Monday, December 14, 2015

সম্প্রতি চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুজন শিক্ষানবিশ চিকিৎসকের আত্মহত্যা...

Posted by মোহিব নীরব on Tuesday, 8 January 2013

বরের অবশ্যই ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে... আর কনের হতে হবে ফর্সা, লম্বা আর শিক্ষিত...

"বরের অবশ্যই ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে... আর কনের হতে হবে ফর্সা, লম্বা আর শিক্ষিত... "
বাবা মা তাঁদের ছেলে/মেয়েদের বিয়ের জন্য এমন পাত্র-পাত্রী খোঁজেন... কিন্তু সেই পাত্র বা পাত্রীটি মানুষ হিসাবে কেমন সেটা গৌণ বিষয়... এবং চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য কেমন খুব সহজে যাচাই করারও উপায় নাই...
বর/কনে বাছাইয়ের ক্ষেত্রে নতুন মাপকাঠি যুক্ত করা উচিত... "ছেলে/মেয়ে কি নিয়মিত রক্তদান করে?" grin emoticon
যদি বর/কনে নিয়মিত রক্তদান করে, তাহলে একাধারে অনেক কিছুই জানা হয়ে যাচ্ছে হবু বর বা কনের বিষয়ে...
এতে জানা যাচ্ছে, মানুষটিঃ
১) পরোপকারী (অপরিচিত মানুষদের যিনি রক্তদান করে উপকার করছেন, তিনি অবশ্যই উনার স্বামী/স্ত্রী এর প্রতিও পরোপকারী হবেন)
২) দায়িত্ব এড়িয়ে যায় না অর্থাৎ দায়িত্ববান (নিয়মিত রক্তদান আমাদের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত... এই দায়িত্ব যিনি নিয়মিত পালন করতে পারছেন, সুতরাং নিজের স্বামী/স্ত্রী প্রতিও দায়িত্বশীল হবেন আশা করা যায়)
৩) নির্ভরযোগ্য (কথা দিয়ে কথা রাখার মানুষ তিনি... রোগীকে রক্তদান করার কথা দিয়ে কথা পালন করছেন... এই মানুষটি অবশ্যই নির্ভরযোগ্য)
৪) আত্মত্যাগী এবং উদার (নিজের মূল্যবান সময়, যাতায়াতের কষ্ট, যাতায়াত খরচ, মোবাইলের খরচ, সূচ ফোটানোর ব্যাথা, নিজের শরীরের মহামূল্যবান রক্ত দান করা সহজ ব্যাপার না... একজন সত্যিকারের আত্মত্যাগী এবং উদার মানুষের পক্ষেই সম্ভব)
৫) সময়নিষ্ট (রোগীর প্রয়োজনীয় মুহূর্তে যথাসময়ে রক্তদানে উপস্থিত থাকা)
৬) ধৈর্যশীল ও সহিঞ্চুতার অধিকারী (হাজারো ঝামেলা উপেক্ষা করে ধৈর্যের সাথে নিয়মিত রক্তদান করা...)
৭) সহানুভূতিশীল (রোগী তথা মানুষের কষ্ট অনুভব করার ক্ষমতা এদের রয়েছে)
৮) সুনাগরিক (রক্তদানের মাধ্যমে সমাজ এবং দেশের প্রতি দায়িত্ব পালন করছে, সুতরাং তিনি একজন সুনাগরিক)
বাহ, মানুষটি নিয়মিত রক্তদান করছেন কিনা এটা জানার মাধ্যমেই তো মানুষটির সকল মানবিক গুন জানা হয়ে যাচ্ছে grin emoticon
-----
পাশাপাশি নিশ্চয়তা রয়েছেঃ
৯) মাদকাসক্ত নয় (মাদকাসক্ত ব্যাক্তি হতে রক্ত গ্রহন করা হয় না...সুতরাং নিয়মিত রক্তদাতা মাদকাসক্ত নন... মাদক বিহীন নির্ভেজাল স্বামী/স্ত্রী পাবেন grin emoticon )
১০) শারীরিক সুস্থতা (রক্তদানের পূর্বে রক্তদাতার রক্তের ৫ ধরনের পরীক্ষা করা হয়ঃ এইডস, হেপাটাইটিস-বি ও সি, সিফিলিস, ম্যালেরিয়া... নিয়মিত রক্তদাতা এসব রোগ হতে মুক্ত...)
------
ভবিষ্যতের শশুর/শাশুরী/বর/কনে,
এখন থেকে ডাক্তার/ইঞ্জিনিয়ার না খুঁজে "একজন নিয়মিত রক্তদাতা" খুজুন... বিয়ের বর/কনে খোঁজার নতুন ক্রাইটেরিয়া হিসাবে যুক্ত করুন 'রক্তদান' smile emoticon
---------------
আইডিয়াটা কিছুটা হাস্যকর হয়তো tongue emoticon কিন্তু এই ক্রাইটেরিয়া যুক্ত করতে পারলে রক্তদানের জন্য মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়বে

Saturday, December 12, 2015

এগুলো কখনো খবর হয় না।


খবরঃ বিনা পয়সায় মাসে অন্তত একটি মামলা লড়ুন- প্রধান বিচারপতি।

বেখবরঃ আমি আমার চিকিৎসক জীবনের মাত্র ২ বছরে কমপক্ষে ২০০ রোগীকে বিনা পয়সায় চিকিৎসা দিয়েছি। প্রত্যেক চিকিৎসকের জীবনে এগুলো নিয়মিত ঘটনা। কিন্তু এগুলো কখনো খবর হয় না। খবর হয় কোন চিকিৎসক তার প্রাপ্য ফি ছাড়া চিকিৎসা না দিলে।
Monir Zaman

Monday, November 16, 2015

'ওরে গাধা, তোরে গাধা বানাইতে কত খরচ হইছে জানিস?'

শোনা ঘটনা এবং ঘটনাটি সত্য।

বাংলাদেশের একজন তরুণ চিকিৎসক স্বাধীনতার পর উচ্চ শিক্ষার্থে ইংল্যান্ড গেলেন, অক্সফোর্ড থেকে ডি.ফিল (পিএইচডি সমতুল্য) করে দেশে ফিরলেন। যেকোনো মেডিকেল ডিগ্রি রাষ্ট্রীয় মেডিকেল কাউন্সিলের অনুমোদন ছাড়া লেখা নিষেধ, কাজেই সেই চিকিৎসক ভদ্রলোক বিএমডিসি'র শরণাপন্ন হলেন।

বিএমডিসি'র রেজিস্ট্রার সাহেব আবেদনপত্রের দিকে তাকিয়ে নাকের লোম ছিঁড়তে ছিঁড়তে বললেন, 'হুম.. এমবিবিএস.. ঠিক আছে.. তারপর এফসিপিএস.. ঠিক আছে.. কিন্তু এইটা আবার কি? ডি.ফিল? এ কোন প্রজাতির বস্তু?'

আবেদনকারী চিকিৎসক রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন, 'এটা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি'

রেজিস্ট্রার সাহেব ভাবলেশহীন গলায় বললেন,'দ্যাখো, এই ডিগ্রী তো আমাদের লিস্টে নাই। তুমি অক্সফোর্ড রে বলো আমাদের কাছে চিঠি পাঠাইতে, তোমার কপাল ভালো হইলে অনুমোদন পাইলেও পাইতে পারো।'

এই হচ্ছে আমাদের রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদের আলিশান ভাবমূর্তি।
অক্সফোর্ডও এখানে পাত্তা পায় না।

পাঠক ভাবতেই পারেন, এতো বহুকাল আগের কথা, এখন 'দিন বদলাইছে' না?

মাত্র কয়েক বছর আগের কথা।
জাপান থেকে পাবলিক হেলথে পিএইচডি করা এই ভদ্রলোক সেখানেই পোস্ট-ডক্টোরাল করলেন এবং জাপানেই শিক্ষকতা শুরু করলেন। বেশ কিছুদিন কাজ করে উনার মনে হল দেশের জন্য কিছু করা দরকার, বেতন শতভাগ কমে গেলেও পরোয়া নেই, মরলে দেশের মাটিতে মরাই ভালো। সীমাহীন আবেগের সাথে দেশে ফিরে বিজয়নগরে বিএমডিসি ভবনে গেলেন ডিগ্রি অনুমোদন নিতে। সেখানে তাকে জানানো হল, জাপানি ঐ বিশ্ববিদ্যালয় লিস্টে নাই, কাজেই ডিগ্রির কোন দাম নাই। তিনি আক্ষেপ করে বললেন, আপনারা যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি অনুমোদন দেন, আমার বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকার চেয়েও ওয়ার্ল্ড র‍্যাংকিং এ অনেক উপরে। বিএমডিসি জানালো, তাদের কিচ্ছু করার নাই। তবু তারা 'বিশিষ্টজনদের' কাছে এই ডিগ্রির মূল্যায়ন সম্বন্ধে জানতে চাইবে।

ঐ বিষয়ে মাস্টার্সধারী দুই বিশেষজ্ঞ বিএমডিসি'কে জানালেন, তারা এই ডিগ্রির কোন মানে খুঁজে পাচ্ছেন না। এই বিষয় বাংলাদেশে কেন দরকার, সেটাও তাদের বোধগম্য না। নিজেদের অজ্ঞতাকে বিজ্ঞের রায় ভেবে বিএমডিসি তাকে প্রত্যাখ্যান করল।

যে প্রোগ্রামে উনি জাপানে ক্লাস নিতেন, ঢাকায় সেই প্রোগ্রামে তিনি ছাত্র হিসেবে ঢুকলেন। সকল পরীক্ষায় ফার্স্ট হয়ে এমপিএইচ শেষ করলেন। এর মধ্যে আরেক ঘটনা ঘটল, নিজের দু:খের কথা তিনি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মানুষটিকে জানাতে গেলেন। অত্যন্ত ব্যস্ততার মধ্যেও সেই রাষ্ট্রনায়ক তাকে এক-দেড় মিনিট সময় দিলেন, সব শুনে সেই চিকিৎসককে একটা কথাই জিজ্ঞেস করলেন,'আপনারে দেশে আসতে কে বলছে?'

রাগে দু:খে ক্ষোভে সেই চিকিৎসক বেরিয়ে এলেন।
এর বেশ কিছুদিন পর এক রাতে তার মুখেই এই কাহিনী শুনলাম।

আজ পেলাম আরেক আনন্দের সংবাদ।
ইংল্যান্ডের এমআরসিপি নামক আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ডিগ্রিটাকে হাসতে হাসতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে বাংলাদেশ। এই ডিগ্রি নিয়ে এদেশে কেউ বিশেষজ্ঞ হতে পারবে না। কি হবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে? 'সিম্পল এমবিবিএস' কিংবা বিশেষজ্ঞ হলেও তাবেদারি করতে পারবে- এমন চিকিৎসক দরকার। যে চিকিৎসক নিজের নিরাপত্তা তো দূরের কথা, অপ্রতুল ঔষধ -সরঞ্জামাদি নিয়ে রোগীর অধিকার বিষয়েও কথা বলবে না। এমন চিকিৎসক দরকার, সে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে যাবার যোগ্যতা তো রাখবেই না, বরং বারবার এসে পা চাটবে আর বলবে, 'আমায় দয়া করে জুনিয়র কনসালটেন্ট বানিয়ে দিন, আমি লাগলে ছমাসে একবার এসে পা চেটে দেব, দয়া করুন প্রভু'। এমন চিকিৎসক দরকার, যে ইউএনও কিংবা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বারকে স্যার স্যার বলে লালা ঝরাবে। এমন চিকিৎসক রাষ্ট্র চায়, যে চিকিৎসক অনাহারে অর্ধাহারে পুঁথিগত বিদ্যা আওড়াবে এবং রাষ্ট্র-সমাজ বিনির্মাণে অংশ না নিয়ে ক্ষমতাবানের দাসত্ব করবে। আদর্শিক মহামানবের পৌরাণিক স্থাপত্যের মত ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তা নয়, চিকিৎসকের থাকতে হবে বারবার লজ্জা পেয়েও খাবার দিলে চেটেপুটে খাওয়ার সক্ষমতা। আইসিইউ'তে রোগীর লাইফ সাপোর্ট খুলে নেবার শেষ সিদ্ধান্ত যিনি নেন, সেই চিকিৎসক দুই দিন ভেবেও নিজের প্রতিনিধি ঠিক করতে পারেন না- এমন অথর্ব জড়বুদ্ধির প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড নির্বোধ নির্মাণ রাষ্ট্রের লক্ষ্য। সকালে বিকালে এই গাধার পাছায় লাথি দিয়ে রাষ্ট্র স্মরণ করিয়ে দিতে কসুর করবে না, 'ওরে গাধা, তোরে গাধা বানাইতে কত খরচ হইছে জানিস?' লাথি খেয়েও এ গাধাকে হাসতে হবে, এবং সবিনয়ে বলতে হবে, 'সবই প্রভুর দয়া'।

বিশ্বমানের চিকিৎসক ও শ্রেষ্ঠ নাগরিক হিসেবে জন্মানোর, বেড়ে উঠার এবং টিকে থাকার পথ আজ রুদ্ধ।
অবশ্য এই লাইনটাকে কেউ গাধার প্রলাপ হিসেবেও ধরতে পারেন।

দোষের কিছু নাই। 


collected

Monday, November 9, 2015

আপনি জাতি বদলে দিতে চান? নিজেকে দিয়েই শুরু করুন

সেদিন এক আপু ইনবক্স করলেন, "আমার ছেলেটা এখনই আমার কথা শুনেনা। ভবিষ্যতে যে এ কী হবে....."

সমস্যাটা সেই আপুর একার না। এই একই সমস্যা অনেকের। উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েরা বাবা মায়ের তোয়াক্কা করেনা। তাঁদের চোখে বাবা মা হচ্ছেন good for nothing, bad for everything. তাঁরা যে দামী ফ্ল্যাটে রাখছেন, দামী পোশাক দিচ্ছেন, দামী গাড়িতে চড়াচ্ছেন, ভাল স্কুলে পড়াচ্ছেন, এবং বছর বছর বিদেশ ট্রিপ - এসবই তাঁদের দায়িত্ব বলেই করছেন। সব বাবা মাই করেন, তাঁরা আবার বাড়তি কী করলেন?

বাবা মা এদের কোন নির্দেশ দিলে পালন করাতো বহুদূর, উল্টা ভেবে বসে বাবা মা তাঁদের শত্রু। তাঁর জীবন, সে যেভাবে ইচ্ছা যাপন করবে - সব ব্যপারে নাক গলাতে আসে কেন?

সন্তানের স্নেহের কাছে পরাজিত এই সমস্ত পিতামাতা কোনরকমে জ্বী হুজুরি করে চলতে চলতে একটা জীবন পার করে দেন। স্কুল পড়ুয়া ছেলের পকেট থেকে নগ্ন নারীর ছবি আবিষ্কার করেছেন, চেপে যান।
টিনেজ মেয়ের বালিশের নিচে গাঁজার পুরিয়া পাওয়া গেছে - চেপে যান। লোকে জানলে লজ্জায় মাথা নত হয়ে যাবে যে!
আবার উল্টোটাও ঘটে। এক বাবা সেদিন খুবই গর্বের সাথে বলছিলেন, "আমার বাচ্চারা আমাকে বাঘের মতন ভয় পায়। আমার সামনে দাড়িয়ে একটা কথা পর্যন্ত বলতে পারেনা। আমি যা বলি, সাথে সাথে পালন করে। সবই ট্রেনিং, বুঝলেন? মাইরের উপর কোন ওষুধ নাই। মুহুহাহাহা।"

বিরাট ইয়ে ছিড়ে ফেলেছেন আঙ্কেল। নিজের সন্তানই আপনার কাছে সহজ হতে পারেনা, এরচেয়ে বড় পরাজয় একজন পিতার জন্য আর কী হতে পারে? আপনি কী জানেন আপনার এই ছেলেই আপনার চোখের আড়ালে কী করে বেড়ায়? শুনলে এই মুহূর্তে হয় আপনি হার্ট অ্যাটাক করবেন, নাহলে ছেলেকে খুন।

স্কুলে থাকতে পিতামাতার প্রতি সন্তানের কর্তব্য পড়তে পড়তে আমরা মুখে ফ্যানা তুলে ফেলতাম। একবারও কোন বইয়ে আমি দেখিনি কোন রচনা লেখা, "সন্তানের প্রতি পিতামাতার কর্তব্য" সিলেবাসে থাকাতো বহুদূর। অথচ দুইটি রচনারই গুরুত্ব সমানে সমান। 'এই হাতে দে, ঐ হাতে নে'র মতন।

আপনার শিশু যখন আধো আধো বুলি শিখতে শুরু করেছে, আপনি তাঁর সামনেই নিজের গালাগালির ভোকাবুলারি ঝালাই করে নিচ্ছেন। সে যখন চোখ মেলে নিজের পৃথিবীর সাথে পরিচিত হচ্ছে, আপনি হাত খুলে নিজের বউকে পেটাচ্ছেন। কিংবা কোমরে শাড়ি গুঁজে স্বামীর সাথে ঝগড়া করছেন। এই ছেলে বাবা মাকে সম্মান করবে কিভাবে? আমার কথা বিশ্বাস না হলে সাইকিয়াট্রিস্টদের সাথে কথাবার্তা বলে কনফামর্ড হয়ে নিতে পারেন, যে শিশু দেখে তাঁর বাবা/মাকে তাঁর বাবা/মা সম্মান করছে না, সেই শিশুও সেই বাবা/মাকে সম্মান করে না। করবে কিভাবে? সেতো এটাই শিখেছে।

কারনে অকারনে মা এমন সব গা জ্বলুনি মার্কা কথাবার্তা বলে বাবাকে অপমান করে যে ব্যপারটা শিশুর মস্তিষ্কে একদম স্থায়ী হয়ে যায়। সে ধরেই নেয় এটাই স্বাভাবিক। সেও সুযোগ পেলে বাবাকে ধমক ধামক দিয়ে কথাবার্তা বলে। এর অর্থ এই না যে এ শিশু তাঁর বাবাকে ভালবাসে না। তবে বাবাকে অপমান করে কেন? সেটা সে মা থেকে শিখেছে।
আপনার স্বামীর/স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করতে হবে? আড়ালে গিয়ে করেন। দরজা বন্ধ করে করেন। বাচ্চাদের বাইরে খেলতে পাঠিয়ে দিয়ে করেন। তবু বাচ্চাদের সামনে উঁচু গলায় কথা বলবেন না। বাচ্চার সুস্থ মানসিক বিকাশের জন্যই এর প্রয়োজন আছে। এইটুকু স্যাক্রিফাইস আপনাকে করতেই হবে।

বাচ্চা জন্ম দিয়েই আপনার কর্ম সারা হয়নি - তাঁকে ঠিকমত বড় করাটাই আপনার দায়িত্ব। এটি অত্যন্ত জটিল পরীক্ষা।
আপনি কাজের ছেলে/মেয়েকে অকারনে মারধর করেন। দেখবেন আপনার ছেলেও একই কাজ করছে। বাপের বয়সী ড্রাইভার বা মায়ের বয়সী বুয়ার সাথে এমন আচরন করে যা "ভদ্রলোকের" সাথে করলে চড়িয়ে দাঁত ফেলে দিত। কোত্থেকে শিখেছে? আপনার কাছ থেকে।

যখনই দেখবেন আপনার শিশু বড়দের সম্মান করছেনা, সেটা ভদ্রলোক হোক কিংবা বাড়ির কাজের লোক, সাথে সাথে তাকে শুধরে দিন। আজকে যদি সে অন্যদের অসম্মান করতে শিখে, আগামীতে সে আপনাকেও অসম্মান করবে। বিশ্বাস না হলে পরিনতি নিজের চোখেই দেখবেন। টাইম টাইমকি বাত হ্যায়।

তাছাড়া প্রতিটা শিশুর শেখা উচিৎ যে যে যত বেশি উচ্চতায় পৌছে, তাঁকে তত বেশি বিনয়ী হতে হয়। সামাজিক উচ্চতা কিচ্ছু না, টাকা পয়সা হলে যে কেউ সেটা কিনতে পারে - মানুষের হৃদয়ে সম্মানটাই আসল কথা।

এইবারে আসি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে।

আপনি বাড়তি কিছু টাকা উপার্জনের জন্য দিনরাত খেটে মরেন। সুখের জন্য টাকার বিকল্প নেই, কথাটা অস্বীকার করা মূর্খামি হবে। তবে এও ঠিক, কিছু সুখ আপনি মাল্টি বিলিয়ন ডলার খরচ করেও কিনতে পারবেন না। পরিবারের সাথে কাটানো সুন্দর কিছু মুহূর্ত তাদের একটি। বাড়িয়ে বলছি না। ভেবে দেখুন, আপনি কোটি কোটি টাকা উপার্জন করছেন, নিজের সন্তানের সুখের জন্য। সেই সন্তানের সাথে কিছুক্ষণ কথা বললেই যে কেউ বুঝতে পারবে, আপনি তার কাছে মানি ম্যাশিন ছাড়া আর বেশি কিছু নন। আপনি মারা যাওয়ার পরে আপনিতো কবরে পরে থাকবেন, এইদিকে আপনার ছেলে মেয়েরা আপনার ফেলে যাওয়া সম্পত্তি নিয়ে কামড়াকামড়ি করে মরবে। তাহলে কী লাভটা হলো এত টাকা কামিয়ে? কোথায় ছিলেন আপনি যখন সে স্কুলে বুলিড হয়ে বাড়িতে এসে ফুপিয়ে কাঁদতো? ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দর মেয়েটিকে যখন সে অন্য চোখে দেখতে শুরু করেছে - সেই জাদুকরী মুহূর্তটিতে আপনি কোথায় ছিলেন? রেজাল্টের দিন যখন সে ভাল ফল করতে পারেনি, তখনই বা কোথায় ছিলেন আপনি? জন্মের পর থেকে বয়স দশ বার হওয়া পর্যন্ত সময়টাতে নিজের বাচ্চাকে কচলিয়ে, দুমড়িয়ে, মুচড়িয়ে যা আদর করার করে নিন। এই সময়ে আদর না করলে আর কখনই আদর করার সুযোগ পাবেন না। এই সময়টাতেই ওরা আপনার কাছে আসতে চাইবে। পরে আপনি যতই হাতছানি দিয়ে ডাকুন না কেন, ওদের কাছে পাবেন না। বাজে শোনালেও এটাই রিয়ালিটি। বাচ্চার বাবা মা হওয়ারও আগে তাঁদের শ্রেষ্ঠতম বন্ধু হবার চেষ্টা করুন।

তার কাছ থেকে "পিতামাতার প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য" আশা করছেন, নিজে কতখানি দায়িত্ব পালন করেছেন?
সারাদিন বাচ্চা স্কুলে পড়াশোনা শেষে কেবল সন্ধ্যায় আপনাকে পাচ্ছে। কতকিছু শেয়ার করার ছিল আপনার সাথে। মনে মনে পছন্দ করা তানিয়া নামের মেয়েটা তারই বেস্ট ফ্রেন্ড ফাহাদের সাথে হেসে হেসে গল্প করেছে। ক্লাসের দুষ্ট ছেলে মান্না আজকে তাকে বিচিত্র কিছু ওষুধের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। বলেছে এসব খেলে মনের সব দুঃখ দূর হয়ে যায়। সে প্রাণখুলে আপনার সাথে কথা বলে হালকা হতে চায়। আপনি ব্যস্ত হিন্দি সিরিয়াল নিয়ে। সিরিয়ালের কাল্পনিক চরিত্রের কষ্টে আপনার বুক ফেটে যায়, নিজের সন্তান যে আপনার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে সেটা বুঝতে পারছেন?
আপনি অফিসের কাজে এতই ব্যস্ত যে ছেলে যখন আপনার কাছে কিছু জানতে চায়, আপনি ধমক দিয়ে বলেন নিজে জেনে নাও। আপত্তিকর কোন বিষয় (যেমন যৌনতা) হলেতো কথাই নেই। ধামাধাম মার। এই ছেলে ঠিকই তার প্রশ্নের উত্তর খুঁজে নিবে। উপরের মান্না টাইপের বন্ধু বান্ধবের অভাব নেই স্কুলে। এবং সেটা তাঁর জন্য আরও খারাপ হবে। উল্টা আপনি নিজে সময় নিয়ে ব্যাখ্যা করলে তার জন্যই ভাল হতো।

বিকালে অফিস থেকে ফেরার সময়ে ছেলেকে দেখলেন লুকিয়ে সিগারেট খাচ্ছে। আপনি তার কান টেনে থাবড়াথাবড়ি শুরু করে দিলেন। আপনার ধারনা আপনার মারের চোটে এই ছেলে বিড়ি ফুকা বন্ধ করে দিবে? বাজে ছেলেদের সাথে মেশা বন্ধ করে দিবে? জ্বী না। Next time he'll make sure, you don't catch him smoking.
আমার বাবা মা একদম ছোটবেলায় আমাদের মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন সিগারেট খেলে ক্যান্সার হয়, মানুষ মারা যায়। জীবনেও সিগারেটের ধারে কাছে ভিড়িনি। ট্রাস্ট মি, ব্যপারটা কাজ করে।

নিজের সন্তানদের মানুষ করতে হলে তাদের সাথে সময় কাটান। আর কিছু করা লাগবেনা।
বাবা মা সাথে থাকলে চানখাঁর পুলকেও লিভারপুল মনে হয়, শিশু পার্ককেও মনে হয় ডিজনিল্যান্ড আর কক্সবাজারকে মনে হয় বাহামা আইল্যান্ডস। সুখী হওয়া এতই সস্তা এবং সহজ।

আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে ছিলাম। প্রথম জীবনে গাড়িতে চড়ে স্কুলে যাওয়া হতো না। ইন্ডিয়া ছাড়া বিদেশ সফরও হয়নি কখনও। প্রতি উইকেন্ডে চাইনিজ খাওয়া হতো না। তবু আফসোস নেই একদম। কারন আমাদের বাবা মা আমাদের স্কুলে নামিয়ে দিয়ে আসতেন। স্কুল থেকে ফেরার সময়ে বাবা জিন্দাবাজারের ফ্রেশ ফুড দোকানে কলিজি সিংগারা খাওয়াতে নিয়ে যেতেন। রাতে বাবা মায়ের সাথে বসে আমরা লুডু খেলতাম। বাবাকে যে কতবার দাবা খেলায় হারিয়েছি! অথচ প্রতিবার খেলার সময়ে বাবা বলতেন, "এইবার তোমাকে চিবিয়ে চিবিয়ে খাব!"
জীবনের প্রতিযোগিতাগুলোয় অসংখ্যবার হেরেছি, একবারও তাঁদের বকাঝকা বা মারধর করতে দেখিনি।
"আজকে হয়নি, অন্য একদিন হবে।"
কোনদিনই হতো না। তবু তাঁদের সান্তনার বাণী বদল হতো না।

আজকে মাশাল্লাহ কোন কিছুর অভাব নেই। দুইটা গাড়ি আছে, মোটামুটি ভাল একটা চাকরি আছে, যখন খুশি ইচ্ছা হলেই বাড়ি কিনে ফেলার ক্ষমতা আছে। একটা সুখী পরিবার আছে। আর কী লাগে?
বাবা মায়ের কথা ঠিকই ফলেছে - ঠিকই “একদিন হয়েছে।” আমাকে কোন বিষয়েই ফার্স্ট হতে হয়নি।
আপনার ছেলে/মেয়ে অন্য ছেলেমেয়েদের মতন ভাল রেজাল্ট করছে না? দেখেন অন্য কোন দিকে প্রতিভা আছে কিনা। সাকিব আল হাসান যে খুব ব্রিলিয়ান্ট ছাত্র ছিলেন সেটা কোথাও শুনিনি। বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার হতে হলে পৃথিবীর কোন দেশের মুদ্রার নাম কি, কিংবা একত্রিশের ঘরের নামতা ঠোটস্থ মুখস্ত থাকাটা জরুরী নয়।

ক্লাস এইটে উঠে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিল বলে বাবা তাঁকে বাসা থেকে বের করে দিলেন। ছেলে জেদী ছিল, সে নগরবাউল হয়ে দেখিয়েছে। বাংলাদেশে জেমসের মতন আরেকখান পিস খুঁজে বের করেন দেখি। সবার প্রতিভা সবদিকে সমান থাকেনা।
আর যদি আপনার সন্তান একেবারেই প্রতিভাশুন্য হয় তাহলেও সমস্যা কী? সে নাহয় নয়টা পাঁচটার সাধারণ চাকরিই করবে, লোকাল বাসে বাদুর ঝোলা হয়ে যাতায়াত করবে, তবু এই ভেবে সুখী থাকবে, সে অসাধারন দুইটা বাবা মা পেয়েছিল।

ইদানিং আমার ফেসবুকে লেখালেখি কমিয়ে দেবার এটাই সবচেয়ে বড় কারন। যখন বাড়িতে থাকি এবং আমার ছেলে জেগে থাকে, আমি তার সাথে খেলি। উ আ শব্দ করতে করতে ও যখন আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকে, সেই অনুভূতি কোটি কোটি ডলার দিলেও আমি বেঁচতে রাজি নই।

আপনি জাতি বদলে দিতে চান? নিজেকে দিয়েই শুরু করুন। নিজের ছেলেমেয়েদের আদর্শ বাবা মা উপহার দিন, ভবিষ্যতে তাঁরাই দেশ পাল্টে দিবে।

Monday, October 5, 2015

ডাঃ মাখনলাল এমবিবিএস !

সন্তান কে সমাজের উচুস্তরে দেখতে কে না চায় ? তাই মধ্যবিত্ত ঘরের মা-বাবা ছোটকাল থেকেই তার সন্তান কে বড় ডাক্তার বানানোর স্বপ্ন দেখেন ! এমন ভাবে সন্তানের সামনে "ডাক্তার" ব্যাপার টি কে উপস্থাপন করেন যেন ডাক্তার না হলে জীবন বৃথা ! আর, একবার কোনরকমে ডাক্তার হতে পারলেই মিলবে জাদুর কাঠি,সুখের চাবি !"
বাবা, আমি ডিজনিল্যান্ড যাব ", "বাবা আমি বড় হয়ে লাল গাড়ি কিনব" - সন্তানের এই সব আবদার তাই শেষ হয় বাবার  উত্তরে- "ডাক্তার হলে তুমি সব কিনতে পারবে বাবা" !

ব্যপারটা এমন নয় যে সব মা-বাবাই এমন বলেন । এমনও অনেকেই আছেন যারা এই পেশার প্রতি নিজের ভাললাগার কারনেই ডাক্তার হতে চান ।তারা সাধারনত ছোটবেলায় জীবনের লক্ষ্য লিখতে গিয়ে এমনটা লিখে থাকেন- "বড় হয়ে আমি মানুষের সেবা করতে চাই" ! শিক্ষক তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন- " দোয়া করি, বড় ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা কর" !

পাঠক, তাহলে ব্যাপারটা দাঁড়ালো কি ? বড় হয়ে ডাক্তার হতে পারি আর না পারি, ছোটকালেই দুটি জিনিস কিন্তু আমাদের মাথায় ঢুকে গেল-
১) ডাক্তার হলে অনেক টাকা হবে, জীবনের সকল চাওয়া পুরন হবে ! আর-
২) মানুষের সেবা শুধু ডাক্তাররাই করে থাকেন !

যাই হোক, ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নে বিভোর এমনি একজন হলেন মাখনলাল ! ছোটকাল থেকেই শুরু হয় তার স্বপ্ন পূরণের লড়াই ! বন্ধুরা যখন মাঠে ক্রিকেট খেলত অথবা সন্ধ্যার পর সিনেমা হলে গিয়ে দেখত রঙ্গিন সুজন-সখি, মাখনলালের তখন একটাই কাজ- পড়া পড়া আর পড়া ! পড়তে পড়তে কেটে যায় শৈশবকাল ! বাল্যকাল ! তারুন্যে এসে মাখনলাল সুযোগ পায় মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার ! সেখানে দেখা হয় আরও অনেক মাখনলালের সাথে ! সবার চোখ ভরা একটাই স্বপ্ন- বড় ডাক্তার হব !!

এর পর শুরু হয় আসল খেলা ! কি সেই খেলা ?? আইটেম , কার্ড , টার্ম , ওয়ার্ড ফাইনাল, ব্লক ফাইনাল, ইয়ার ফাইনাল নামক নানারকম পরীক্ষা নানাকারনে একাধিকবার দিয়ে, সকাল ৭ টা থেকে দুপুর আড়াইটা , সন্ধায় আরও দুই ঘণ্টা - মোট ৯ ঘণ্টা করে সপ্তাহে ৬ দিন ক্লাস করে মাখনলালদের যোগাড় করতে হয় প্রফেশনাল পরীক্ষায় বসার যোগ্যতা, যার নাম ক্লিয়ারেন্স  ! এ প্রসঙ্গে বলে রাখি- যে দেশে জব্বার , মিজান নামের বস্তুরা থাকেন , সেই দেশে ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার দিনটি ঈদ হিসেবে পালিত হয়ে থাকে !

যাই হোক, এরপর মাখনলালরা প্রফ পরীক্ষা দিতে বসেন । এমসিকিউ, রিটেন , ভাইভা, শর্ট কেস, লং কেস, অসপি - এই ধরনের নানা অঙ্গ বিশিষ্ট ৩টি প্রফ পরীক্ষা দিয়ে তারা ডাক্তার হওয়ার চেষ্টা করেন । দিনরাত কাচ্চি না খাওয়ার অপরাধে এইসব পরীক্ষায় ভেজিটারিয়ান মাখনলালরা হরহামেশাই শহীদ হয়ে যান , যদিও তাদের ভাগ্যে জোটে না কোন শহীদমিনার ।

যে পরিবেশে কেউ ৫ মিনিট দাড়িয়ে থাকলে অস্থির হয়ে পড়েন , সেই পরিবেশ অর্থাৎ হাসপাতালের ওয়ার্ড এ টানা তিন বছর প্রতিদিন ২ ঘণ্টা করে দাড়িয়ে থেকে , ৫-৬ ঘণ্টা ধরে চলা ভীতিকর প্রফ পরীক্ষাগুলি কখনো কখনো একাধিকবার দিয়ে পাশ করেন মাখনলাল ! ৫ বছরের সাধনা রূপ লাভ করে বাস্তবে ! ৫ বছর পড়াশুনা শেষে এইবার শুরু হয় তার  ইন্টার্ন জীবন ! এই জীবন একবছর চলবে । এই সময়ে মাখনলাল প্রতিদিন ৮-১০ ঘণ্টা, কোন কোন দিন ১৬ ঘণ্টা, একেকদিন ২৪ ঘণ্টা হাসাপাতালে কাটাবেন , হাতে কলমে ডাক্তারি  শিখবেন ও করবেন। বেতন পাবেন ১০০০০ টাকা !

প্রশ্ন ১ - পাঠক , আপনার বাসার ড্রাইভার এর বেতন কত ?

যাইহোক, ইন্টার্ন শেষে মাখনলাল লাভ করেন ডাক্তারি রেজিস্ট্রেশন । কিন্তু এইবার মাখনলাল প্রবেশ করেন এক ভিন্ন বাস্তবতায় , যেখানে তাকে একই সাথে বড় ডাক্তার হতে হবে , সরকারি চাকরি নিতে হবে , পরিবার এর কিছু দায়িত্ব নিতে হবে এবং নিজের পেট বাঁচাতে হবে ! তাই তার বাংলা এবং সাধারন জ্ঞান পড়া শুরু করতে হয় বিসিএস এর জন্যে , মোটা মোটা বইগুলি আবার পড়তে হয় এফসিপিএস, এম ডি তে সুযোগ করে নেবার জন্যে এবং ছোট চাকরি করা শুরু করতে হয় পেট বাঁচানোর জন্যে । এই ছোট চাকরি কে বলে "খ্যাপ", যেখানে মাখনলাল বেতন পাবেন ৮ ঘণ্টায় ৬০০ টাকা, অর্থাৎ ঘণ্টায় ৭৫ টাকা ! সুতরাং, মাখনলালের মাখন এবার গলতে শুরু করে। তবু মাখনলাল সেবা কিন্তু দিয়ে যাচ্ছেন, কারন এই সেবায় তার পেট চলে ! সেই সেবার দাম ঘণ্টায় ৭৫ টাকা !

উইনস্টন চার্চিল বলেছিলেন- " তরুন ডাক্তার ও বৃদ্ধ নাপিত থেকে দূরে থাকুন" !

সুতরাং মাখনলালকে অবশ্যই বড় ডাক্তার হতে হবে। ডিগ্রী নিতে হবে এফসিপিএস, এম ডি এইসব । কিন্তু ডিগ্রি তো আর শুধু পড়া দিয়ে হয় না, সাথে লাগবে ৪ বছরের ট্রেনিং! এই ট্রেনিং এর সময় তাকে একজন ফুল টাইম চিকিৎসক হিসেবে ডিউটি করতে হবে কোন একটি মেডিকেল কলেজে, বিনা বেতনে ! সেই সাথে পেট বাঁচানোর জন্যে খ্যাপ তো চলবেই ! তাই টানা ৪ বছর ধরে বিনা বেতনে কাজ করবেন মাখনলাল , আর ডিউটির ফাঁকে পেট বাঁচানোর জন্যে মারবেন খ্যাপ -আয় ঘণ্টায় ৭৫ টাকা। এবার অনারারি (অনাহারি) মেডিকেল অফিসার মাখনলাল ! দিন রাত কেটে যায় তার হাসপাতালেই !

প্রশ্ন ২ - পাঠক, মাখনলাল ৪ টি বছর বিনা টাকায় হাসপাতালে আপনাকে চিকিৎসা দিয়েছেন, নিজেও শিখেছেন চিকিৎসাবিদ্যা!! আপনি হলে কয় বছর পারতেন??
 আপনাদের অবগতির জন্যে বলে দেই- বড় সরকারি হাসাপাতালে এই ধরনের বিনাবেতনে কাজ করা ডাক্তারের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি থাকে। এদের বলে- HMO !

মা বলেন- মাখন রে, একটা বিয়ে কর । কিন্তু মাখনলাল ভয় পায়। নিজে খেতে পায় না, বউ কি খাবে ? এইভাবে কেটে যায় মাখনলালদের যৌবন ! বয়স ৩০ ছুই ছুই ! কোনোরকমে ট্রেনিং শেষ ! এই বেলা মাখনলাল ভাবেন, বিসিএস টা দিয়ে নেই, তারপরই সুখের সংসার পেতে বসব ! শুরু হয় আরেক খেলা । পড়ো বাংলা, পড়ো সাধারন জ্ঞান, সেই voice change, narration আর সুদকষার অংক !! এইসব পড়তে আর ভালো লাগে না মাখনলালের, স্কুলের অন্য বন্ধুরা ততদিনে বিয়ে শাদি করে পুরদস্তুর জাকিয়ে বসেছে, আর মাখন?? মাখন পড়ছে ! পড়ছে ইথিওপিয়ার রাজধানীর কথা, জানছে এভারেস্ট এর উচ্চতা ! সরকারি ডাক্তার হতে হবে যে !!

এইভাবে ২/৩বারের চেষ্টায় মাখনলাল হয়ে গেলেন সরকারি ডাক্তার ! পোস্টিং হল থানা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে, বেতন ১৭০০০ টাকা , থাকার জন্যে পেলেন কোয়ার্টার। পলেস্তারা খসা, ডাম্প পড়া, জানালার কাঁচ ভাঙ্গা সরকারি কোয়ার্টারে থাকে মাখনলাল, এক সময়ের দেশ কাঁপানো মেধা মাখনলাল। নিজেই রাধে, নিজেই খায় !কিন্তু এভাবে কতদিন? তাই মাখন বিয়ে করল।

এবার শুরু হল ভানুমতির খেল ! ১৭০০০ টাকায় মা-বউ-সংসার কীভাবে চালান সম্ভব ?? দেশের সবচেয়ে মেধাবি, বোর্ড প্লেস করা মাখন এই টাকায় কি দিয়ে কি করবেন ?? মাখনের অন্য বন্ধুরা এতদিনে ২ সন্তানের বাপ ! কেউ কিনেছেন গাড়ি ! কারো সন্তান পড়ে ঢাকার বড় স্কুল এ ! থানা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মাখনের শখ হয় তার ছেলেটিকে ও ভালো ইস্কুলে পড়ানোর , ভালো পরিবেশে রাখার ! কিন্তু পারে না মাখন, সে ডাক্তার, তাই তার শখ বলে, স্বপ্ন বলে কিছু থাকতে নেই। তার আছে শুধু মানবসেবার দায়িত্ব! কারন শুধুমাত্র ডাক্তাররাই সরকারি টাকায় পড়েছেন , আর বাকি যত শিক্ষালয়,সেগুলো হয় বেসরকারি অথবা সেখানে পড়াশুনা বলে কিছু নাই ! হতাশ ডাঃ মাখনলাল পরে থাকেন থানা সাস্থ্য কেন্দ্রেই । পাঠক বলতে পারেন,মাখনদের ডিজনিল্যান্ড আর কত দূর ?

এইভাবে হতাশার, পাওয়া না পাওয়ার হিসাব মিলাতে মিলাতে কয়েক বারের চেষ্টায় fcps, md ও পাশ করে মাখন! বয়স তখন ৩৮ !  জীবনের ৩৮ টি বসন্ত পার করে মাখনলাল হয় Dr. Makhonlal, MBBS, FCPS, MD !  অনেক চেষ্টা-তদবির করে অবশেষে মাখনলাল ট্রান্সফার হয়ে আসেন একটি মেডিকেল কলেজে !

তারপর পাড় হয় আরও কত দিন ! মধ্যবয়স পেরিয়ে গেছে কিছুদিন আগেই। এমন সময় মাখন হয় প্রফেসর !! বয়স কমপক্ষে ৪৫ ! এই ৪৫ টি বছর সাধনা করে মাখন শিখেছে অনেক কঠিন চিকিৎসাব্যবস্থা, অভিজ্ঞতাবলে অর্জন করেছে অনেক মরনাপন্ন রোগীকেও বাঁচিয়ে তোলার জ্ঞান !! আজ তার ভিসিট এখন ৫০০ টাকা ! মাখনলালের সন্তানদের কাছে ডিজনিল্যান্ড এখন শাহবাগের শিশুপার্কের চেয়েও কাছে ! লাল গাড়ি চড়ে তারা ডেটিং এ যায় !

আর পাঠক,শীগগির আপনারা কোমর বাঁধুন ! এইবার এসেছে সেই দিন ! এতদিনে এসেছে আপনাদের দিন! এখন আপনারা তাকে কসাই বলে গালি দিতে পারবেন, তার বিরুদ্ধে রোগী হত্যার অভিযোগ আনতে পারবেন, আর সেই অভিযোগ তদন্তের আগেই মাখনলাল কে হাতকরা পড়াতে আছেন আপনাদের সেপাইরা। আর আপনাদের টিভি? মিডিয়া ?? মাখনলালের হাতকরা পরা ছবি বাড়িয়ে দেবে তাদের পত্রিকার, চ্যানেলের কাটতি !! পারসোনার গোপন কামেরার খবর কিন্তু ঠাইও পাবেনা তাদের পাতায় !!

প্রশ্ন ৩ - kfc তে ১০০ গ্রাম আলুর দাম ৭০ টাকা হলে, ৪৫ বছর ধরে চলা এই সাধনার সম্মানী হিসেবে ৫০০টাকা কি খুব বেশি ?

তারপরও ডাক্তাররা হতাশ হননা,আটক সহকর্মী কে মুক্তির দাবীতে রোগী দেখা বন্ধ করেন না। বেতন বাড়ানোর  দাবিতে আন্দোলন করেছেন ডাক্তাররা, এমনটা শুনেছেন কোনোদিন ?? যতবার ডাক্তাররা আন্দোলন করেন, খেয়াল করে দেখবেন, সেই আন্দোলন ওইসব কারনে নয়, সেই আন্দোলন হয় শুধুমাত্র আপনারা ডাক্তারদের গায়ে হাত তোলেন বলে ! আপনারাই বলুন- কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা পাবার অধিকার কি ডাক্তারদের নেই??

একজন সাধারন ছাত্র কীভাবে একজন বড় ডাক্তার হয়ে ওঠেন, ডাঃ মাখনলাল এর মাধ্যমে সেটাই আমি আপনাদের জানাতে চেয়েছি । আমি খুব ভালো করেই জানি- এতশত ডাক্তারদের ভিড়ে কেউ কেউ আছেন যারা অসৎ ! তারা কমিশন খান, প্রাইভেট ক্লিনিকে রোগী ভাগান, রোগীর সাথে খারাপ ব্যবহার করেন, অবহেলার অভিযোগ ও কিছু ক্ষেত্রে সত্য ! তাদের কঠোর শাস্তি দেয়া উচিৎ। কিন্তু সবাই কি এমন? বাস্তবতা ভেবে দেখুন- আজ আমাদের সমাজের প্রতিটা অঙ্গেই পচন ধরেছে । বাকি সকল পেশার আপনারা দুর্নীতি করে বাড়ি গাড়ি করবেন আর চাইবেন, ডাক্তাররা ১০০ভাগ সৎ থাকবে, আর সেই চাওয়ায় একটু কমতি হলেই যখন তখন গায়ে হাত তুলে বসবেন, গালি দেবেন এটা কি ঠিক?

দয়া করে অভিযোগ তদন্ত না করেই বিচার আর শাস্তিপ্রদান শুরু করে দেবেন না।  বড় ডাক্তার হওয়া অনেক কষ্টের কাজ, অনেক অনেক অনেক কষ্টের ফল এটা! এত কষ্ট, এত শ্রম কে আবেগের বশে অপমান করবেন না ! আমরা খুব কষ্ট পাই, ভালো কিছু করার উৎসাহ হারাই ! একটা কথা ভুলে যাবেন না - বাঁচতে হবে সবাই মিলে, সামাজিক নিয়ম মেনে  !! সবাই কে ধন্যবাদ

collected

Thursday, September 17, 2015

আসলে পাপ , আসলেই পাপ এই মেডিক্যাল প্রফেশনে আসা।

শুধু বাংলাদেশে কেন , পৃথিবীর কোথাওই উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের উচ্চাকাঙ্খী ছেলে মেয়েদের মেডিকেল প্রফেশনে আসা উচিৎ না।

কারন এখানে ক্যারিয়ার স্ট্যাবলিশমেন্টের জন্য যে পরিমাণ ডেডিকেশন আর যতটা সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয় , তার জন্য যথেষ্ট সময় বা সুযোগ কেউই আপনাকে দিবে না , না আপনার পরিবার , না আপনার উপার্জন।

তবে হ্যা। ধনী পরিবারের পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের জন্য মেডিক্যাল প্রফেশনে আসা ভালো। কারন আপনি সাফল্য না পাওয়া পর্যন্ত আপনার পরিবার আপনাকে সাপোর্ট দিবে এবং আপনার উপার্জনের কথা চিন্তা করতে হবে না। প্রচুর খরচ করবেন এবং প্রচুর পড়ালেখা করবেন।

Life can be awesome. আমার কাছে এর প্রপার উদাহরনসহ প্রমাণ আছে যে অনেক কম মেধা নিয়েও ডেডিকেশন এবং ফ্যামিলি সাপোর্ট পেলে মেডিক্যাল প্রফেশনে অসাধারন ক্যারিয়ার তৈরি করা সম্ভব।

অথবা নিম্ন মধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের জন্যও মেডিক্যাল প্রফেশন ভালো। কারন শুধুমাত্র এমবিবিএস করেই ক্লিনিক বা জিপি করে মাসে লাখ টাকা উপার্জন করা সম্ভব। একটা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মাত্র একজন চিকিৎসক সন্তান পুরো ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড চেঞ্জ করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট...
এই প্রফেশনে সবচেয়ে বড় পাপিষ্ঠ হলো উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের উচ্চাকাঙ্খী ছেলেমেয়েরা।

কারন এরা স্বপ্নের পিছে ছুটে না পারে টাকা কামাতে , আবার স্বপ্ন পুরন করতে এসে না পারে অভাব সামলাতে।
এরা না পায় ফ্যামিলি ব্যাক আপ , না থাকে এদের কোন স্ট্যাটাস...

আশেপাশের মানুষ সবাই ভাবে এদের কত টাকা , আর আজীবন গসিপ চলে যে এরা এত কৃপণ কেন!
এদের উপর কেউই সন্তুষ্ট না। ফ্রেন্ডস এন্ড ফ্যামিলির আজীবনের অভিযোগ যে সময় দেয় না , টেক কেয়ার করে না, কন্ট্রিবিউট করে না । কেউই এদের স্ট্রাগল আসলে বুঝে না। সবাই শুধু বুঝে নিজেরটা এবং কিভাবে এদের ইউটিলাইজ করা যায়।

এদের জীবনে বড় হতে হলে পার্সোনাল লাইফ সেক্রিফাইস করতে হয় , আনন্দ ফুর্তি বিনোদন সব সেক্রিফাইস করতে হয় , এদের প্রত্যেকটি সাফল্য অসংখ্য ইচ্ছামৃত্যুর স্মৃতি স্তম্ভের উপর নির্মিত হয়।

এরপরও যদি ১৫-২০ বছর স্ট্রাগল করে এদের মাঝে কেউ একটা লেভেলে যেতে পারে , তখন আবার পাবলিক এদের উপর খুশি না।

" একটু দেখলো আর ১০০০ টাকা নিয়ে নিলো!!!"

হায়রে স্যালুকাস। আসলে পাপ , আসলেই পাপ এই মেডিক্যাল প্রফেশনে আসা।
Zaman Sunny

Sunday, August 2, 2015

বাংলাদেশের চিকিৎসাসেবা

আমি একজন ভাল রাঁধুনি।কিন্তু পরিমিত উপকরন না পেলে আমি রান্না করি না।ভাল বাবুর্চিরাও কিন্তু তাই করে থাকে। পর্যাপ্ত জিনিস না দিলে সে রাঁধতে চাইবে না। বাজারের তাজা মাছটি, ফ্রেস মাংসটি, ফ্রেস সবজী এবং প্রয়োজনীয় তেল মসলা না হলে খাবার মজা হবে কি করে? তাই আমি মনের মত করে সব উপকরন সংগ্রহ করে সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করাই। আমি একজন ভাল চিকিৎসকও। কিন্তু সর্বোত্তম সেবাটি দেবার জন্য আমি কি সব উপকরন মনের মত পাই? উত্তরঃ সরকারী পর্যায়ে - না কখনও পাই না আর বেসরকারী পর্যায়ে কখনও পাই না কখনও বা গ্রাহকের অপারগতার জন্য দিতে পারিনা। কারন এক দরিদ্র জনগোষ্ঠীর চিকিৎসক আমি। যেখানে না সরকার পুরো দায়িত্ব নেয় না জনগণের সামর্থ আছে। বেনারসীর বদলে আটপৌরে শাড়ী পরে আবরু রক্ষা করা যায়, কাচ্চি বিরিয়ানীর বদলে পান্তা মরিচ দিয়েও ক্ষুধা নিবারন করা যায়, অট্টালিকার পালঙ্কে না শুয়েও কুঁড়েঘরের মাটির বিছানায় নিদ্রাযাপন করা যায় কিন্তু রক্তের বদলে পানি দিয়ে চিকিৎসা করা যায় না। চিকিৎসার জন্য ধনী লোকটির শরীর যা চায়, হত দরিদ্র লোকটির শরীরও তাই চায়। কিন্তু বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল কিংবা বড় বড় শহরের হাসপাতালগুলোতেও কি সকল সার্ভিস দেয়া যাচ্ছে ? পর্যাপ্ত দেয়া যাচ্ছে না । ফলাফল জনরোষ এবং চিকিৎসক নির্যাতন। আর অকারনে মার খেয়ে যাচ্ছে সারা জীবন পড়ালেখা করে ভাল ছাত্র ছাত্রীর তকমা লাগানো নিরীহ ছেলেমেয়েগুলো। ক্রমশই দুর্বৃত্তদের নষ্ট হাতের ছোবল বর্ধিত হচ্ছে। একি বিপর্যয় চিকিৎসা সেবায়! আর কত আমাদের নিরীহ ছেলেমেয়েগুলো মার খাবে? মার খাবার জন্যই কি ওরা ছোটবেলা থেকে ভাল্ভাবে পড়াশুনা করে এসেছে? না খেতে পেরে ক্ষুধার যন্ত্রনায় ধুকে ধুকে যে মারা গেল তার জন্য আপনারা কাকে নির্যাতন করছেন? কনকনে শীতে বিবস্র হয়ে খোলা আকাশের নীচে পরে থেকে যে মারা গেল তার জন্য কাকে জেলে পাঠালেন? ঔষধের অভাবে কেউ মারা গেলে তার জন্য দায়ী কে? আপনারা সে চিন্তা না করে জীবন বাঁচাতে হাত পা আর মাথা নিয়ে যে এগিয়ে এল তাকেই ধরে মারছেন। আর এই মার, অসন্মান করা, হাজতে ঢুকানো যেন মহামারী হয়ে গেছে। একেরটা থেকে অন্যের মধ্যে ছড়িয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশে সবসময়ই মেডিকেল এবং ইঞ্জিনিয়ারিং এ সেরা ছাত্র ছাত্রীরা প্রবেশ করে।বিজ্ঞানের ছাত্র ছাত্রীরা এ দুটি প্রতিষ্ঠানের দরজার কড়া না নেড়ে কিংবা এ দুটিতে চান্স পেয়েও ভার্সিটিতে গেছে এমন সংখ্যা নিতান্তই নগন্য। প্রতি স্কুলের প্রথম সারির (১-১০ কিংবা ১৫) ছেলেমেয়েরাই এখানে আসে। বিশাল এক পড়াশোনার পাহাড় অতিক্রম করে যখন এম, বি, বি, এস পাস করল তখন তাদের পদার্পণ হোল চিকিৎসাশ্বাস্রে।যে পড়াশোনার সাথে অন্য কোন পড়াশোনার তুলনা চলে না। এক অমানুষিক খাটুনির মধ্য দিয়ে যে ট্রেনিংটি তারা পার করে তার জন্য যে মাসোহারা পায় তা আমাদের অশিক্ষিত ড্রাইভার এর বেতনের চেয়েও কম। তার পিছনের সারির বন্ধুটি যখন মোটা বেতনে কোন প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকুরী করে তখন তারা কিছু মনে করে না এই ভেবে যে চিকিৎসকের জীবন একটু আলাদা, যার নির্ধারক বেতন নয়।তারা জানে এ পথ অনেক বন্ধুর ।
ইন্টার্নীর শেষে সরকারী চাকুরী হলে বেতনভুক্ত মেডিকেল অফিসার না হলে অবৈতনিক মেডিকেল অফিসার। সংখ্যায় অবৈতনিক মেডিকেল অফিসার অনেক বেশী।তাই এই অবৈতনিক মেডিকেল অফিসার এবং ইন্টার্নদিয়েই সরকারী হাসপাতালগুলো চলে। বাংলাদেশ ছাড়া বিশ্বের কোথাও সন্মানী ছাড়া ট্রেনিং হয় না। কারন ওরাও মানুষ, ওদেরও ভাতের প্রয়োজন, কাপড়ের প্রয়োজন, ওদেরও মা বাবা আছে, দায়িত্ব আছে, কারো সংসার বউ বাচ্চা আছে, ওরা সালোকসংশ্লেসন প্রক্রিয়ায় নিজের খাবার নিজে তৈরী করেনা। তাই নিদারুন অর্থকষ্ট ও টানাপোড়নের মধ্য দিয়ে সকল সামাজিক আনন্দ উৎসব বর্জন করে, জীবনের অনেক সোনালী সময় ফেলে দিয়ে, আত্মীয় স্বজনদের প্রতি দায়িত্ব পালন না করে তাদের প্রত্যাশিত জায়গায় কেউ পৌঁছায় কেউ পৌঁছায়না।চাকুরীর দশ বার বছর পরেও এদের এক এক জনের বেতন মাত্র ২৫ হাজার টাকা। পোস্টগ্রাজুয়েশন ছাড়া এদের কোন প্রোমোশন নেই। এইসব ছেলেমেয়েরা যদি একদিন সরকারী হাসপাতালে কাজ না করে তাহলে হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে।আর তারাই যদি নিরাপদে তার কমর্স্থলে কাজ করতে না পারে, কর্তব্যরত অবস্থায় দুর্বৃত্তদের হাতে মার খায়, সাংবাদিকদের মিথ্যা অপপ্রচারের শিকার হয় তাহলে কেউ কি চিকিৎসক হতে আর আগ্রহী হবে? সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় এর প্রতিবাদ করার জন্য সমাজের কোন লোকতো নেই-ই বরং উল্লসিত হতে দেখেছি অনেককে। ডা. সাজিয়া কর্তব্যরত অবস্থায় তার সম্ভ্রম রক্ষা করতে গিয়ে ওয়ার্ড বয়ের মত একটি নিম্নশ্রেনীর মানুষের হাতে নিহত হোল কোনদিন তা গুরুত্বের সাথে খবর হতে দেখলাম না। অথচ সেই একই সময়ে ইন্ডিয়াতে একটি মেডিকেল স্টুডেন্ট রেপড হওয়াতে সারা ভারতবাসী ফুঁসে উঠল।বারডেমে ঘটনা, ডা. পিনু, গোপালগঞ্জ ঘটনা,ডা শাহিন সব কিছুতেই ডাক্তার অকারনে মার খেল সে সত্যি লিখার সাংবাদিক কেউ নেই। অথচ প্রায়মৃত রোগীটি চিকিৎসা চলাকালীন মৃত্যুবরন করলে বিরাট খবর হয়ে আসে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসা আর অবহেলায় মৃত্যু বলে। সাংবাদিকদের এই অপপ্রচার এবং মারমুখী এ্যাটেন্ডেন্টদের ঔদ্দ্ব্যত্বের জন্য কোন মানুষকে একটুও প্রতিবাদতো দুরের কথা শুধু কথা বলতেও শোনা যায় না। শোনা যায়না বলেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি জীবন্ত ডা মীমের পোস্টমর্টেম।

কেন ডাক্তারদের প্রতি এই আক্রোস? ডাক্তাররা চাদাবাজী করে? ফাইল আটকে রেখে ঘুষ খায়? সিন্ডিকেট করে দ্রব্যমূল্য বাড়ায়? শেয়ার বাজার লুট করে? ব্যাঙ্ক ক্রাফটার হয়? দেশবাসীকে ভেজালযুক্ত খাবার খাওয়ায়? কি তাদের অপরাধ? আসুন দেখি তারা কি করে।
এম,বি,বি,এস মানে ছোট ডাক্তার। আপনি কখনও সাধ্য না থাকলেও ওর কাছে যাবেন না। আপনাকে নিখুঁত সেবা দানের জন্য এবং আপনাকে প্রলুব্ধ করার জন্য বড় বড় ডিগ্রী দরকার।আপনাকে উপযুক্ত সেবাটি দেবার জন্য এই বড় ডিগ্রীগুলো নিতে জীবন হয়তো শেষ হয় না কিন্তু অনেকেরই যৌবন শেষ হয়ে যায়। প্রশিক্ষনসহ ৫ থেকে ১০ বছর এমনকি তার বেশিও লেগে যেতে পারে। এই দীর্ঘ সময়ে পরীক্ষা এবং বিভিন্ন কোর্সের ফিস দেওয়ার সামর্থ্যও অনেকের ফুরিয়ে আসে। এই পড়ালেখা এবং পরীক্ষাগুলো যে কি বিভীষিকাময় তা বর্ণনা করার ভাষা আমার কিংবা কারো নেই।শুধু কষ্টের ছাপ রন্ধ্রে রন্ধ্রে লেগে থাকে। পরীক্ষার পদ্ধতি এতই জটীল যে একবার যদি কেউ এ গোলকধাঁধার দুষ্টচক্রে পরে যায় তার জন্য উঠে আসা খুবই মুশকিল। এত মেধাবী ছাত্র ছাত্রী তারপরেও যদি এমন হয় তাহলে সহজেই অনুমেয় যে কি কঠিন পদ্ধতির মধ্য দিয়ে এদের বেরিয়ে আসতে হয়। এত কঠিন বলেই পাশ করতে না পারার হতাশায় আত্মহত্যা করল আদ দ্বীন মেডিকেলের ছাত্রী।
অন্যান্য সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকার ছাত্র ছাত্রীদের যেমন পড়িয়ে থাকে মেডিকেল কলেজেও অনুরূপ পড়িয়ে থাকে। মেডিকেল কলেজে সরকারী বাজেটের বড় একটি অংশ যে বরাদ্দ সেতো হাসপাতালের রোগীদের বিনে পয়সায় চিকিৎসার জন্য। শুধু চিকিৎসা নয় এখানে থাকা খাওয়া দাওয়াও ফ্রী। এই খরচের দায়ভার ছাত্রের ঘাড়ে ফেলে শুধু জনগণের ট্যাক্সের টাকায় এরা ডাক্তার হয়েছে বলে মানুষের অনুভূতিকে নাড়া দেয়া অন্যায় এবং ডাক্তারদের প্রতি অবিচার। বরঞ্চ একজন ডাক্তার তার প্রশিক্ষণের সময় (সি, এ) রাত দিন যে শ্রম দিয়ে সরকারের জনগণকে সেবা দিয়ে থাকে তার বিনিময়ে তাকে সারা জীবন ভাতা দিলেও শোধ হবার নয়। শেখার জন্য যা দরকার তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশী কাজ করে দিতে হয় ব্যস্ত হাসপাতালগুলোতে।

বাংলাদেশে চিকিৎসার সীমাবদ্বতাঃ
সীমাহীন সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে এদেশের ডাক্তারদের ডাক্তারী করতে হয়। পৃথিবীর কোথাও মাটিতে রেখে চিকিৎসা দেবার নিয়ম আছে কিনা জানিনা তবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এটি প্রতিদিনের চিত্র। যত রোগী বিছানায় তত রোগী ওয়ার্ডের ও বারান্দার মাটিতে। এই যে রোগীর ঢল তাদের চিকিৎসার জন্য না আছে পর্যাপ্ত ডাক্তার না আছে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সামগ্রী এবং পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। সারা দেশ থেকে এমনকি ঢাকার অন্যান্য হাসপাতালগুলো থেকে মরনাপন্ন রোগীগুলোকে এখানে রেফার করা হয়। তাদের ম্যানেজ করার জন্য চিকিৎসককে সাহায্য করার মত দক্ষ এবং দায়িত্বশীল লোকবল এবং চিকিৎসা সামগ্রী যথেষ্ঠ নেই। চিকিৎসকের কাজ ব্যবস্থা পত্র দেয়া। সেগুলো ফলো করা রোগীর সুবিধা অসুবিধা পর্যবেক্ষণ করা নার্সদের কাজ। ঔষধপত্র, স্যালাইন, অপারেশন সামগ্রী এগুলো সাপ্লাই দেয়া প্রশাসনের কাজ। কিন্তু সরকারী হাসপাতালে বহু চিকিৎসক ব্যক্তিগত ভাবে ঔষধ, রক্ত যোগানতো দিয়েই থাকে ইমারজেন্সির সময় ট্রলিটি ঠেলে নিতেও কেউ কুন্ঠাবোধ করেনা। চিকিৎসা একটি টীম ওয়ার্ক। এই টীমের বড় রিংটি চিকিৎসক। কিন্তু বাকীরা (নার্স ও অন্যান্যরা, প্যাথলজিকাল কার্যক্রম এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা) যদি সেই চেইনের কার্যকারিতার ব্যাঘাত ঘটায় তার সর্বশেষ প্রভাব পরে রোগীর উপর। যার দায়বদ্ধতা এসে পরে চিকিৎসকের উপর।কারন সবাই ফলাফল চায় তার পিছনের কাহিনী কেউ শুনতে চায় না।

চিকিৎসায় দুর্নীতি
চিকিৎসায় দুর্নীতি অমার্জনীয় অপরাধ। ডাক্তার যদি দুর্নীতিগ্রস্থ হয়, কারো অবহেলায় কোন রোগী মারা যায় বা মারাত্তক ক্ষতিগ্রস্থ হয় এসবের জন্য সুনির্দিষ্ট কোন প্রমান পাওয়া গেলে যথাযোগ্য শাস্তি এবং ক্ষতিপূরন অনেক কিছুই অবশ্যই হতে পারে। কিন্তু সেটি বিচারের ভারতো সাংবাদিকের নয়। মৃত্যু পথযাত্রী কোন রোগীকে বাঁচাবার ক্ষমতা কি আল্লাহ কাউকে দিয়েছেন? চিকিৎসক চেষ্টার সবটুকু ঢেলে দিয়েও সবসময় মানুষকে বাঁচাতে পারে না। তাহলেতো মানুষ অমর থেকে যেত। মানুষতো মরবেই।একজন মুমূর্ষু রোগীকে বাঁচিয়ে তোলার যে কি আনন্দ তা ঐ ডাক্তার ছাড়া কেউ বুঝবেনা। সেটা যে রোগীর স্বজনদের আনন্দের চেয়ে কোন অংশে কম নয় এটি সবাইকে বুঝতে হবে। রোগীর মৃত্যুতে ডাক্তারের চোখেও পানি আসে। রোগীর জন্য যদি কারো দরদ থাকে তা স্বজনদের পরে চিকিৎসকদের, কোন তৃতীয় পক্ষের নয় এটা বুঝতে হবে। দিনের পর দিন কত মুমূর্ষু রোগীকে জীবনে ফিরিয়ে আনছে কত চিকিৎসক। নিজের পকেটের পয়সা দিয়ে বাঁচিয়ে তুলছে কত রোগীর জীবন।কারন চিকিৎসকের নিজের জীবনের সফলতা তার রোগীর সুস্থতা।প্রত্যেকের মৃত্যু পূর্বনির্ধারিত আর এই মৃত্যুর জন্য স্বজনরা চিকিৎসকদের মারবে জেল হাজতে পাঠাবে এ কেমন পাশবিকতা ! সারা জীবন ভাল ছাত্রের তকমা গায়ে লাগিয়ে যে ছেলেটি বা মেয়েটি এতদূর এল, কর্মজীবনের শুরুতেই সে কিনা মার খেল রাস্তার সন্ত্রাসীদের হাতে। এটাই কি সেই সন্মানজনক পেশা? সব লুন্ঠিত হতে হতে মানুষের সন্মানও আজ লুন্ঠন হয়ে যাচ্ছে। প্রতিবাদের বা প্রতিকারের কেউ নেই। আত্মসন্মান বাঁচাতে মানুষ পরিবেশ এড়িয়ে চলে । তা’হলে কি চিকিৎসকরা সরে দাঁড়াবে এ পেশা থেকে? এই অসুস্থ পরিবেশ থেকে? নবীন চিকিৎসকরা এরই মধ্যে চিন্তা করছে সরে দাড়াবার, হয় পেশা বদলাবে নয় বিদেশে পাড়ি দেবে। কি হবে তাহলে এদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার!!!!!


>collected<

Tuesday, June 9, 2015

সুতরাং , ভাবিয়া আসিও এখানে আসিয়া ভাবিও না......

ডা: মাখনলাল এমবিবিএস
সন্তান কে সমাজের উচুস্তরে দেখতে কে না চায় ? তাই মধ্যবিত্ত ঘরের মা-বাবা ছোটকাল থেকেই তার সন্তান কে বড় ডাক্তার বানানোর স্বপ্ন দেখেন ! এমন ভাবে সন্তানের সামনে "ডাক্তার" ব্যাপার টি কে উপস্থাপন করেন যেন ডাক্তার না হলে জীবন বৃথা ! আর, একবার কোনরকমে ডাক্তার হতে পারলেই মিলবে জাদুর কাঠি,সুখের চাবি !"বাবা, আমি ডিজনিল্যান্ড যাব ", "বাবা আমি বড় হয়ে লাল গাড়ি কিনব" - সন্তানের এই সব আবদার তাই শেষ হয় বাবার উত্তরে- "ডাক্তার হলে তুমি সব কিনতে পারবে বাবা" !
ব্যপারটা এমন নয় যে সব মা-বাবাই এমন বলেন । এমনও অনেকেই আছেন যারা এই পেশার প্রতি নিজের ভাললাগার কারনেই ডাক্তার হতে চান ।তারা সাধারনত ছোটবেলায় জীবনের লক্ষ্য লিখতে গিয়ে এমনটা লিখে থাকেন- "বড় হয়ে আমি মানুষের সেবা করতে চাই" ! শিক্ষক তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন- " দোয়া করি, বড় ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা কর" !
পাঠক, তাহলে ব্যাপারটা দাঁড়ালো কি ? বড় হয়ে ডাক্তার হতে পারি আর না পারি, ছোটকালেই দুটি জিনিস কিন্তু আমাদের মাথায় ঢুকে গেল-
১) ডাক্তার হলে অনেক টাকা হবে, জীবনের সকল চাওয়া পুরন হবে ! আর-
২) মানুষের সেবা শুধু ডাক্তাররাই করে থাকেন !

যাই হোক, ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নে বিভোর এমনি একজন হলেন মাখনলাল ! ছোটকাল থেকেই শুরু হয় তার স্বপ্ন পূরণের লড়াই ! বন্ধুরা যখন মাঠে ক্রিকেট খেলত অথবা সন্ধ্যার পর সিনেমা হলে গিয়ে দেখত রঙ্গিন সুজন-সখি, মাখনলালের তখন একটাই কাজ- পড়া পড়া আর পড়া ! পড়তে পড়তে কেটে যায় শৈশবকাল ! বাল্যকাল ! তারুন্যে এসে মাখনলাল সুযোগ পায় মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার ! সেখানে দেখা হয় আরও অনেক মাখনলালের সাথে ! সবার চোখ ভরা একটাই স্বপ্ন- বড় ডাক্তার হব !!
এর পর শুরু হয় আসল খেলা ! কি সেই খেলা ?? আইটেম , কার্ড , টার্ম , ওয়ার্ড ফাইনাল, ব্লক ফাইনাল, ইয়ার ফাইনাল নামক নানারকম পরীক্ষা নানাকারনে একাধিকবার দিয়ে, সকাল ৭ টা থেকে দুপুর আড়াইটা , সন্ধায় আরও দুই ঘণ্টা - মোট ৯ ঘণ্টা করে সপ্তাহে ৬ দিন ক্লাস করে মাখনলালদের যোগাড় করতে হয় প্রফেশনাল পরীক্ষায় বসার যোগ্যতা, যার নাম ক্লিয়ারেন্স ! এ প্রসঙ্গে বলে রাখি- যে দেশে জব্বার , মিজান নামের বস্তুরা থাকেন , সেই দেশে ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার দিনটি ঈদ হিসেবে পালিত হয়ে থাকে !
যাই হোক, এরপর মাখনলালরা প্রফ পরীক্ষা দিতে বসেন । এমসিকিউ, রিটেন , ভাইভা, শর্ট কেস, লং কেস, অসপি - এই ধরনের নানা অঙ্গ বিশিষ্ট ৩টি প্রফ পরীক্ষা দিয়ে তারা ডাক্তার হওয়ার চেষ্টা করেন । দিনরাত কাচ্চি না খাওয়ার অপরাধে এইসব পরীক্ষায় ভেজিটারিয়ান মাখনলালরা হরহামেশাই শহীদ হয়ে যান , যদিও তাদের ভাগ্যে জোটে না কোন শহীদমিনার ।
যে পরিবেশে কেউ ৫ মিনিট দাড়িয়ে থাকলে অস্থির হয়ে পড়েন , সেই পরিবেশ অর্থাৎ হাসপাতালের ওয়ার্ড এ টানা তিন বছর প্রতিদিন ২ ঘণ্টা করে দাড়িয়ে থেকে , ৫-৬ ঘণ্টা ধরে চলা ভীতিকর প্রফ পরীক্ষাগুলি কখনো কখনো একাধিকবার দিয়ে পাশ করেন মাখনলাল ! ৫ বছরের সাধনা রূপ লাভ করে বাস্তবে ! ৫ বছর পড়াশুনা শেষে এইবার শুরু হয় তার ইন্টার্ন জীবন ! এই জীবন একবছর চলবে । এই সময়ে মাখনলাল প্রতিদিন ৮-১০ ঘণ্টা, কোন কোন দিন ১৬ ঘণ্টা, একেকদিন ২৪ ঘণ্টা হাসাপাতালে কাটাবেন , হাতে কলমে ডাক্তারি শিখবেন ও করবেন। বেতন পাবেন ১০০০০ টাকা !
প্রশ্ন ১ - পাঠক , আপনার বাসার ড্রাইভার এর বেতন কত ?

যাইহোক, ইন্টার্ন শেষে মাখনলাল লাভ করেন ডাক্তারি রেজিস্ট্রেশন । কিন্তু এইবার মাখনলাল প্রবেশ করেন এক ভিন্ন বাস্তবতায় , যেখানে তাকে একই সাথে বড় ডাক্তার হতে হবে , সরকারি চাকরি নিতে হবে , পরিবার এর কিছু দায়িত্ব নিতে হবে এবং নিজের পেট বাঁচাতে হবে ! তাই তার বাংলা এবং সাধারন জ্ঞান পড়া শুরু করতে হয় বিসিএস এর জন্যে , মোটা মোটা বইগুলি আবার পড়তে হয় এফসিপিএস, এম ডি তে সুযোগ করে নেবার জন্যে এবং ছোট চাকরি করা শুরু করতে হয় পেট বাঁচানোর জন্যে । এই ছোট চাকরি কে বলে "খ্যাপ", যেখানে মাখনলাল বেতন পাবেন ৮ ঘণ্টায় ৬০০ টাকা, অর্থাৎ ঘণ্টায় ৭৫ টাকা ! সুতরাং, মাখনলালের মাখন এবার গলতে শুরু করে। তবু মাখনলাল সেবা কিন্তু দিয়ে যাচ্ছেন, কারন এই সেবায় তার পেট চলে ! সেই সেবার দাম ঘণ্টায় ৭৫ টাকা !

উইনস্টন চার্চিল বলেছিলেন- " তরুন ডাক্তার ও বৃদ্ধ নাপিত থেকে দূরে থাকুন" !
সুতরাং মাখনলালকে অবশ্যই বড় ডাক্তার হতে হবে। ডিগ্রী নিতে হবে এফসিপিএস, এম ডি এইসব । কিন্তু ডিগ্রি তো আর শুধু পড়া দিয়ে হয় না, সাথে লাগবে ৪ বছরের ট্রেনিং! এই ট্রেনিং এর সময় তাকে একজন ফুল টাইম চিকিৎসক হিসেবে ডিউটি করতে হবে কোন একটি মেডিকেল কলেজে, বিনা বেতনে ! সেই সাথে পেট বাঁচানোর জন্যে খ্যাপ তো চলবেই ! তাই টানা ৪ বছর ধরে বিনা বেতনে কাজ করবেন মাখনলাল , আর ডিউটির ফাঁকে পেট বাঁচানোর জন্যে মারবেন খ্যাপ -আয় ঘণ্টায় ৭৫ টাকা। এবার অনারারি (অনাহারি) মেডিকেল অফিসার মাখনলাল ! দিন রাত কেটে যায় তার হাসপাতালেই !

প্রশ্ন ২ - পাঠক, মাখনলাল ৪ টি বছর বিনা টাকায় হাসপাতালে আপনাকে চিকিৎসা দিয়েছেন, নিজেও শিখেছেন চিকিৎসাবিদ্যা!! আপনি হলে কয় বছর পারতেন?? আপনাদের অবগতির জন্যে বলে দেই- বড় সরকারি হাসাপাতালে এই ধরনের বিনাবেতনে কাজ করা ডাক্তারের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি থাকে। এদের বলে- HMO !

মা বলেন- মাখন রে, একটা বিয়ে কর । কিন্তু মাখনলাল ভয় পায়। নিজে খেতে পায় না, বউ কি খাবে ? এইভাবে কেটে যায় মাখনলালদের যৌবন ! বয়স ৩০ ছুই ছুই ! কোনোরকমে ট্রেনিং শেষ ! এই বেলা মাখনলাল ভাবেন, বিসিএস টা দিয়ে নেই, তারপরই সুখের সংসার পেতে বসব ! শুরু হয় আরেক খেলা । পড়ো বাংলা, পড়ো সাধারন জ্ঞান, সেই voice change, narration আর সুদকষার অংক !! এইসব পড়তে আর ভালো লাগে না মাখনলালের, স্কুলের অন্য বন্ধুরা ততদিনে বিয়ে শাদি করে পুরদস্তুর জাকিয়ে বসেছে, আর মাখন?? মাখন পড়ছে ! পড়ছে ইথিওপিয়ার রাজধানীর কথা, জানছে এভারেস্ট এর উচ্চতা ! সরকারি ডাক্তার হতে হবে যে !!

এইভাবে ২/৩বারের চেষ্টায় মাখনলাল হয়ে গেলেন সরকারি ডাক্তার ! পোস্টিং হল থানা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে, বেতন ১৭০০০ টাকা , থাকার জন্যে পেলেন কোয়ার্টার। পলেস্তারা খসা, ডাম্প পড়া, জানালার কাঁচ ভাঙ্গা সরকারি কোয়ার্টারে থাকে মাখনলাল, এক সময়ের দেশ কাঁপানো মেধা মাখনলাল। নিজেই রাধে, নিজেই খায় !কিন্তু এভাবে কতদিন? তাই মাখন বিয়ে করল।
এবার শুরু হল ভানুমতির খেল ! ১৭০০০ টাকায় মা-বউ-সংসার কীভাবে চালান সম্ভব ?? দেশের সবচেয়ে মেধাবি, বোর্ড প্লেস করা মাখন এই টাকায় কি দিয়ে কি করবেন ?? মাখনের অন্য বন্ধুরা এতদিনে ২ সন্তানের বাপ ! কেউ কিনেছেন গাড়ি ! কারো সন্তান পড়ে ঢাকার বড় স্কুল এ ! থানা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মাখনের শখ হয় তার ছেলেটিকে ও ভালো ইস্কুলে পড়ানোর , ভালো পরিবেশে রাখার ! কিন্তু পারে না মাখন, সে ডাক্তার, তাই তার শখ বলে, স্বপ্ন বলে কিছু থাকতে নেই। তার আছে শুধু মানবসেবার দায়িত্ব! কারন শুধুমাত্র ডাক্তাররাই সরকারি টাকায় পড়েছেন , আর বাকি যত শিক্ষালয়,সেগুলো হয় বেসরকারি অথবা সেখানে পড়াশুনা বলে কিছু নাই ! হতাশ ডাঃ মাখনলাল পরে থাকেন থানা সাস্থ্য কেন্দ্রেই । পাঠক বলতে পারেন,মাখনদের ডিজনিল্যান্ড আর কত দূর ?
এইভাবে হতাশার, পাওয়া না পাওয়ার হিসাব মিলাতে মিলাতে কয়েক বারের চেষ্টায় fcps, md ও পাশ করে মাখন! বয়স তখন ৩৮ ! জীবনের ৩৮ টি বসন্ত পার করে মাখনলাল হয় Dr. Makhonlal, MBBS, FCPS, MD ! অনেক চেষ্টা-তদবির করে অবশেষে মাখনলাল ট্রান্সফার হয়ে আসেন একটি মেডিকেল কলেজে !

তারপর পাড় হয় আরও কত দিন ! মধ্যবয়স পেরিয়ে গেছে কিছুদিন আগেই। এমন সময় মাখন হয় প্রফেসর !! বয়স কমপক্ষে ৪৫ ! এই ৪৫ টি বছর সাধনা করে মাখন শিখেছে অনেক কঠিন চিকিৎসাব্যবস্থা, অভিজ্ঞতাবলে অর্জন করেছে অনেক মরনাপন্ন রোগীকেও বাঁচিয়ে তোলার জ্ঞান !! আজ তার ভিসিট এখন ৫০০ টাকা ! মাখনলালের সন্তানদের কাছে ডিজনিল্যান্ড এখন শাহবাগের শিশুপার্কের চেয়েও কাছে ! লাল গাড়ি চড়ে তারা ডেটিং এ যায় !

আর পাঠক,শীগগির আপনারা কোমর বাঁধুন ! এইবার এসেছে সেই দিন ! এতদিনে এসেছে আপনাদের দিন! এখন আপনারা তাকে কসাই বলে গালি দিতে পারবেন, তার বিরুদ্ধে রোগী হত্যার অভিযোগ আনতে পারবেন, আর সেই অভিযোগ তদন্তের আগেই মাখনলাল কে হাতকরা পড়াতে আছেন আপনাদের সেপাইরা। আর আপনাদের টিভি? মিডিয়া ?? মাখনলালের হাতকরা পরা ছবি বাড়িয়ে দেবে তাদের পত্রিকার, চ্যানেলের কাটতি !! পারসোনার গোপন কামেরার খবর কিন্তু ঠাইও পাবেনা তাদের পাতায় !!

প্রশ্ন ৩ - kfc তে ১০০ গ্রাম আলুর দাম ৭০ টাকা হলে, ৪৫ বছর ধরে চলা এই সাধনার সম্মানী হিসেবে ৫০০টাকা কি খুব বেশি ?

তারপরও ডাক্তাররা হতাশ হননা,আটক সহকর্মী কে মুক্তির দাবীতে রোগী দেখা বন্ধ করেন না। বেতন বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলন করেছেন ডাক্তাররা, এমনটা শুনেছেন কোনোদিন ?? যতবার ডাক্তাররা আন্দোলন করেন, খেয়াল করে দেখবেন, সেই আন্দোলন ওইসব কারনে নয়, সেই আন্দোলন হয় শুধুমাত্র আপনারা ডাক্তারদের গায়ে হাত তোলেন বলে ! আপনারাই বলুন- কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা পাবার অধিকার কি ডাক্তারদের নেই??

একজন সাধারন ছাত্র কীভাবে একজন বড় ডাক্তার হয়ে ওঠেন, ডাঃ মাখনলাল এর মাধ্যমে সেটাই আমি আপনাদের জানাতে চেয়েছি । আমি খুব ভালো করেই জানি- এতশত ডাক্তারদের ভিড়ে কেউ কেউ আছেন যারা অসৎ ! তারা কমিশন খান, প্রাইভেট ক্লিনিকে রোগী ভাগান, রোগীর সাথে খারাপ ব্যবহার করেন, অবহেলার অভিযোগ ও কিছু ক্ষেত্রে সত্য ! তাদের কঠোর শাস্তি দেয়া উচিৎ। কিন্তু সবাই কি এমন? বাস্তবতা ভেবে দেখুন- আজ আমাদের সমাজের প্রতিটা অঙ্গেই পচন ধরেছে । বাকি সকল পেশার আপনারা দুর্নীতি করে বাড়ি গাড়ি করবেন আর চাইবেন, ডাক্তাররা ১০০ভাগ সৎ থাকবে, আর সেই চাওয়ায় একটু কমতি হলেই যখন তখন গায়ে হাত তুলে বসবেন, গালি দেবেন এটা কি ঠিক?

দয়া করে অভিযোগ তদন্ত না করেই বিচার আর শাস্তিপ্রদান শুরু করে দেবেন না। বড় ডাক্তার হওয়া অনেক কষ্টের কাজ, অনেক অনেক অনেক কষ্টের ফল এটা! এত কষ্ট, এত শ্রম কে আবেগের বশে অপমান করবেন না ! আমরা খুব কষ্ট পাই, ভালো কিছু করার উৎসাহ হারাই ! একটা কথা ভুলে যাবেন না - বাঁচতে হবে সবাই মিলে, সামাজিক নিয়ম মেনে !! সবাই কে ধন্যবাদ !
----------------------
লেখা : শুভাশিষ চয়ন

মানুষ আপনাকে ব্লাকমেইল করবে, তাই সাবধান।

১। আমি তখন বারডেম এর HMO, কত্তবড় পোষ্ট, Honorary .....Medical Officer, একটা অফিসার,কম কথা না!!
আমার খালুর ফোন করে বললো, হীরক, আমার এক প্রিয় ভাস্তে যাচ্ছে, ওকে একটু অপারেশন করায় দিও বাবা...
২টা পর্যন্ত honorary করলাম, গেলাম রুগীর কাছে, সারাদিন সময় দিলাম, রাতে অপারেশন হলো, রাতে ১২টাই মেসে গেলাম। পরদিন গেলাম, রুগীর ছুটির সময় স্যারকে বলে টাকা কমালাম। এরপরও আমার উপর রুগী ও আমার খালুর অনেক রাগ কেন তাদেরকে তাদের মনের মতো একটা মেডিকেল সার্টিফিকেট নিয়ে দিতে পারিনি।
২। মামার ফোন.. হীরক আমাদের গ্রামের একটা ছেলে ঢাকা যাচেছ্, তোর ও মামা হয়। তোর নাম্বার টা দিয়েছি, আমার মান সম্মানের ব্যাপার, একটু দেখিস।
DMCH, NEUROSURGERY DEPT. most busiest ward in the world. যেতেই দেখি আমার সময়ের IMO. তাকে বলে অনেক কষ্ট করে depressed fracture with subdural haematoma following RTA অপারেশন করিয়ে দিলাম।. এখন মামা বাড়ী গেলে সে কথা বলে না কারন কপালে বড় একটা দাগ হয়ে আছে কেন, কাকে দিয়ে অপারেশন করিয়েছে??

৩। এইতো সেদিন ৩ দিন আমার মহা মূল্যবান সময় ব্যয় করে ও একটা রুগিকে কোন সাহায্য করতে পারি নি, সেকি.. মন খারাপ আমার উপর!!
ক। আমার বড় ভাইয়ের বন্ধু। প্রায়ই নিজের গাড়ি চালিয়ে তার বাচ্চাকে দেখাতে আসে। সে দেখে আামি বসে বসে বই পড়ছি, কোন রুগী নাই। তার গল্প হলো, ফ্লাট কিনেছি, দেশে এটা কিনেছি,ওটা করেছি। তোমার ফ্লাট কোথায়, গাড়ি কবে কিনবা??
আমার দম বন্ধ হয়ে আসে,কি বলবো.. কোনদিন আমাকে ভিজিট নামক ভদ্রতা দেখায় নাই..
খ। ডাক্তার হওয়ার পর আমার বন্ধু বেড়ে গেছে। প্রাইমারি, হাইস্কুল,কলেজের অনেক বন্ধুরা, দুরের আত্মীয়, বড় ছোট ভাইয়ের বন্ধুরা ফোন করে, উপদেশ নেয়। যদি ফোন না ধরতে পারি....ব্যাস হলো।
সে মাসে ১ দিন করে কিন্ত আমাকে তো দিনে ১০ জনের ফোন ধরতে হয়!
ঘটনাগুলি বিশ্বাস হচ্চেনা?? বিগত ১০ বছরে শত শত এরকম ঘটনা আছে আমার। অনেকের আছে ঠিকই।
আমি এখন ভাবছি, নিজের খেয়ে আপনজন ছাড়া কারো আজাইরা উপকার করতে যাবো না, অযাযিত ফোন ধরবো না, পাই পাই করে ভিজিট নিবো। কসাই বললে বলুক,, টাইম নাই।
আরে ভাই আপনি কি কোথাও কিছু ফ্রি পান? বাসে চড়লে টাকা দিতে হয়,বাজার করলে টাকা লাগে, সব টাকা। আপনি বন্ধুরদোকান থেকে জামা কিনলে টাকা দিতে হয়না?? বাজারে মাছ কিনলে ফ্রি পান? তাহলে আপনি ফ্রি করবেন কেন?
সবাই নিজের কাম অকাম কইয়া গাড়ি চালাইবো, ফ্লাট কিনবো আর আপনি মানবসেবা কইরা লোকাল ৭ নম্বরে চড়বেন আর সবার ঠেলাগুতা খাবেন। মনে রাখবেন টাকা না থাকলে সমাজে কোথাও বেইল পাইবেন না, আত্মীয়, আপনজন এমনকি ঘরের বউ এর কাছেও দাম পাইবেন না।
এটা মানবপেশা, মহত পেশা বলে মানুষ আপনাকে ব্লাকমেইল করবে, তাই সাবধান।
জুনিয়র ডাক্তার বাবুদের বলি...
আমি লিখে দিতে পারি, নিজের খেয়ে, পড়াশুনা বাদ দিয়ে এসব করবেন তো আপনি পস্তাইবেন।

লেখক >

Sunday, June 7, 2015

এত্তো কিছুর পরেও ......

তুমি কি এবার মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছো......প্লিজ আর একবার ভাব!

তোমরা যারা মেডিকেল কোচিং করছ...প্লিজ ভেবে দেখ...তুমি কি জেনে শুনেই ডাক্তার হতে চাচ্ছ?...যদি তাই হয় তবে

আসো না একটু ভাবি
---------------------
১। তুমি কি জান...ফেল না করলে MBBS শেষ করতে তোমার ৬ বছর লাগবে...এরপর উচ্চতর ডিগ্রী নিতে আরো ৫ বছর !
২। এর মধ্যে এমএস/এমডি ভর্তি হতে MBBS পাশের পর ২ বছর অপেক্ষা করতে হবে...মানে ৬+২+৫ = ১৩ বছর! ...
৩। এখানেই শেষ কথা নয়... তুমি হয়ত জাননা... উচ্চতর ডিগ্রীতে পাশের হার ১% বা তারও কম... সেক্ষেত্রে উচ্চতর ডিগ্রীতে গড়ে অতিরিক্ত ৩ বছর লাগবে... এর মধ্যে বিয়ে/গ্রামে ২ বছর পোস্টিং মিলে... তোমার আরো ৩ বছর নষ্ট হবে... এবার তবে যোগফল দাঁড়াল... ১৩+৩+৩=১৯ বছর! ...
৪। এরপরেও কথা আছে... তুমি পাশ করা মাত্রই বিশেষজ্ঞ হতে পারবেনা... নিদির্স্ট বিষয়ে দক্ষতা বাড়াতে তোমাকে আরো ৫ বছর অপেক্ষা করতে হবে...!!! সর্বশেষ ফলাফল ১৯+৫ = ২৪ বছর।
৫। আচ্ছা তুমি কি এইস এস সি পাশের পর এই ২৪ বছর নিজেকে পড়ালেখায় নিয়োজিত রাখতে প্রস্তুত?

যদি হ্যাঁ হয়, তবে শোনঃ
---------------------------
১। যতদিনে তুমি MBBS পাশ করবে ততদিনে তোমার সহপাঠিরা ছাত্রত্ব শেষ করে...পেশায় মনোযোগ দিবে।
২। তুমি যখন উচ্চতর ডিগ্রীতে ভর্তির সুযোগ পাবে... ততদিনে তোমার সহপাঠিরা নতুন প্রমোশন পাবে...বেল চেপে পিয়নকে দিয়ে চা আনাবে।
তুমি কি আরো জানো?
১। তোমার পিতা সংসারের দায়িত্ব তোমার হাতে তুলে দেয়ার প্রহর গুণতে গুণতে একসময় ইহলিলা সাঙ্গ করবেন।
২। তুমি একসময় অর্থাভাবে খেতে পারবে না... যখন তোমার অর্থাভাব চলে যাবে তখন তোমার শরীরে ডায়াবেটিস... প্রেসারের মতো রোগ বাসা বাধবে... তখনো তুমি খেতে পারবে না !
৩। সামাজিক সব আয়োজন থেকে তুমি থাকবে দূরে... ধীরে ধীরে মানুষ থেকে অসামাজিক জীবে পরিণত হবে।
৪। সন্তানের বেড়ে উঠা দেখার মতো সময়ও তোমার হাতে থাকবেনা।
৫। মানসিক বিকাশে বাধাগ্রস্ত শিশুর সংখ্যা ডাক্তারদের মধ্যেই বেশি !

তোমার এটাও জানা উচিতঃ
---------------------------
১। প্রতি বছর ৫০ হাজারের মত ছাত্র মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা দেয়... মাত্র ৩ হাজারের মত চান্স পায়...
২। যারা চান্স পায় না... তাঁদের অনেকেই অন্য পেশায় যোগ দেয়...ডাক্তার না হওয়ার আফসোস তাঁদের অন্তরে থাকলেও... একসময় তাঁদের অনেকেই ডাক্তার বিদ্বেষী হয়ে উঠবে...উঠতে বসতে তারা তোমার চৌদ্দ গুষ্ঠি উদ্ধার করবে!

তুমি হয়ত জান নাঃ
-------------------------
১। বিদেশ প্রীতি আমাদের সহজাত প্রবৃত্তি......খেয়াল করলে দেখবা এসব লোক চিকিৎসার জন্য বিদেশের সরকারী হাসপাতালে যায় না... যায় বেসরকারীগুলোতে... তারাই কথায় কথায় তোমাকে কসাই বলতেও কুন্ঠা বোধ করবে না... ভারতের কথাই ভাব...নচিকেতা ভারতের লোক...ডাক্তারদের কসাই বলেই তিনি বিশেষ স্থান দখল করেছেন...অথচ, তাঁর গান ভারতীয় ডাক্তারদের উদ্দেশ্যেই ছিল।
২। এদেশের বিবেকবানরা চিকিৎসাবিদ্যা সম্পর্কে নূন্যতম জ্ঞান না রাখলেও পান্ডিত্য ফলাতে পিছপা হয় না।
৩। শুধু মাত্র পাশ করছেনা বলে প্রতিদিন কতজন যে আত্মহত্যার চেস্টা করে। বেসরকারী মেডিকেলে এ প্রবণতা অনেক বেশি। অনেক টাকা খরচ করে মধ্যাপ্রাচ্যে গিয়ে অনেকে আর আসতে চায় না। এতোটাকা নস্ট করে দেশে ফিরে কি করবে সে ভয়ে ফেরারী আসামীর মত লুকিয়ে লুকিয়ে কাজ করে অনেকে...বেসরাকারী মেডিকেলেও তাই...এত্তো টাকা খরচ করে অনেকে ফেল করতে করতে আত্মহত্যার দ্বার প্রান্তে গিয়েও ফিরে আসে...এই ভেবে যে মা-বাবার এতো টাকা খরচ করলাম...ডাক্তার না হলে কি হবে !
৪। নিরাপদ কর্মস্থলের অভাবে প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও চিকিৎসকরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।
৫। এদেশে রোগীর চেয়ে ডাক্তারের সংখ্যা বেশি...ঔষধের দোকানদার ডাক্তার...পল্লি চিকিৎসক বড় ডাক্তার...পাশের বাড়ীর সব জান্তা আপা তাঁর চেয়েও বড় ডাক্তার...ঘরে ঘরে কত শত ডাক্তার...এখন যোগ হয়েছে গুগল ডাক্তার...গুগলে সার্চ দিয়েই যারা তোমার উপর পান্ডিত্য ফলাবে!

এবার তবে ভাব... তুমি কি সত্যিই ডাক্তার হতে চাও?

ও...আমার কথা বলছ?... নারে ভাই... আমার অবস্থাও আর দশজন ডাক্তারের মতোই... তবে, আমি সুখী...অনেক সুখী... মনে রাখবা, এ সুখ অনেক অশ্রু দিয়ে কেনা... ধরেও রাখছি কষ্টের আঁচলে... হোক না তা শারীরিক বা মানসিক কষ্ট !
তবে,

তুমি যদি এত্তো কিছুর পরেও সব মেনে নিয়ে এগোতে পারো...তবে নিশ্চিত থেকো, স্বর্গীয় সুখ শুধু এ পেশাতেই আছে।

তুমি পারবে তো? আমার ভয় হয়...কারণ তুমিও যে মানুষ।

সংগৃহীত 

Saturday, May 30, 2015

আসুন নিজ দেশের ডাক্তারকে কসাই ডাকি, শ্রীলেদার্সে শপিং করে আসি।


এই বিজ্ঞাপনটা বাংলাদেশের একটি জাতীয় দৈনিক ছাপে কিভাবে? বিজ্ঞাপনে দুটো সোনালী রঙের জুতার ছবি-তার উপর লেখা ডাক্তার দেখাতে কলকাতা যাচ্ছেন? শ্রীলেদার্সে-এ অবশ্যই আসবেন।
হ্যাঁ ডাক্তার, দেবতারূপী ডাক্তার, কলকাতার ডাক্তার। কেন যাবেন কলকাতার ডাক্তার দেখাতে? কারণ বাংলাদেশী ডাক্তার তো কসাই। বাংলাদেশী ডাক্তাররা রেপ করে (দু দিন আগেই জাতীয় দৈনিকে জনৈক স্যাকমো-চিকিৎসা সহকারীর অপকর্ম ফলাও করে ডাক্তার নাম দিয়ে প্রচার করলো), বাংলাদেশী সরকারি হাসপাতালে ডাক্তাররা ভুল চিকিৎসা দেয়, ১০-২০ বছর ডাক্তারি পড়া ডাক্তারের ভুল ধরে মেট্রিক ফেইল আইডি কার্ড সর্বস্ব সাংবাদিক, হাসপাতালের টয়লেটে বদনা ফুটো, বিছানার চাদর নাই, লিফটে লম্বা লাইন এই অভিযোগে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ইন্টার্নদের পেটায়-শাসায়, বারডেম-ল্যাব এইডের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে তো প্রাণটা বাঁচাতে হবে এসব কষাইখানা থেকে। তাই কলকাতা, মাদ্রাজ, বোম্বেই সমাধান। আসুন আমরা মন ভরে ডাক্তারদের গালি দেই, পকেট ভরে টাকা নিয়ে কলকাতার শ্রীলেদার্স, বিগ বাজারে শপিং করে আসি।
লেখার এ অংশে আজ থেকে দুই-তিন-চার বছর আগের আমার নিজেরই কিছু লেখা কাটপেস্ট করছি- ১ " নবীন চিকিৎসকেরা মানুষ, দেবতা নন, তাদের ত্রুটি বিচ্যুতি আছে । তবে সাংবাদিকদের মত পত্রিকার কাটতি বাড়াতে, চ্যানেলের দর্শক বাড়াতে অথবা কর্পোরেট-বিদেশী হাসপাতালের দালালী করতে গিয়ে ইচ্ছেকৃত শয়তানী ছড়ায় না, দেশের দরিদ্র মানুষদের ভারত/ব্যাঙ্কক হাসপাতালের গ্রাহক বানাতে বাংলাদেশের চিকিৎসকদের মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে যায় না, জনগণের শত্রু হিসেবে বিজ্ঞাপন দেয় না ।" -ইস্যু বারডেমে যখন একজন মহিলা চিকিৎসক কে বাথরুমের সিরামিকের বেসিনে মাথা ঠুকে পেটানো হয়েছে তখন লেখা।
২ "সাংবাদিকদের সাথে চিকিৎসকদের সরাসরি কোন দন্দ্ব নেই । তবে ঢালাওভাবে নেতিবাচক উপস্থাপনা , স্বাস্থ্য সেবায় নন্দ ঘোষের মত সব দোষ চাপিয়ে দেয়া , টেকনিক্যাল বিষয়গুলোতে নূন্যতম জ্ঞান না থাকার পরেও অযাচিত নাক গলানো এসব কারণে চিকিৎসকদের সাথে সাংবাদিকদের এই রেষারেষি । সাংবাদিকরা যতটা সাধারণ মানুষের মুখপত্র হিসেবে কাজ করছে তার চেয়ে বেশী কাজ করছে এপোলো-স্কয়ার-ফাইভ স্টার হাসপাতালের বিজ্ঞাপন দিতে এবং অবশ্যই ভারত-সিঙ্গাপুর-চীন-মালয়শিয়ার এদেশীয় দালাল হিসেবে রোগী ধরতে । বাংলাদেশের হাসপাতাল খারাপ,চিকিৎসক খারাপ প্রমাণ হলে কার লাভ হচ্ছে , সেটার প্রতিবাদ করতে গেলেই চিকিৎসকেরা সাংবাদিকদের নির্লজ্জ অপপ্রচারের শিকার হচ্ছে সেটা বুদ্ধিমান মানুষের বুঝতে বাকী থাকবেনা ততক্ষণে ক্ষতি যা হবার হবে, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবা নষ্ট হবে ।- রাজশাহী মেডিকেল কলেজে একজন জীবিত রোগীকে ইন্টার্নরা মেরে ফেলেছে গুঁজব ছড়িয়ে ইন্টার্নদের উপর হামলার প্রেক্ষিতে লেখা।
৩" স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে যা কিছু ভাল চলেছে যা কিছু মাথা তুলে দাঁড়াতে পেরেছে তারই পেছনে লেগেছে এক বিশেষ শ্রেণী । চিনিশিল্প , T & T TELEPHONE এবং সর্বশেষ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সব কছু নষ্ট হয়েছে । সরকার বারবার হার মেনেছে এদের কাছে । প্রশাসন দালালী করেছে । এখন বাকী রইলো স্বাস্থ্য । যা কিছু প্রাইভেট হয়েছে সব সরকারী সে সেক্টর ধ্বংস হয়েছে ।বাংলাদেশের মত গরীব দেশ কিভাবে স্বাস্থ্য খাতে এভাবে সেবা দেয় ? MDGর লক্ষ্য আগেই পূরণ করে ফেলে , গণ্ডা গন্ডা পুরষ্কার পায় । তখনই-MIDDLE CLASS রে বুঝায় বেবাক ডাক্তার কসাই । কয়েকটা চিহ্নিত মিডিয়া সে উদ্দেশ্যে(স্বাস্থ্য সেবা ধ্বংস করতে) আমাদের ভিলেন বানাচ্ছে । ডিয়াগুলোতে ডাক্তারদের সম্পর্কে ইতিবাচক কথা কখনো আসেনা । তার উপর ডাক্তারদের সম্পর্কিত বিভিন্ন খবরে কমেন্ট মডারেশনে বাদ দেয় । কী আসহ্য পক্ষপাতিত্ব ।"
এতকাল বলে এসেছি এদের পর্দার আড়ালে থেকে ফান্ডিং করে ইন্ডিয়া-চায়না-মালয়শিয়া। আজকের এই একটা বিজ্ঞাপনই সেই ফান্ডিং পর্দার আড়াল থেকে লোকচক্ষুর (অবশ্যই বিবেক-বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের) সামনে নিয়ে আসলো।
আসুন নিজ দেশের ডাক্তারকে কসাই ডাকি, শ্রীলেদার্সে শপিং করে আসি।

সংগৃহীত 

Wednesday, May 27, 2015

বাংলাদেশ বনাম ভারতঃ রোগীর সেবা, একাউন্টিবিলিটি ও পোস্টগ্রাজুয়েশন


আমার কাছে সব সময়ই এটা একটা ধাঁধা ছিল কেন বাংলাদেশের রোগীরা ভারতে চিকিৎসা করতে যায়? কেন বাংলাদেশের চিকিৎসকদের নামে এতো অভিযোগ? কেনই বা চিকিৎসা প্রার্থী রোগীদের বিদেশ গামী মিছিল ক্রমবর্ধমান?
এই বিষয়ে একটা ইন্টারেস্টিং আলাপ করার সুযোগ হল আমার দুই সহপাঠীর সঙ্গে। যারা বাংলাদেশে চিকিৎসক হিসেবে প্রশিক্ষিত, বাংলাদেশেও ডাক্তারি করেছে এবং এখন ভারতে ডাক্তারি করছে। এই দারুণ অভিজ্ঞতা পরিস্থিতির মূল্যায়নে কাজে লাগতে পারে জন্য ওদের এই একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলাম। দুজনেই দুই দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং চিকিৎসার মান নিয়ে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল। আমি দুজনের নাম উল্লেখ করছিনা, দুজনেই ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ। একজন ভারতের একটি নামকরা ক্যান্সার হাসপাতালের বোন ম্যারো ট্র্যান্সপ্লান্ট ইউনিটের প্রধান এবং আরেকজন হেড অ্যান্ড নেক ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ।
প্রথমেই দুজন বলে নিল, "যে সাধারণভাবে পশ্চিম বঙ্গে বাঙালি চিকিৎসকদের মান সর্ব ভারতীয় মান থেকে অনেক পিছিয়ে। তারপরেও সেটা বাংলাদেশের সার্বিক মান থেকে ভালো।" আমি জানতে চাই, ঠিক কোথায় কোথায় ভালো? কেন ভালো?
আমার হেড অ্যান্ড নেক ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ বন্ধু বলতে শুরু করলো।
১/ আমরা এখানে এককভাবে কোন চিকিৎসা সিদ্ধান্ত নেই না। হেড অ্যান্ড নেক ক্যান্সারে সেটা নেয়ার সুযোগ নেই। আমরা একসাথে রেডিয়েশন অনকোলজি, মেডিক্যাল অনকোলজি আর সার্জিক্যাল অনকোলজি বিশেষজ্ঞ একসাথে রোগী দেখি প্ল্যান অব ট্রিটমেন্ট একসাথে করি আর রোগী এবং রোগীর সাথের মানুষকে একসাথে কাউন্সেল করি। আমরা ব্যাড নিউজ চেপে রাখিনা। যেই রোগীর ভালো হওয়ার সম্ভাবনা আছে তাঁর চিকিৎসা শুরু করার জন্য উৎসাহিত করি, আর যেই রোগী ভালো হবেনা তাঁর শুধু ব্যাথা বেদনা উপশমের চিকিৎসা করার উপদেশ দেই। সেকারনেই রোগী একেকজনের কাছে থেকে একেকরকম সাজেশন পায়না। ফলে রোগী বা রোগীর মানুষ বিভ্রান্ত হয়না।
২/ রোগীর পুর্নাংগ চিকিৎসায় কত টাকা করচ হবে সেটার ধারনা দেই। রোগীর যদি সেই আর্থিক সামর্থ্য না থাকে তবে আমরা সেই রোগীর চিকিৎসা শুরু করিনা। কারণ চিকিৎসা শুরু করে মাঝপথে থেমে যাওয়ার কোন অর্থ নেই।
এবার দুজনেই বলতে শুরু করলো। আরো কিছু বিষয় আছে যেগুলো ভারতীয় চিকিৎসকদের আলাদা দক্ষতা তৈরি করেছে। যেমন সুপার স্পেসালাইজেশন। ধরা যাক একজন ক্যান্সার সার্জন বা অনকোলজি সার্জন হবেন। তাঁকে আগে জেনারেল সার্জারিতে পৌস্ট গ্রাজুয়েশন করে তার পরে ক্যান্সার সার্জারিতে সুপার স্পেসালাইজেশন করতে হবে। মোট সময় লাগবে কমপক্ষে ছয় বছর এম বি বি এসের পর। বাংলাদেশে এটা নেই। কেউ কেউ ব্যাক্তিগতভাবে এভাবেই সুপার স্পেসালাইজেশন করে থাকেলও প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে জেনারেল সার্জারি না করে কেউ ইউরোলজি সার্জন হয়ে যেতে পারে। মেডিসিনে স্পেসালাইজেশন না করেও বক্ষ ব্যাধি বিশেষজ্ঞ হয়ে যেতে পারেন। এর ফলে যেটা হয়; সেটা হচ্ছে সুপার স্পেসালাইজেশনের সুফল রোগী পায়না। পৃথিবীর কোন দেশে এভাবে সুপার স্পেসালাইজেশন ডিগ্রি নিতে পারেনা, বাংলাদেশ ছাড়া। আগে মেডিসিন স্পেশালিষ্ট না হয়ে কার্ডিওলজিতে ডিগ্রি নেয়া অসম্ভব।
বাংলাদেশে এম বি বি এসের পরে রাষ্ট্র লেখাপড়ার কোন দায়িত্ব নেয়না। যারা সরকারি চাকরিতে ঢুকল তারা বাধ্যতামূলক দুই বছর গ্রামে কাটানোর পরে পৌস্ট গ্রাজুয়েশনে ঢোকার সুযোগ পায়। আর ভারতে যারা নিজস্ব মেধায় পৌস্ট গ্রাজুয়েশনে ভর্তির সুযোগ পায় তাঁরা মাসে ভারতীয় টাকায় ৫০ হাজার রুপি ভাতা পায়। তাই লেখাপড়া ছাড়া আর কোন কিছুর চিন্তা করতে হয়না তাঁদের। আর বাংলাদেশে বেসরকারি ডাক্তাররা রাত্রে নাইট ডিউটি করে সকালে পৌস্ট গ্রাজুয়েশনের ক্লাস করতে যায়। দুই জনের আউট কাম তো একরকম হবেনা।
ভারতে মেডিক্যাল এডুকেশনের কোয়ালিটি কন্ট্রোল আরেকটা বিষয়। সরকারি মেডিক্যাল কলেজ গুলোকেও দুই বছরের জন্য মাত্র ছাত্র ভর্তির অনুমতি দেয়া হয়। দুই বছর পরে আবার ইন্সপেকশন হবে, সেই ইন্সপেকশনে কোয়ালিফাই করলে আবার পরবর্তী দুই বছরের জন্য ছাত্র ভর্তির অনুমতি দেয়া হবে। ভারতে অনেক নামকরা সরকারি মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র ভর্তির অনুমতি মাঝে মাঝেই বাতিল হয়ে যায়।
আরেকটা বিষয় হচ্ছে ভারতের ডাক্তারদের অ্যাকাউন্টেবিলিটি। ভোক্তা অধিকার সেখানে রাষ্ট্র দারুনভাবে সংরক্ষণ করে। চিকিৎসা অবহেলার অভিযোগে রাষ্ট্র রোগী বান্ধব অবস্থান নেয়, ফলে চিকিৎসকেরা একটা নিয়ত চাপের মধ্যে থাকে এবং নলেইজ আপ ডেইট থেকে শুরু করে ও অতি সতর্কতার সঙ্গে রোগীর চিকিৎসা চালায়। আমার সেই বন্ধুদের হাসপাতালে সেই সময়ে ডাক্তারদের বিরুদ্ধে চলমান মামলা ছিল ১১ টি। একটি হাসপাতালেই এই সংখ্যা। সারা ভারতে তাহলে কতগুলি? বাংলাদেশে চিকিৎসা অবহেলায় স্বাধীনতার পরে মাত্র একজন চিকিৎসক শাস্তি পেয়েছে, তাও একজন চাকমা চিকিৎসক। সবচেয়ে ক্ষমতাহীন সম্প্রদায়ের মানুষ, তাই শাস্তি দেয়া সহজ। ভারতে প্রত্যেক বছর অসংখ্য চিকিৎসক শাস্তি পায়।
শেষে আমার বন্ধুটি কয়েকদিন আগেই পাওয়া রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের একজন প্যাথলজির অধ্যাপকের দেয়া লিম্ফোমার রিপৌর্টের কথা জানালো। তিনি আমাদের দুজনেরই শিক্ষক ছিলেন। তিনি এফ এন এ সি করে লিম্ফোমা বলে রায় দিয়েছেন। আমার বন্ধুটি বলল, “ স্যার এটা জানেন না যে এফ এন এ সি করে লিম্ফোমা ডায়াগনোসিস করা যায়না, ইম্মিউনোহিস্টোকেমিস্ট্রি করতে হয়, এটা আমি মানতে পারিনা। স্যার কে এই কথা কে বুঝাবে?”
আজকের দিনে কোন মানুষ বদ্ধ দুনিয়ায় বাস করেনা। সারা পৃথিবী তাঁর জন্য খোলা। ইন্টারনেট উন্মুক্ত করে দিয়েছে তাঁর সামনে পুরো পৃথিবী। সে নিজেই বিচার করে নিতে পারবে সেরা চিকিৎসাটি সে পাচ্ছে কিনা? বিন্দুমাত্র সন্দেহ দেখা দিলে সে আর সেই চিকিৎসকের কাছে ফিরেও আসবে না। এই হতাশা জনক অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে জরুরি ভিত্তিতে বাংলাদেশে চিকিৎসা শিক্ষার এবং সাথে সাথে চিকিৎসা সেবার মান বাড়াতে হবে। আর সেটা না পারলে রোগীর বিদেশ মুখিন মিছিল ঠেকানোর সাধ্য কারো নেই।
----------
ডাঃ পিনাকী ভট্টাচার্য

মানবসেবার দায়ভার - ডাক্তারদের একার ?

চারটা বাস্তব ঘটনা

দৃশ্যপট ১

মঞ্জু একটা ছোট চাকরি করে
মাসে মাইনে পায় তিন হাজার দুইশ টাকা।
গত মাসে অসুখ হয়েছিল খুব, এক হাজার টাকা ধার হয়ে গেল।
কিভাবে পাওনা দেবে, দিয়ে কিভাবে চলবে বাকি মাস ভাবছিল সে। হঠাত মায়ের কথা মনে পড়ে গেল।
মা বলছিল, বাবা এই মাসে বাড়িত হাজারটা টাকা পাঠাইস, ঘরে চাল নাই।
আমেনা আপার বাড়ি হইতে ভাতের মাড় নিয়ে খাই। তোর ছোটভাইটার অসুখ খুব "
মঞ্জু ভেবে পায়না তার এখন কি করা উচিত।
সারা পৃথিবীর অন্ধকারগুলো তাকে ঘিরে ধরছে ক্রমশ

দৃশ্যপট ২

ভোরবেলা দরোজায় হালকা আওয়াজ শুনে ঘুমঘুম চোখে দরজা খুললেন সুরাইয়া বেগম।
সামনে হাড় জিরজিরে চৈতার মা দাড়িয়ে আছে।
তার চোখমুখে ফুটে উঠেছে অসহায়ত্ব।
শরীরে জড়ানো এক ছেড়া শাড়ি, কোন ভাবে লজ্জা ঢেকে রেখেছেন।
কে বলবে এই চৈতার মা একসময় সুরাইয়ার সহপাঠী ছিলেন!
সুরাইয়া শহুরে ছেলের সাথে বিয়ে করে বিয়ে করে শহরে পাড়ি জমালেন, চৈতার মা থেকে গেলেন গ্রামে।
"আপা, এই ছাগল টা পাচ দশ টাকায় কিনে নেন আপা। বন্যায় ঘর ভাইসা গেছে। চারদিন ধরে সজিনাডাঁটা সিদ্ধ করে খাই। এই ছাগলের বাচ্চাডা কিনেন আপা।''
সুরাইয়া দেখেন, ছোট্ট এক ছাগলছানা, খুব বেশি হলে চার পাঁচদিন বয়স হবে হয়ত, এখনো মায়ের দুধ না খেয়ে কিভাবে বেঁচে আছে কে জানে।
ছাগল ছানার চোখে ভয়, চৈতার মার চোখে অসহায়ত্ব

দৃশ্যপট ৩

বোয়ালিয়ার জমিদারের আদরের মেয়ে আসিয়া বেগমের বিয়ে হয়েছিল একজন সাধারন চাকুরীজীবীর সাথে।
বর ধার্মিক মানুষ।
জগতে টাকা পয়সা জমিয়ে রাখার পক্ষপাতী ছিলেন না।
ভবিষ্যতে কি হবে জিজ্ঞেস করলে উনি অমায়িক হাসি দিয়ে বলতেন, সব উপরওয়ালার ইচ্ছা।
একদিন দশজন ছেলেমেয়ে আর ধারদেনা মাথায়নিয়ে উনি হুট করে মারা গেলেন ।
আসিয়া বেগমের মাথায় পাহাড় ভেঙে পড়ল।
দশ ছেলেমেয়ের ভেতর বড় দুইটা মেয়ে ছাড়া সবাই ছোট, পড়াশোনার খরচ দেওয়া দূরের কথা, এই দশটা মুখকে খাওয়াবেন কি?
বড় ছেলেটা এবার মেডিকেলে ভর্তি হয়েছে, বাপের খুব শখ ছিল ডাক্তার বানাবে বড় ছেলেকে। সেই ছেলেটার কি হবে?
উনি নিজের আত্মমর্যাদা কে কবর দিয়ে ছুটলেন মায়ের বাড়ি, ততদিনে বাপ মা কেউ বেঁচে নেই।
ভাইরা জায়গা জমি নিজেদের ভেতর ভাগ করে নিয়েছে।
আসিয়া বেগম ভাইদের পা ধরলেন, মাথার ঘোমটা ফেলে সদর দরোজায় আলুথালু চুলে বসে পড়লেন এককালের অভিজাত আসিয়া বড়ভাইরা তামাশা করলেন, ভাবীরা ঘাড়ে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিলেন।
গলায় দড়ি দিতে যেয়েও দিতে পারলেন না আসিয়া, ঘরে যে দশটা ছোটছোট বাচ্চা রেখে এসেছেন!
অভুক্ত সন্তানের কথা ভেবে নিজ বাড়ির পথে হাটা ধরলেন।
পথে মানুষ হাততালি দেয়," দেখ দেখ, ভাত পায়না ব্যডাক দাক্তরী পড়াবে। জগতের কুফা। স্বামীডারে খ্যাছে, নিজের ছোলগুলাক না খিলে থুছে ডাইনী কোথাকার।"
আসিয়া নীরবে চোখের জল ফেলেন।

দৃশ্যপট ৪

রাজশাহী মেডিকেলের ১৪ নাম্বার ওয়ার্ড।
ফুটফূটে একটা ছেলে বেডে শুয়ে আছে, তার মা হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছেন পরম মমতায়
ছেলেটার ক্যান্সার ধরা পড়েছে।
চিকিৎসা করতে খরচ লাগবে প্রচূর।
সদ্য ওয়ার্ড করতে আসা মেয়েটা জিজ্ঞেস করল, চিকিৎসা করাবেন না?
ছেলেটার মা হাসিমুখে বলে, মা, আমি গ্রামে স্কুলের মাস্টার, ছেলের বাবা আমাকে ছেড়ে সিলেটে অন্য এক মহিলাকে বিয়ে করেছেন। উনি কোন যোগাযোগ করেন না। যেই বেতন পাই, খাওয়াই জোটে না ঠিকমত, ছেলের চিকিৎসা কিভাবে করি বল মা? ঘরে আরেকটা ছোট ছেলে আছে। সোনার একটা নাকফুল ছিল। বেঁচে কিছু টাকা পাইছি। ছেলেটার জন্য ভালমন্দ কিছু কিনে দেই যতদিন বাঁচে। ছেলেটার আংগুর খুব পছন্দ মা। ''
মায়ের কন্ঠস্বর ভারী হয়ে ওঠে।
ছেলেটার শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুত হতে থাকে, মা আরো জোরে জোরে বাতাস করতে থাকেন "
চারটা ঘটনা লেখলাম।
প্রথম টা একজন ফেসবুক বন্ধুর ঘটনা, দ্বিতীয় গল্প আমার নানি সুরাইয়া বেগমের,তৃতীয় গল্প আমার দাদী আসিয়া খাতুনেরর এবং চতুর্থ গল্প সরাসরি আমার চোখে দেখা বাস্তব।
বাংলাদেশের অত্যন্ত স্বাভাবিক চিত্র এই চারটা ঘটনা
এরকম হাজার হাজার ঘটনা ঘটে চলেছে প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত।
মানুষ কতটা অসহায় হতে পারে, তার উদাহরণ বাংলাদেশের।
পৃথিবীতে মানবাধিকার ক্ষুন্ন করা নিয়ে অনেক হইচই হয়, আর বাংলাদেশে মানবাধিকারের অস্তিত্বই নেই।
দেশের এই দারিদ্র্য কে যদি অসুখের সাথে তুলনা করি, আর দরিদ্র জনগন কে অসুস্থ ধরি
আর অবস্থাপন্ন জনগনকে সুস্থ
এখন, আপনিই বলুন, একজন অসুস্থ, একজন রোগীর চিকিৎসা কি রোগী নিজে করবেন, না তার চিকিৎসায় সুস্থ মানুষ কে এগিয়ে আসতে হবে?
এই অসুস্থ জনগনের চিকিৎসার দায়িত্ব কি অবস্থাপন্ন মানুষের নেওয়া কর্তব্য না??
সমাজে একজন ডাক্তারের কাছে মানুষ অনেক অসহায় অবস্থায় যায়, একজন দরিদ্র সেরকম একজন ধনীর কাছে অসহায়। সেক্ষেত্রে একজন এমবিবিএস ডাক্তার যেমন চিকিৎসক, একজন মানবতাবোধসম্পন্ন ধনীও চিকিৎসক। একজন রোগের চিকিৎসা করেন, আরেকজন দারিদ্রের।
দেশে রোগের ডাক্তার অনেক, দারিদ্রের ডাক্তার কজন??
দেশে ধনীদের সংখ্যা আন্দাজ করার জন্য রাজধানীতে রিকশার চেয়ে বেশি গাড়ি আর নান্দোসের দশ হাজার টাকা দামের মুরগীর মাংসের আইটেম ই সবচেয়ে ভাল উদাহরন।
মানবসেবার ঠিকাদারি শুধু MBBS FCPS পাশ করা কয়েকজন মানুষের না, মাইকে গলা ফাটানো কয়েকজন নেতার না , জায়নামাজে বসা মানুষগুলার না, এই দায়িত্ব সবার
ডাক্তারদের গ্রামে যাওয়া নিয়ে কটাক্ষ করে যাওয়া মানুষ,সুযোগ পেলেই মাথা ফাটিয়ে রক্তাক্ত করে দেন,খুন করে পুকুরে পুতে ফেলেন, রেপ করেন। আমজনতা শুধু ডাক্তারের প্রতি তিলে তিলে জমা রাগ ক্ষোভ আর প্রতিহিংসার বশে ডাক্তারের নিরাপত্তার জন্য এগিয়ে আসেন না। গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকা মেডিকেল ঃ ডাক্তার মার খেলে, খুন হলে সবাই ডাক্তারের দিকে সবগুলা আঙ্গুল তাক করেন।
একবার নিজেকে আয়নার সামনে ধরে দেখেন, নিজে কতবার গ্রামে যেয়ে অসহায় দুঃস্থ মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন
ডাক্তারদের দিকে আংগুল তোলার আগে একবার ভেবে দেখেন, নিজেও একজন মানুষ হয়ে জীবনে কতটুকু করেছেন মানুষের জন্য?
মানবসেবার দায়ভার - ডাক্তারদের একার ?
----------
নিসর্গ অমি

Tuesday, May 5, 2015

বোধদয়

তার সাথে তখন প্রায় চার বছর পরিচয়।
ভাল ছেলে।
পাচ বেলা নামাজ পড়ে।
......
তখন ও আমি ব্যাপারটা জানতাম না।
....
দীর্ঘ চার বছর পর অন্য আরেক জনের কাছে জানলাম, " সে হাফেজ। কোরানে হাফেজ"
...
আমরা বিস্মিত হলাম। এতদিন ধরে পরিচয় কখনো ঘূর্নাক্ষরে জানতে ও পারলাম না!!!!
......
তাকে বললাম, " কিরে ভাই, এতদিনের সম্পর্ক। কই কখনো তো শুনলাম না তোমার মুখে.....
.........
তার জবাব ছিল আমার জন্য একটা ধাক্কা, বিস্ময় এবং রিয়ালাইজেশন।
.......
....
সে জবাব দিল- ভাই কথা সত্য। আমি হাফেজ। কিন্তু একজন হাফেজের যেভাবে জীবন যাপন করা উচিত আমি সেভাবে পুরোপুরি পারি না। কাজেই আমি হাফেজ পরিচয় দিলে, মানুষের হাফেজ সম্পর্কে ভুল ধারনা হবে।
.....
....
এই বোধদয় এখন আস্তিক, নাস্তিক, শিক্ষিত,অশিক্ষিত...... অনলাইনে, অফলাইনে দরকার। ভীষণ দরকার।

সংগৃহীত 

Sunday, April 5, 2015

বাংলাদেশে ডাক্তার হওয়া অনেক সহজ

আমার এক বড় ভাই (মেডিসিনের ডাক্তার ) আমার কাছে এক রোগী নিয়ে আসছে। রোগী নিজেকে সমাজ সেবক পরিচয় দিয়ে হাসপাতালে ডাক্তারদের সেবার মান নিয়ে ধোঁয়া তুলতেছেন......

বড় ভাই বলল- এইসব সমাজ সেবা/ মনব সেবার কথা আমার কাছে বলবেন না। এইসব বলার আগে আপনি বলেন- আপনি মানুষের কি সেবা করেন? আপনি সমাজ সেবক- তাহলে মানুষ ফুটপাথে ঘুমায় কেন? অন্তত একটা মানুষকে আপনার বাসায় নিয়ে গিয়ে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করেন।

রোগী- এইটা কোন কথা হইল না।

বড় ভাই- তাহলে আমাকে বলেন, আপনি সমাজের কি কি সেবা করেন?

আমি রোগীকে বললাম- নির্বাচনের সময় পোস্টার / ব্যানারে দেশ ছেয়ে যায়, " অমুক কে ভোট দিয়ে জনগণের সেবা করার সুযোগ দিন।" কি সেবা করেন জনগণের? নিজের ব্যাংক একাউনট ভারী করা ছাড়া জনগণের আর কি কি সেবা করছেন?

রোগী চুপ করে রইল।


বড় ভাই বলল- ডাক্তারদের সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন তোলার আগে দুই দিন আমার সাথে থাকবেন, আমার সাথে রাত জেগে মানুষের সেবা দিবেন- তারপর কথা বলবেন।


রোগী চুপচাপ বসে রইল, আর একটা কথাও বলল না...।


শুধু হাসপাতালে আসলেই এই আবাল গুলার মানব সেবা/ সমাজ সেবার কথা মনে পড়ে...!!??

 এখন বাংলাদেশে ডাক্তার হওয়া অনেক সহজ।
 ডাক্তারদের সেবা নিয়ে যদি তোদের এতই আপত্তি- তাহলে নিজের ছেলে মেয়ে কে মেডিকেল এ পড়া (সরকারিতে চাঞ্চ না পেলে বেসরকারিতে পড়া) ।
 ডাক্তার বানিয়ে সেই গুলারে দিয়ে দিন রাত মানুষের সেবা করা। 
কেউ তোকে না করে নাই।
-------
ডা আসাদ জামান

Saturday, April 4, 2015

ডাক্তারের ভিজিট ফ্রি ‘অইবো’ না ক্যা ?



হুজুরের পানি-পড়া ফিরি ‘অইলে’ ডাক্তারের ভিজিট ফ্রি ‘অইবো’ না ক্যা ?

ভাঁটোদাঁড়ার ইসমাইল কবরেজকে বিশ ট্যাকা দিয়া কাম অইলে ‘ডাক্তার’কে এতো ট্যাকা দেয়া লাগবো ক্যা ?

শিবুর ফার্মেসীত্তে বিনা ভিজিটে কয়েক ফাইল ‘অসুদ’ কিনা গেলে ডাক্তারের ভিজিট এতো টাকা অইবো ক্যা?

ক্যা ? ক্যা ? ডাক্তারের ভিজিট এত্ত ক্যা ?

ঘূর্নন-গতিতে আক্রান্ত তিন-পাখার ফ্যানটার দিকে চেয়ে চেয়ে এই ‘ক্যা-ক্যা’র উত্তর খুঁজছিলাম বাংলা সিনেমার বিজ্ঞাপন কন্ঠ গাজী মাজহারুলের মতো।সহজ কথার সহজ উত্তর সহজেই পেলাম না।

সত্যিই তো ?

এই দেশে যার পকেটে যত টাকা আছে তার মালিক তো বুর্জোয়া লুটেরারা।

রাজনীতিবিদ,আমলা,ব্যবসায়ীরা দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা খেয়ে হজম করে ফেললেও আমরা রোগী দেখে ভিজিট নেব কেন?নিলেও এত কেন ?

মহান আল্লাহ আমাদের ‘চারার’ একটা পেট দিছে সেটাতে কি আবার খাওয়া ভরতে হয় নাকি?‘চারা’ খাইলেই তো হয় !
সাম্প্রতিক সময়ে সমাজের সবচাইতে ‘সেক্সি’ ‘ইভ’ হচ্ছে ‘ডাক্তার’ সম্প্রদায়।যে যার মতো এই ইভকে নিয়ে ‘ইভ-টিজিং’এ মত্ত।


ডাক্তারের ভিজিট নিয়ে যাদের পিত্তিটা জ্বলে তারা কি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন আপনার মুঠোফোনের একটা কলও কি ব্যয় করেন নি কোন পরিচিত ডাক্তারের ফোনে কল করে।

অবশ্যই করেছেন।

যার টাকা কেটে রেখেছে ফোন কোম্পানী, আপনার বন্ধু-ডাক্তারটিও না, আপনার আত্নীয় ডাক্তারটিও না।আপনি কিন্তু আপনার চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শটি পেয়ে গেছেন।

একটা থ্যাংকস ছাড়া কি কিছু দিয়েছেন আপনার অল্প-স্বল্প কিংবা অতি পরিচিত ডাক্তার সাহেব কে ?
 
তারপর ও আপনার পিত্তি এতো জ্বলে কেনো?

দোকানীর কাছ থেকে পানি তো দূ্রের কথা একটা ম্যাচের কাঠি ও তো ফ্রি কিনতে পারেন না !

 লেখাটি এখান থেকে নেয়া। 

Monday, March 16, 2015

হাশরের ময়দানে ধরা খাওয়ার অপেক্ষায়...

সেদিন আউটডোরে রোগী দেখছি
এক মহিলা আসল , দাঁতে ব্যথা
দেখলাম , গভমেন্ট সাপ্লাই tc bc pc ( tetracycline , vit b complex , paracetamol ) দিয়া ডেন্টাল পেইনের ট্রিটমেন্ট দেওয়া আর ছাগল দিয়ে হাল চাষ সমান
কাজের কাজ কি হবে আল্লাহই জানে , তবে ডাক্তারের বদনাম হবে এইটুক শিওর
তো আমি ওষুধ লিখে দিলাম , বললাম কিনে খেতে হবে
মহিলা জিজ্ঞেস করল , সরকারী সাপ্লাই নাই ?
বললাম আপনার যে সমস্যা তার জন্য সরকারীভাবে ভাল কোন ওষুধ সাপ্লাই নাই , আর যা আছে এটা দিয়ে কোয়ালিটি ট্রিটমেন্ট হবে না
মহিলা বলল , ওষুধ সরকার ঠিকই দেয় , আমরা জানি , আপনারাই দেন না , হাসরের ময়দানে কিন্তু ধরা খাইতে হবে
মানুষের বিশ্বাসে নাকি আঘাত করতে নেই ।
সরকারী ওষুধ নিয়ে মহিলার এই অগাধ বিশ্বাসটুকু ভেঙে দেওয়ার ইচ্ছা হল না ।
আর একা কয়জনেরটাই বা ভাঙব ।
যাই হোক মহিলা চলে গেল
আমি বসে রইলাম
হাসরের ময়দানে ধরা খাওয়ার অপেক্ষায় .
লেখা - ডা: যুবায়ের আহমেদ

Saturday, January 3, 2015