ডাক্তার এর সাথে যোগাযোগ করুন| সরকার গুলো সরাসরি হ্যা বলছে না - কারণ ফেইজ থ্রি ট্রায়াল এ প্রেগন্যান্ট দের ইনক্লুড করা হয় নি| কিন্তু সব প্রিক্লিনিকাল স্টাডি তে দেখা গেছে এই ভ্যাকসিন প্রেগন্যান্সি তে পুরোপুরি সেইফ! আমরা অনেক ঔষধ ইউজ করি শুধুমাত্র প্রিক্লিনিকাল স্টাডির উপর ভিত্তি করে|)
 
12. আমার বাচ্চাদের কি হবে? ওদের কি ভ্যাকসিন নিতে হবে? এই মুহূর্তে শুধু মাত্র ১৬-১৮ বছরের উপরের বয়স যাদের তাদের জন্য ভ্যাকসিন এপ্রভ হয়েছে| আশা করা যাচ্ছে আগামী শীতে বাচ্চারাও এই টিকার আওতাভুক্ত হবে!
 
১৩. অনেকে বলছে এই ভ্যাকসিন নাকি আমাদের ডিএনএ আর জিন পরিবর্তন করে দিতে পারে? - সম্পূর্ণ অমূলক! পুরোপুরি ভিত্তিহীন বাজে কথা! 
 
১৪. কভিশিল্ড ভ্যাকসিন ৬৫ উর্ধ বয়সীদের জন্য কতটুকু কার্যকর? - 
 
এই ভ্যাকসিন টার অনুমোদন দেয়ার সময় WHO টেকনিক্যাল কমিটি বিভিন্ন বয়সওয়ারী এর কার্যকারিতার চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছে এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে ৬৫ উর্ধ বয়সীদের ক্ষেত্রেও এই ভ্যাকসিন কার্যকর| 

Thursday, February 4, 2021

সুতরাং এখনই ঠিক করো কি করবা?

প্রিয়,অনুজ।
 
তোমরা যারা এইচএসসির পর ডাক্তার হইছো।তারা ডাক্তার হওয়ার পর এবার ফরেন,এডমিন,পুলিশ ক্যাডার হও।এমবিবিএস একটা গ্রাজুয়েট ডিগ্রী,এমবিবিএস পাশ করছো বলে ডাক্তারীই করতে হবে কোন কথা নাই। একবার চেষ্টা করে দেখো।
 
যে কষ্ট করে তুমি এফসিপিএস/এমডি/এমএস করবা তার ২০% কষ্ট করে যে কোন ক্যাডারে চান্স পাবা।শুধু ডিটারমিনেশনটা লাগবে।৩৮ এর রেসাল্ট দেখে ভাবো তো সামনের কোটামুক্ত বিসিএসে কি হতে যাচ্ছে?
 
আমরা এমবিবিএস এ যে পরিমাণ পড়াশুনা করি,আর কোন সাবজেক্টের মানুষ করে?প্রতিদিন ৩ঘন্টা ৬ মাস বাংলা,অংক,ইংরেজি,সাধারণ জ্ঞান পড় তারপর দেখ কি হয়?
মনে রাখবা "যারা আগে সেরা তারা পরেও সেরা"।তোমরা যেখানেই যাবা সেখানেই ভালো করবা।
এটাই পৃথিবীর নিয়ম।
 
★তাহলে ডাক্তার কেন হইছো?
 
-সহজ উত্তর -না বুঝে।
আরেকটু চিন্তা করলে উত্তর হবে,
মানুষ সবসময় তার অবস্থান থেকে বেটার অপশন খুঁজে।এইচএসসির পর বেটার অপশন ডাক্তারী বা ইঞ্জিনিয়ারিং তাই সবাই সেগুলো বেছে নেয়।বিসিএস।দিতে গেলে বেটার অপশন ফরেন,এডমিন,পুলিশ,কাস্টমস.... সুতরাং এখানেও বেটার অপশন খোঁজা উচিত।
 
★ফরেন,এডমিন,পুলিশ কেন হবা?
-কারণ ডাক্তারীর এদেশে বেইল নাই।টেম্পু এক্সিডেন্টে তিনজন আহত হলে ১ জন ডাক্তার থাকে।বিশ্বাস না হলে রিক্সায় উঠে বলবা তুমি ডাক্তার।দেখবা রিক্সাওয়ালা বলবে তারা মামাতো সালাও ডাক্তার।সুতরাং সবার ডাক্তারী করা লাগবে না রে ভাই।
আর যারা ডাই হার্টেট ডাক্তারী করবা,তারা ভাগো।টিভির পর্দায় ফেরদৌস ভাই,তাসবীর স্যাররে দেখো না?
বাংলাদেশে থাকলে নিজের টাকায় প্লেন ভাড়া করা তো দূরে, শালির বিয়েতে ১ টা শাড়িও দিতে পারবা না।
 
★তাহলে ডাক্তার হইছো দেশের সেবা করার জন্য তো এখন দেশসেবার কি হবে?
-টাকা থাকলে ডাক্তার দিয়া বাড়ি/দেশ ভরায় ফেলতে পারবা।দাদার নামে দাতব্য হাসপাতাল দিবা,আল্লাহ ওয়াস্তে ঔষধ দিবা।পুরো মাসে ৫০ হাজার খরচ করলে হবে।আমেরিকায় রেসিডেন্সী শেষ করলে তোমার বেতন শুরু হবে ৫-৬ লাখ দিয়ে।চাইলে জীবনের প্রথমদিন থেকে তুমি দাদার নামে চ্যারিটি,মসজিদ মক্তব বা মন্দিরের পুরোহিতের দায়িত্ব নিতে পারবা।ফেরেস্তারা আসমানে তোমার জন্য দোয়া করবে।মাটিতে জনগণ তোমার নামে চায়ের কাপে ঝড় তুলবো।
আর দেশে থাকলে, গ্রামের ঈদের নামাজে শেষে গিয়া পিছনের কোনায় দাঁড়াবা,নামাজ শেষ করে দৌড় দিবা।কারণ মসজিদ কমিটি তোমাকে টাকার জন্য ধরবে তুমি এলাকার ডাক্তার,কিন্তু টাকা তো তোমার নাই।দিলেও বড়জোর ২০০০-৫০০০ দিতে পারবা।দেখবা এলাকার দূর্নীতিবাজ,ঘুষখোর রা তোমার ৪ ডাবল দিছে।তুমি হয়তো দানের সওয়াব পাবা,কিন্তু কমিটির কাছে বেইল পাবা না।
 
★ ফরেন,এডমিন,পুলিশে যেতে হলে কি করতে ভাইয়া?
-যারা ডিটারমাইন্ড তাদেরকে বলবো প্রথমে মেডিকেলের বইগুলো কোন লাইব্রেরিতে দান করে দাও।খবরদার কোন চেম্বার করবানা।
"ঘাটের ডিঙ্গি না পোঁড়ালে নদীতে ঝাঁপ দেয়ার সাহস কোনদিন হবে না।"
সুতরাং প্রথম কাজ ডিঙ্গি পোঁড়ানো,মেডিকেল বইপত্র দান করে দাও,বেঁচে দাও।
 
★ আমার অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী জিজ্ঞেস করেছেন আমি এত হতাশ কেন?
-আমি তাদের বলেছি,চিকিৎসক হিসেবে আমি সবসময় গর্বিত।কিন্তু স্বাস্থ্য ক্যাডার নিয়ে শুধু আমি না এদেশের ৯৯.৯৯% ডাক্তার হতাশ।
 
★৫-৬ বছর ভুলে ডাক্তারী শিখছে বলে সারাজীবন ভুল করার কি মানে?
 
আমি স্ট্যাটাস লিখেছি তরুণ চিকিৎসকরা যেন চিন্তা ভাবনা করে নিজের ক্যারিয়ারটা সাজায়।বাংলাদেশের ইতিহাসে কেউ কি শুনেছে কোন যুগ্ম সচিব বা পুলিশ কমিশনার সাহেব তো অনেক দূরের কথা উনাদের বাড়ির দারোয়ারকে কেউ গালি কিংবা মারার সাহস দেখিয়েছে? কিন্তু প্রতিদিন ডাক্তার পেটাচ্ছে।কেউ কি তোমার জন্য কিছু করেছে?সারাজীবন মানুষের চিকিৎসা করলা আর মানুষ তোমার মাথা পাটাই মেরে ফেললো,এই মাথায় যদি মেডিকেল টা না ডুকাও মাথা টা অন্তত বাঁচবে।মাথা ভর্তি জ্ঞানের চেয়ে একটা চেয়ার/ইউনিফর্মের দাম এদেশে অনেক অনেক বেশি।
 
★ কয়েকজন বলেছে, যে ডাক্তার ফরেন,এডমিন,পুলিশে যাবে সেও একরকম হবে ডাক্তারদের জন্য কিছু করবে না।
 
-আমি মনে করি যে যেখানে যাবে তার কাজ করুক।তারা ডাক্তারদের জন্য কিছু করার দরকার নাই।তারা তো এই বঞ্চনা থেকে বাঁচলো।একজন সিনিয়র হিসেবে আমি চাই,আমার জুনিয়ররা নিজে অন্তত বেটার থাকুক।
 
★দেখো যারা বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা,ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছে তারা কিন্তু সেসব দেশে সুনামের সাথে ডাক্তারী করছে।
তার মানে আমাদের ছেলেরা পটেনশিয়াল।আচ্ছা ভাবোতে ডা.তাসবীর স্যার যদি আমেরিকায় না গিয়ে বাংলাদেশে থাকতেন,উনাকে কোন মিডিয়া ডাকতো?কেউ চিনতো?
উনাদের লাইফস্টাইল দেখো একেকজন গাড়ি,বাড়ি,নিরাপত্তা বাদ দিলাম..বিশাল বিশাল ম্যানশন,ফার্ম,লেইক পর্যন্ত কিনছেন।আবার তারা দু'হাতে দেশের জন্য দিচ্ছেন।১ লাখ ডলার এক্স-সিএমসিয়ানরা চট্টগ্রাম মেডিকেলকে দিয়েছে।
 
বাংলাদেশ থাকলে আমি সিওর উনারা হয় নবম গ্রেডের মেডিকেল অফিসার,ভাগ্য খুব বেশি ভালো হলে এসিসট্যান্ট বা এসোসিয়েট প্রফেসর হতেন।
সুতরাং এখনই ঠিক করো কি করবা?
 

Monday, January 4, 2021

কোভিড থেকে বেঁচে ডিসচার্জ নিলেই কি ভোগান্তি শেষ? লং কোভিড কী জিনিস?


১. বাংলাদেশে অনেকেই কোভিডকে পাত্তা দিচ্ছে না এই ভেবে যে মৃত্যুর হার তো দেশে কম। যার আপন পরিবারের উপর এসে লাগছে না তারা ছাড়া সবাই খুব নিশ্চিন্তে আছে। কিন্তু অনেকের সাথে কথা বলে, নিজের ও নিজের রোগীদের অভিজ্ঞতা থেকে জানি যে আসলেই অনেক ভোগান্তি আছে লং টার্ম।
 
২. যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগ্যান স্টেইটে একটা স্টাডি করেছে দেখার জন্যে যে কোভিড হওয়ার ৬০ দিন পর রোগীরা কেমন আছে দেখার জন্যে। তাদের প্রশ্ন একটাই - দুই মাস পর রোগীর হইলটা কি? 
 
৩. প্রথমত তাদের মৃত্যুর হার অনেক বেশি - ১৬৪৮ রোগীর মধ্যে ৩৯৮ জন হাসপাতালেই মারা যায়। তাছাড়া ১২৫০ জন যাদের ডিসচার্জ করা হয় তাদের মধ্যেও ৮৪ জন ডিসচার্জের পর মারা যায়। তাদের মৃত্যুর হার ২৯.২% মোট!! যারা বেঁচে যায় তাদের মধ্যে আরো ১৮৯ জন কে (১৫.১%) পুনোরায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লাগে দুই মাসের মধ্যেই। 
 
৪. ডিসচার্জ করা রোগীদের মধ্যে ৪৮৮ জনকে ফোনে ইন্টার্ভিউ করা হয়। ৩৩% এর এখনো কাশি, শ্বাসকষ্ট রয়ে গিয়েছে। ২৩% রোগী এখনো সিঁড়ি বেয়ে উঠতে গেলে প্রচন্ড শ্বাসকষ্টে ভোগে। ১৯% রোগীর উপসর্গে কোন উন্নতি হয় নাই, বরং অনেকের অবনতিও হয়েছে। 
 
৫. আরো ভয়ংকর হলো যে ৪৯% বলেছে যে তাদের মানসিকভাবে দুর্বল লাগছে, কষ্ট হচ্ছে। প্রায় ১০% রোগীর জীবনের সব সেভিংস শেষ। ৭% বলছে যে তারা হিসেব করে খাবার কেনা, র্যাশান করে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে কারণ টাকার টানাটানি।
 
৬. যারা আগে চাকরি করত তাদের ৪০% এখনো কাজে ফিরে যেতে পারেনাই। যারা পেরেছে তাদের ২৬% সময় কমিয়ে কাজ করছে কারণ ফুল ডিউটি করার মত অবস্থা নাই।
 
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে হয়তোবা একটু কম হবে সংখ্যাগুলা যেহেতু আমাদের পপুলেশান অনেক ইয়াং। কিন্তু যাদের হয়েছে বা পরিবারের কারো সিভিয়ার কোভিড হয়েছে তাদের প্রশ্ন করে দেখুন। 
 
আর্থিকভাবে, মানসিকভাবে কী যন্ত্রণা গিয়েছে তাদের। পরিবারের একজনের আইসিইউতে ভর্তি হলেই ঋনে চলে যেতে হয়েছে অনেকের। যখন যা ইচ্ছা তাই করছেন, ভেবে দেখবেন যে একবার আসুস্থ হলে, বা পরিবারের কেউ হলে কী দুঃখ যে করা লাগবে।
 

 

Sunday, October 25, 2020

কেউ কি আমায় একটু কু-রুচিপূর্ন কথাবার্তার কোন সজ্ঞা দিবেন...???

আমরা আসলে কু-রুচিপূর্ন কথা বলতে কি বুঝি...???
 
একটা পোস্টে 100 এর বেশি কমেন্ট হলেই সেখানে কিছু কমেন্ট এমন থাকে যে "ডাক্তাররা এমন কু-রুচিপূর্ন কথা বলে যা কোয়াক দের থেকেও খারাপ" বা "এমন কু-রুচিপূর্ন কথাবার্তা ডাক্তার সমাজ থেকে আশা করা যায় না"
 
কেউ কি আমায় একটু কু-রুচিপূর্ন কথাবার্তার কোন সজ্ঞা দিবেন...??? 
 
Just for curiosity. 
 
এমন একটা গ্রুপে কেউ কি পোস্ট দাতাকে গালি-গালাজ করে...???
কেউ কি তাদের পার্সোনাল লাইফ নিয়ে উল্টাপাল্টা বলে...???
নাকি কেউ " দেখে নিবো পারলে সামনে আসিস "এমন কিছু বলে...???
 
যদি বলে থাকে প্রমান সহ এডমিনদের দিন তারা তাকে ব্যান করে দিক। সহজ সমাধান।
কিন্তু তা না করে কেউ কেউ পুরো ডাক্তারদের বিশেষ করে জুনিয়র ডাক্তারদের উদ্দেশ্য করে এমন কমেন্ট গুলি করে থাকেন...!!! ক্যানো স্যার আপনার কি ক্ষতি করেছে তারা...???
 
ডাক্তার অন্য পেশায় গেলে আপনার সমস্যা...!!!
ডাক্তার E-commerce এ মাছ, ভাত, বিরিয়ানি বেচলে আপনার সমস্যা....!!!
ডাক্তার CMU করলে আপনার সমস্যা...!!!
ডাক্তার PGT করলে আপনার সমস্যা...!!!
ডাক্তার GP করলে আপনার সমস্যা...!!!
ডাক্তার খ্যাপে গেলে আপনার সমস্যা...!!!
 
 
এতো এতো সমস্যা দিতে পারেন, একটা সমাধান সাথে লিখে দিতে পারেন না...???
 
 
জ্বর থেকে শুরু সব রোগী ই তো specialist রা দেখে, রেফারেল সিস্টেমের 'র' ও তো তৈরি হলো না আজ প্রযন্ত।পারলে সেটা করা হোক... জ্বর সর্দিকাশির চিকিৎসা দিতে দিতে অনেকেই সিম্পটোমেটিক চিকিৎসার বাইরে কিছু চিন্তা করতে পারে না,ডায়াগনোসিস প্রেস্ক্রিপশনে লিখতে অনেকেই হ্যাজিটেট থাকে...এই কাজ তো জুনিয়র রা করবে ভাই... তারা জ্বর সর্দিকাশির চিকিৎসা দিবে আর আপনার কাছে রেফার্ড করবে " যান স্যারকে দিয়ে চেক করিয়ে নেন"।এখন বলতে পারেন আমাদের জুনিয়ররা তো ওতো ভাল না যে রোগী ছাড়বে, তো ভাই আপনি কি করতেছেন, আপনিও তো ছাড়ছেন না।সেই দূর গ্রামে গিয়ে ও দেখা যায় আপনার একটা চেম্বার রয়েছে। জুনিয়ররা দিন কিভাবে চালাবে শুধু আপনার এসিস্ট্যান্ট হয়ে আর আপনার হাস্পাতালের MO হয়ে...??? এটাই কি চাচ্ছেন সবাই...!!!
 
 জুনিয়র দের কোন ব্যাবস্থা না করে শুধু ভুল ধরার পক্ষে আমি নেই...
 
 
বেশিরভাগ পোস্ট এর কমেন্ট গুলি এনালাইসিস করলে দেখাযায় পোস্টগ্রাজুয়েট করা ডাক্তারগন ও অনেক নারী চিকিৎসক গন এসবের বিরুদ্ধে বেশি বলে থাকে... এর কারন কি আমার জানা নেই, নৈতিকতা বিরোধী সকল কাজকে আমি নিজেও ঘৃণা করি,কিন্তু CMU করা PGT করা মানেই সে সেটা কিছুই পারে না বা সে মেডিকেল সাইন্স নিয়ে ছেলেখেলা করছে এমন তো না...!!!
কিছু খারাপ লোক আছে,সেটা কোথায় নেই...??? বড় বড় ডিগ্রী নেয়া ডাক্তারের মধ্যেও আছে কিন্তু তাই বলে সবাইকে এক পাল্লায় মাপা কি উচিৎ...??? 
 
মেডিকেল কলেজ আসলে মিডেলক্লাস বা লো ক্লাস থেকে আসা ছাত্রদের জন্য ই না, মেডিকেল হলো এলিট শ্রেণীর জন্য... তাদের জন্য যাদের বাবা অথবা হাজবেন্ড সাপোর্ট রয়েছে...6 বছর কোর্সের পরেও যার বাবা বলতে পারবে মা তুমি পড় আমি খরচ চালাচ্ছি অথবা হাজবেন্ড বলবে "ওগো আমি আছি, তুমি শুধু বড় ডাক্তার হও"
 
আর ড্রামাটিক পরিবর্তন করতে হলে চুরি ডাকাতি অনেক কিছু আছে তা করবে, ডাক্তারির মত মহান পেশায় এসে CMU PGT এসব করে এই পেশাকে কলংকিত করার অধিকার কারো নাই...
MBBS কোর্স টা 10 বছর করা যায় কিনা ভেবে দেখবেন,একসাথে post-graduation সহ তাতে অন্তত জুনিয়র ডাক্তারদের দুঃখ কিছুটা ঘুচবে আর বড় বড় ডাক্তারদের মাথাব্যাথা ও কমবে...
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন, ভালো না লাগলে এড়িয়ে যাবেন।
 
 
 শেবাচিম
2011- 12