Friday, June 3, 2016

প্রশ্ন করাটাও তো অপরাধ !!

ডাক্তারদের কর্তব্যে অবহেলা করলে পাঁচ বছরের জেল। নতুন নাকি আইন হয়েছে। খুব ভাল আইন। একটা মানুষ কর্তব্যে অবহেলা করবে আর পার পেয়ে যাবে তা কেন? তবে আমার জানামতে বাংলাদেশে একমাত্র হাসপাতালগুলোতেই ঠিকমতো কাজ হয়না বাকি সবখানে হয়।

যেমন ব্যাংকে গেলে গা এলিয়ে পান চিবাতে চিবাতে কেউ বলেনা আজকে হবেনা কালকে আসেন।
কাল ত শুক্রবার!
ও তাইলে পরের শুক্কুরবার আসেন।

বাংলাদেশে কর্তব্যে কোন অবহেলা হয়না থানাগুলোতে। জিডি করতে গেলে পুলিশ বলেনা পাঁচশ টাকা লাগবো। আপনি মামলা করবেন... পুলিশ কোনরকম অবহেলা না করে আসামি ধরার এন্তেজাম করতে নেমে যাবে তৎক্ষণাৎ।

বাংলাদেশে কর্তব্যে অবহেলা হয়না আদালতে। বিচারগুলো কি সুন্দর যথাসময়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে। এইতো আমার দরিদ্র কৃষক চাচার বড়ছেলেটাকে খুন করে ফেলেছিল বছর চারেক আগে, মামলা অনেক এগিয়েছে মাইরি! পুলিশ আসামি ধরে টাকা খেয়ে আবার ছেড়ে দেয়নি, মূল আসামি বিদেশ পালিয়ে যেতে পারেনি। আর বাকি আসামিরা আমার অসহায় চাচাকে একটুও হুমকি ধামকি দিচ্ছেনা।

আপনি যেকোনো সরকারি অফিসে যাবেন, দেখবেন সবাই কি সুন্দর মন দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। বাড়ির প্ল্যান পাস করাবেন, এক মিনিটের ব্যাপার।

জমির খাজনা ক্লিয়ার করবেন, কোন ব্যাপারই না। আপনাকে অফিসে ঢোকা মাত্র চেয়ারে বসিয়ে চা-সন্দেশ দিয়ে আপ্যায়ন করবে। আপনি দ্বিতীয় সন্দেশে কামড় দেয়ার আগেই দেখবেন আপনার কাজ শেষ।

মন্ত্রণালয়, সচিবালয় গুলোতে তো কাজ হয় সবচেয়ে নিষ্ঠার সাথে। আমার একটা বৈধ জি.ও বের করাতে মোটেও দুই বছর সচিবালয়ের গেটে গেটে ঘুরতে হয়নি, শেষ পর্যন্ত দশ হাজার টাকা ঘুষও দেয়া লাগেনি।

তো যা বলছিলাম...

বাংলাদেশে কর্তব্যে অবহেলা হয় হাসপাতাল গুলোতে। আইন তো করতেই হবে। বিদেশে আইন আছে যে এমন!
তবে মহামান্যগণ ভুলে গেছেন যে বিদেশে একজন ডাক্তারকে কর্তব্যে অবহেলা করলে আইনের কাঠগড়ায় যেমন দাড় করান হয়, তেমনি তার কাজের পরিবেশ নির্বিঘ্ন করার ব্যবস্থাও করা হয়, নির্ভুল রোগ নির্ণয়ের সকল আয়োজন থাকে তার হাতের কাছেই।

আমি এখন যেখানে কাজ করি সেখানে পালমোনারি এমবোলিজম ডায়াগনোসিস করতে আমার CTPA করার জন্যে আধঘণ্টার বেশি লাগেনা, আর বাংলাদেশের এক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বুকের ব্যাথা নিয়ে এক রোগীকে যখন তার পরিবারের প্রায় দশ-বারো জন সদস্য নিয়ে হাজির হয় তখন ন্যূনতম ইসিজি করার উপায় আমার ছিলোনা, কারন সেই হাসপাতালে ইসিজি মেশিন নেই!!

নিতান্ত কপালের জোরে সেদিন আমি মার খাওয়ার হাত থেকে বেঁচে গেছি।
যারা আইন বানাচ্ছেন তাদের এসব দিকে খেয়াল করার সময় নেই,
সরকারি হাসপাতালে ডাক্তারের বেতন দিবেন বিশ হাজার টাকা, পাঁচশ বেডের হাসপাতালে রোগী দেখতে বাধ্য করবেন দুই হাজার... এসব দেখবেন না, অবস্থার উন্নতির কোন চেষ্টা করবেন না কিন্তু আইন বানাতে হবে বিদেশিদের মত করে! আহেম! বিদেশের এক ডাক্তারের বেতন দিয়ে যে আপনারা এখানে পঞ্চাশজনের বেতন দেন সেটা কে দেখবে?
সেই মহার্ঘ্য প্রশ্নটি আবার করতে চাই... কর্তব্যে অবহেলা আর ভুল চিকিৎসা হয়েছে এটা নির্ধারণ করবে কে? মূর্খ সনদহীন সাংবাদিক, ঔষধের দোকানদার, সর্বরোগের চিকিৎসক কোয়াকেরা নাকি মহামান্য আইনজ্ঞ আপনারা?

হার্ট অ্যাটাকের রোগীকে বুকের ব্যাথা কমানোর ঔষধ দেয়ার কিছুক্ষণ বাদে যদি রোগী মারা যায় তবে সেটা কি ভুল চিকিৎসা হবে?

যারা বিদেশের অনুকরণে আইন বানাচ্ছেন তাদের কি জানা আছে যে বিদেশে একজন চিকিৎসকের প্রফেশনাল নেগ্লিজ্যান্সি অথবা ম্যালট্রিটমেন্টের অভিযোগগুলো তদন্ত করেন একমাত্র চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞ ব্যাক্তিরা?

বাংলাদেশের শতকরা ৯৫ ভাগ হাসপাতালে আনুষঙ্গিক সকল সুযোগ সুবিধা নেই যা দিয়ে একজন রোগীর যথার্থ চিকিৎসা দেয়া যাবে, আর উপজেলা লেভেলের ১০০% হাসপাতালে যথাযথ সুযোগ সুবিধা নেই। তো এখন যদি ঐসব হাসপাতালের চিকিৎসকেরা রোগী আসা মাত্রই অন্য হাসপাতালে রেফার করে তবে বলুন চিকিৎসা ব্যবস্থা হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়বে কিনা? আপনাদের কি ধারনা ডাক্তার-নার্স রোগীর বিছানার পাশে দাড়িয়ে কেবল দোয়া দরূদ পড়বে?
কেউ যদি কর্তব্যে অবহেলা করে তবে তার প্রতিকার করবেন এই ব্যাপারে আমি অবশ্যি সহমত, আর মূল হাজারো সমস্যার সমাধান না করে লোক দেখানো আইন করে কর্তব্যের নামে আপনারা যে বড় বড় অপকর্মগুলো করেন এসবের কে শাস্তি দিবে হে মহামান্য আইন প্রণেতাগণ?

ওহ! স্যরি! ভুলেই গিয়েছিলাম। যেখানে সেলিম ওসমানের মত অশ্লীল ভণ্ড চামারেরা বানায় আইন সেই দেশে এসব প্রশ্ন করাটাও তো অপরাধ।

সুত্র

No comments:

Post a Comment