Thursday, March 28, 2024

এতটা জব ক্রাইসিস আমার কল্পনাতেও ছিলো না.

 1

 

উচ্চপদস্থ কর্পোরেট জব করেন এমন এক ব্যক্তি প্রায়শই আমার চেম্বারে আসেন। পরিচয়ের প্রথম দিকে তিনি অনেকটা গর্ব করে আমাকে জানাতেন যে তার বড় মেয়ের জামাইও ডাক্তার, তবে তার জামাই এখন লেখাপড়া ছাড়া আর কিছু করছে না, মাঝেমধ্যে আমাকে তার জামাইয়ের জন্য একটি চাকরী খুঁজে দেবার অনুরোধও করতেন... এর মাঝে তিনি দু'তিন বার আমার চেম্বারে এসে দেখিয়ে গেলেন, কিন্তু তার সেই চিকিৎসক জামাইয়ের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা আর শুনি না। 

শেষে একদিন আমি নিজেই চিকিৎসা লিখতে লিখতে জিজ্ঞেস করলাম, 'আপনার জামাইয়ের কি খবর?'... উনি অনেকটা ইতস্তত ভাবে বললেন, 'ভালো কোন চাকরী- বাকরী নাই, মেয়েকে খাওয়াবে কি! মেয়ের সাথে এডজাস্টও হচ্ছে না। দেখি কি করা যায়...' 

যা বুঝলাম সেটা হলো ডাক্তারদের অঢেল টাকার যে স্বপ্ন উনি দেখে মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন, বাস্তবে সেটার কোন মিল তিনি পান নাই। এর ফলাফল আমার কাছে খুব সুখকর কিছু হবে বলে মনে হচ্ছে না...

 

 ২...

 

 এক টেলিমেডিসিন কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর একদা আমাকে ফোন দিলেন। তিনি আমার পূর্বপরিচিত, কোভিডের শুরুর দিকে একটা মেডিকেল টিম আমি তাকে তৈরি করে দিয়েছিলাম, যারা সম্পূর্ণ বিনে পয়সায় এদেশের মানুষকে ২ মাস নিরবচ্ছিন্ন চিকিৎসা দিয়ে গিয়েছিলো...

 However, উনি আমাকে যে কারণে ফোন দিয়েছিলেন, সেই কারণটা বলি। উনি উনার টেলিমেডিসিন কোম্পানিতে ১০ জন ডাক্তার রিক্রুট করতে চান, উনি চাচ্ছেন এই ১০ জন ডাক্তারকে আমি যেন সিলেক্ট করে দেই... 

পেমেন্টের কথা জিজ্ঞেস করলাম। উনি জানালেন যে, যেহেতু অনলাইন সার্ভিস এবং দিনে ৮ ঘন্টার জব, কাজেই উনারা ১০ হাজার টাকা করে দিবেন... আমি হতচকিত হলাম! বললাম, 'দশ হাজারে তো ডাক্তার পাওয়া যাবে না!' 

উনি বললেন পাওয়া যাবে, ওনারা নিজেরাই যোগাঢ় করে নিতে পারতেন, কোয়ালিটি মেনটেইন করার জন্য জাস্ট আমার হেল্পটা নেয়া হচ্ছে... অবশ্য তিনি আমার হতচকিত অবস্থা দেখে ভরসা দিলেন যে উনি ইন ফিউচারে তাদের স্যালারী ইনক্রিজ করবেন... 

 আমি অনেকটা দ্বিধান্বিত এবং কিছুটা লজ্জিত অবস্থায় চিকিৎসকদের একটা গ্রুপে স্যালারী স্ট্রাকচার উল্লেখ করে ১০ জন চিকিৎসক চাইলাম। আমি ধরে নিয়েছিলাম আমি আমার কম্যুনিটিতে বেইজ্জতি হবো... 

আশ্চর্যের ব্যপার হলো পোস্টে ডাক্তার চাইবার ১০ মিনিটের মাথায় সেই পোস্ট আমাকে রিমুভ করতে হলো, কেননা অলরেডী ১০ মিনিটে ৪০-৫০ জন ডাক্তার আমাকে চাকরীটা করতে চেয়ে ইনবক্সে নক করেছেন... 

সেই প্রথম দিন আমি বুঝতে পারলাম যে এদেশে ডাক্তারদের বিপদ ঘটে গেছে।

 এতটা জব ক্রাইসিস আমার কল্পনাতেও ছিলো না... 

 

৩. 

 

এবার পোস্ট গ্রাজুয়েট কমপ্লিট করা ডাক্তারদের ব্যপারে আসি। আমার এক সিনিয়র ভাই মেডিসিনে পোস্ট গ্রাজুয়েট কমপ্লিট করে ঢাকার এক বিখ্যাত কর্পোরেট হাসপাতালে স্পেশালিষ্ট হিসেবে ঢুকলেন। প্রথম কয়দিন ভালোই চললো, উনি বেশ বাতাসে উড়লেন, টপাটপ গাড়ীও কিনে ফেললেন ... 

 একদিন রাতে সেই ভাই ফোন দিলেন, কোথাও পোস্ট গ্রাজুয়েট ডাক্তার নিলে তাকে যেন জানানো হয়। কর্পোরেট হাসপাতালটি নাকি যেকোন মুহূর্তে ডাক্তার ছাঁটাই করবে, কেননা তার থেকে কম স্যালারীতে এখন একই বিশেষজ্ঞ পাওয়া যাচ্ছে। এই হলো সিচুয়েশন! ওহ, আরেকটা কথা বলতে ভুলে গেছি, উনি গাড়ীটা সেল করে দিতে চাচ্ছেন... 

প্রাইভেট হাসপাতালে বেসিক এবং প্যারাক্লিনিক্যাল সাবজেক্টের বিশেষজ্ঞদের স্যালারী স্ট্রাকচারের কথা আর নাই বা বলি, বললে সবাই লজ্জা পাবেন। 

জেনারেল লাইনে যারা লেখাপড়া করেছেন তারা একই পরিমাণ কষ্ট করে উনাদের তুলনায় ঢের ভালো আছেন... 

 মূল কথায় চলে আসি... অত্যন্ত সচতুর এবং সুনিপুণ ওয়েতে এদেশে চিকিৎসকদের জব সেক্টরটাকে ধ্বংস করা হয়েছে।

 কিভাবে সেই ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে সেটা আমরা অনেকেই জানি। জুনিয়র চিকিৎসকদের তো এখন ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা, সামনে চিকিৎসকদের জব সেক্টরের অবস্থা আরো ভয়াবহ হবে, The Tsunami is coming ...

 

 

 "A clear rejection is better than fake promise..."

-ডা.জামান অ্যালেক্স

Tuesday, February 20, 2024

বুড়া বয়েসে টাকা কামায় কি বাপ-মায়ের কবরের উপরে তাজমহল বানাবি?? ( যারা ডাক্তার হতে স্বপ্ন দেখে দিন পার করছেন , তাদের জন্য)

 দরিদ্র মেধাবীদের মেডিকেলে চান্স পাওয়ার সুসংবাদ দেখতে পাচ্ছি। তাদের জন্য শুভকামনা।


ক্লোজ সার্কেলের কেউ হলে বলতাম গরীবের সন্তানের সাত বছরে গ্রাজুয়েশন করে পঁচিশ হাজার টাকার চাকরি করা পোষায়না। এগুলো সচ্ছল পরিবারের ব্যাপার স্যাপার। তারা ছেলে-মেয়ের পরে নাতি-নাতনিও পুষতে পারে। চল্লিশ বছরে গিয়ে ইনকাম শুরু করলেও ক্ষতি নাই। 


তোর পরিবার পাশ দেয়ার সাথে সাথেই আশা করে বসে থাকবে তুই নতুন ঘর তুলবি, টিউবওয়েল বসাবি, পায়খানা পাকা করবি। গ্রাজুয়েশন করার পরে পোস্টগ্রাজুয়েশন করতে আরো সাত-আট বছর লাগবে। 

এই চোদ্দ বছরের সংগ্রামের কথা তুইও জানিস না, তোর বাপ-মাও জানেনা। বুড়া প্রফেসরের পসার দেখে ছেড়া কাথায় শুয়ে মনে মনে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখিস। পাশ দেয়ার পরে ক্লিনিকে কাজ করে যে টাকা হয় তাতে বাচ্চার দুধের টাকা হয়না বলে অনেক ডাক্তার ভাই উবার চালায়। তুই গরীবের বাচ্চা, তোর এই ROI বা রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট কোন হিসাবেই মেলেনা।

 অনেক বড়লোক ডাক্তার আপ্পি প্রাইভেটে জব করে পুরা স্যালারিই সিএনজি-ওয়ালাকে দিয়ে দেয় জাস্ট এটা বলার জন্য যে অমুক জায়গায় আছি। এগুলা স্ট্যাটাস সিম্বল। তুই গরীবের বাচ্চা, তোর মাসকাবারি খরচ জোটেনা, মেডিকেলের বই কিনতে এলাকায় চান্দা তোলা লাগে, তোর এগুলা সাজে?!


মেডিকেলে চান্স পেয়েছিস মানে লেখাপড়ায় ভালো এবং পরিশ্রম করতে পারিস। তোর যাওয়া উচিত ত্রিশের আগে টাকা কামানো যায় এমন কোন রাস্তায়। বুড়া বয়েসে টাকা কামায় কি বাপ-মায়ের কবরের উপরে তাজমহল বানাবি??


এগুলো  সেন্টিমেন্ট বাদ দে। 

বাপ-মায়ের ওষুধ না কিনে, ঘরের বউকে নতুন কাপড় না দিয়ে আর বাচ্চার দুধ, ডায়াপারের কৌটা জোগাড় করতে না পারলে কেউ মানবসেবা করতে পারেনা। তুইও পারবিনা। দিন শেষে হতাশ হবি। মানুষের প্রতি বিরক্ত হবি। এই প্রসেস দিয়ে বের হতে হতে মানবসেবার মানসিকতা থাকবেনা। কসাই হয়ে যাবি।


ক্লোজ সার্কেলের জুনিয়র ভাই হলে এইসব বলতাম। কিন্তু, পাবলিক প্লাটফর্মে এরকম জঘন্য, কদর্য, অমানবিক ক্লাসিস্ট কথাবার্তা বলা যাবেনা। তাই কিছু বললাম না।


©Kaiser Anam