Friday, August 12, 2016

চোখ থাকতেও অন্ধ আমরা!

বিদেশী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকবৃন্দ মোস্তাফিজকে দেখতে যা নিয়েছেন-
ড. কোচারের কনসাল্টেশন ফি ১০০০ পাউন্ড ( বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লক্ষ দশ হাজার টাকা)
ড. ফাংকের কনসাল্টেশন ফি ১০৫০ পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লক্ষ ৬ হাজার ৫০ টাকা) এবং
ড. ওয়েলস এর কনসাল্টেশন ফি আর অপারেশন করতে খরচ হবে ৯ হাজার ২৪ পাউন্ড- (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৯ লক্ষ ৩৩ হাজার ২৪০ টাকা)
আর আমাদের দেশে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ভিজিট ফি ৫০০/ ১০০০ বা সর্বোচ্চ ১৫০০ টাকা
এরপরেও আমরা দেশী চিকিৎসককে বলিবো "কসাই"

 এবার শুনুন-
- বাংলাদেশে iPhone এর দাম ৮৯,৯৯৯/-, লন্ডনেও সমমূল্যের পাউন্ডের!
- বাংলাদেশে GALAXY phone গুলোর যে দাম, লন্ডনেও সমমূল্যের পাউন্ডের!
- বাংলাদেশে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য যন্ত্রপাতির যে দাম, লন্ডনেও সমমূল্যের পাউন্ডের!
আপনার iPhone, Galaxy S6,7,8... edge, plus কিনতে কোন সমস্যা হয় না। বছর বছর সেট পরিবর্তনেও কোন সমস্যা নেই।
সমস্যা শুধু চিকিৎসক দেখাতে যেয়ে, তাকে তার প্রাপ্য সম্মানী দিতে। নিজের জীবন আর সুস্থ্যতার থেকে মোবাইল ফোন আর টিভির দাম বেশী হলে আমার বেশী কিছু বলার নেই!

এখানে মাথাপিছু আয়ের যুক্তি ধোপে টিকে না। মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে সব কিছুর দাম যখন বেশী তখন এই পৃথিবীতে মানুষের দাম সব থেকে কম আর মানুষের মধ্যে বাংলাদেশে সব থেকে কম "চিকিৎসকদের"!
আর গরীব রোগীদের কথা বলছেন?
সরকারি হাসপাতালগুলোতে যেয়ে দেখুন, কীভাবে দিনে লাখ লাখ গরীব রোগীদের "বিনা পয়সায়" বা নাম মাত্র ২০ টাকা ফী নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে প্রতিদিন!
চোখ থাকতেও অন্ধ আমরা!

>>কালেক্টেড পোস্ট<<

Monday, August 1, 2016

আবার তোরা মানুষ হ‬

#‎ঘটনা_১‬

আম্মুকে নিয়ে ল্যাব এইডে হাসপাতালে এসেছি।আম্মুর কিডনীর অবস্থা খুবই করুণ, টার্মিনাল স্টেইজ, মেডিকেলের ভাষায় CKD- Stage V।শরীরের এক অঙ্গ বিদ্রোহ স্টার্ট করলে বাকী অঙ্গগুলোও তাকে ফলো করে।আম্মুর ক্ষেত্রেও সেটাই হচ্ছে।সিরিয়াল দিয়ে নেফ্রোলজিস্টের কল এর জন্য ওয়েট করছি।

‪#‎ল্যাব_এইড‬ আমার পছন্দের জায়গা না, এরপরও আমাকে বারবার এখানে আসতে হয়। এই জায়গাটায় আসলে আমার মনে পড়ে ৭ বছর আগে কোন এক রাতে এই হাসপাতালে আমার চোখের সামনে আব্বুকে CPR, DC Shock দেয়া হচ্ছে, আব্বুর কোন রেসপন্স নেই, আমার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে, আমি গভীর মমতায় আব্বুর প্রাণহীন দেহ জড়িয়ে চুমু খাচ্ছি।এখানে আসলেই আমার মনে পড়ে এক নিঃস্তব্ধ রাত্রিতে আমি এখান থেকে বাসায় ব্যাক করছি আব্বুর প্রাণহীন দেহ নিয়ে, উনার মাথাটা আমার কোলে।আমার বাম হাতে ছিলো ল্যাব এইড থেকে ইস্যুকৃত আমার পিতার ডেথ সার্টিফিকেট।

এইসব ভাবতে ভাবতেই আমাদের সিরিয়াল চলে আসলো।আমি আম্মুকে নিয়ে ডাক্তারের রুমে ঢুকলাম।ভেতরে ঢুকে বুঝতে পারলাম আসলে এখনও আমাদের সময় আসেনি।ডাক্তার সাহেব এই মুহূর্তে আমাদের সামনেই একজনকে দেখছেন।তারপরের জন আমাদের পাশেই বসে আছেন।‪#‎প্রাইভেসি‬ বলে কিছু নেই।যাকে এই মুহূর্তে ডাক্তার দেখছেন তিনি যথেষ্ঠ অনুনয়-বিনয় করছেন তার রোগটা কি সেটা বোঝার জন্য।ডাক্তার সাহেবের সেদিকে ভ্রূক্ষেপ নেই।উনার লেখা শেষ হতেই উনি ট্রিটমেন্ট এর কাগজটা রোগীর হাতে ধরিয়ে দিয়ে পরেরজনকে ডাক দিলেন।
যখন আমাদের ডাক পড়লো, তখন আমি এর আগের সমস্ত চিকিৎসার কাগজ উনার সামনে দিলাম।যেহেতু আমি চিকিৎসক, কাজেই জানি কোন কাগজগুলো উনার প্রয়োজন হবে, আমি সেভাবেই কাগজগুলো গুছিয়ে রেখেছিলাম। উনি কাগজের উপর চোখ বুলিয়ে আম্মুর ব্লাডপ্রেসার চেক করে প্রেসক্রিপশন প্যাডে খসখস করে চিকিৎসা লেখা শুরু করলেন।মাঝে আম্মু একবার একটা প্রশ্ন করলেন, ডাক্তার কোন উত্তর দিলেন না।কম্যুনিকেশনের কোন বালাই নেই। আমি মনে মনে বললাম, ‪#‎হলি_কাউ‬!

উনার কাছে এসেছিলাম নেফ্রোলজি ডিপার্টমেন্ট এ থাকা এক ছোট ভাইয়ের কথা শুনে।আমাকে বলা হয়েছিলো, 'স্যার কম কথা বলেন।' তাই আমি এই ব্যাপারটায় প্রিপেয়ারড্ ছিলাম।প্রেসক্রিপশন আমার হাতে দিয়ে উনি বললেন," নেক্সট"।

আমি প্রেসক্রিপশন হাতে নিয়ে দেখলাম, অনেক দামী- দামী ওষুধ সহ প্রতি মাসে দিতে হবে এরকম প্রায় এগারো হাজার টাকা মূল্যের ইনজেকশনও আছে, তাতে আমার বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই, আপত্তি তখনই যখন দেখলাম উনি Antihypertensive দিতেই ভুলে গেছেন।কি দেখলেন ও চিন্তা করলেন এতক্ষণ? উনাকে বলা মাত্র উনি 'ওহ' করে কাগজটা নিয়ে Antihypertensive টা লিখলেন। হায়রে আমার ভালো চিকিৎসক!!!


‪#‎ঘটনা_২‬

এবার ভিন্নরকম একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করি।তখন আব্বু বেঁচে ছিলেন, আমি তখন ডিএমসির ফিফথ্ ইয়ারে ।আম্মুর পায়ের পাতায় তীব্র ব্যথা( এখন বুঝি, ওটা ছিলো Gout)।আব্বু আম্মুকে নিয়ে গেলেন ল্যাব এইডে ‪#‎প্রফেসর_ডাঃ_আমজাদ‬ স্যারের কাছে। আমি বাসায় ছিলাম। হঠাৎ আম্মুর ফোন আমার মোবাইল এ।আম্মু বললেন, 'স্যার তোমার সাথে কথা বলতে চায়, নাও কথা বলো'। আমি হতচকিত অবস্থায় ফোন ধরার সাথে সাথে স্যার বললেন, " তোমার আম্মু অসুস্থ, তুমি আমার স্টুডেন্ট, অথচ তুমি আসোনি কেন?" স্যার তারপর আমাকে সংক্ষেপে আমাকে বুঝিয়ে দিলেন কি করতে হবে। আমার ছোট জীবনে সে তখন এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা।

‪#‎জাপানে‬ নাকি কিন্ডারগার্ডেন লেভেলে থাকতেই তিনটা কথা শেখানো হয়--"কননিচিওয়া"(হ্যালো), "আরিগাতোউ"(ধন্যবাদ), "গোমেননাসাই"(দুঃখিত)--তাদেরকে বোঝানো হয় একথাগুলো জীবনের জন্য খুব প্রয়োজনীয়, একথাগুলো যাতে তারা বারবার বলে, একথাগুলো যাতে তারা বারবার চর্চা করে।আমি শুনে মুগ্ধ হই। এবয়সে তাদের মন থাকে পবিত্র।একথাগুলো তাদের মনের ভিতর গেঁথে যায়।আমাদের দেশ জাপান না-রোগীকে সালাম/হ্যালো দিয়ে কথা বলা শুরু করতে হবে এটা আমাদের যখন শেখানো হয় ততদিনে আমাদের মনে পঙ্কিলতা বাসা বাঁধে। আমরা রোগীকে সালামটা দেই পরীক্ষায় বেশী নাম্বার তোলার জন্য, মন থেকে দেই না।

আমাদের দেশে ডাক্তার-রোগীর সম্পর্ক অনেকটা ‪#‎প্রভু_ভৃত্যের‬ মত।ডাক্তার এখানে প্রভু, রোগী ভৃত্য--রোগীরা তাই ডাক্তারের চেম্বারে ঢুকে উনাকে কুর্নিশ করবেন, এটাই বাস্তবতা।আমাদের চিকিৎসা কারিকুলামে Medical Ethics, Code of Conduct, Doctor-Patient Relationship নিয়ে যতটুকু আলোচনা করা হয় তা শুধু পরীক্ষায় পাশের নিমিত্তে।আমাদের Graduation ও Postgraduation লেভেলে শেখানো হয়-রোগীকে সালাম দিয়ে কথা শুরু করতে।যাদেরকে শেখানো হয়, তাদের কথা বাদ দিলাম, যারা শেখান তারা কি কখনোও তাদের চেম্বারে বা হাসপাতালে রোগীকে সালাম দিয়ে কথা শুরু করেন? বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন? এতে করে কি জাত চলে যাবে?আমরা ওয়েট করি রোগী এসে প্রথমে আমাকে সালাম দিবে, আমি গম্ভীরভাবে মাথা দুলিয়ে উত্তর দিবো।‪#‎হিপোক্রেসী‬ আর কাকে বলে! আসলে Doctor-Patient relationship ও Patient Communication এ আমরা এখনও জলের উপরেই উড়োউড়ি করছি, জল স্পর্শ করতে পারিনি।প্রকৃত শিক্ষা আমাদের অন্তরে প্রবেশ করেনি।

Member of Royal College of Physician(UK) এর ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় পাঁচটি স্টেশন এর একটি হলো Communication. এই অংশে দেখা হয় একজন ডাক্তার কত Sympathy, Empathy দেখিয়ে রোগীর সাথে ইফেক্টিভলি কম্যুনিকেট করতে পারে, কত আর্টিস্টিক উপায়ে একজন ডাক্তার রোগীর সাথে Rapport গড়ে তুলে রোগীর কাছাকাছি চলে যেতে পারে(দ্বিতীয় উদাহরণটি Rapport গড়ে তোলার একটি জলজ্যান্ত উদাহরণ)।অবস্থাটা এরকম যে এই কোর্সের ক্লাসের মাঝে এক ডাক্তার ইনস্ট্রাকটরকে জিজ্ঞেস করেই ফেললো যে, রোগীকেই স্যার ডাকতে হবে কিনা? আমাদের কারিকুলামে এরকম ব্যবস্থা কোথায়?

পাশ্চাত্য কান্ট্রিগুলোতে ডাক্তার রোগীকে তার রুমের দরজা থেকে মিস্টি হাসি দিয়ে অভিবাদন জানিয়ে নিয়ে আসেন, যাওয়ার সময় নিজে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে যান।আর আমরা? ডাক্তার হবার পর আমাদের ভাবটা অনেক ক্ষেত্রেই '‪#‎মুই_কি_হনু_রে‬' টাইপ।আমরা পাশ্চাত্যের ভালো জিনিস গ্রহণ করতে না পারলেও তাদের খারাপটা গ্রহণ করতে কার্পণ্য করিনি। ‪#‎প্রমথ_চৌধুরী‬ যথার্থই বলেছেন-"ব্যধিই সংক্রামক, স্বাস্থ্য নয়"।

আমাদের দেশে ডাক্তার-পেশেন্টের এই যে সাংঘর্ষিক অবস্থান, তার পিছনে আমাদের আচরণ অনেকাংশেই দায়ী।নিজেদেরকে শুধরাতে হবে।রোগীর সাথে ইফেক্টিভ কোয়ালিটেটিভ প্রোফেশনাল রিলেশনশিপ গড়ে তুলতে হবে। এটা তেমন কঠিন কিছু না। একটু হাসি,একটু বিনয়, রোগীর প্রতি একটু সিমপ্যাথীই যথেষ্ঠ ডাক্তার-রোগীর সম্পর্ককে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবার জন্য।


" আসসালামু আলাইকুম....বসুন....আপনার কষ্ট আমাকে খুলে বলুন.....আমি চেষ্টা করব যাতে আপনার কষ্ট কমানো যায়"---এই কয়টা কথা আমরা ডাক্তাররা কি বলতে পারি না? বিশ্বাস করুন, জাস্ট এই কয়টা কথাই তারা আমাদের কাছে শুনতে চায়।সাধারণ মানুষ টাকা দিয়ে আমাদের কাছে সেবা কিনতে আসে।আমরা কি প্রতিজ্ঞা করতে পারিনা যে আজ থেকে ‪#‎এটলিস্ট‬ এইটুকু সেবা আমরা নিশ্চিত করবো? এটলিস্ট এইটুকু???

>>কালেক্টেড পোস্ট<<