Friday, April 15, 2016

আমাদের জীবন।চিকিৎসক জীবন।

বিসিপিএস আরেক দফা বাড়ালো এর পরীক্ষার ফি।অনেকটা ডেসা,ওয়াসা,তিতাসের মতো বছর বছর বিদ্যুত,পানি,গ্যাসের দাম বাড়ানোর মতোই পরীক্ষার ফি বাড়ানোটা রেওয়াজে পরিনত করেছে বিসিপিএস।ছয় মাস আগেও যে পরীক্ষার ফি ছিল দশ হাজার টাকা সেটা জুলাই থেকে পনের হাজার টাকা করা হয়েছে।পরীক্ষার ফির মূল্য বৃ্দ্ধির হার প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ।এই অস্বাভাবিক মূ্ল্য বৃদ্ধির কারন আমরা জানি না।

মানুষ মানবিক ডাক্তার খোঁজে।কিন্তু ডাক্তাররা যখন তাদের পেশার উৎকর্ষতা বৃদ্ধির জন্য পোস্ট গ্রাজুয়েশন ডিগ্রী অর্জন করতে চায় তখন তারা যে অমানবিক আচরনের শিকার হয় তা বর্ণনাতীত।ঢাকায় না আসলেও এম বি বি এস ডিগ্রী অর্জন করা যায়।কিন্তু ঢাকায় না এসে এফসিপিএস ডিগ্রী অর্জন করা যায় না।সেই ঢাকায় দশ-পনেরজন মিলে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে সপ্তাহে দুই/তিন দিন খেপ মেরে এম বি বি এস ডিগ্রীধারী ডাক্তাররা এফ সি পি এস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি শুরু করেন।পঁচিশ/ছাব্বিশ বছরের জীবনে এ এক নতুন জীবন শুরু হয়।যেখানে সবাই শেষ করে আমরা সেখান থেকে শুরু করি।

২০২২ সালে কাতারে ফুটবল বিশ্বকাপ হওয়ার কথা।সে বিশ্বকাপ আয়োজনের মহাযজ্ঞ সম্পাদনের জন্য কাতার বাংলাদেশসহ গরীব দেশ থেকে শ্রমিক নিচ্ছে।সেই মজুরদের সাথে অমানবিক আচরনের জন্য কিংবা হিউম্যান রাইটস এব-ইউজের জন্য কাতারে বিশ্বকাপ আয়োজনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে খোদ ফিফা।সেখানে এক রুমে ছয়-সাতজন শ্রমিক গাদাগাদি করে থাকে,দিনান্ত পরিশ্রম করে,এবং মজুরি কম পায় এই অভিযোগ মানবতাবাদী সংগঠনগুলোর।
আচ্ছা,আমাদের ডাক্তাররা এম বি বি এস ডিগ্রী শেষ করে যখন শাহাবাগের আজিজে আস্তানাগাড়ে তখন তাদের অবস্থা কি কোনো অংশে কম অমানবিক ঐ সকল মধ্যপ্রাচ্য শ্রমিকদের তুলনায়।আজিজ সুপার মার্কেটে্র একটি ফ্ল্যাটের সামনে দাঁড়ালে দেখা যায় শুধু স্যান্ডেল আর স্যান্ডেল।এই স্যান্ডেলের কয়েদীরা আর কেউ ই নন,তারা এই সমাজের অন্যতম মেধাবী ছেলেরা কিংবা মেয়েরা যারা এক সময় স্বপ্ন দেখতেন পড়াশুনা শেষ করে নিজেকে দ্বারিদ্র্যতার বেড়াজাল থেকে ছিন্ন করবেন।

সেই এম বি বি এস পাশ করা ডাক্তার নামের ছেলেটি পাশ করেই যেন দ্বারিদ্রতার পাশবিক ধর্ষনের শিকার হন।এক দিকে গ্রামে ফেলে আসা সংসারের ঘানি,অন্যদিকে ফ্ল্যাট মালিকের ভাড়া,নিজের ভরন-পোষন তার উপর ছয় মাস পর পর বিসিপিএসের পরীক্ষার ফি এর খড়গ!

এক সময়ে হোস্টেলে থাকা,বাড়ী থেকে আসা টাকায় খরচ চালানোতে অভ্যস্ত হওয়া ছেলেটি মধ্যপ্রাচ্যের সেই নির্মান শ্রমিকের চেয়ে কত টুকু ভালো থাকেন শাহাবাগের রাস্তায় রাস্তায়?মেডিক্যাল শিক্ষার সর্বোচ্চ ডিগ্রী ধারী ছেলেটি বন্ধুর বিয়েতে যেতে পারে না গিফট কিনতে পারবে না বলে,ঈদে বাড়ি যেতে পারেনা পরীক্ষার ফি যোগাড়ের জন্য অতিরিক্ত খেপ মারবে বলে।এ কোন সমাজে বাস করছি আমরা?জীবনের বাঁকে বাঁকে শুধু বৈপিরীত্য!

বি সি পি এস এর যারা হর্তা-কর্তা তারা সবাই আমাদের পিতার মতো।পিতা,একটু নিজের জীবনের পেছনে ফিরে তাকান?এটা ইয়াসিকা ক্যামেরায় তোলা কোনো ছবি নয় যে কস্ট করে মনে করতে হবে।আগুনে পোড়া দগদগে ঘা।চোখ পড়লে সে বাস্তবতা পিক্সেল বাই পিক্সেল ভেসে উঠে।পিতা,নিজের সন্তানকে কী দিতে পারবেন সে কস্টের স্বাদ যে কস্ট পেয়ে তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন নিজেকে।ডুবে যাওয়ার আগে হাত পা ছুঁড়েছেন বাঁচার আশায়।আপনাদের বেঁচে উঠার মতো করেই কি আমরা বেড়ে উঠবো?নাকি এর চেয়ে একটু বেশী সম্মানজনক এবং মানবিক হয়ে যাপিত হবে আমাদের জীবন।চিকিৎসক জীবন।

Collected

No comments:

Post a Comment