Saturday, July 22, 2017

এদিনের পরিবর্তন চাই!




-কী সমস্যা?
-‘শইল’ চেতে না।
-শইল চেতে না মানে?শরীরে বল পান না?
‘মানে’ ‘মানে’ বলে ইতঃস্তত করছেন পড়ন্ত বয়েসী এই চাচা।লজ্জা-টজ্জা কিছু একটা পাচ্ছেন।
বয়সের সাথে লজ্জার ভাঁজ গুলো ও চোখে মুখে স্পষ্ট!
-‘এই জ্যান, কতা অইলো গিয়া…
বুঝলাম,আমার চেম্বারের অল্পবয়সী মেয়েটি চাচার জবান আলগা করার ক্ষেত্রে একটা ব্যারিকেড।যেটা চাচা ডিঙ্গাতে পারছেন না কিংবা চাইছেন না।
‘মিনারা, তুমি বাইরে দাঁড়াও, দরকার হলে ডাকবো’!
ওড়নার একটা কোনা মুখে গুঁজে মিচকা একটা হাসির ঢেউ মেখে ও চলে গেল!
রুমে আর কেউ নেই।আমি আর চাচা।ওয়ান টু ওয়ান!
-এবার বলেন, কী সমস্যা?
কথা বলার স্পেস পেয়ে নিজের আগল খুলে দিলেন চাচা।
-ভাইস্তা,শইল্যে কুনু ‘ছেস’(সেক্স) নাই।
-কী করেন আপ্নে চাচা?
-‘লঞ্চের সুকানি।জাহাজের ডেরা-ই-ভারও কইতে পারো!
ভাইস্তা,তুমি কী ‘ছেস’ বিশেষজ্ঞ?
আমার এক ভাইস্তা আছে ‘ডাহা মেডিকেলের’ ডাকতর।এক্কেরে তুমার লাহান’!
-‘চাচা আমি ‘ছেস’ কেনো কোনো কিছুরই বিশেষজ্ঞ না।‘নরমাল’ এম বি বি এস’।
-‘ভাইস্তা তুমার ভিজিট আমি তুমারে দ্যায়াম,কিন্তু তুমি আমারে একটা পভেছারের ঠিকানা দিবার পারো যে এই মামলার একটা মীমাংসা দিবার পারবো’।



আমাদের দেশের শিক্ষিত মূর্খ সবাই বিশেষজ্ঞ-বাতিক।এই বাতিকগ্রস্ততার জন্য দায়ী আমরাই।দুই দিনের মাথা ব্যথা নিউরোমেডিসিন বিশেষজ্ঞ দেখাতে হবে।পেশাবে জ্বালা-পোড়া হলে ইউরোলোজিস্ট দেখাতে হবে।পেটে ব্যথা হলে হেপাটোলোজিস্ট,গ্যাস্ট্রো-এন্টারোলোজিস্ট দিয়ে বোর্ড বসাতে হবে।
অথচ পৃথিবীর সব দেশেই আগে রোগী জেনারেল প্র্যাক্টিশনারের কাছে যায়।জেনারেল প্র্যাক্টিশনার চাইলে স্পেশালিস্টের কাছে রেফার করেন।ইমারজেন্সী সিচুয়েশন ব্যতিত রেফারাল ছাড়া স্পেশালিস্ট রোগী দেখেন না।এতে করে সবার উপর রোগীর চাপটা সমান থাকে।অথচ আমাদের দেশে এম বি বি এস ডাক্তার চেম্বারে মাছি মারেন আর বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হাপুস-গাপুস করে মাথা-ব্যথা,সর্দি জ্বর,কাশি,পাতলা পায়খানার রোগী দেখে শেষরাতে বাড়ী ফেরেন।



দেশের সকল ‘খেপ-খাটা’ 'চিকিৎসা-শ্রমিকদের' মহান মে দিবসের শুভেচ্ছা।
যে এম বি বি এস ডিগ্রীটা আমাদের সৌভাগ্যের প্রসূ্তি হত সেটা হয়নি।
সেটা হয়নি দেশে শক্তিশালী রেফারাল সিস্টেম না থাকার জন্য।
বিশেষজ্ঞ থাকেন তিনহাজার স্কয়ার-ফিটের প্রাসাদপোম ফ্ল্যাটে।
আর গ্রাজুয়েট ডাক্তার থাকেন আজিজ মার্কেটে।
‘বারো বাই বারো ফুটের’ এক রুমে চারজন গাদা গাদি করে নিদ্রা যাপন করেন।
দীর্ঘশ্বাসের সে ঘুমে থাকে এক আকাশ কস্ট।
এদিনের পরিবর্তন চাই!

>> কালেক্টেড পোস্ট <<

Wednesday, July 12, 2017

ঐ উচ্চ শিক্ষার কি মূল্য আছে, যদি ঐ উচ্চ শিক্ষা আপনাকে নৈতিক শিক্ষাই দিতে না পারে?

“স্যার একটা কথা বলব যদি কিছু মনে না করেন”। 
“জি বলেন”। 
“একটু বেশি দামি ওষুধ লিখে দেন। আর বেশি করে টেস্ট লিখে দেন। সম্ভব হলে CT scan কিংবা MRI. 
টেস্টের প্রতি বীতশ্রদ্ধ এই জাতি স্বেচ্ছায় টেস্ট চেয়ে নিচ্ছে তার উপরে দামি ওষুধ। ঘাপলাটা ধরতে পারলাম 
“কোম্পানি বিল দিয়ে দিবে নাকি?” 
“জি স্যার। সাথে আপনার ভিজিটের টাকা বেশি করে লিখে একটা সিল দিয়ে দিয়েন”।
ওরে বাবা, এই দেখি টাটকা শয়তান। 
বললাম, “আসলে আমি দামি ওষুধ লিখি না। কিন্তু আপনি যেহেতু বললেন তাই লিখে দিব। Avasin ইঞ্জেকশান! দাম মোটামুটি এক ভায়ালের দাম পড়বে ৬০ হাজার টাকা! 
একটু চিন্তা করে বললেন, “ইঞ্জেকশান লিখে দিলে সমস্যা নাই কিন্তু এত দামি, এইটা কিসের? 
“ক্যান্সারের”
লাফ দিয়ে উঠিলেন, “ক্যান্সার কেন হবে? আমার তো চাকরিই থাকবে না” 
ঠাণ্ডা গলায় বললাম, “আপনার মত দুর্নীতিবাজ মানুষ জাতির জন্য ক্যান্সারই। তাই ভাবলাম যদি কাজে লাগে!” 
ব্যাপারটা বুঝতে পারলেন। আর কথা না বাড়ায়ে চলে গেলেন।
... ... ... 
ভদ্রমহিলা একজন স্কুল শিক্ষক। আসলেন একটা আবদার নিয়ে। 
“আমি এসেছি একটু সাহায্যের জন্য। আপনি আমাকে আমার বাবার নামে একটা প্রেস্ক্রিপশান করে দেন যেটাতে তিন থেকে চার টাকার ওষুধ থাকে যাতে আমি প্রতি মাসে টাকা তুলতে পারি স্বামীর কোম্পানি থেকে”।
বললাম, “আপনি একটা ফলস প্রেস্ক্রিপশান লিখাতে আসছেন, একজন শিক্ষক হয়ে! ছাত্রদের কি এই শিক্ষা দেন? আজকে আমি আপনাকে ৩-৪ হাজার টাকার ব্যবস্থা না হয় করে দিলাম কালকেই আপনার মনে হবে ৬-৭ হাজার টাকা হইলে ভাল হত। আর এখান থেকে বের হয়ে আপনি পাশের বাসার ভাবীকে গল্প দিবেন, ‘আরে ডাক্তারকে কিছু টাকা দিলেই একটা প্রেস্ক্রিপশান পাওয়া যায়। কোন ব্যাপার নাকি? আমার কারনে সব ডাক্তাররা গালি শুনবে এটা হতে পারে না। আমার ডিগ্রী, যোগ্যতা, সার্টিফিকেট, জ্ঞান বিক্রির জন্য না। ভুল জায়গায়, ভুল লোকের কাছে আসছেন। ধন্যবাদ”। 
... ... ...
মহিলার অনুরোধ “স্যার টেস্ট লিখে দেন বেশি করে আর ওষুধ সব চলবে লিখে দিয়েন। আর প্রেসক্রিপশান ইংলিশে লিখে দিয়েন পুরাটা। সাথে একটা বিল দিয়ে দিয়েন – ইংলিশে” 
“কেন?” 
“আমার হাসবেন্ড UNECSO তে চাকরি করে। বিল ডলারে হবে তাই”। 
এত দিন দেখলাম দেশি চোর। ওরে বাবা এই দেখি ইন্টারনেশানাল চোর-বাটপার! আমি ধরে নিলাম যেহেতু UNESCO তে চাকরি করেন মোটা বেতন পান। তাও চুরি করা লাগবে! আসলে দুর্নীতি আমাদের জেনেটিক সমস্যা হয়ে গেছে। 
... ... ...
খালি এই দেশের ডাক্তারই খারাপ। কমিশন খায়, দামি ওষুধ লিখে কোম্পানির মাল খায়, সিজার-অপারেশন করে। বাকি মানুষ সব তো দুধে ধোয়া! ৯৯ শতাংশ অসৎ মানুষের এই দেশে শুধু মাত্র একটা প্রফেশানের সব মানুষ থেকে পুরা সততা আশা করা বোকামি!
হাজার বার বলেছি, লিখেছি, শুনেছি “Honesty is the best policy”। পরীক্ষার খাতায় লিখেছি শুধু পাশ করার জন্য, ভাল নাম্বার পাওয়ার জন্য। আসলে আমাদের শিক্ষার মূল রসটা যায় আমার পেটে, মস্তিষ্কে না। যে জন্যই উচ্চ শিক্ষিত হয়েও আমারা নৌতিক শিক্ষা অর্জন করতে পারি না।
নিজেকে একটা প্রশ্ন করবেন। আপনার ঐ উচ্চ শিক্ষার কি মূল্য আছে, যদি ঐ উচ্চ শিক্ষা আপনাকে
..................... নৈতিক শিক্ষাই দিতে না পারে?