Tuesday, September 5, 2017

“মানবযন্ত্র”

“স্যার আমার ছেলেটা অনেক দুর্বল, একটা ভাল ভিটামিন লিখে দেন”- মায়ের আর্জি

ছেলেটার দিকে ভাল করে তাকালাম, “কোন ক্লাসে পড় বাবা”?
“ক্লাস ফাইভে” ছেলেটার উত্তর
মা - “অনেক দুর্বল, পড়ালেখা করতে পারে না। সেই সকাল ৫ টায় উঠে পড়া শুরু হয়, তারপরে স্কুল, স্কুলে কোচিং, বিকাল ৫ টায় বাসায় আসে। তারপরে বাসার টিচার আসে দুজন রাত ৯ টা পর্যন্ত পড়া, এত দুর্বল হইলে পড়বে কমনে?”

আমি কোন জবাব দেই না আজকাল; প্রশ্নও করি না। এই অচেতন জাতিকে সচেতন করার বৃথা চেষ্টা আগে করতাম, এখন করি না। সেই সকাল ৫টা থেকে রাত ৯টা! এত মানসিক চাপ আর যন্ত্রনার মধ্যে এই বাচ্চাটাকে রাখলে সে তো দুর্বল হবেই, এর সাথে তো ভিটামিনের কোন সম্পর্ক নেই!

অনেক বাবা-মা আসেন আর বলেন, আমার ছেলে/মেয়ে ক্লাসে প্রথম। ভাল করে আপাদমস্তক অবলোকন করি আমি, কেমন জানি সবাই প্রাণহীন। মনে হয় শান্তি নেই, সুখ নেই, স্বস্তি নেই, ছন্দ নেই। আসলে তো একটা অসম প্রতিযোগিতার ষ্টীম রোলারে সবাই পিষ্ট।

এখন আর জিজ্ঞেস করিনা খেলাধুলা করো কিনা? জানি কম্পিউটার কিনবা মোবাইল গেমেস এর নাম নিবে। আরে, আমি তো জানতে চেয়েছি, বর্ষার কর্দমাক্ত মাঠে ফুটবল খেলে পুকুরে ঝাপ দিয়েছ কিনা...... আমি তো জানতে গোল্লাছুট নাম শুনেছ কিনা, জীবনে একবার ও ঘুড়ি উড়িয়েছ কিনা? আমি তো জানতে চাই আম গাছ থেকে আম পেড়ে খেয়েছ কিনা??? আমি তো জানতে চাই.........থাক।

... ... ...

সকাল বেলা অফিস এ যাওয়ার সময় একটা পরিচিত দৃশ্য, ঘুমন্ত বাচ্চাকে মা কিনবা বাবা কোলে করে রিক্সায় তুলে স্কুলে নিয়ে যাচ্ছে। মায়া হয়, কষ্ট হয়...... দুঃখ ও হয় বাচ্চাগুলোর জন্য। একটা অদৃশ্য, অসম প্রতিযোগিতার বলি এই বাচ্চাগুলো। অকর্মণ্য ও অপদার্থ বানানোর এই শিক্ষা ব্যবস্থার কাছে জিম্মি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। যে নির্জীব আর হতাশাগ্রস্থ একটা ভয়াবহ ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমরা তৈরি করা জাচ্ছি, এদেরকে দিয়ে জাতি কি করবে আমি জানি না।
কিছুদিন আগের ঘটনা। মুদি দোকানে ছেলেটা এসে বলল, “মামা এক কেজি ডিম দেন!”
মামা কি বুঝল আমি জানি না, “আর কি?”
ছেলেটা বলল “আটা”।
“ওকে এক হালি আটা দিয়ে দেন” বলে আমি দোকান থেকে বের হয়ে আসলাম।

আমার কাছে মনে হয়েছে আজকালকার ছেলেমেয়েরা বড় হয় ফার্মের মুরগীর মত করে, ফার্মের মুরগীর মতই তাদের কেবল দেহটাই বাড়ে, কিন্তু তাদের বোধবুদ্ধিতে প্রসার ঘটেনা। বড় হয়ে চাকরী-বাকরী করে খেয়েপরে চলতে পারবে ঠিকই কিন্তু এর বেশি আর কোন লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য তাদের জীবনে প্রতিফলিত হয়না। এদের দিয়ে সমাজপরিবর্তন তো দূরে থাক, সমাজের উপকার হবারও কোন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়না। সেই ছোটবেলা থেকেই একটা মন্ত্র এদের মাথায় ডুকানো হয়- “বেশী করে পড়ালেখা কর, অনেক টাকা কামাতে পারবা, গাড়ি-বাড়ি হবে, সুখে থাকবা”।

এই ভাবে চলতে থাকলে সেই দিন আর খুব বেশী দূরে নয় যেই দিন উন্নত বিশ্ব তাদের রোবটের গবেষণা বাদ দিয়ে বাংলাদেশে আসবে। কারণ বাংলার প্রত্যেকটা ঘরে ঘরে তৈরি হচ্ছে এক একটা যন্ত্র..
........................... “মানবযন্ত্র”
লেখক
ডা. মোঃ কামরুজ্জামান
উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ
সেশান - ২০০৭-২০০৮

>> কালেক্টেড পোস্ট <<

No comments:

Post a Comment