Wednesday, January 18, 2017

বেকাররা চাকরি না খুঁজে চাকরিই বেকারদের খুঁজুক

#off_topic
একবার কষ্ট হলেও পড়ে দেখতে পারেন।
লিখেছেন মান্নান স্যার।


আমার কাছে কিছু মানুষ চাকরির খোঁজে আসেন। তাদের ধারণা, আমি বলে দিলেই কোনও একটি জায়গায় তাদের চাকরি হয়ে যাবে। যারা আসেন, তারা প্রায় সবাই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় অথবা কলেজ থেকে এমএ বা সমপর্যায়ের পরীক্ষায় পাস করেছেন। তাদের আকুতি দেখলে বেশ মায়া হয়। সময়মতো বুঝতে পারেননি বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ পর্যায়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে তাদের একটা চাকরির জন্য পথে-পথে ঘুরতে হবে। একটি জাতীয় দৈনিকে সম্প্রতি ‘উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্ব বেশি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী এক কোটি দশ লাখ তরুণই নিষ্ক্রিয়, মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের নিষ্ক্রিয়তা বেশি।’ নিষ্ক্রিয় মানে, তারা অন্যের হোটেলে (বাপের) বিনা পয়সায় খান। পত্রিকাটি এই তথ্যবহুল প্রতিবেদনটি লেখার সময় নবগঠিত সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড এমপ্লয়মেন্ট রিসার্চের (সিডার) প্রকাশিত তথ্য ব্যবহার করেছে।

সিডারের এই তথ্যের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করার কোনও কারণ নেই। যারা আমার কাছে চাকরির আকুতি নিয়ে আসেন, তাদের প্রায় সবাই সরকারি চাকরি প্রত্যাশা করেন। বলেন, বয়স চলে যাচ্ছে। এরই মধ্যে আবার একদল শিক্ষিত বেকার দাবি তুলেছেন, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স পঁয়ত্রিশ বছর করতে হবে। আমাদের দেশের তরুণদের মধ্যে দুই ধরনের প্রবণতা লক্ষণীয়। প্রথমে তারা উচ্চমাধ্যমিক পাস করলেই কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যতটা আগ্রহী, কারিগরি বা কর্মদক্ষতা বাড়ানোর শিক্ষা নিতে ততটা আগ্রহী নন। দ্বিতীয়ত খুব কম ক্ষেত্রেই কাউকে উদ্যোক্তা হতে দেখা যায়। সবাই চাকরি প্রত্যাশা করেন, কেউ চাকরি সৃষ্টির কথা ভাবেন না। পাশাপাশি অন্য একটি চিত্রও আছে।

বাংলাদেশে এই মুহূর্তে কমপক্ষে চার লাখ বিদেশি চাকরি করছেন। যাদের মধ্যে বৈধভাবে কাজ করছেন বিশ হাজারের মতো। এই বিদেশিরা, বছরে পাঁচ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ থেকে তাদের দেশে পাঠাচ্ছেন। চার লাখ মানুষ পাঁচ বিলিয়ন ডলার নিয়ে যাচ্ছেন। পারার কারণ হলো, তাদের যে কর্মদক্ষতা আছে, তা আমাদের দেশের ‘উচ্চশিক্ষিতদের’ মধ্যে নেই। অথচ যে আশি লাখ বাংলাদেশি বিদেশে অক্লান্ত পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন, তার পরিমাণ বছরে গড়ে পনের বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে ফিলিপাইনের ত্রিশ লাখ শ্রমিক বিদেশ থেকে বাংলাদেশের তিনগুণ অর্থ নিজ দেশে পাঠাচ্ছেন। এর প্রধান কারণ ফিলিপাইন থেকে যারা বাইরে কাজ নিয়ে যাচ্ছেন, তাদের কর্মদক্ষতা আমাদের দেশের মানুষের চেয়ে অনেক বেশি আর তারা ইংরেজি ও আরবিতে কথা বলতে পারেন। সৌদি আরব বা মধ্যপ্রাচ্যের আধুনিক হাসপাতালগুলোতে বেশির ভাগ নার্স বা ডাক্তার হয় ভারতীয় নয় ফিলিপাইনের। কিছু আছেন ইন্দোনেশিয়া বা মালয়েশিয়ার। সেই সব হাসপাতালে দেখা যাবে বাংলাদেশিরা হয় ক্লিনার, নয় ওয়ার্ড বয়। বিদেশে কাজের বুয়া পাঠাতে যত আগ্রহ বাংলাদেশে দেখা যায়, কর্মদক্ষ শ্রমিক পাঠাতে তেমনটা দেখা যায় না। ভারতে বিদেশ থেকে যে রেমিটেন্স আসে, সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম।

সিডার বাংলাদেশ সম্পর্কে যে তথ্য দিয়েছে, পরিস্থিতি হয়তো তার চেয়েও ভয়াবহ। ২০১৬ সালে ইউরোপীয় ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) এক পরিসংখ্যানে দেখিয়েছে, বাংলাদেশে শতকরা ৪৭ ভাগ গ্রাজুয়েট হয় বেকার, না হয় তিনি যে কর্মে নিযুক্ত এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট হওয়ার কোনও প্রয়োজন ছিল না তার। প্রতিবছর বাংলাদেশে ২২ লাখ কর্মক্ষম মানুষ চাকরি বা কাজের বাজারে প্রবেশ করছেন। এই বিশাল-সংখ্যক কর্মক্ষম মানুষের মাত্র সাত শতাংশ কাজ পাবেন। এর অর্থ হচ্ছে, দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ বেকারের তালিকায় নাম লেখাচ্ছেন। ভারত, পাকিস্তান বা নেপালের পরিস্থিতিও তেমন একটা ভালো নয়। ভারতে ৩৩ শতাংশ, পাকিস্তানে ২৮ শতাংশ আর নেপালে ২০ শতাংশ মানুষ চাকরির সন্ধান করছেন। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের বা সমপর্যায়ের শিক্ষায় শিক্ষিত। অন্যদিকে সার্বিক পরিসংখ্যানের দিকে নজর দিলে দেখা যাবে বাংলাদেশের অবস্থান বেশ ভালো। ইনডেক্স মুন্ডি বলছে, বাংলাদেশে সার্বিক বেকারত্বের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার মাত্র ৫.০ শতাংশ, ভারতে ৮.৮ শতাংশ, পাকিস্তানে ৬.৬ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় এই সংখ্যা ৫.১ শতাংশ।

বিশ্বের সর্বাধিক বেকারের বাস জিম্বাবুয়েতে। শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষেরই কোনও কাজ নেই। আফ্রিকা বাদ দিলে ইউরোপের বেশিরভাগ দেশের অবস্থাও শোচনীয়। কসোবোয় ৩১ শতাংশ, গ্রিসে ২৮ শতাংশ, স্পেনে ২৬.৩ শতাংশ, পর্তুগালে ১৬.৮ শতাংশ, ইটালিতে ১২.৪ শতাংশ, আয়ারল্যন্ডে ১৩.৫ শতাংশ মানুষ বেকার। আর সৌদি আরব, বিশ্বের অন্যতম তেল সমৃদ্ধ দেশে ১০.৫ শতাংশ মানুষের কোনও কাজ নেই। সৌদি আরব বা মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য তেলসমৃদ্ধ দেশের সমস্যা হচ্ছে, তেলের ভাণ্ডার তাদের সর্বনাশের প্রধান কারণ। তারা মনে করেছিল, তেলের প্রয়োজনীয়তা কেয়ামত পর্যন্ত থাকবে। ১৯৬২ সাল হতে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত ড. আহমেদ জাকি ইয়ামানি সৌদি আরবের তেলমন্ত্রী ছিলেন। পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত ইয়ামানি অত্যন্ত বাস্তববাদী ছিলেন। একপর্যায়ে বলেছিলেন প্রস্তর যুগ শেষ হওয়ার পেছনে প্রস্তরের অপ্রাপ্যতার কারণ ছিল না। কারণ ছিল মানুষ প্রস্তরের বিকল্প আবিষ্কার করে ফেলেছিল। এক সময় তেলেরও প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে যাবে যা বিকল্প জ্বালানি আবিষ্কারের ফলে এখন অনেক দেশেই দেখা যাচ্ছে।
সৌদি তেল এখন বিশ্ববাজারে সর্বনিম্ন দামে বিক্রি হচ্ছে। এর ফলে সৌদি রাজকোষে টান পড়েছে। সরকার সেই দেশের সরকারি কর্মচারীদের বেতন ২০ ভাগ কমিয়ে দিয়েছে। সৌদি আরবের এখন আয়ের প্রধান উৎস হয়ে উঠেছে হজের মৌসুমের আয়, যে কারণে বর্তমানে একজন মানুষের হজ করতে যেতে হলে দু’তিন বছর আগের তুলনায় দ্বিগুণ-তিনগুণ অর্থ ব্যয় করতে হয়। বিশ্বে সম্ভাব্য দেউলিয়া হওয়ার দেশের তালিকায় সৌদি আরবের অবস্থান বেশ ওপরে বলে অনেকের ধারণা। এক পণ্যনির্ভর অর্থনীতির ঝুঁকি অনেক বেশি। জাকি ইয়ামানি তখন বলেছিলেন, পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আগেই সৌদি আরবের উচিত হবে, তেলের অর্থ সঠিক জায়গায় বিনিয়োগ করা আর সৌদি আরবের মানুষকে দক্ষ জনসম্পদে রূপান্তর করা। ইয়ামানি রাজ পরিবারের অংশ ছিলেন না। তাই তার কথাও তেমন একটা আমলে নেওয়ার প্রয়োজন সৌদি সরকার মনে করেনি।

১৯৮৬ সালে সৌদি বাদশাহ ফাহাদ ইয়ামানিকে বরখাস্ত করেছিলেন। বর্তমানে সৌদি তেলক্ষেত্র নিয়ন্ত্রণ করে যুক্তরাষ্ট্র আর ইউরোপীয় দেশের বহুজাতিক কোম্পানিগুলো। তেলসম্পদ লুণ্ঠন বন্ধ করার যোগ্যতা সৌদি আরবের নেই। অন্যদিকে ইরানের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। অবশ্য তারা নিজেদের আরব মনে করে না। ইরান সব সময় দক্ষ জনসম্পদ উন্নয়নে তেলের অর্থ বিনিয়োগ করেছে। এখন সে দেশ একটি পরমাণু শক্তি। যুক্তরাষ্ট্রও তাকে সমীহ করে আর সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের তাঁবেদার রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত।

বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষিত বেকার রাতারাতি তৈরি হয়নি। এটি দীর্ঘ দিনের অপরিকল্পিত শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে ওঠার ফল। বিশ্বের কম দেশই আছে, যেখানে চিন্তা-ভাবনা না করেই প্রতি বছর সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ বিষয় পড়তে যাওয়ার এমন হিড়িক লক্ষ করা যায়। একজন আজিম উদ্দিন সংস্কৃত বিষয়ে পড়ে এমএ পাস করে কী করবেন, তা তিনি জানেন না। পড়ছেন, কারণ তার একটা বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি চাই। দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ আর বিবিএ পড়ার একটা হিড়িক আছে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকটা নিখরচায় পড়া যায় আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লে তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা লাগে পাস করে বের হতে। সময়ও লাগে চার থেকে পাঁচ বছর। অনেক এমবিএ পাস করা গ্রাজুয়েটের কাছে জানতে চেয়েছি কী চাকরি করছেন? বলেন, একটি বহুজাতিক ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড বিক্রি করেন। মাস শেষে বেতন দশ হাজার টাকা। ঢাকা শহরে পনেরো থেকে বিশ হাজার টাকার নিচে কোনও ড্রাইভার পাওয়া যায় না। অন্য দিকে দেখা যায়, সরকার হয়তো একটি বিশেষ দক্ষতা ও জ্ঞান অর্জনের জন্য একটি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করলো।
সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাব্যক্তিরা পরদিন থেকেই দৌড়ঝাঁপ শুরু করবেন—কিভাবে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ আর এমবিএ খোলা যায়। আর এখন বেশ কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে হঠাৎ করে ইসলামিক স্টাডিজ খোলার তোড়জোর পড়েছে। হঠাৎ কেন এমন তোড়জোর? কারণ এই বিভাগে ভর্তি হলে ক্লাস করতে হয় না। নির্দিষ্ট পরিমাণের অর্থ দিলে সময়মতো এসে সার্টিফিকেট নেওয়া যাবে। এই সব ডিগ্রি ক্রেতার মধ্যে সরকারি কর্মকর্তাদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। কারণ এই ডিগ্রি দেখিয়ে তারা সহজে পদোন্নতি পেতে পারেন। এ সব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন তেমন একটা ব্যবস্থা নিতে পারে না। কারণ তাদের হাত বেশ লম্বা ।


যদি বলি, উচ্চশিক্ষা হওয়া উচিত শুধু মেধাবীদের জন্য এবং তা পরিকল্পিতভাবে, তখন একদল বিশেষ ঘরানার রাজনৈতিক ধ্যানধারণায় বিশ্বাসী ব্যক্তি হৈ চৈ ফেলে দেবেন। বলবেন, শিক্ষা একজন নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। এমন ধারণা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। কারণ এই অধিকার শুধু প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। রাশিয়া বা চীনে ইচ্ছা করলেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারে না। ফিনল্যান্ডে শুধু যারা প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা করবেন, তারাই বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। দেশে কতজন শিক্ষক, কতজন গবেষক প্রয়োজন, তার একটি ধারণা থাকতে হবে। সেভাবেই উচ্চশিক্ষার বিন্যাস ও পরিকল্পনা জরুরি। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ অল্প বয়সী জনসংখ্যা। জাতিসংঘের হিসাব আনুযায়ী, আমাদের জনসংখ্যার ৪০ ভাগ মানুষের বয়স ২৬ বছরের নিচে। তাদের জনশক্তিতে রূপান্তর করতে হলে তাদের বিদ্যায় দক্ষতার পরিমাণটা অনেক বেশি থাকতে হবে। একজন গাড়ির মেকানিক বিশ্বের কোনও দেশেই বেকার থাকবে না। কিন্তু একজন এমএ পাসকে নিউ ইয়র্কের রাস্তায় খালি বোতল বা ডাস্টবিনে কাগজ কুড়াতে নিয়মিত দেখা যায়। অনেকের কাছে জানতে চেয়েছি, কেন তিনি নিজ দেশ ছেড়ে এদেশে এসেছিলেন। উত্তরে জানালেন, ভালো জীবনযাত্রার খোঁজে। দেশে অন্তত তিনি রাস্তায় বোতল কুড়াতেন না। ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিলে অভিবাসীদের কপাল পোড়ার ইঙ্গিত তিনি অনেক আগেই দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বেশির ভাগ গাড়ি মেরামতের গ্যারেজের মালিক পাঞ্জাবি শিখরা।


শুধু একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি থাকলে চাকরি মিলবে—এমন ধারণা একেবারেই ভুল। প্যারিসের এক ট্যাক্সি ড্রাইভার আমাকে বেশ কয়েক বছর আগে বলেছিলেন, তিনি মিশর ও ফ্রান্সের দু’টি নাম করা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দু’টি পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেছিলেন। কিছুদিন শিক্ষকতাও করেছিলেন। তা ছেড়ে দিয়ে এখন ট্যাক্সি চালান। আয়-রোজগার আগের তুলনায় দ্বিগুণ। আমি আর ড. মুনতাসীর মামুন একবার ব্রিটেনের উত্তরে ইনভারনেস গিয়েছিলাম। আমাদের ট্যুর গাইড কেম্ব্রিজ থেকে পিএইচডি করে দক্ষিণ আফ্রিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। তা ছেড়ে এসে দেশে নিজের ট্যুর কোম্পানি খুলে বেশ ভালো আছেন। জনাদশেক মানুষকে চাকরিও দিয়েছেন। আমাদের দেশের অনেক ব্যবসায়ী ও শিল্প-উদ্যোক্তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম, দেশে এত শিক্ষিত বেকার থাকতে, তারা কেন অন্য দেশ থেকে দ্বিগুণ বেতন দিয়ে লোক আনেন? সবারই একটি কমন উত্তর: আমাদের গ্র্যাজুয়েটদের দক্ষতার অভাব আছে। কী দক্ষতা? কথা বলতে তাদের জড়তা আছে। ভাষার ওপর দখল খুবই কম। ইংরাজিতে দুই লাইন কথাও বলতে পারেন না, লেখা দূরে থাক। উপস্থাপনায় একেবারেই কাঁচা। আর সবসময় কেতাদুরস্ত হয়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে কাজ করতে চান। মাঠে বা কারখানায় যেতে তাদের অনীহা প্রচণ্ড। আর বিশ্বে বা নিজ দেশে কী ঘটছে, সে সম্পর্কে অধিকাংশেরই অজ্ঞতা পর্বতসমান। কোনও-কোনও ক্ষেত্রে অভিভাবকদের ভূমিকাও তাদের ছেলে-মেয়েদের কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। তারা তাদের ছেলে মেয়েদের সবসময় কাছে রাখতে চান। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মেধাবী গ্র্যাজুয়েটের চাকরি হলো। ক’দিন না যেতেই তারা বাবা এসে আমাকে বললেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা চাকরি হলে ভালো হয়। কারণ তিনি ছেলেটাকে তার কাছেই রাখতে চান। ছেলের সম্ভাব্য সর্বনাশের প্রথম ধাপ!
বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা কমানোর উপায় হচ্ছে—এমন শিক্ষার ব্যবস্থা করা যেন চাকরিই যোগ্যপ্রার্থী খুঁজবে। কারিগরি, প্রযুক্তিগত, আইটি, নার্সিং, সুপারভাইজার ইত্যাদি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করা যায়, এমন শিক্ষারই প্রয়োজন এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির অভ্যাস কমাতে হবে। এজন্য চাই—সবার মানসিক দৃষ্টিভঙ্গির পরির্বতন। মেয়ে বিয়ে দেওয়ার সময় ছেলে এমএ পাস কিনা, তা খোঁজা বন্ধ করতে হবে অভিভাবকদের। একইভাবে ছেলেপক্ষ ছেলের হবু স্ত্রীর পেশাটা কতটুকু সমাজে কাজে লাগছে, তাতে গুরুত্ব দিতে হবে। মনে রাখতে হবে উন্নতবিশ্বে যেভাবে মানুষের গড় আয়ু বাড়ছে, তাতে সে সব দেশে দ্রুত কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা কমে আসছে। অনেক ক্ষেত্রে মানুষের স্থলে প্রযুক্তি ব্যবহার হওয়া শুরু হয়েছে। ইউরোপে এখন গাড়ি বা ট্রেন চালাতে আর চালক লাগছে না। সে কাজটি প্রযুক্তি করছে। কিন্তু সেই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের পেছনে একজন মানুষের প্রয়োজন, যার সে বিষয়ে জ্ঞান আর দক্ষতা আছে।

আমাদের সেই মানুষই তৈরি করতে হবে। তেমনটি হলে দেশে আর উচ্চশিক্ষিত বেকার তেমন একটা থাকবে না। আর বাংলাদেশে যে বিদেশি পুঁজি আসবে, তা মূলত হবে সেবাখাতে। শিল্পখাতে তেমন একটা নয়। বাংলাদেশে সর্ববৃহৎ টেলিকম কোম্পানিতে সব মিলিয়ে জনবল হচ্ছে চার হাজারের নিচে। সবাই কর্মদক্ষ জনশক্তি। তাদের চাকরির কখনও অসুবিধা হবে না। এসব বিষয় গুরুত্বসহ বিবেচনা করে সামনে এগুতে হবে। শুধু একটা ডিগ্রি কাজ দেবে না। দক্ষতা থাকলে কাজের অভাব হবে না।
###ধন্যবাদ

No comments:

Post a Comment