Saturday, September 17, 2016

ঢাল নেই, তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার--- ডাক্তার


সাংবাদিক গোলাম মোর্তোজার সাম্প্রতিক একটি ফিচারে উনি বলেছেন সরকারী হাসপাতালের ঢাল তলোয়ারবিহীন নিধিরাম সর্দার হোল ডাক্তার। জীবনে এই প্রথম বোধ হয় একজন ননমেডিকেল ব্যক্তির মুখে এ চরম সত্যি কথাটা শুনলাম। 

মনে পড়ে তখনকার কথা। যখন সরকারী হাসপাতালের সি এ ছিলাম। এপ্রোনের বাইরে, উপর নীচে চারটা এবং ভিতরে দু' টো, মোট ছয়টা পকেটে ইমারজেন্সী ঔষধ নিয়ে ঘুরতাম। কারন হাসপাতাল ঔষধ দিতে অপারগ ছিল। তাই ব্যক্তিগত ফান্ড কালেকশন থেকে নিজ সংগ্রহে রাখতাম। সবার যাকাতের টাকা সংগ্রহ ছিল একটি বিশেষ যোগ্যতা।

১। একরাতে তিনটি প্লাসেন্টা প্রেভিয়া একই সাথে এল প্রচুর রক্তক্ষরন নিয়ে। তিনজনাই ছিল অসহায়। কান্না পেয়ে গেল। রোগীর জন্য নয়। নিজের জন্য। নিজের অসহায়ত্ত্বের জন্য। ক্যামনে কি করব তাই ভেবে। রক্তের ব্যাগ ছিল তখন তিনশত টাকা। একজনার স্বামী মুখের উপর বলে গেল " তিনশত টাকা দিয়েতো আর একটা বিয়েই করতে পারব। সরকারী হাসপাতালে আসছি যেমনে পারেন আপনারা কাজ করবেন।" ডাক্তার থাকে তোপের মুখে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যখন নাকে তেল দিয়ে ঘুমায়।
সংগৃহীত যাকাতের টাকাই ছিল অবলম্বন। তিনজনকেই রক্ষা করা গেল। কোথায় ছিল সরকার আর তার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আজও সেকথা মনে রেখে ঢাকা মেডিকেল ও মিটফোর্ড মেডিকেলে রক্ত কেনার জন্য যাকাতের অংশ দিয়ে থাকি।

২। ইমারজেন্সি গেটের বাইরে ফেলে যাওয়া বেওয়ারিশ সেপটিক এবরশনের মুমূর্ষু মহিলাকে ভর্তি করল আমাদের ইউনিটে। ইনজেকশন রসিফিন দরকার। হাসপাতাল অপারগ। আবারও ব্যক্তিগত ফান্ড।

৩। বেসরকারী প্রতিষ্ঠান। পোস্টঅপারেটিভ খারাপ প্রফাইলের পেসেন্ট, হঠাৎ রেসপিরেটরী ডিস্ট্রেস। সরকারী মেডিকেলে ট্রান্সফার করা আবশ্যক। কিন্তু পথে মারা যাবার সম্ভাবনা অথবা হাসপাতালে আই সি ইউ পাওয়া না গেলে শতভাগ মৃত্যুর সম্ভাবনা এড়াতে প্রাইভেটের আই সি ইউ তে ট্রান্সফার। বিনে খরচে পেসেন্টের ভাল হয়ে বাড়ী যাওয়া। আবারও নিজস্ব ফান্ড।

গল্পগুলো বলার উদ্দেশ্য কি? উদ্দেশ্য হোল এইসব গরীব পেসেন্টের চিকিৎসা সামগ্রী যোগাড় করার দায়িত্ত্ব কার?
 নিশ্চয়ই চিকিৎসকের নয়। এ দায়িত্ত্ব সরকারের।
 কিন্তু এই জোড়া তালির অভিজ্ঞতা নেই এমন কোন সি এ রেজিস্ট্রার পাওয়া যাবেনা। এই ঢাল তলোয়ারবিহীন ডাক্তাররা কিভাবে হাসপাতাল চালায় তা বোঝার জন্য মোর্তোজার মত বিচক্ষন ও নিরপেক্ষ হতে হবে।

পক্ষান্তরে বিদেশী চিকিৎসা।সব খরচ সরকার বহন করে। চিকিৎসক শুধু মগজ খাটায় আর হুকুম করে। মগজ খাটিয়ে এই হুকুমটি দেবার জন্য জীবনে যত কাঠ খড় তাকে পোড়াতে হয়েছে তা অন্য কোন প্রফেশনে হয়নি। তাই এই হুকুমটিই মহামূল্যবান। নার্সরা সব পুং্খানু পুং্খভাবে তা পালন করে। নার্স হাত বাড়ায় আর সব জিনিস চলে আসে। এবং তাদের ম্যানেজমেন্ট নিম্নরূপ।

অস্ট্রেলিয়ান ইমারজেন্সি : খুব কাছের লোক। একসিডেন্টে মাথা ফেটে গেছে। কিছু রক্তক্ষরনও হচ্ছে। ঘন্টার পর ঘন্টা বসিয়ে রেখেছে এই বলে " তুমিতো মারা যাচ্ছ না। তোমার চেয়ে খারাপ পেসেন্ট আছে। ওকে আগে ম্যানেজ করে নেই"।

কানাডার ইমারজেন্সি : খুবই কাছের লোক।পি পি এইচ এর পেসেন্ট। হাসপাতালে ব্লাড দিতে হয়েছে। বাড়ী আসার পরে আবার ব্লিডিং হওয়াতে ইমারজেন্সি এপয়ন্টমেন্ট নিল সন্ধ্যে সাতটায়। নিউবর্ন বেবীসহ সেই পেসেন্টকে দেখল ভোর চারটায়।

এমন প্রেক্ষাপটে আমাদের দেশে ভাংচুর এবং চিকিৎসক পিটানো অনিবার্য।

যদিও এই সস্তা এবং সহজলভ্য ডাক্তারদের দেশে এভাবে ইমারজেন্সি পেসেন্ট বসিয়ে রাখা হয় বলে আমার জানা নেই।
এই চিকিৎসক পিটানো এবং অকারনে চিকিৎসকদের হাজতে ঢুকানোর যে ট্রেন্ড চলছে এর পরিসমাপ্তি কোথায়? যে ছেলে মেয়ের গায়ে জীবনে কোন শিক্ষকও হাত তুলতে পারেনি ভাল ছাত্র, ছাত্রী বলে তাদের আজ মাস্তানের মার খেতে হচ্ছে পেশাগত কাজ করার সময়ে-- এ লজ্জা অপমান কি করে সহ্য করছে চিকিৎসক সমাজ? চিকিৎসকদের একতাব্দ্ব হয়ে কিছু করার সময় এসে গেছে। ডাক্তারদের অন্যায় ভুল ত্রুটির বিচার ডাক্তাররাই করবে। তাদের রক্ষা করার দায়িত্ব ও নিজেদেরই নিতে হবে।

কিন্তু গলদটা কোথায়?

>>কালেক্টেড পোস্ট<<

No comments:

Post a Comment