Thursday, December 2, 2021

স্কেলিং -- সঠিক বা ভুল, চলুন জানার চেষ্টা করি

 

, অনেকের কাছে এটি "দাঁত ওয়াশ" নামেও পরিচিত। এই চিকিৎসাটির ব্যাপারে মানুষের মধ্যে বিভিন্ন নেতিবাচক ধারণার প্রচলন আছে। অপেশাদার লোকদের কাছ থেকে এসব বিভ্রান্তিকর তথ্য পেয়ে অনেকেই এই চিকিৎসা নেওয়া থেকে বিরত থাকেন এবং নিজের ক্ষতি করেন। এসব ধারণা কতটুকু সঠিক বা ভুল, চলুন জানার চেষ্টা করি-
 
প্রথমেই জানবো, স্কেলিং(scaling) কী?
 
দাঁতের ওপর সাধারণভাবে যে সাদা/হলদে সাদা পরত(dental plaque) জমে, সেটিই শক্ত হয়ে calculus বা পাথর তৈরি হয়। আর মাড়ির ওপর ও নিচ থেকে সেই calculus অপসারণ করার চিকিৎসার নামই হলো স্কেলিং। 
 
 ধারণা- ১
"স্কেলিং করালে দাঁত পাতলা হয়ে যায় বা ক্ষয়ে যায়।"
 
আল্ট্রাসনিক স্কেলার মেশিন কম্পন সৃষ্টির মাধ্যমে পাথর অপসারণ করে থাকে। যথাযথ কৌশল জেনে এবং মেনে স্কেলিং করলে দাঁতের ক্ষতি হওয়ার কোনও ঝুঁকি থাকে না। 
 
ধারণা- ২
"স্কেলিং করালে দাঁত আরও বেশি শিরশির করে।"
 
দাঁত ও মাড়ির মধ্যবর্তী স্থানে পাথর জমতে জমতে একসময় মাড়ি দাঁত থেকে আলগা হয়ে যায়। স্কেলিংয়ের সময় এই পাথর সরিয়ে ফেলায় দাঁতটা সাময়িকভাবে উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। তাই স্কেলিং করানোর পর কিছুদিন দাঁত শিরশির করতে পারে। মাড়ি স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরে এলেই এই সমস্যা কেটে যায়। সুতরাং আমরা বুঝতে পারলাম, অল্প পাথর জমা হতেই যদি স্কেলিং করিয়ে ফেলি, তাহলে চিকিৎসা পরবর্তী শিরশিরে ভাব দ্রুত কেটে যাবে।
 
ধারণা- ৩
"স্কেলিং করলে মাড়ি আলগা, দাঁত ফাঁকা ও নড়বড়ে হয়ে যায়।"
 
অনেকদিন ধরে মাড়িতে প্রদাহ (gingivitis) ও দাঁতের গোড়ায় পাথর (calculus) বিনা চিকিৎসায় পড়ে থাকলে এক সময় দাঁতের সকেটের হাড় ক্ষয় হয়ে দাঁতের শিকড় আস্তেআস্তে উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। দাঁতকে সকেটের সঙ্গে আটকে রাখা পেরিওডন্টাল লিগামেন্ট ক্ষতিগ্রস্থ হয়, ফলে দাঁত হারায় তার অবলম্বন। কিন্তু calculus দিয়ে ঢেকে থাকার কারণে এই ক্ষয়ক্ষতিগুলো তেমন চোখে পড়ে না। স্কেলিং করে এই calculus অপসারণ করলে ভেতরের দুরবস্থা তখন প্রকটভাবে চোখে ধরা দেয়। অর্থাৎ স্কেলিংয়ের কারণে মাড়ি আলগা বা দাঁত ফাঁকা ও নড়বড়ে হয় না বরং প্রদাহের কারণেই এগুলো হয়ে থাকে, স্কেলিংয়ের ফলে সেটা প্রকাশ পায় মাত্র। 
 
ধারণা- ৪
"স্কেলিংয়ে ব্যথা পাওয়া যায়।"
 
সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে স্কেলিং করলে এতে ব্যথা পাওয়ার কোনও আশংকা নেই। হ্যাঁ, কিছুটা ঘষা লাগা এবং শিরশিরে অনুভূতি পারে, প্রদাহ বেশি হলে শিরশির ভাবও বেশি অনুভূত হয়। তাই প্রদাহ অল্প থাকতেই চিকিৎসা করানো উচিত। 
 
ধারণা- ৫
"স্কেলিং হচ্ছে দাঁত সাদা করার চিকিৎসা"
 
স্কেলিংয়ের ফলে plaque, calculus এর পাশাপাশি দাঁতের কিছু superficial stain থাকলে তা-ও দূরীভূত হয়। এতে দাঁত আগের চেয়ে পরিস্কার দেখাতে পারে, কিন্তু তাই বলে এটি "দাঁত সাদা করার চিকিৎসা" নয়। 
 
ধারণা- ৬
"জীবনে একবার স্কেলিং করালেই যথেষ্ট"/"একবার স্কেলিং করালে বারবার করাতে হয়"
 
মুখে Calculus জমলে স্কেলিং করাতে হবে - সহজ কথা। কয়বার, কতদিন পরপর স্কেলিং করানো লাগবে, তার কোনও সার্বজনীন হিসেব নেই। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে মুখগহ্বরের যথাসাধ্য যত্ন নেওয়া এবং ৬ মাস পর পর ন্যুনতম BDS ডিগ্রিধারী রেজিস্টার্ড ডেন্টাল সার্জনের কাছে চেকআপ করানো। স্কেলিংয়ের প্রয়োজন মনে করলে তিনিই সেটার পরামর্শ দেবেন।
 
কারও কারও হয়তো মনে প্রশ্ন জাগতে পারে- দাঁতের গোড়ায় পাথর জমেছে, স্কেলিং করালাম না। ক্ষতি কী? 
 
ক্ষতি এই যে, gingivitis তখন তীব্রতর প্রদাহ periodontitis এ রূপ নেবে। আগে যেখানে মাড়ি দিয়ে রক্ত আসতো, দাঁত শিরশির করতো, এখন পুঁজ জমে যন্ত্রণাদায়ক ফোঁড়া (abscess) সৃষ্টি হতে পারে। মুখের দুর্গন্ধ কিছুতেই পুরোপুরি দূর হবে না। প্রদাহ বাড়তে বাড়তে একসময় দাঁত যখন নড়তে শুরু করবে, তখন খাওয়াদাওয়া স্বাচ্ছন্দ্যে করা যাবে না, যার প্রভাব পড়বে সারা শরীরে। এরপর একসময় দাঁত পড়ে যেতে শুরু করবে। শুধু তা-ই নয়, periodontitis এর সঙ্গে রক্তনালীতে চর্বি জমা, হৃদরোগ, রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে না আসা, গর্ভাবস্থার ৩৭ সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার আগেই শিশু প্রসব, কম ওজনের শিশু জন্ম নেওয়া- এসব জটিলতারও সংযোগ থাকতে পারে বলে মনে করা হয়। 
 
অনেকেই calculus এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উপসর্গগুলো দেখা দিলে ঔষধের দোকান থেকে ইচ্ছেমত ঔষধ নিয়ে খাওয়া শুরু করেন! একটু ভাবুন তো, মুখ ভর্তি calculus যদি ভেতরে ভেতরে এত বড় ক্ষতি করে ফেলতে থাকে, তাহলে ডেন্টাল সার্জনের কাছে গিয়ে calculus দূর না করিয়ে এভাবে শুধু ঔষধ খেয়ে যাওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত?
 
 
- ডা. ইফফাত সামরিন মুনা।

Wednesday, May 26, 2021

বাড়তি টাকা ব্যাংকে স্তূপের মত জমতে থাকে অথবা সম্পদের পর সম্পদ জমতে থাকে যেগুলো হয়তো জীবনে কখনোই ভোগ করা হয় না!

খুঁজলেও কোন ডালের কনা পাওয়া যায় না, 
হাতে বানানো সালাদ 
সব মিলিয়ে জম্পেশ ঠাসিয়ে খেতাম! 
 শুরুর দিকে 10-12 টাকা লাগতো,পরে 14 টাকা বা 16 টাকার মত লাগতো...
 
 
এরপর চাকরি হলো, প্রাকটিস করতে শুরু করলাম! 
 
হোস্টেলে যা টাকা ছিল তার চেয়ে বহু গুণ বেশি টাকা ইনকাম করি... অনেক টাকা বেড়েছে কিন্তু খাওয়া কি বেরেছে?? 
 তখন যে রকম জামা কাপড় পড়তাম ওরকমই পরি... 
সত্যি কথা হচ্ছে এই শহরে কেউ 20,000 ইনকাম করে কেউ 50,000 ইনকাম করে কেউ 100,000 করে কেউ আরো বেশি করে
 এই বাড়তি টাকা দিয়ে যে বেশি খায়,বেশি পরে,বেশি ভোগ করে, বিষয়টি তা নয়, 
বাড়তি টাকা ব্যাংকে স্তূপের মত জমতে থাকে অথবা সম্পদের পর সম্পদ জমতে থাকে যেগুলো হয়তো জীবনে কখনোই ভোগ করা হয় না! 
অথচ কেউ সবকিছু ছারখার আর তছনছ করে এই টাকা ইনকাম করতে মরিয়া। 
 
কাউকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় জীবনে কেন পড়াশোনা করেন? টাকার জন্য নাকি সম্মানের জন্য? অধিকাংশই বলবে সম্মানের জন্য... 
 
তবে সম্মান নষ্ট করে টাকা উপার্জন কেন?....


 

Monday, March 8, 2021

কোভিড ভ্যাকসিন নিয়ে কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর

 

1. কভিশিল্ড - এটা কি ভারতীয় ভ্যাকসিন? 
 
না! এটা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এর বিখ্যাত ভ্যাকসিন রিসার্চ কেন্দ্র - জেনার ইনস্টিটিউটে ডেভেলপ করা অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন যার কমার্শিয়াল ম্যানুফ্যাকচারিং কন্ট্রাক্ট বহুজাতিক ঔষধ কোম্পানি এস্ট্রাজেনেকার| ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট এস্ট্রাজেনেকার নামের প্রোডাক্ট AZD1222 ও এস্ট্রাজেনেকার লাইসেন্স নিয়ে সিরাম ইন্সটিটিউট কভিশিল্ড নামে একই প্রোডাক্ট বাজারজাত করছে| শুধু বাংলাদেশ নয় - ধারণা করা হচ্ছে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন টার সারাবিশ্বের সাপ্লাই এর ৬০ % এর বেশি সাপ্লাই ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকেই যাচ্ছে! 
 
2. আমার ডায়বেটিস কন্ট্রোল এ নেই - আমার কি ভ্যাকসিন নেয়া ঠিক হবে?
 
আপনার ডায়বেটিস কন্ট্রোল এ থাকে আর না থাকে - ভ্যাকসিন নিন! ভ্যাকসিন এর সাথে ডায়বেটিস এর কোন সম্পর্ক নেই! কিন্তু ডায়বেটিস এর সাথে কোভিড এর সম্পর্ক আছে, ডায়বেটিস থাকলে সিরিয়াস কোভিড বা কভিডে মৃত্যুর হার বেশি! তাই ডায়াবেটিক রুগীদের ভ্যাকসিন নেয়া নেয়া অতিবেশি জরুরি!
 
3. আমার এজমা, হাঁচি, নাকে এলার্জি, সর্দি কাশির ক্রনিক সমস্যা! আমার কি ভ্যাকসিন নেয়া ঠিক হবে ? 
 
অবশ্যই! এই ধরণের এলার্জি ভ্যাকসিনে কোনো সমস্যা করবে না! অনেকের লাইফ থ্রেটেনিং এলার্জিক এনাফাইলেক্টিক শক হয় চিংড়ি মাছ ইত্যাদি তে| এই গ্রূপের মানুষ জন সাথে একটা এপিনেফরিন ইনজেকশন রাখতে পারে অথবা টিকা কেন্দ্রে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন! 
 
4. যাদের ইম্মিউন সিস্টেম উইক - যারা স্টেরয়েড, ইম্মিউনোসাপ্রেসিভ ঔষধ এর উপর নির্ভরশীল অথবা যার বোন ম্যারো বা অন্যান্য ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট রিসিপিয়েন্ট - তারা কি এই ভ্যাকসিন নিতে পারবেন? 
 
- হ্যা পারবেন! এই ধরণের রুগীদের কভিড এ মৃত্যুর হার অনেক বেশি! এরা ভ্যাকসিন এর জন্য হাই প্রায়োরিটি গ্রূপ! 
 
5. ক্যান্সারের রুগী বা যারা কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশন থেরাপি পাচ্ছেন তারা কি এই ভ্যাকসিন পেতে পারেন? 
 
অবশ্যই! কভিড এ ক্যান্সার এর রুগীদের মৃত্যুর হার অনেক বেশি| ক্যান্সার রুগীদের সবার আগে গিয়ে ভ্যাকসিন নেয়া দরকার| 
 
6. ভ্যাকসিন নেয়ার পর অনেক মানুষের মৃত্যুর খবর শোনা যাচ্ছে| আমি এ নিয়ে উদ্বিগ্ন! 
-
এব্যাপারে শঙ্কার কিছু নেই| আজ পর্যন্ত সারা বিশ্বে ১৪ কোটি মানুষ কোভিড ভ্যাকসিন পেয়েছেন! এখন পর্যন্ত কোভিড ভ্যাকসিন এর কারণে একটি মৃত্যু হয় নি! কেউ মারা যেতে পারেন ভ্যাকসিন নেয়ার কিছুদিন পর - কিন্তু ভ্যাকসিন এর কারণে না| 
 
7. অনেকে বলছে ভ্যাকসিন নিলে পুরুষত্ব চলে যায় অথবা অনেকে বলছে এই ভ্যাকসিনের এফেক্টে বাচ্চা কাচ্চা না হতে পারে! 
 
এগুলো পুরোপুরি ভিত্তিহীন ও বাজে কথা! এর মধ্যে সত্যের লেশমাত্রও নাই! 
 
8. আমার এক মাস আগে কোভিড হয়েছিল - আমি কি ভ্যাকসিন নেবো? 
 
অবশ্যই! কোভিড হোক আর না হোক, যত আগেই কোভিড হোক, এক মাস হোক আর এক বছর হোকে, আপনি ভালো হয়ে গিয়েছেন - ভ্যাকসিন নিন! এমন কি প্রথম ডোজের পর কোভিড হয়েছে - তারপর ও সেকন্ড ডোজ নিন | তবে কোভিড নিয়ে অসুস্থ অবস্থায় টিকা কেন্দ্রে গেলে অন্যান্য দের ইনফেক্ট করার সম্ভাবনা| তাই সুস্থ হবার পর ইনফেকসাস পিরিওড শেষ হবার পর সেকন্ড ডোজ নিন| 
 
9. কোভিড ভ্যাকসিন থেকে কি কোভিড হতে পারে? - না! 
 
10. কোভিড ভ্যাকসিন নিলে কি এর এফেক্টে পরে কোভিড টেস্ট পজিটিভ আসতে পারে? - না! 
 
11. প্রেগন্যান্ট বা নার্সিং মা রা কি ভ্যাকসিন নিতে পারবেন ?
 
 - হ্যা পারবে! ( অনেক সরকারি সাইট বলছে ডাক্তারের পরামর্শ নিন! আমার পরামর্শ : আমি হ্যা বলছি! যুক্তরাষ্ট্রে এ প্রেগন্যান্ট হেলথ কেয়ার ওয়ার্কার রা সবাই এই ভ্যাকসিন নিয়েছেন| হাজার হাজার!
একটা সরকার ও সংগঠনের অনেক লিগ্যাল সীমাবদ্ধতা থাকে - তাই কিছু ক্ষেত্রে বলতে হয় আপনার ডাক্তার এর সাথে যোগাযোগ করুন| সরকার গুলো সরাসরি হ্যা বলছে না - কারণ ফেইজ থ্রি ট্রায়াল এ প্রেগন্যান্ট দের ইনক্লুড করা হয় নি| কিন্তু সব প্রিক্লিনিকাল স্টাডি তে দেখা গেছে এই ভ্যাকসিন প্রেগন্যান্সি তে পুরোপুরি সেইফ! আমরা অনেক ঔষধ ইউজ করি শুধুমাত্র প্রিক্লিনিকাল স্টাডির উপর ভিত্তি করে|)
 
12. আমার বাচ্চাদের কি হবে? ওদের কি ভ্যাকসিন নিতে হবে? এই মুহূর্তে শুধু মাত্র ১৬-১৮ বছরের উপরের বয়স যাদের তাদের জন্য ভ্যাকসিন এপ্রভ হয়েছে| আশা করা যাচ্ছে আগামী শীতে বাচ্চারাও এই টিকার আওতাভুক্ত হবে!
 
১৩. অনেকে বলছে এই ভ্যাকসিন নাকি আমাদের ডিএনএ আর জিন পরিবর্তন করে দিতে পারে? - সম্পূর্ণ অমূলক! পুরোপুরি ভিত্তিহীন বাজে কথা! 
 
১৪. কভিশিল্ড ভ্যাকসিন ৬৫ উর্ধ বয়সীদের জন্য কতটুকু কার্যকর? - 
 
এই ভ্যাকসিন টার অনুমোদন দেয়ার সময় WHO টেকনিক্যাল কমিটি বিভিন্ন বয়সওয়ারী এর কার্যকারিতার চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছে এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে ৬৫ উর্ধ বয়সীদের ক্ষেত্রেও এই ভ্যাকসিন কার্যকর| 

Thursday, February 4, 2021

সুতরাং এখনই ঠিক করো কি করবা?

প্রিয়,অনুজ।
 
তোমরা যারা এইচএসসির পর ডাক্তার হইছো।তারা ডাক্তার হওয়ার পর এবার ফরেন,এডমিন,পুলিশ ক্যাডার হও।এমবিবিএস একটা গ্রাজুয়েট ডিগ্রী,এমবিবিএস পাশ করছো বলে ডাক্তারীই করতে হবে কোন কথা নাই। একবার চেষ্টা করে দেখো।
 
যে কষ্ট করে তুমি এফসিপিএস/এমডি/এমএস করবা তার ২০% কষ্ট করে যে কোন ক্যাডারে চান্স পাবা।শুধু ডিটারমিনেশনটা লাগবে।৩৮ এর রেসাল্ট দেখে ভাবো তো সামনের কোটামুক্ত বিসিএসে কি হতে যাচ্ছে?
 
আমরা এমবিবিএস এ যে পরিমাণ পড়াশুনা করি,আর কোন সাবজেক্টের মানুষ করে?প্রতিদিন ৩ঘন্টা ৬ মাস বাংলা,অংক,ইংরেজি,সাধারণ জ্ঞান পড় তারপর দেখ কি হয়?
মনে রাখবা "যারা আগে সেরা তারা পরেও সেরা"।তোমরা যেখানেই যাবা সেখানেই ভালো করবা।
এটাই পৃথিবীর নিয়ম।
 
★তাহলে ডাক্তার কেন হইছো?
 
-সহজ উত্তর -না বুঝে।
আরেকটু চিন্তা করলে উত্তর হবে,
মানুষ সবসময় তার অবস্থান থেকে বেটার অপশন খুঁজে।এইচএসসির পর বেটার অপশন ডাক্তারী বা ইঞ্জিনিয়ারিং তাই সবাই সেগুলো বেছে নেয়।বিসিএস।দিতে গেলে বেটার অপশন ফরেন,এডমিন,পুলিশ,কাস্টমস.... সুতরাং এখানেও বেটার অপশন খোঁজা উচিত।
 
★ফরেন,এডমিন,পুলিশ কেন হবা?
-কারণ ডাক্তারীর এদেশে বেইল নাই।টেম্পু এক্সিডেন্টে তিনজন আহত হলে ১ জন ডাক্তার থাকে।বিশ্বাস না হলে রিক্সায় উঠে বলবা তুমি ডাক্তার।দেখবা রিক্সাওয়ালা বলবে তারা মামাতো সালাও ডাক্তার।সুতরাং সবার ডাক্তারী করা লাগবে না রে ভাই।
আর যারা ডাই হার্টেট ডাক্তারী করবা,তারা ভাগো।টিভির পর্দায় ফেরদৌস ভাই,তাসবীর স্যাররে দেখো না?
বাংলাদেশে থাকলে নিজের টাকায় প্লেন ভাড়া করা তো দূরে, শালির বিয়েতে ১ টা শাড়িও দিতে পারবা না।
 
★তাহলে ডাক্তার হইছো দেশের সেবা করার জন্য তো এখন দেশসেবার কি হবে?
-টাকা থাকলে ডাক্তার দিয়া বাড়ি/দেশ ভরায় ফেলতে পারবা।দাদার নামে দাতব্য হাসপাতাল দিবা,আল্লাহ ওয়াস্তে ঔষধ দিবা।পুরো মাসে ৫০ হাজার খরচ করলে হবে।আমেরিকায় রেসিডেন্সী শেষ করলে তোমার বেতন শুরু হবে ৫-৬ লাখ দিয়ে।চাইলে জীবনের প্রথমদিন থেকে তুমি দাদার নামে চ্যারিটি,মসজিদ মক্তব বা মন্দিরের পুরোহিতের দায়িত্ব নিতে পারবা।ফেরেস্তারা আসমানে তোমার জন্য দোয়া করবে।মাটিতে জনগণ তোমার নামে চায়ের কাপে ঝড় তুলবো।
আর দেশে থাকলে, গ্রামের ঈদের নামাজে শেষে গিয়া পিছনের কোনায় দাঁড়াবা,নামাজ শেষ করে দৌড় দিবা।কারণ মসজিদ কমিটি তোমাকে টাকার জন্য ধরবে তুমি এলাকার ডাক্তার,কিন্তু টাকা তো তোমার নাই।দিলেও বড়জোর ২০০০-৫০০০ দিতে পারবা।দেখবা এলাকার দূর্নীতিবাজ,ঘুষখোর রা তোমার ৪ ডাবল দিছে।তুমি হয়তো দানের সওয়াব পাবা,কিন্তু কমিটির কাছে বেইল পাবা না।
 
★ ফরেন,এডমিন,পুলিশে যেতে হলে কি করতে ভাইয়া?
-যারা ডিটারমাইন্ড তাদেরকে বলবো প্রথমে মেডিকেলের বইগুলো কোন লাইব্রেরিতে দান করে দাও।খবরদার কোন চেম্বার করবানা।
"ঘাটের ডিঙ্গি না পোঁড়ালে নদীতে ঝাঁপ দেয়ার সাহস কোনদিন হবে না।"
সুতরাং প্রথম কাজ ডিঙ্গি পোঁড়ানো,মেডিকেল বইপত্র দান করে দাও,বেঁচে দাও।
 
★ আমার অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী জিজ্ঞেস করেছেন আমি এত হতাশ কেন?
-আমি তাদের বলেছি,চিকিৎসক হিসেবে আমি সবসময় গর্বিত।কিন্তু স্বাস্থ্য ক্যাডার নিয়ে শুধু আমি না এদেশের ৯৯.৯৯% ডাক্তার হতাশ।
 
★৫-৬ বছর ভুলে ডাক্তারী শিখছে বলে সারাজীবন ভুল করার কি মানে?
 
আমি স্ট্যাটাস লিখেছি তরুণ চিকিৎসকরা যেন চিন্তা ভাবনা করে নিজের ক্যারিয়ারটা সাজায়।বাংলাদেশের ইতিহাসে কেউ কি শুনেছে কোন যুগ্ম সচিব বা পুলিশ কমিশনার সাহেব তো অনেক দূরের কথা উনাদের বাড়ির দারোয়ারকে কেউ গালি কিংবা মারার সাহস দেখিয়েছে? কিন্তু প্রতিদিন ডাক্তার পেটাচ্ছে।কেউ কি তোমার জন্য কিছু করেছে?সারাজীবন মানুষের চিকিৎসা করলা আর মানুষ তোমার মাথা পাটাই মেরে ফেললো,এই মাথায় যদি মেডিকেল টা না ডুকাও মাথা টা অন্তত বাঁচবে।মাথা ভর্তি জ্ঞানের চেয়ে একটা চেয়ার/ইউনিফর্মের দাম এদেশে অনেক অনেক বেশি।
 
★ কয়েকজন বলেছে, যে ডাক্তার ফরেন,এডমিন,পুলিশে যাবে সেও একরকম হবে ডাক্তারদের জন্য কিছু করবে না।
 
-আমি মনে করি যে যেখানে যাবে তার কাজ করুক।তারা ডাক্তারদের জন্য কিছু করার দরকার নাই।তারা তো এই বঞ্চনা থেকে বাঁচলো।একজন সিনিয়র হিসেবে আমি চাই,আমার জুনিয়ররা নিজে অন্তত বেটার থাকুক।
 
★দেখো যারা বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা,ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছে তারা কিন্তু সেসব দেশে সুনামের সাথে ডাক্তারী করছে।
তার মানে আমাদের ছেলেরা পটেনশিয়াল।আচ্ছা ভাবোতে ডা.তাসবীর স্যার যদি আমেরিকায় না গিয়ে বাংলাদেশে থাকতেন,উনাকে কোন মিডিয়া ডাকতো?কেউ চিনতো?
উনাদের লাইফস্টাইল দেখো একেকজন গাড়ি,বাড়ি,নিরাপত্তা বাদ দিলাম..বিশাল বিশাল ম্যানশন,ফার্ম,লেইক পর্যন্ত কিনছেন।আবার তারা দু'হাতে দেশের জন্য দিচ্ছেন।১ লাখ ডলার এক্স-সিএমসিয়ানরা চট্টগ্রাম মেডিকেলকে দিয়েছে।
 
বাংলাদেশ থাকলে আমি সিওর উনারা হয় নবম গ্রেডের মেডিকেল অফিসার,ভাগ্য খুব বেশি ভালো হলে এসিসট্যান্ট বা এসোসিয়েট প্রফেসর হতেন।
সুতরাং এখনই ঠিক করো কি করবা?
 

Monday, January 4, 2021

কোভিড থেকে বেঁচে ডিসচার্জ নিলেই কি ভোগান্তি শেষ? লং কোভিড কী জিনিস?


১. বাংলাদেশে অনেকেই কোভিডকে পাত্তা দিচ্ছে না এই ভেবে যে মৃত্যুর হার তো দেশে কম। যার আপন পরিবারের উপর এসে লাগছে না তারা ছাড়া সবাই খুব নিশ্চিন্তে আছে। কিন্তু অনেকের সাথে কথা বলে, নিজের ও নিজের রোগীদের অভিজ্ঞতা থেকে জানি যে আসলেই অনেক ভোগান্তি আছে লং টার্ম।
 
২. যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগ্যান স্টেইটে একটা স্টাডি করেছে দেখার জন্যে যে কোভিড হওয়ার ৬০ দিন পর রোগীরা কেমন আছে দেখার জন্যে। তাদের প্রশ্ন একটাই - দুই মাস পর রোগীর হইলটা কি? 
 
৩. প্রথমত তাদের মৃত্যুর হার অনেক বেশি - ১৬৪৮ রোগীর মধ্যে ৩৯৮ জন হাসপাতালেই মারা যায়। তাছাড়া ১২৫০ জন যাদের ডিসচার্জ করা হয় তাদের মধ্যেও ৮৪ জন ডিসচার্জের পর মারা যায়। তাদের মৃত্যুর হার ২৯.২% মোট!! যারা বেঁচে যায় তাদের মধ্যে আরো ১৮৯ জন কে (১৫.১%) পুনোরায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লাগে দুই মাসের মধ্যেই। 
 
৪. ডিসচার্জ করা রোগীদের মধ্যে ৪৮৮ জনকে ফোনে ইন্টার্ভিউ করা হয়। ৩৩% এর এখনো কাশি, শ্বাসকষ্ট রয়ে গিয়েছে। ২৩% রোগী এখনো সিঁড়ি বেয়ে উঠতে গেলে প্রচন্ড শ্বাসকষ্টে ভোগে। ১৯% রোগীর উপসর্গে কোন উন্নতি হয় নাই, বরং অনেকের অবনতিও হয়েছে। 
 
৫. আরো ভয়ংকর হলো যে ৪৯% বলেছে যে তাদের মানসিকভাবে দুর্বল লাগছে, কষ্ট হচ্ছে। প্রায় ১০% রোগীর জীবনের সব সেভিংস শেষ। ৭% বলছে যে তারা হিসেব করে খাবার কেনা, র্যাশান করে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে কারণ টাকার টানাটানি।
 
৬. যারা আগে চাকরি করত তাদের ৪০% এখনো কাজে ফিরে যেতে পারেনাই। যারা পেরেছে তাদের ২৬% সময় কমিয়ে কাজ করছে কারণ ফুল ডিউটি করার মত অবস্থা নাই।
 
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে হয়তোবা একটু কম হবে সংখ্যাগুলা যেহেতু আমাদের পপুলেশান অনেক ইয়াং। কিন্তু যাদের হয়েছে বা পরিবারের কারো সিভিয়ার কোভিড হয়েছে তাদের প্রশ্ন করে দেখুন। 
 
আর্থিকভাবে, মানসিকভাবে কী যন্ত্রণা গিয়েছে তাদের। পরিবারের একজনের আইসিইউতে ভর্তি হলেই ঋনে চলে যেতে হয়েছে অনেকের। যখন যা ইচ্ছা তাই করছেন, ভেবে দেখবেন যে একবার আসুস্থ হলে, বা পরিবারের কেউ হলে কী দুঃখ যে করা লাগবে।