Tuesday, June 4, 2019

আসুন লজ্জা পাই .

এক প্রখ্যাত সাংবাদিক ডাক্তারদের উদ্দেশ্যে লিখেছেন “ এই দেশের নিরানব্বই শতাংশ মানুষ আপনাদের উপর আস্থা রাখেনা। গিয়ে দেখুন তারা আপনাদের সম্পর্কে কি বলে? প্রতিবছর এদেশের হাজার হাজার মানুষ পাশের দেশে চলে যাচ্ছে চিকিৎসার জন্য। আপনাদের তবুও লজ্জা হয়না।”

- প্রিয় সাংবাদিক মহাশয়, আমাদের লজ্জিত করে আপনাদের তথ্য-উপাত্তহীন নিরেট বচন ।
এদেশের নিরানব্বই শতাংশ রোগী আমাদের উপর আস্থা না রাখলে তো আমাদের ডাক্তারদের মাছি মারতে হতো। আমাদের সরকারি হাসপাতালের মেঝেগুলো খা খা করতো।
বিকেলে প্রাইভেট প্র্যাক্টিস করে যে ডাক্তারেরা, তাদের না খেয়ে থাকতে হতো।

তবু স্বীকার করি এ দেশের অনেক মানুষ পাশের দেশে চিকিৎসা করতে যায়। এবং এও সত্য পাশের দেশ থেকে ফিরে এসে আবার আমাদের কাছেই চিকিৎসা নেয়। এবং স্বেচ্ছায় খুশী হয়েই নেয়। ফিরে এসে তারা এও বলে “গেছিলাম, মনে করছিলাম ..... “। অর্থাৎ তাদের মোহভংগও হয়।
এখন এর জন্য আমাদের লজ্জা পাওয়া উচিত কিনা সেই সিদ্ধান্তে যাওয়ার আগে আমাদের কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর জানতে হবে।

হে প্রিয় ইলেকট্রনিক সাংবাদিক, এই দেশের অধিকাংশ মানুষই দেশী চ্যানেল দেখেনা। ইন্ডিয়ান সিরিয়াল দেখে। আপনারা কি লজ্জা পেয়ে আপনাদের চ্যানেল গুলি বন্ধ করে দিয়েছেন? নাকি আমরা কখনো বলেছি আপনাদের লজ্জা পাওয়া উচিত? আমরা তো বরং আমাদের বৌ ঝি দেরই গাল মন্দ করেছি। আপনারাও সভা ডেকে বলেছেন ভারতীয় চ্যানেল দেখানো বন্ধ হোক।

আমরা তো কোনদিন বলিনি আইন করে এদেশের রোগীদের ভারত যাওয়া বন্ধ করা হোক।




 এই দেশের অধিকাংশ তরুনী ইন্ডিয়ান ড্রেস কেনে হাজার হাজার টাকা দিয়ে। দেশের সবচেয়ে বড় শপিং মলগুলি বোঝাই হয়ে থাকে ইন্ডিয়ান শাড়ি,পাঞ্জাবি, থ্রি পিসে। কই আপনারাতো এদেশের বস্ত্র ব্যবসায়ী, ফ্যাশন ডিজাইনারদের লজ্জা পেতে বলেন না? আপনারা বরং দোষ দেন এই দেশের মানুষের রুচি বোধের। দোষ দেন দেশাত্ববোধের।

এই দেশের মানুষ শুধু হেলথ টুরিজমই করেনা। তারা হানিমুনও করে বিদেশে। যে জীবনে কুয়াকাটাই দেখেনি, নীল গিরি দেখেনি সে বেড়াতে যায় পাতায়া বীচে। কি বলবেন একে? আমাদের প্রকৃতি ব্যর্থ? প্রকৃতিকে লজ্জা পেতে বলবেন? আমাদের দেশে নিরাপত্তা নেই এই কি অজুহাত?

ভাই সাহেব, এই দেশের এক শ্রেনীর মানুষ আছে যারা এই দেশে থেকেও এই দেশে নেই। তারা এই দেশের খাবার পছন্দ করেনা, এই দেশের এডুকেশন পছন্দ করেনা, কারিকুলাম পছন্দ করেনা (ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে)। তারা এই দেশ নিয়ে কোন স্বপ্নও দেখেনা। আমি এদের অনেককেই দেখেছি তাদের নির্দিষ্ট কোন লক্ষ্য নেই। তাদের একমাত্র লক্ষ্য হলো তারা বিদেশে ‘সেটেল্ড’ হতে চায়।
আমরা কোন যোগ্যতায় এদের চিকিৎসা দিয়ে আকৃষ্ট করবো?
আস্থা বা বিশ্বাসের কথা বলছেন?
এদেশের কেউ কাউকে বিশ্বাস করেনা।
এদেশের মানুষের নোবেল লরিয়েটে বিশ্বাস নেই, এভারেস্ট বিজয়ে আস্থা নেই।
আমরা ডাক্তাররা কিভাবে সবাইকে হঠাৎ করে আস্থাশীল করবো?

বুকে হাত দিয়ে বলেন, আপনাদের কেউ বিশ্বাস করে? সোশ্যাল মিডিয়াতে চোখ রাখলে দেখবেন। এক মতিঝিলে ৫ মে হেফাজতের সমাবেশে কতজন মানুষ মারা গেল সেই তথ্যটাই কেউ ঠিক করে বিশ্বাস করাতে পারছেন না কাউকে। না সরকার না মিডিয়া। এদেশের মানুষ বরং বিশ্বাস করে চাদে ‘হঠাৎ দেখা সাঈদি’ কে।

হোমিওপ্যাথির মত অপবিজ্ঞান বছরের পর বছর চলে কোন কমপ্লেইন ছাড়া। আপনারাও মহা সমারোহে তাদের বিজ্ঞাপন প্রচার করেন। সর্পরাজ, জ্যোতিষ রত্নের সবচেয়ে বড় প্রচারযন্ত্রও আপনারাই। আপনারাই বলুন কার লজ্জা পাওয়া উচিত?

আপনাদের বলবার কেউ নেই। সেটাই সমস্যা। কারণ এই সমাজের ক্ষমতার দন্ডটি আপনাদের হাতে। প্রচার যন্ত্রটি আপনাদের হাতে, স্বয়ং নেপোলিয়ন যেটাকে ভয় পেত। আপনাদের গায়ে পোশাক নেই। আর আমাদেরও দুর্ভাগ্য ‘রাজার পোশাক ‘ গল্পের সেই বালকটির দেখা আমরা পাইনি যে আপনাদের বলবে “রাজা মশাই আপনি তো ন্যাংটা”।
এই দেশটা সবার আগে। দয়া করে এই কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করুন।

আর কয়েকটি তথ্য কষ্ট করে জোগাড় করুন।
১. বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর হার কত আর জাপানের শিশু মৃত্যুর হার কত?
২. বাংলাদেশের মাতৃমৃত্যুর হার কত? আপনাদের প্রিয় পাশের দেশের মাতৃমৃত্যুর হার কত?
৩. বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু দুই দশক আগে কত ছিল আর এখন কত?
৪. বাংলাদেশে সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রনের বর্তমান অবস্থা কি? পাশের দেশের কি অবস্থা?
৫. মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল অর্জনে আমাদের স্বাস্থ্য খাতের অবদান কি আর অন্যান্য খাতের অবদান কি?
প্রশ্ন বেশী হয়ে যাচ্ছে?

আজ এ পর্যন্তই থাক।

তবে সব প্রশ্নের আগে আপনাদের জানতে হবে একটি দেশের স্বাস্থ্য খাতের অবস্থা নিরুপন করার মাপকাঠি বা প্যারামিটার গুলি কি?
এটা না জানলে উপরের প্রশ্নগুলিতেই আর যাওয়া হবেনা। আপনাদের নির্ভর করতে হবে হসপিটাল ভাংচুর করা রোগীর স্বজনের বক্তব্যের উপর।
আফসোস শুধু এই একটি ক্ষেত্রেই আপনারা আক্রমনকারী সন্ত্রাসীদেরই বিশ্বাস করেন। তারাই আপনাদের রেফারেন্স। তারাই আপনাদের শিরোনাম।
২৭.০৪.২০১৪-collected post from gulzar hossain ujjal

3 comments:

  1. I am no longer sure where you're getting your information, however
    good topic. I must spend a while learning much more or working out more.
    Thanks for magnificent information I used to be looking for
    this information for my mission.

    ReplyDelete
  2. Wow that was odd. I just wrote an extremely long comment but after I clicked submit my comment didn't show
    up. Grrrr... well I'm not writing all that over again. Anyhow, just wanted to
    say wonderful blog!

    ReplyDelete
  3. I was recommended this website by my cousin. I'm not sure
    whether this post is written by him as no one else know such detailed about my trouble.
    You are wonderful! Thanks!

    ReplyDelete