Thursday, October 17, 2019

আপনি আপনার সম্ভাবনাময় সন্তানটিকে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে কেনো এই অনিশ্চয়তার মুখোমুখি দাঁড় করাতে চাচ্ছেন?

যারা যারা সরকারি মেডিকেলে টিকেছেন, তাদেরকে অভিনন্দন, যারা যারা ভর্তি পরীক্ষায় ৪০এর কম মার্ক পেয়েছেন, তাদেরকে উদ্দেশ্য করে কিছু লেখার নাই। মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, আনিসুল হকরা পাবলিক পরীক্ষার রেজাল্টের পরের দিন যে কলামখানা লিখে থাকেন, সেটা পড়ে নিবেন।

এই লেখাটা মূলত প্রায় পঞ্চাশ হাজার শিক্ষার্থীদের জন্য, যারা সরকারি মেডিকেলে টিকেন নাই কিন্তু "পাশ করেছেন" এবং বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মালিক পক্ষের সম্ভাব্য মুরগী হওয়ার অপেক্ষায় আছেন, তাদের অভিভাবকদের জন্য।

আপনার সন্তানকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি করানোর আগে আরো একবার চিন্তা করুন।

গতবছর (২০১৮-১৯) বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য সরকার ২২ লাখ ৮০ হাজার টাকা ঠিক করে দিয়েছিলো। এই বছর এই অংকটা আরো বাড়বে। যারা বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়েন, তারা জানেন আইসবার্গের ভাসমান অংশের মতোই এই টাকা হচ্ছে দৃশ্যমান অংশ। এই টাকা দিয়ে কেউই বেসরকারি মেডিকেল থেকে পাশ করে বের হতে পারবেন না। এর বাইরেও নানা ধরণের ফী যুক্ত হয়ে এই খরচ ত্রিশ লাখ পেরোবে।
এখন প্রিয় অভিভাবক, এই ত্রিশ লাখ টাকা দিয়ে আপনার সন্তানের নামের পাশে ডাক্তার লেখার মোহ থেকে বের হয়ে একবার শান্তভাবে চিন্তা করুন।কেনো আপনি তাকে ডাক্তার বানাতে চান। যাবতীয় আদর্শিক বাকোয়াজ আর ছোটবেলার রচনার কথা ভুলে আপনি যদি সৎ হন, আপনি স্বীকার করবেন, স্রেফ স্বচ্ছলতার জন্য, সম্মানের জন্য। এদেশে কালকে যদি কেউ আবিষ্কার করে পালি কিংবা সংস্কৃত পড়ালে প্রচুর টাকা আর সম্মান মিলবে, দলে দলেতো বাচ্চাদের তাই পড়াবেন। সম্মানের কথাতো আপেক্ষিক বিষয়। তারপরও অনলাইনে ডাক্তারদের নিয়ে যে মুখরোচক আলোচনা হয় আর আপনার কাছের ডাক্তার আত্মীয়কে শুনিয়ে শুনিয়ে অধিকাংশ ডাক্তারের নামের আগে যেভাবে কসাই বসিয়ে দেন, তাতে সম্মান কতটুকু আছে, অনুমান করে নিন। বাকী বিষয়টাতে আসি।

আপনার আদরের সন্তানকে এতো টাকা খরচ করিয়ে পড়ানোর পরে তার বেতন কতো হবে জানেন?
ছয় বছর আগে যেসব অভিভাবক ঠিক ত্রিশ লাখ টাকা দিয়ে তাদের সন্তানকে ডাক্তারি পড়তে পাঠিয়েছিলেন, বেসরকারি হাসপাতালে তাদের এখন বেতন ১৫ হাজার থেকে ২৫ হাজারের মধ্যে। তিন বছর আগে আমি যখন বের হই, তখনো এই বেতন ছিলো, এখনো এই বেতন। পৃথিবীতে অনেক পরিবর্তন ঘটবে, রোনালদো তার আরো কয়েকটা গার্লফ্রেন্ড পরিবর্তন করবে, হয়তো কোনো এক বৃহস্পতিবার সাউথ আফ্রিকা সেমিফাইনাল জিতে ফাইনালে পৌছে যাবে, হয়তো বাংলাদেশ ক্রিকেট দল থেকে খালেদ মাহমুদ সুজন বিদায় নিয়ে চলে যাবে। সম্ভব, সবই সম্ভব। শুধু একটা ব্যাপার আমি জানি অসম্ভব। সেটা হচ্ছে, বাংলাদেশে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ডিউটি ডাক্তার নামক যে অসম্মানের মধ্য দিয়ে তরুণ চিকিৎসকরা যাচ্ছে, তার কোনো পরিবর্তন হবেনা। আগামী তিন বছর পরেও এদের বেতনের তেমন কোনো হেরফের হবেনা।

সরকারি মেডিকেলে আমরা যারা পড়ে এসেছি, তাদের জন্য এটা মেনে নেওয়াটা সহজ। কারণ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা ছেলে যে টাকা দিয়ে পড়াশোনা করেছে, আমিও মোটামুটি একই খরচে পড়াশোনা করেছি। কষ্টটুকুর কথা আপাতত ভুলে গেলাম। কষ্ট ভুলে যাওয়া অনেক সহজ। কিন্তু মধ্যবিত্ত ( আসলে বেসরকারি মেডিকেলে পড়ুয়া অধিকাংশ ছাত্রই মধ্যবিত্ত পরিবার থেকেই আসে) পরিবারের ত্রিশ লাখ টাকা খরচ করে পড়া চিকিৎসক তরুণের সামনে যে অনিশ্চয়তা পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকে, সেটা উপেক্ষা করা সহজ নয়।
বেসরকারি মেডিকেলে পড়তে থাকা এবং পড়া শেষ করে ডাক্তার হয়ে বের হয়ে পোস্ট গ্রাজুয়েশনের দীর্ঘ বন্ধুর পথে খাবি খেতে থাকা অনেক তরুণের সাথে আমার পরিচয়। এদের মধ্যে অনেকেই প্রচন্ড মেধাবী। অনেকেই কষ্ট করে তাদের এই প্যাশান এবং ভালবাসার পেশাটায় সফলতার জায়গা তৈরি করে নিচ্ছেন। কিন্তু অধিকাংশই পারছেন না। প্রচুর ধার দেনা করে ফ্রি ভিসায় মধ্যপ্রাচ্য গিয়ে গ্রামের তরুণটি দেখে তার চাকরি নেই। যে দালালের হাত ধরে সে বিদেশে এসেছে, সে পকেটে কয়েক দিনার ঢুকিয়ে দিয়ে সটকে পড়েছে। বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পরিবারের সঞ্চিত এবং কষ্টার্জিত ত্রিশ লাখ টাকা খরচ করে যে তরুণ চিকিৎসকটি বের হয়, তার চোখে আমি মধ্যপ্রাচ্যে দালালের হাতে প্রতারণার শিকার হওয়া তরুণটির চাইতেও আমি বেশি অনিশ্চয়তা এবং হতাশা খেলা করতে দেখেছি। দালালটি অন্তত পকেটে কিছু টাকা গুজে দিয়ে যায়। বেসরকারি মেডিকেলের মালিকপক্ষকে আমি এর চেয়েও অমানবিক হতে দেখেছি।

ডা. জাফরুল্লাহ সাহেবের গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজ থেকে যে তরুণটি ২৫ লাখ টাকা খরচ করে ডাক্তার হয়েছে, তাকে ইন্টার্নির সময় দেয়া হয় সাত হাজার টাকা। ইন্টার্নি শেষে লেকচারারদের বেতন বিশ হাজারের উপরে উঠেনা।
এই রাষ্ট্রের আরো কতো চিকিৎসক দরকার, কেনো এই দুরবস্থা চিকিৎসকদের, কিভাবে ব্যাংএর ছাতার মতো এতো বেসরকারি ( এবং কিছু সরকারিও) মেডিকেল গড়ে উঠে- এই প্রশ্নগুলো অনেক বিতর্ক তৈরি করবে, মন্ত্রীমশায় অনেক অনেক চোখ রাংগাবেন, লিজেন্ডারি অধ্যাপকরা সরকারি মেডিকেলে থাকা অবস্থায় বেসরকারি মেডিকেল থেকে পড়ে সরকারি মেডিকেলে অবৈতনিক ট্রেনিং করতে তরুণটির দিকে অবজ্ঞার দৃষ্টিতে তাকাবেন, চুড়ান্ত অপমান করবেন এবং অবসর গ্রহণ করার পর একটা বেসরকারি মেডিকেলে প্রিন্সিপ্যাল হয়ে বসবেন।
এসব বড় বড় বিষয় নিয়ে আসলে আমার আপনার কিছুই করার নাই। বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে চুড়ান্তভাবে গণবিরোধীরুপে গড়ে তোলা এবং মেডিকেল সেক্টরকে চুড়ান্তভাবে ধ্বংসের মুখোমুখি দাড় করিয়ে দেয়ার জন্য নীতিনির্ধারকদের আপাতত অভিশাপ দিই।

কিন্তু আপনি আপনার সম্ভাবনাময় সন্তানটিকে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে কেনো এই অনিশ্চয়তার মুখোমুখি দাঁড় করাতে চাচ্ছেন?

নচিকেতা নীলাঞ্জনার দু:খে দাম দিয়ে যন্ত্রণা কিনে। আপনি ত্রিশ থেকে চল্লিশ লাখ টাকা খরচ করে সন্তানের জন্য এ কোন যন্ত্রনা কিনতে চান

> কালেক্টেড পোস্ট <

দৃষ্টিভঙ্গি হোক, সিম্পিল এমবিবিএস সিম্পিল জীবন ধারণের জন্য যথেষ্ট।

বাংলাদেশে একজন ডাক্তারের প্রতিষ্ঠিত হতে ৪০ বছর বয়স হয়ে যায় বা সিম্পল এমবিবিএস এর দাম নাই। এই কথা গুলো  কমিউনিটির মধ্যে একটি প্রচলিত ব্যাপার বা ধারণা। বাংলাদেশের অধিকাংশ বাবা মা চায় তাদের সন্তান ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হোক।

 কারণ হিসেবে ধরে নেয়া হয় যে, ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হলে কর্ম করে বা রোজগার করে চলতে পারবে তার সন্তান। কেউই তার সন্তানকে মানবতার সেবার জন্য ডাক্তার করার মানসিকতা পোষণ করে না। মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত পরিবারের একজন সন্তান যখন ডাক্তারী পড়াশোনা করে তখন তার পরিবার এই আশা পোষণ করে যে, তার সন্তান ডাক্তার হয়ে গেলে পরিবারের দায়িত্ব নেবে বা সহযোগিতা করবে।

কিন্তু পাশ করার পর মাসিক পনের হাজার টাকা ইন্টার্ন ডিউটি করে পরবর্তীতে পোস্ট গ্রাজুয়েশন নামক মরিচিকা আর ক্যারিয়ার বিল্ড করার জন্যে শুরু হয়ে যায় ছোটাছুটি। মাঝে মাঝে বিসিএস নামক ভিন্ন মরিচিকার পিছনে ছোটা। এভাবে করেই একজন ডাক্তার তার জীবনের ১০ থেকে ১২ বছর (খুব ভাগ্যবান হলে) খরচ করে ফেলে। এই সময়টাতে একজন ডাক্তার এবং তার পরিবার কি পরিমাণ কষ্টের মাঝে থাকে তা ভুক্তভোগি এবং আল্লাহ ছাড়া কেউ বোঝে না। এখানে আমার প্রশ্ন আসছে, এত কিছু করে কি লাভ?

একজন ছাত্রের সবকিছু ঠিকভাবে চললে ইন্টার্ন শেষ করতে করতে বয়স ২৫ বা ২৬ হয়ে যায়। এরপর একজন ডাক্তারের জীবনে সবচেয়ে বিভীষিকাময় সময়ের শুরু হয়। এত এত মত আর এত পথ!

 অবধারিতভাবেই সব পথই অত্যন্ত সংকীর্ণ। গুটি কয়েকজনই সে রাস্তা দিয়ে যেতে পারে। তখন বিসিএস নাকি পোস্ট গ্রাজুয়েশন? পরিবারের সাপোর্ট নাকি বিয়ে? চেম্বার নাকি পিজিটি বা অনারারি? খ্যাপ নাকি চাকরি? কি করা উচিত বা তার জন্য কোনটা বেস্ট অপশন তা বুঝে ওঠা সম্ভব নয়।

এই ঘুর্ণিঝড়ে পরে একজন ডাক্তারের আর কিছু না হোক কনফিডেন্স শহীদ হয়ে যায়। লাইব্রেরীতে মাথা গুজে পড়তে পড়তে কুয়ার ব্যাঙ এর মত পৃথিবীর অপার সম্ভাবনাগুলোকে দেখাই হয়না। অথচ এমনটা কি হবার কথা ছিল? 

 এমবিবিএস তো একটা প্রফেশনাল ডিগ্রি। এখানে লব্ধ জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে নিজের আয় রোজগার করাটাই তো প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল। একে যদি বিসিএস বা এফসিপিএস অথবা এমএস/এমডি পরীক্ষা দেয়ার যোগ্যতা অর্জনের ডিগ্রী হিসেবে ধরা হয় তবে তা বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়। ক্যারিয়ার বিল্ড বা নামের পাশে কয়েকটি অক্ষর বসানোর জন্য যে কষ্ট আর ত্যাগ একজন ডাক্তার বর্তমান সময়ে করে যাচ্ছে তার যৌক্তিকতা আমার কাছে ধোয়াশাপূর্ণ। 
যদি টাকা আয় করা এই ত্যাগের উদ্দেশ্য হয় তবে আমার প্রশ্ন হচ্ছে, যদি পাশ করার পরপরই জিপি প্র্যাকটিস (উপজেলা লেভেলে বা ইউনিয়ন) শুরু করা যেত তবে একজন ডাক্তারের প্রথম কিছুদিন (ধরে নিলাম ২ বছর) কষ্ট হলেও একসময় কিন্তু একটা সুনাম বা পরিচিতি তৈরি হয়ে যাবে। ২৮ বছর বয়সের মধ্যেই একজন ডাক্তার মাসিক ৫০ হাজার টাকা (সর্বনিম্ন ধরে নিয়ে) আয় করতে পারবে সহজেই। যা অন্য কনভেনশনাল বিষয়ে পড়ুয়া পেশার মানুষের কাছে সম্ভব নয়। এটাই কি আমাদের বাবা মায়ের স্বপ্ন ছিল না? যেখানে অন্য পেশাজীবিদের চাকরি ছাড়া আয়ের পথ নেই সেখানে আমার সন্তান বিনা চাকরিতে স্বাবলম্বি হবে। প্রত্যাশা বাস্তবতার মাঝে কত ফারাক!

অথবা সম্মান এবং পজিশন এই ত্যাগের কারণ হয় তবে আমার প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশে ১৭ কোটি মানুষের মাঝে আপনি একজন ডাক্তার হয়েছেন এটাই কি বিশাল সম্মানের নয়? মেডিকেলে ভর্তি থেকে এখন পর্যন্ত যেকোন মানুষের কাছে যে সম্মান পেয়েছি এর থেকে আর কি চাই? যারা ডাক্তার হয়েও সম্মান বা পজিশন নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগেন তাদের ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স রয়েছে বলে আমার ধারণা। আর কোন ডিগ্রি বা পজিশন আপনার সম্মানের গ্যারান্টি হতে পারেনা বা অসম্মানের প্রতিরক্ষা হতে পারেনা।

এর বাইরে আসে, নিজের ক্যারিয়ার বিল্ড করা, দক্ষতা অর্জন করা, উন্নত চিকিৎসা দেয়ার যোগ্যতা অর্জন করা। যদি এ উদ্দেশ্য হয়েই থাকে, তবে এর জন্য যে পরিশ্রম বা ত্যাগ সেটা আপনাকে করতেই হবে। তাতে আপনার ৪০ বছর বয়স হোক বা ৫০ বছর সেই বোঝা আপনি নিজেই নিজের কাধে নিয়েছেন। এখানে সিস্টেমের দোষ ধরবেন কেন? ক্যাপাসিটি বিল্ড তো প্রফেসর হবার পরেও করতে হয়। এফসিপিএস ট্রেনিং ৫ বছর হয়েছে কিন্তু এমবিবিএস এর পর এফসিপিএস তো বাধ্যতামূলক কিছু নয়।

আমরা ডাক্তাররা পেশেন্টের রিস্ক বেনিফিট রেশিও ঠিক করে তার চিকিৎসা দেই বা সিদ্ধান্ত নেই। অথচ নিজেদের জীবনের রিস্ক বেনেফিট রেশিওর হিসেবটা মেলাতে আমরা খুবই আনাড়ি। একজন ডাক্তার তার জীবনের প্রথম ৪০-৪৫ বছর যে ত্যাগ করে চলে ক্যারিয়ার বিল্ড করার জন্য তার থেকে অল্পে তুষ্ট থেকে প্রথম থেকেই যদি পেশাগত জীবনে পদার্পন করত তবে লাভ ক্ষতির হিসেবটা আকাশ পাতাল পার্থক্য হত? যদি হয়েও থাকে তবুও মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান হয়ে তরুণ বয়স থেকেই পরিবারকে সাপোর্ট দেয়া অথবা সঠিক সময়ে জীবনের বাকি ধাপগুলো (বিয়ে, সন্তান সন্ততি) সম্পন্ন করা বা পারিবারিক প্রশান্তির কথা হিসেব করলে শেষ বয়সে এসে ঢাকা শহরে দুইটা ফ্ল্যাট আর ব্যাংকে কোটি টাকা বা বিশাল প্রতিপত্তি আর সম্মানের মাঝে খুব বেশি পার্থক্য চোখে পড়ে না।

তাই ক্যারিয়ার বিল্ড/পোস্ট গ্রাজুয়েশন নামক “ম্যাস হিস্টেরিয়া”র মাঝে নিমজ্জিত আমাদের ডাক্তার সোসাইটির মাঝে দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো খুবই প্রয়োজন। একদিন এক বাসের পিছনে সহজ ভাষায় লেখা কথাটি বারবার মনে পড়ে “দৃষ্টিভঙ্গি বদলান, জীবন বদলে যাবে”। 

তাই দৃষ্টিভঙ্গি হোক, সিম্পিল এমবিবিএস সিম্পিল জীবন ধারণের জন্য যথেষ্ট।

(এফসিপিএস এর ট্রেনিং ৫ বছর করা হয়েছে এর নিন্দা জানাই। এর ফলে বাংলাদেশের সাস্থ্যসেবা বা এর মান এর কি ক্ষতি হবে সেটা অন্য বিতর্ক। সেটি এর সাথে সম্পর্কিত নয়)

 লেখক নাহিদ জামান
মুল লেখার লিঙ্ক এখানে

Tuesday, June 4, 2019

আসুন লজ্জা পাই .

এক প্রখ্যাত সাংবাদিক ডাক্তারদের উদ্দেশ্যে লিখেছেন “ এই দেশের নিরানব্বই শতাংশ মানুষ আপনাদের উপর আস্থা রাখেনা। গিয়ে দেখুন তারা আপনাদের সম্পর্কে কি বলে? প্রতিবছর এদেশের হাজার হাজার মানুষ পাশের দেশে চলে যাচ্ছে চিকিৎসার জন্য। আপনাদের তবুও লজ্জা হয়না।”

- প্রিয় সাংবাদিক মহাশয়, আমাদের লজ্জিত করে আপনাদের তথ্য-উপাত্তহীন নিরেট বচন ।
এদেশের নিরানব্বই শতাংশ রোগী আমাদের উপর আস্থা না রাখলে তো আমাদের ডাক্তারদের মাছি মারতে হতো। আমাদের সরকারি হাসপাতালের মেঝেগুলো খা খা করতো।
বিকেলে প্রাইভেট প্র্যাক্টিস করে যে ডাক্তারেরা, তাদের না খেয়ে থাকতে হতো।

তবু স্বীকার করি এ দেশের অনেক মানুষ পাশের দেশে চিকিৎসা করতে যায়। এবং এও সত্য পাশের দেশ থেকে ফিরে এসে আবার আমাদের কাছেই চিকিৎসা নেয়। এবং স্বেচ্ছায় খুশী হয়েই নেয়। ফিরে এসে তারা এও বলে “গেছিলাম, মনে করছিলাম ..... “। অর্থাৎ তাদের মোহভংগও হয়।
এখন এর জন্য আমাদের লজ্জা পাওয়া উচিত কিনা সেই সিদ্ধান্তে যাওয়ার আগে আমাদের কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর জানতে হবে।

হে প্রিয় ইলেকট্রনিক সাংবাদিক, এই দেশের অধিকাংশ মানুষই দেশী চ্যানেল দেখেনা। ইন্ডিয়ান সিরিয়াল দেখে। আপনারা কি লজ্জা পেয়ে আপনাদের চ্যানেল গুলি বন্ধ করে দিয়েছেন? নাকি আমরা কখনো বলেছি আপনাদের লজ্জা পাওয়া উচিত? আমরা তো বরং আমাদের বৌ ঝি দেরই গাল মন্দ করেছি। আপনারাও সভা ডেকে বলেছেন ভারতীয় চ্যানেল দেখানো বন্ধ হোক।

আমরা তো কোনদিন বলিনি আইন করে এদেশের রোগীদের ভারত যাওয়া বন্ধ করা হোক।




 এই দেশের অধিকাংশ তরুনী ইন্ডিয়ান ড্রেস কেনে হাজার হাজার টাকা দিয়ে। দেশের সবচেয়ে বড় শপিং মলগুলি বোঝাই হয়ে থাকে ইন্ডিয়ান শাড়ি,পাঞ্জাবি, থ্রি পিসে। কই আপনারাতো এদেশের বস্ত্র ব্যবসায়ী, ফ্যাশন ডিজাইনারদের লজ্জা পেতে বলেন না? আপনারা বরং দোষ দেন এই দেশের মানুষের রুচি বোধের। দোষ দেন দেশাত্ববোধের।

এই দেশের মানুষ শুধু হেলথ টুরিজমই করেনা। তারা হানিমুনও করে বিদেশে। যে জীবনে কুয়াকাটাই দেখেনি, নীল গিরি দেখেনি সে বেড়াতে যায় পাতায়া বীচে। কি বলবেন একে? আমাদের প্রকৃতি ব্যর্থ? প্রকৃতিকে লজ্জা পেতে বলবেন? আমাদের দেশে নিরাপত্তা নেই এই কি অজুহাত?

ভাই সাহেব, এই দেশের এক শ্রেনীর মানুষ আছে যারা এই দেশে থেকেও এই দেশে নেই। তারা এই দেশের খাবার পছন্দ করেনা, এই দেশের এডুকেশন পছন্দ করেনা, কারিকুলাম পছন্দ করেনা (ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে)। তারা এই দেশ নিয়ে কোন স্বপ্নও দেখেনা। আমি এদের অনেককেই দেখেছি তাদের নির্দিষ্ট কোন লক্ষ্য নেই। তাদের একমাত্র লক্ষ্য হলো তারা বিদেশে ‘সেটেল্ড’ হতে চায়।
আমরা কোন যোগ্যতায় এদের চিকিৎসা দিয়ে আকৃষ্ট করবো?
আস্থা বা বিশ্বাসের কথা বলছেন?
এদেশের কেউ কাউকে বিশ্বাস করেনা।
এদেশের মানুষের নোবেল লরিয়েটে বিশ্বাস নেই, এভারেস্ট বিজয়ে আস্থা নেই।
আমরা ডাক্তাররা কিভাবে সবাইকে হঠাৎ করে আস্থাশীল করবো?

বুকে হাত দিয়ে বলেন, আপনাদের কেউ বিশ্বাস করে? সোশ্যাল মিডিয়াতে চোখ রাখলে দেখবেন। এক মতিঝিলে ৫ মে হেফাজতের সমাবেশে কতজন মানুষ মারা গেল সেই তথ্যটাই কেউ ঠিক করে বিশ্বাস করাতে পারছেন না কাউকে। না সরকার না মিডিয়া। এদেশের মানুষ বরং বিশ্বাস করে চাদে ‘হঠাৎ দেখা সাঈদি’ কে।

হোমিওপ্যাথির মত অপবিজ্ঞান বছরের পর বছর চলে কোন কমপ্লেইন ছাড়া। আপনারাও মহা সমারোহে তাদের বিজ্ঞাপন প্রচার করেন। সর্পরাজ, জ্যোতিষ রত্নের সবচেয়ে বড় প্রচারযন্ত্রও আপনারাই। আপনারাই বলুন কার লজ্জা পাওয়া উচিত?

আপনাদের বলবার কেউ নেই। সেটাই সমস্যা। কারণ এই সমাজের ক্ষমতার দন্ডটি আপনাদের হাতে। প্রচার যন্ত্রটি আপনাদের হাতে, স্বয়ং নেপোলিয়ন যেটাকে ভয় পেত। আপনাদের গায়ে পোশাক নেই। আর আমাদেরও দুর্ভাগ্য ‘রাজার পোশাক ‘ গল্পের সেই বালকটির দেখা আমরা পাইনি যে আপনাদের বলবে “রাজা মশাই আপনি তো ন্যাংটা”।
এই দেশটা সবার আগে। দয়া করে এই কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করুন।

আর কয়েকটি তথ্য কষ্ট করে জোগাড় করুন।
১. বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর হার কত আর জাপানের শিশু মৃত্যুর হার কত?
২. বাংলাদেশের মাতৃমৃত্যুর হার কত? আপনাদের প্রিয় পাশের দেশের মাতৃমৃত্যুর হার কত?
৩. বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু দুই দশক আগে কত ছিল আর এখন কত?
৪. বাংলাদেশে সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রনের বর্তমান অবস্থা কি? পাশের দেশের কি অবস্থা?
৫. মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল অর্জনে আমাদের স্বাস্থ্য খাতের অবদান কি আর অন্যান্য খাতের অবদান কি?
প্রশ্ন বেশী হয়ে যাচ্ছে?

আজ এ পর্যন্তই থাক।

তবে সব প্রশ্নের আগে আপনাদের জানতে হবে একটি দেশের স্বাস্থ্য খাতের অবস্থা নিরুপন করার মাপকাঠি বা প্যারামিটার গুলি কি?
এটা না জানলে উপরের প্রশ্নগুলিতেই আর যাওয়া হবেনা। আপনাদের নির্ভর করতে হবে হসপিটাল ভাংচুর করা রোগীর স্বজনের বক্তব্যের উপর।
আফসোস শুধু এই একটি ক্ষেত্রেই আপনারা আক্রমনকারী সন্ত্রাসীদেরই বিশ্বাস করেন। তারাই আপনাদের রেফারেন্স। তারাই আপনাদের শিরোনাম।
২৭.০৪.২০১৪-collected post from gulzar hossain ujjal

স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রধান সমস্যা - আস্থার অভাব?


------- ---+++------
আমাদের দেশের ডাক্তাদের উপর রোগিদের আস্থা নেই বা কম। সরকারি অথবা বেসরকারি হাসপাতালের ক্ষেত্রেও এটি আরো বেশিরকমভাবে খাটে। এর পেছনে নানান কারণ আছে, এবং একটি বড় সময় ধরে এই সব কারণ জমতে জমতে এখন পাহাড় হয়ে গেছে।
ডিগ্রি দেখেই এখন কোন ডাক্তারের প্রতি আস্থা রাখা যাচ্ছে না, উনি ভাল কিনা সেটা আলাদা করে জেনে নিতে হয়। আবার অনেক সময় রোগিরা কয়েকজন ডাক্তারকে একসাথে দেখান, পরে মতামত মিলিয়ে যাচাই করেন কোনটা ভাল চিকিতসা।
এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার উপায় কি?

 গঠন মুলক আলোচনা কাম্য।

বিস্তারিত আলোচনা এখানে ++++

Tuesday, April 30, 2019

ছবি ২ টি দেখুন



যে দেশে মুততে আর ডাক্তার দেখাইতে সমান টাকা (৫ টাকা) লাগে, সে দেশে থাকতে নেই। পিছু টান না থাকলে দেশ ছেড়ে চলে যা।
বাণীতে ঃ কোন একজন শিক্ষক।
ছবি ও স্ট্যাটাস ঃ সংগৃহীত


Sunday, April 28, 2019

খুব ভালোই বলেছেন মাশরাফি সাহেব

ক্যাপ্টেন, বলেন এখন আপনারে আমরা কি করবো??

" চাকরী করলে নিয়ম মেনে করবেন , বলেন আপনাকে এখন কি করবো ?"

খুব ভালোই বলেছেন মাশরাফি সাহেব...১৫ বছর ধরে বল করেন , আজ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক কোন টুর্নামেন্টের কোন কাপ ঘরে আনতে পারেন নি , বিশ্বকাপ তো অনেক পরের ব্যাপার ...২-৩ বছর পর হঠাৎ করে কোন ম্যাচ জিতলে আমরা সবাই লাফিয়ে উঠি ...বেশ বেশ বেশ সাবাস বাংলাদেশ

বলেন তো ,
--কোন দিন মাঠে একজন কম নিয়ে খেলেছেন ?? প্রতিটা হাসপাতালে অর্ধেকের কম জনবল নিয়ে আমরা প্রতিদিন খেলছি ...কোন নিয়মে ??

--একজন ডাক্তার মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগদান করে ,আবার মেডিকেল অফিসার হিসেবে অবসরে যান ...কোন নিয়মে??

-- উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সে কোন ইমারজেনসি মেডিকেল অফিসার পোস্ট নাই , তবু কেন আমরা ২৪ ঘণ্টা ইমারজেনসি চালু রাখি ...কোন নিয়মে??

--একজন অফিসার যোগদান করলে ৭ দিন পর্যন্ত প্রিপারেটরি লিভ পান , সে লিভ নিতে এমপি সাহেব কে বলে যেতে হবে ...কোন নিয়মে??

--মাশরাফি সাহেব , জীবনে দেশে বিদেশে মাগনা কোন ম্যাচ খেলেছেন ?? গিয়ে দেখেন কত ডাক্তার বছরের পর বছর মাগনা খাটছে ... কোন নিয়মে??

-- এত বড় জেলা সদর হাসপাতাল একজন কনসালটেন্টের পোস্ট কেন ? এত কষ্ট আর সেক্রিফাইসের পর আমরা যখন ডিগ্রী করি , তখন বছরের পর বছর (আমার মাত্র ৩ বছর ) পার হয় প্রমোশন হয় না ...কোন নিয়মে??

--একটি রোগী কে বাঁচাতে ডাক্তার যখন নিজের শরীর থেকে রক্ত দেয় , নির্ঘুম রাত পার করে ...আপনার মতো হর্তাকর্তারা কোন দিন বলেছেন , ডাক্তার সাহেব , থ্যাংক উ ?? বলেন নি... আমরা তা আশাও করিনা ...তাই বলে , সাংবাদিক ডেকে সস্তা জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য ডাক্তার কে অপমান করবেন ...কোন নিয়মে??

-- এমপি সাহেব , জীবনে তো বহু ম্যাচ হেরেছেন... লাখ লাখ টাকা পাওয়ার পরও ম্যাচ হারেন... কোনদিন পাবলিক আপনাদের গাঁয়ে হাত তুলেছে?? আপনাদের ক্রীড়া ভবন ভাংচুর করেছে ?? তবে , রোগী মারা গেলে আমাদের গাঁয়ে হাত তোলা হয় ...হাসপাতাল ভাঙচুর করা হয় ...কোন নিয়মে??

বলেন মাশরাফি সাহেব , আপনাকে আমরা এখন কি করবো ??
DR.Riad Sharif 
ANAESTHESIOLOGIST
 SYLHET MAG OSMANI MEDICAL COLLEGE HOSPITAL


পুনশ্চ ;

নড়াইল সদর হাসপাতালের চিকিৎসকদের ২৭ টি পদের ২০ টি পদই শূন্য!মাত্র ৭টি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৭ জন চিকিৎসক কে! এই ৭ জনের মধ্যে ১ জন সেই অভিযুক্ত সার্জারি কনসালটেন্ট। তার দ্রুত ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
এরপর ওই ২০টি পদ শূন্য রাখার শাস্তির ব্যবস্থা হোক।
এটা তো স্রেফ প্রতারণা সেই এলাকার জনগনের সাথে!
একটা সদর হাসপাতাল অথচ সেখানে মেডিসিনের ডাক্তার নাই,হার্টের ডাক্তার নাই,চক্ষু ডাক্তার নাই,নাক কান গলার ডাক্তার নাই,রেডিওলোজীর ডাক্তার নাই! এত নাই নাই এর মাঝে আবার সবচেয়ে চমকপ্রদ হলো অজ্ঞানের ডাক্তার নাই!!
তো মশাই অজ্ঞানের ডাক্তারই যদি না থাকে ওই সার্জন হাসপাতালে ৩০ বছর টানা ২৪ ঘন্টা করে থাকলেই বা লাভটা কি?
সে কি ঘুম পাড়ানী মাসি মিসি গান গেয়ে রোগী ঘুম পাড়িয়ে অপারেশন করবে??
মশাই খুব তো বললেন যদি কোন রোগীর সার্জারির প্রয়োজন হয় তো রোগী কি বসে থাকবে?
শুধু বসে না ওখানে সার্জারির জন্য বসে থাকতে থাকতে শুয়ে যাবে তারপর একেবারে উপরেই চলে যাবে!
আপনার হাসপাতালে তো সার্জারিই হয় না! আর হয় ও নি কোনদিন।আপনি কি জানেন?হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির সভাপতি হয়ে তো বসে আছেন!
ওই সার্জন ও বুঝেছে ওখানে তার কোন অপারেশনই করতে হবে না তাই ফাঁকিবাজি করেই দিন কাটাচ্ছে।
এখন আপনি বলেন নড়াইলবাসী আপনারে কি করবে?আপনি তো তাদের জনপ্রতিনিধি! হাসপাতালের এই সমস্যা নিয়ে কোনদিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলাপ করেছেন?তার কাছে ডাক্তার চেয়েছেন?নাকি সারা মাস দেশে বিদেশে ব্যাট-বল খেলে এসে নড়াইলে যে দুই একটা দিন থেকেছেন তাতে জনগনের সামনে স্ট্যান্টবাজি করে পার করেছেন?
না আপনিই বলেন এই ধোকা এই প্রতারণার জন্য নড়াইলবাসী আপনাকে কি করবে?বলেন আপনি কি করবে তারা আপনাকে?ফাইজলামি করেন?
ওই সার্জনের বিচার হোক,পরে আপনার টা হোক।
ব্যাট-বল অনেক খেলছেন এখন থোন।জনপ্রতিনিধি হইছেন।এই কাজে মনোনিবেশ করেন।
সেই ১৯৮৬ থেকে এইদেশে ক্রিকেট চলতেছে।আজ ৩৩ বছর পেরিয়ে গেলো বহুদেশীয় তো বাকি থাক একটা ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্ট পর্যন্ত জিততে পারলেন না।সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বেচে থাকলে আপনাদের এই ৩৩ বছর নিয়ে 'কেউ কথা রাখেনি-২' লিখে ফেলতে পারতেন!
আর কত?কোন নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশই তাদের ক্রিকেট কে এতটা পৃষ্ঠপোষকতা করেনি যতটা আপনারা পেয়েছেন এই দেশে!
কাড়ি কাড়ি টাকা উড়ানো হইছে! কথা রেখেছেন?ওহ কথা দেওয়ার সাহসটাই তো পাননি কখনো!
ব্যাট বল খেলে মাসে মাসে যে লাখ লাখ টাকা নেন ওই টাকা দিয়ে নড়াইল সদর হাসপাতালে বাকি পোষ্টগুলোতে ডাক্তার নিয়োগ করে তাদের বেতন দেওয়া যাবে।তাহলে আর স্ট্যান্টবাজি করতে ঝটিকা সফরে হাসপাতালে যেয়ে হই-হাঙ্গামা করে সাঙ্গপাঙ্গদের দিয়ে তা ভিডিও করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করা লাগবে না।

শজিমেক

Wednesday, April 10, 2019

চিকিৎসার জন্য খরচ করতে বাংলাদেশের মানুষের এত অনিহা কেন?!

 🤔
কারণ:
মাস শেষে বেতন পাবার পর সেই টাকায় কি কি হবে তা মানুষ ঠিক করে রাখে। অনেক সময় বেতন পাবার আগেই ঠিক করে রাখে।😌
টাকা জমায় টিভি খাট ফ্রিজ ফ্ল্যাট কিনবে বলে।😊
কেউ এজন্য টাকা জমায় না বা কিছু টাকা আলাদা করেও রাখে না যে হুট করে তার/পরিবারের কারো অসুখ হতে পারে। 🙄
বড় অসুখের কথা বাদ দিলাম। ছোট বা মাঝারি অসুখের জন্য তো একটা প্রিপারেশান রাখা উচিৎ।😇
কিন্তু তা কেউ করে না। আমরা ডাক্তাররাই হয়ত এ নিয়ে ভাবি না। ফলে হুট করে চিকিৎসার কিছু টাকা লাগলে ফ্রিজ বা ফ্ল্যাট কেনার টাকায় টান পরে যায়। তখন মনটা খারাপ হয়ে যায়। মনে হয় এত কষ্ট করে টাকা জমালাম, সেটা এভাবে খরচ হয়ে যাচ্ছে!😭
ফলাফল স্বরূপ ডাক্তার দেখাতে গেলেই মানুষ টাকার দিকে তাকায়। টাকা দিতে কষ্ট হয়। 😨

এক কথায় যাপিত জীবনের সকল ইভেন্টের জন্য টাকা বাজেট থাকলেও চিকিৎসার জন্য কোন বাজেট থাকে না। তাই এ পারপাসে খরচ করতে গেলে মনে হয় এ খরচটা অতিরিক্ত হয়ে গেল।😢
এজন্যই বীমা ব্যবস্থা বা অন্য কোন বিকল্প ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ। এজন্য সবার আলাদা একাউন্টও থাকতে পারে।যেখানে ভবিষ্যৎ চিকিৎসার জন্য আলাদাভাবে কিছু টাকা জমা থাকবে। তাহলে এই খাতে ব্যায়কে আর অতিরিক্ত মনে হবে না। ভালভাবে ট্রিটমেন্ট করা সহজ হয়ে যাবে।😌
পেশেন্ট কমপ্লায়েন্স অটোমেটিকালি বেড়ে যাবে।
ডা. আবুল আলা
এসএসএমসি, ৪০ তম ব্যাচ

>> কালেক্টেড পোস্ট <<

Thursday, February 7, 2019

স্বজনদের এসব অপ-তৎপরতার কারনে ক্ষতি হয় রোগীর

বাংলাদেশে সরকারী -বেসরকারী কোন হাসপাতাল এমনকি প্রাইভেট চেম্বারেও ডাক্তারদের কোন স্বাধীনতা নাই
 কিন্ত
এ দেশের রোগী ও রোগীর স্বজনদের স্বাধীনতা অসীম সীমাহীন।
 যখন খুশী যেখানে খুশী সেখানে তারা যাচ্ছে অসুস্থ স্বজনকে নিয়ে।
এক ডাক্তারের চিকিৎসা নিচ্ছে,
কিছুদিন পরে সে ডাক্তার ও ডাক্তারের চিকৎসা আর পছন্দ হচ্ছে না,
 রোগীকে নিয়ে যাচ্ছে আরেক ডাক্তারের কাছে।
 সেখানেও স্থির থাকছে না, কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার ডাক্তার বদল করছে।
 রোগীর হাসপাতালে ভর্তি থাকা দরকার, ভর্তি থাকছে, চিকৎসা চলছে কিন্ত রোগীর স্বজনদের তা পছন্দ হচ্ছে না। কখনও DORB দিয়ে কখনো না দিয়েই রোগীকে নিয়ে যাচ্ছে আরেক হাসপাতালে,
 দুই চার দিন পরে সে হাসপাতাল থেকেও রোগীকে নিয়ে আরেক হাসপাতালে।
 স্বজনদের এসব অপ-তৎপরতার কারনে ক্ষতি হয় রোগীর কিন্ত দোষ হয় ডাক্তারদের আর বদনাম হয় হাসপাতালের।

রোগীর স্বজনদের এতো স্বাধীনতা থাকা উচিৎ নয় কারন তা ক্ষতিকর এবং ক্ষতিকর বলেই তা খর্ব করা দরকার। অনেক দেশেই নাকি এই স্বাধীনতা নাই।

মুল পোস্ট এখানে 

Saturday, January 26, 2019

রাস্তায় লাগানো কলিকাতা হারবাল এর পোষ্টার গুলো পড়া বাদ দেন

-"সর্বনাশা ব্যাপার স্যার। আমার বউ টা নষ্টা।"
-জিজ্ঞেস করলাম, "কেন কি হয়েছে ভাই? এ কথা কেন?"

-সে জবাব দিলো, "বউ এর সাথে সেক্স করেছি জানুয়ারীর এক তারিখ। ফেব্রুয়ারীর ১ তারিখ শুনি সে প্রেগনেন্ট। আলট্রাসনো টেস্ট করালাম। রিপোর্ট কইলো বাচ্চার বয়স নাকি দেড়মাস!! এখন আপনি বলেন স্যার, বিদেশ থেকে এসে ওর সাথে থাকলামই ১ মাস ধরে, বাচ্চার বয়স দেড় মাস কেমনে হয়?? নিশ্চই ঘটনা আমি আসার আগে ঘটাইসে সে। আমি বিদেশে কষ্ট করে টেকা কামাইসি আর সে দেশে রং করে বেড়াইসে। রং করার রেজাল্ট এখন তার পেটে। দুই যায়গায় আল্ট্রাসনো করাইসি। রিপোর্ট একই। এদিকে বউ উল্টা আমার উপর রাগ দেখায়। কয় আমি নাকি তারে ভুল বুঝতেসি। কিন্তু আমি তো বেকুব না স্যার। রিপোর্ট তো আমি ই পড়তে পারতেসি। স্পষ্ট লেখা ৬ সপ্তাহের বাচ্চা পেটে। রিপোর্ট দেইখা ওরে পারলে তখনি তালাক দেই। পরে বন্ধুবান্ধব বুঝাইলো যে গোপনে মিটমাট করে ফেলা ভালো। বউ একটা ভুল হয়তো করে ফেলসে। এখন স্যার আমি এত উদার না। আগে ওর পেটের জারজ সন্তান টা নষ্ট করি, তারপর সিদ্ধান্ত নিবো। এখন আপনি বাচ্চা নষ্ট করার উপায় টা বলেন স্যার"

এক নিশ্বাসে লোকটা এতগুলো কথা বলে থামলো।
আমি বললাম, "মিয়া, আপনে একটা বেকুব"
লোকটা থতমত খেয়ে বললো, "কি কইলেন স্যার? আমি বেকুব? ক্যান?"
আমি তাকে ব্যাখ্যা দিলাম,
"পেটের বাচ্চার বয়স যেদিন থেকে আপনি সেক্স করেছেন, সেদিন থেকে হিসেব করা হয় না। যেদিন সেক্স করেছেন তার আগে প্রায় দু সপ্তাহ যোগ হবে। ডাক্তারী হিসেবে সেই মাসে আপনার বউ এর মাসিক যেদিন হয়েছিলো সেদিন থেকে বাচ্চার বয়স গুনা শুরু হয়। কবে সেক্স করেছেন সেটা ম্যাটার করে না।সুতরাং আপনার বাচ্চার বয়স ৬ সপ্তাহ হিসাব ঠিকই আছে। শুধু শুধু বউটারে সন্দেহ করেছেন"
সে লোক বলে, "কি বলেন স্যার? এটা কেমনে হয়? ওর পেটে বাচ্চা দিলামই তো এক মাস হয়। দেড় মাস হবে কেন?"
আমি হাসতে হাতসে বললাম,
"মিয়া আপনি তার ভিতর বাচ্চা দেওয়ার কে??? আপনি বাচ্চার অর্ধেক দিয়েছেন। বাকি অর্ধেক তার পেটে গত ১৪ দিন ধরে তৈরী হচ্ছিলো। এগুলো ডাক্তারী হিসাব। আপনার বুঝা লাগবে না আর। যথেষ্ট বুঝেছেন। এখন যান, বউ এর কাছে যান। ক্ষমা চান। তার সাথে ভালো করেননি"
আরো অনেক্ষন বুঝালাম।
সেই লোক কিছু অবিশ্বাস নিয়েই আমার কাছ থেকে বিদেয় নিলো। পরে সে আরো অনেক ডাক্তারকেই জিজ্ঞেস করেছে। সবাই আমার মতই জবাব দিয়েছে। কিন্তু মানুষের সন্দেহভরা মন বিচিত্র জিনিস। সে ঐ বাচ্চা শেষ পর্যন্ত এবরশন ই করেছে। তবে বউ কে তালাক দেয় নাই।
:::::
যে কোন বিষয়ে "#সাধারন_হিসাব" আর "#মেডিকেলীয়_হিসেব" কখনো এক হয় না। আপনি হয়তো কমন সেন্স দিয়ে মনে করবেন ঘটনা এমন। আসলে ঘটনা টা ছিলো অন্যরকম।
কিছু উদাহরন দিয়ে সাধারন হিসেব আর মেডিকেলীয় হিসেবের পার্থক্য দেখাই,
#উদাহরন-১
❏ ঘটনাঃ
রোগীর প্রেশার অনেক। ২২০/১৪০।
❏ সাধারন হিসাবঃ
"ডাক্তার সাব, এক ঘন্টা হয় রোগী আনলাম এখনো প্রেশার কমিয়ে স্বাভাবিক করতেসেন না ক্যান?? এখনো ১২০/৮০ তে না নামাতে পারলেন না। আপনার চিকিৎসা তো ভালো না।"
❏ মেডিকেলীয় হিসাবঃ
একজন তীব্র হাই প্রেশারের রোগীর প্রেশার কখনোই হঠাৎ করে নরমালে আনতে নেই। ঐ ব্যাক্তিকে ঔষধ দিয়ে যদি সাথে সাথে প্রেশার নরমালে আনার চেষ্টা করা হয়, তাইলে উনি স্ট্রোক করতে পারেন। ধাপে ধাপে এক দু দিন সময় নিয়ে প্রেশার নরমালে আনতে হবে।
#উদাহরন-২
❏ ঘটনাঃ
রোগীর ডাইরিয়া। ১৫-২০ বার হয়ছে।
❏ সাধারন হিসাবঃ
হাসপাতালে নিবো যেন ডাক্তার সায়েবেরা এক্ষন ডাইরিয়া বন্ধ করে দেন। ব্রেক কষাইতে হবে। নাইলে সর্বনাশ!!
"ও ডাক্তার সাব, রোগী হাসপাতালে আনলাম ৬ ঘন্টা, এখনো পাতলা পায়খানা বন্ধ করলেন না। খালি স্যালাইন পুশ দিতেসেন লিটারের পর লিটার। ঘটনা কি?"
❏ মেডিকেলীয় হিসাবঃ
ডাইরিয়া বন্ধ ধীরে সুস্থে হবে। আগে রোগীর শরীর থেকে যে ২-৩ লিটার পানি বেরীয়ে গেছে সেটা ভরতে হবে। প্রয়োজনীয় এন্টিবায়োটিকের সাহাজ্যে ডাইরিয়া ধীরে ধীরে সময় নিয়ে থামুক, নো প্রবলেম। কিন্তু শরীরে পানি যেন ঠিক থাকে। নইলে সর্বনাশ। কিডনী ফেল হবে।
#উদাহরন-৩
❏ ঘটনাঃ
মোটা হওয়া।
❏ সাধারন হিসাবঃ
মোটা হবার আসল কারন হচ্ছে তেল চর্বী জাতীয় খাবার। মুরগীর মাংস গরুর মাংস। যেমন এক ভদ্রমহিলার ভাষ্য,
"ও ডাক্তার সাব!!!, আমি তো কিছুই খাই না। মাছ মাংস সব বাদ দিসি। তাও দিনে দিনে মোটা হইতেসি ক্যামনে? রহস্য কি??"
❏ মেডিকেলীয় হিসাবঃ
মানুষের মোটা হবার পিছনে আসল কারন ভাত, চিনি, মিষ্টি, চকলেট.. ইত্যাদি অর্থাৎ শর্করা জাতীয় খাবার বেশী খাওয়া এবং বসে বসে শারিরীক পরিশ্রম ছাড়া দিন পার করা। চর্বি জাতীয় খাবারই আসল কারন না।
তো উপরের ভদ্রমহিলা সকালে চা তে তিন কাপ চিনি খান, দুপুরে ভরপেট ভাত খেয়ে একটা ভাতঘুম দেন। এগুলো যে মোটা হবার কারন, তা তিনি জানেন ই না। তাই রহস্য বুঝছেন না।
#উদাহরন-৪
❏ ঘটনাঃ
স্বপ্নদোষ..
❏ সাধারন হিসাবঃ
স্বপ্নদোষ হলে শরীরের বিরাট ক্ষতি হয়। শরীর থেকে সব শক্তি বেরীয়ে যায়। দূর্বল হয়ে যেতে হয়। শুকিয়ে যেতে হয়।
❏ মেডিকেলীয় হিসাবঃ
রাস্তায় লাগানো কলিকাতা হারবাল এর পোষ্টার গুলো পড়া বাদ দেন ভাই। পায়ে ধরি।
স্বপ্নদোষ ন্যাচারাল ঘটনা। এতে কোন শারিরীক ক্ষতি হবার কথা না। ওসব পোষ্টার পড়ে পড়ে মনের ভিতর ভয় ঢুকে থাকে সবার। স্বপ্নদোষ হলেই ভাবে কি না কি হয়ে গেল।
মানসিক দূর্বলতা থেকে শরীর ও দূর্বল হয়। মন দূর্বল হয়।
#উদাহরন-৫
❏ ঘটনাঃ
হাত বা পা ভাঙ্গা/মচকানো।
❏ সাধারন হিসাবঃ
হাতে পায়ে মচকেছে বা ভেঙেছে মানে হলো সেখানে মালিশ দিলে ভালো। গরম সেক দিলে আরো ভালো। আরাম হবে।
❏ মেডিকেলীয় হিসাবঃ
হঠাৎ হাতে পায়ে আঘাত পেয়ে ভাংলে বা মচকালে কখনোই মালিশ বা গরম সেক দিতে হয় না।
দরকারে নীচে বালিশ দিয়ে হাত বা পা উচু করে রাখতে হয় এবং ওখানে ঠান্ডা সেক দিতে হয়।
গরম সেক বা মালিশ দিলে নিমিষের মাঝে যায়গাটা ডাবল ফুলে উঠবে। ব্যথা বাড়বে। রক্ত জমাট বাড়বে। এমনকি ফুলে গিয়ে রক্তনালী ও ব্লক হতে পারে।
:::
মূল কথা হলো, কোন মেডিকেল ইস্যু তে কমন সেন্স খাটিয়ে কোন ছোট বড় সিদ্ধান্ত নেবার আগে একবার অন্তত পরিচিত ডাক্তার কে জিজ্ঞাসা করে নেওয়ার চেষ্টা করবেন।
কারন এসব ক্ষেত্রে শতকরা ৮০ ভাগ ক্ষেত্রেই কমন সেন্স ধোঁকা দেয়।😥
courtesy : Dr. baapon shahriar parvez