Saturday, June 11, 2016

সবকিছুতেই ব্যতিক্রম আছে । সেটা কখনোই উদাহরন নয়।

সিলেট থেকে ঢাকা আসার পর প্রায় এক বছর প্রতি শুক্রবার একটি উপজেলাতে চেম্বার করার জন্য যেতাম। ফজরের নামাজ পরে রওনা হতাম। রাত এগারো / বারোটায় ফিরে আসতাম । সেখানে দুইটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বসার ব্যবস্থা ছিল ।

শেষ পর্যন্ত যাওয়া বন্ধ করতে বাধ্য হলাম। কারন আমার ব্যাপারে তারা মাইকিং করতো না । এই এক বছর সময়ে কোন রকম প্রচারণাই করে নি। কারন তারা জানতো এই ডাক্তার দরকার না হলে রোগীকে টেস্ট করতে দেয় না। ওই উপজেলার ফার্মেসিওয়ালারা আমার ব্যাপারটা আগে থেকেই জানতো । তাই তারা ভুলেও আমার কাছে রোগী পাঠাতো না। দালালেরা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করতো । ক্লিনিক ২ টির মধ্যে একটির মান মোটামুটি ভালো ছিল। অপরটিতে প্রায়ই এক কক্ষে আমাকে বসিয়ে রেখে অন্য কক্ষে এক লোককে ডাক্তার সাজিয়ে রোগী দেখানো হত। ওই লোক নাকি আগে কোন হাসপাতালের অপারেশন থিয়াটারে কাজ করতো! এখন এই ক্লিনিকে ডাক্তার হিসেবে রোগী দেখে! টেস্ট করায়! যেই টেস্ট এর সে কিছুই জানে না । আমার করার কিছুই ছিল না। কারন আমার হাতে আইনি কোন ক্ষমতা ছিল না।

এক সময় নিজে থেকে উদ্যোগ নিয়ে প্রচারণার চেস্টা করেছিলাম। অনেক চেস্টা করেছিলাম স্বাধীনতা আর সততার সাথে ডাক্তারি করে দুই-চার আনা আয় করে মা , ভাই-বোনদের দীর্ঘদিনের আর্থিক দৈন্য কিছুটা হলেও দূর করার । কিন্তু সেটা স্বপ্নই থেকে গেল। এখন সরকারি বেতনে টেনে-টুনে রিযিক চলে।
উপজেলাতে ডাক্তার এবং রোগী উভয়েই ক্লিনিক মালিক আর ফার্মেসিওয়ালার কাছে জিম্মি। এ ধরনের পরিস্থিতির কারনে অনেক তরুণ ডাক্তার সরবোচ্চ চেস্টা করেও যখন আর পারে না , তখন তারা এই 'জিম্মি ব্যবস্থা,র কাছে নিজেকে সমর্পণ করতে বাধ্য হয়।

আর অনেকেই সততা রক্ষার্থে হতাশ হয়ে ফিরে আসে। সততা রক্ষা করতে গিয়ে অধিকাংশ খেত্রেই এ ধরনের ডাক্তারদের আর্থসামাজিক অবস্থা হয় খুবই করুণ । মা , ভাই - বোনের মন রাখা সম্ভব হয় না। শতকরা কত জন এভাবে ফিরে আসে আর কত জন নিরুপায় হয়ে ওই 'জিম্মি ব্যবস্থা'র কাছে নিজেকে সমর্পণ করে তার পরিসংখ্যান নেই আমার কাছে।

আর ডাক্তারদের কেউ কেউ এক উপজেলাতে অন্ততপক্ষে একটানা ৪, ৫ বা ৬ বছর থাকতে পারলে পরবর্তীতে তাদের পক্ষে সততা ও স্বাধীনতা রক্ষা করে ডাক্তারি করা তুলনামূলকভাবে কিছুটা সহজ হয়, কিন্তু তবু সবার পক্ষে ১০০% সম্ভব হয় না । এই হচ্ছে নির্মম বাস্তবতা

কেউ যদি এই 'জিম্মি ব্যবস্থা'কে ভেঙে দিতো তাহলে ডাক্তারদের অধিকাংশরাই শুরু থেকেই সততা এবং স্বাধীনতার সাথে মনের সুখে নিজেদের পেশাদারী করতে পারতেন।

এই 'জিম্মি ব্যবস্থা'কে ভাঙার জন্য কেউ এগিয়ে আসবেন কি? না কি অন্ধভাবে শুধু ডাক্তারদেরকে দোষারোপ করেই নিজের কর্তব্য শেষ করবেন?

সবকিছুতেই ব্যতিক্রম আছে । সেটা কখনোই উদাহরন নয়।

ডাঃ মোঃ মাকসুদ উল্যাহ

No comments:

Post a Comment