Sunday, June 7, 2015

এত্তো কিছুর পরেও ......

তুমি কি এবার মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছো......প্লিজ আর একবার ভাব!

তোমরা যারা মেডিকেল কোচিং করছ...প্লিজ ভেবে দেখ...তুমি কি জেনে শুনেই ডাক্তার হতে চাচ্ছ?...যদি তাই হয় তবে

আসো না একটু ভাবি
---------------------
১। তুমি কি জান...ফেল না করলে MBBS শেষ করতে তোমার ৬ বছর লাগবে...এরপর উচ্চতর ডিগ্রী নিতে আরো ৫ বছর !
২। এর মধ্যে এমএস/এমডি ভর্তি হতে MBBS পাশের পর ২ বছর অপেক্ষা করতে হবে...মানে ৬+২+৫ = ১৩ বছর! ...
৩। এখানেই শেষ কথা নয়... তুমি হয়ত জাননা... উচ্চতর ডিগ্রীতে পাশের হার ১% বা তারও কম... সেক্ষেত্রে উচ্চতর ডিগ্রীতে গড়ে অতিরিক্ত ৩ বছর লাগবে... এর মধ্যে বিয়ে/গ্রামে ২ বছর পোস্টিং মিলে... তোমার আরো ৩ বছর নষ্ট হবে... এবার তবে যোগফল দাঁড়াল... ১৩+৩+৩=১৯ বছর! ...
৪। এরপরেও কথা আছে... তুমি পাশ করা মাত্রই বিশেষজ্ঞ হতে পারবেনা... নিদির্স্ট বিষয়ে দক্ষতা বাড়াতে তোমাকে আরো ৫ বছর অপেক্ষা করতে হবে...!!! সর্বশেষ ফলাফল ১৯+৫ = ২৪ বছর।
৫। আচ্ছা তুমি কি এইস এস সি পাশের পর এই ২৪ বছর নিজেকে পড়ালেখায় নিয়োজিত রাখতে প্রস্তুত?

যদি হ্যাঁ হয়, তবে শোনঃ
---------------------------
১। যতদিনে তুমি MBBS পাশ করবে ততদিনে তোমার সহপাঠিরা ছাত্রত্ব শেষ করে...পেশায় মনোযোগ দিবে।
২। তুমি যখন উচ্চতর ডিগ্রীতে ভর্তির সুযোগ পাবে... ততদিনে তোমার সহপাঠিরা নতুন প্রমোশন পাবে...বেল চেপে পিয়নকে দিয়ে চা আনাবে।
তুমি কি আরো জানো?
১। তোমার পিতা সংসারের দায়িত্ব তোমার হাতে তুলে দেয়ার প্রহর গুণতে গুণতে একসময় ইহলিলা সাঙ্গ করবেন।
২। তুমি একসময় অর্থাভাবে খেতে পারবে না... যখন তোমার অর্থাভাব চলে যাবে তখন তোমার শরীরে ডায়াবেটিস... প্রেসারের মতো রোগ বাসা বাধবে... তখনো তুমি খেতে পারবে না !
৩। সামাজিক সব আয়োজন থেকে তুমি থাকবে দূরে... ধীরে ধীরে মানুষ থেকে অসামাজিক জীবে পরিণত হবে।
৪। সন্তানের বেড়ে উঠা দেখার মতো সময়ও তোমার হাতে থাকবেনা।
৫। মানসিক বিকাশে বাধাগ্রস্ত শিশুর সংখ্যা ডাক্তারদের মধ্যেই বেশি !

তোমার এটাও জানা উচিতঃ
---------------------------
১। প্রতি বছর ৫০ হাজারের মত ছাত্র মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা দেয়... মাত্র ৩ হাজারের মত চান্স পায়...
২। যারা চান্স পায় না... তাঁদের অনেকেই অন্য পেশায় যোগ দেয়...ডাক্তার না হওয়ার আফসোস তাঁদের অন্তরে থাকলেও... একসময় তাঁদের অনেকেই ডাক্তার বিদ্বেষী হয়ে উঠবে...উঠতে বসতে তারা তোমার চৌদ্দ গুষ্ঠি উদ্ধার করবে!

তুমি হয়ত জান নাঃ
-------------------------
১। বিদেশ প্রীতি আমাদের সহজাত প্রবৃত্তি......খেয়াল করলে দেখবা এসব লোক চিকিৎসার জন্য বিদেশের সরকারী হাসপাতালে যায় না... যায় বেসরকারীগুলোতে... তারাই কথায় কথায় তোমাকে কসাই বলতেও কুন্ঠা বোধ করবে না... ভারতের কথাই ভাব...নচিকেতা ভারতের লোক...ডাক্তারদের কসাই বলেই তিনি বিশেষ স্থান দখল করেছেন...অথচ, তাঁর গান ভারতীয় ডাক্তারদের উদ্দেশ্যেই ছিল।
২। এদেশের বিবেকবানরা চিকিৎসাবিদ্যা সম্পর্কে নূন্যতম জ্ঞান না রাখলেও পান্ডিত্য ফলাতে পিছপা হয় না।
৩। শুধু মাত্র পাশ করছেনা বলে প্রতিদিন কতজন যে আত্মহত্যার চেস্টা করে। বেসরকারী মেডিকেলে এ প্রবণতা অনেক বেশি। অনেক টাকা খরচ করে মধ্যাপ্রাচ্যে গিয়ে অনেকে আর আসতে চায় না। এতোটাকা নস্ট করে দেশে ফিরে কি করবে সে ভয়ে ফেরারী আসামীর মত লুকিয়ে লুকিয়ে কাজ করে অনেকে...বেসরাকারী মেডিকেলেও তাই...এত্তো টাকা খরচ করে অনেকে ফেল করতে করতে আত্মহত্যার দ্বার প্রান্তে গিয়েও ফিরে আসে...এই ভেবে যে মা-বাবার এতো টাকা খরচ করলাম...ডাক্তার না হলে কি হবে !
৪। নিরাপদ কর্মস্থলের অভাবে প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও চিকিৎসকরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।
৫। এদেশে রোগীর চেয়ে ডাক্তারের সংখ্যা বেশি...ঔষধের দোকানদার ডাক্তার...পল্লি চিকিৎসক বড় ডাক্তার...পাশের বাড়ীর সব জান্তা আপা তাঁর চেয়েও বড় ডাক্তার...ঘরে ঘরে কত শত ডাক্তার...এখন যোগ হয়েছে গুগল ডাক্তার...গুগলে সার্চ দিয়েই যারা তোমার উপর পান্ডিত্য ফলাবে!

এবার তবে ভাব... তুমি কি সত্যিই ডাক্তার হতে চাও?

ও...আমার কথা বলছ?... নারে ভাই... আমার অবস্থাও আর দশজন ডাক্তারের মতোই... তবে, আমি সুখী...অনেক সুখী... মনে রাখবা, এ সুখ অনেক অশ্রু দিয়ে কেনা... ধরেও রাখছি কষ্টের আঁচলে... হোক না তা শারীরিক বা মানসিক কষ্ট !
তবে,

তুমি যদি এত্তো কিছুর পরেও সব মেনে নিয়ে এগোতে পারো...তবে নিশ্চিত থেকো, স্বর্গীয় সুখ শুধু এ পেশাতেই আছে।

তুমি পারবে তো? আমার ভয় হয়...কারণ তুমিও যে মানুষ।

সংগৃহীত 

No comments:

Post a Comment