Tuesday, May 10, 2016

যারা ডাক্তার না অথবা সন্তানকে ডাক্তার বানানোর অসীম ইচ্ছা বুকের ভেতর পোষণ করেন এই লেখাটি তাদের জন্য।

আমার বন্ধুটা বলল, এইবার একেবারে জানুয়ারি পর্যন্ত টার্গেট । এটা এপ্রিলের শুরুর দিকের কথা ।

বাক্স পেটরা গুছিয়ে সে এখন শাহবাগের আজিজে সুপার মার্কেটে শেকড় গেড়েছে , উইক এন্ডে ঢাকায় আসলে আড্ডায় ওকে পাই না ।
কারণ ওর এখনও পায়ের তলায় মাটি আসেনি ।

যারা ডাক্তার তারা এতক্ষণে বুঝে গেছেন আমি কি বলছি , যারা ডাক্তার না অথবা সন্তানকে ডাক্তার বানানোর অসীম ইচ্ছা বুকের ভেতর লুকিয়ে মাসে শ খানেকবার ডাক্তারদের কশাই বলে গালি দেন, এই লেখা তাদের প্রতি উৎসর্গ করে দিলাম ।

হ্যাঁ যা বলছিলাম , কেউ যদি আজিজ সুপার মার্কেটের ওপরে ডাক্তারদের ভাগাড়ে উঁকি না দেন......... হ্যাঁ ভাই ভাগাড়ে , আপনি ভুল পড়েননি......... তাহলে আপনি কখনো জানবেন না একজন নব্য ডাক্তার ডাক্তার হওয়ার কারণে কতটা আফসোস করে ।
আর আমার আফসোস ওই ডাক্তারের বাবা মায়ের প্রতি যারা ধারণা করে রেখেছিল ইন্টার্নি শেষ করেই তো আমার ছেলে চেম্বার দেবে এরপর কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা হাতে তুলে দেবে । রোগী দেখবে , পাঁচশ করে ভিজিট নেবে , গভীর রাত পর্যন্ত রোগী দেখবে ............

Ahhh ! what a bed of roses ......

ল্যাব এইড বা বড় বড় হাসপাতালে যেসব ডাক্তার দেখি হাজার টাকা ভিজিট , তাঁরা পুরো ডাক্তার সোসাইটির বিশ পার্সেন্টও রিপ্রেজেন্ট করে না ।

কাজের কথায় আসি ।

বন্ধুর কথা বলছিলাম , পায়ের তলায় মাটি আসেনি , অর্থাৎ এফসিপিএস পার্ট ওয়ানে চান্স হয়নি এখনও । লাইব্রেরিতে ছয় ঘন্টা পড়ে , এরপর রুমে গিয়ে ছয় ঘন্টা । কিন্তু জানা নাই , ভাগ্যে পার্ট ওয়ান তাও জুটবে কিনা , কারণ হাজারের ওপর পরীক্ষা দেয় আর চান্স পায় চল্লিশ, পঞ্চাশ , হয়ত বড়জোর শখানেক ।

এইত সেদিনও শুনেছিলাম পার্ট ওয়ান পরীক্ষা দিতে পাঁচ হাজার টাকা লাগে , কয়দিন পর সেটা সাত হাজারে উঠল , এখন সেটা এগার হাজার ।

অবশ্য ডাক্তারদের জন্য এই এগার হাজার তো কোন ব্যাপারই না , চেম্বারে বসবে পাঁচশ করে ভিজিট নেবে , গভীর রাত পর্যন্ত রোগী দেখে লাখ টাকা পকেটে পুরে নান্নার বিরিয়ানি কিনে ঘরে ফিরবে .......... সুখ ,

সেদিন এক জুনিয়র বলছিল ভাই ক্লিনিকে তো ডিউটি পাওয়া মুশকিল , এত ডাক্তার এখন , সপ্তাহে দুই দিন ডিউটি পাওয়া মানে আকাশের চাঁদ পাওয়া , দুই দিনে ইনকাম চার হাজার , মাসে সব মিলিয়ে আট থেকে নয় হাজার ।
কি ভাই , হেঁচকি দিলেন ?

আর রোস্টার ডিউটি করা ডাক্তারদের মাসিক ইনকাম গড়ে ছয় হাজার ।

আবার আজিজে পার হেড সিট ভাড়া চার হাজার শুনেছিলাম বহু আগে , এখন কত কে জানে ।

মাসে আট হাজার ইনকাম করা আজিজে পড়ে থাকা ডাক্তারদের বাবা মায়েদের জন্য দুঃখ লাগে , ছেলের বয়স পার হয় , ছেলের হাতের ইনকাম খাওয়ার স্বপ্নটা ঘোলা হয়ে যায় বারবার ।

এফসিপিএস দিতে এখন লাগে এগার হাজার , এই টাকা কোথা থেকে ম্যানেজ হবে বিসিপিএস চিন্তা করে না , সেদিন দেখলাম বিসিপিএস এর মূল গেটটা টাইলস করা ঝাঁ চকচকে । কোন ডাক্তার যদি বলে ওই পুরো গেট আমার বারবার ফেল করা পরীক্ষার ফি এর পয়সায় বানানো , খুব ভুল হবে না ।

এমডি এমএস পরীক্ষায়ও ভর্তি ফি পঞ্চাশ হাজারের মত , এই টাকা কোথা থেকে আসে ?
আর প্রতিবার পরীক্ষায় সর্বনিম্ন এগার থেকে পনের হাজার টাকা লাগে ফর্ম ফিলআপে ।
আর এই খরচ একজন পোস্টগ্র‍্যাজুয়েট ডাক্তারের প্রতি ছয় মাসের খরচ ।
আর ইনকাম ?
ওই যে........... চেম্বার ...... পাঁচশ টাকা ভিজিট ...... লাখ টাকা রাত শেষে ...... নান্নার বিরিয়ানি........
একজন বলছিল , মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের ডাক্তারি পড়াটা ঠিক না , অথবা বাবা মায়ের খুব শখ হলে অন্তত ছেলের বয়স চল্লিশ বছর পর্যন্ত এই আশা বাদ দেওয়া উচিৎ ছেলের ইনকাম এনজয় করবে ।

Collected

No comments:

Post a Comment