Tuesday, December 13, 2016

হাল ছেড় না বন্ধু যেতে হবে অনেক দূর

এইলেখাটি একান্তই নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে লেখা,লেখাটি টাইপ করতে সাহায্য করেছে এক ছোটবোন কাম ফ্রেন্ড।
বিশেষ করে যে সকল জুনিয়র সিনিয়র বা ব্যাচমেটরা ডাক্তারী জীবনে কঠিন সংগ্রামের পথে হাটছে তাদের প্রতি উৎসর্গ লেখাটি।সময় থাকলে যে কেউ পড়ে দেখতে পারেন,অনুপ্রেরণা পেলেও পেতে পারেন।

একজন নবীন ডাক্তারের সংগ্রামের গল্প

এম,বি,বি,এস এর শেষবর্ষে থাকাকালীন সময়ে দেখতাম অনেকে সিনিয়রা পাশ করার পর বড় ডিগ্রী নিয়ে (এফ,সি,পি,এস / এমডি/এম,এস) মেডিকেলে রেজিস্ট্রার বা অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার হিসাবে জয়েন করছেন । তখন তাদের দেখে আলাদা ইন্সপিরেশন পেতাম এবং স্বপ্ন দেখাতাম বড় বড় ডিগ্রী নেয়ার। যথারীতি সবার মত আমারও স্বপ্ন ছিল যে পাশ করে বের হয়ে ঢাকায় যাব, পিজির লাইব্রেরিতে পড়ব এবং এফ,সি,পি,এস বা এমডি করব। পাশ করে বাসায় চলে আসার পর যখন আব্বুকে বললাম যে আমি আগামী ৬ মাস ঢাকায় দিলিপ স্যার এর কোচিং করতে চাই এবং এই কয়টা মাস আমার খরচ চালিয়ে দাও তাহলে আমি ভাল ভাবে পড়ে তারাতারি চান্স পেতে পারব। স্বপ্ন পূরণের পথে প্রথম বাঁধা পরল এখানে। আব্বু বললেন এম,বি,বি,এস পর্যন্ত তোমাকে চালিয়েছি, এখন আর চালানর সামর্থ নেই। তুমি পাশ করেছ এবং নিজে উপার্জন করার ক্ষমতা হয়েছে তাই নিজে এখন নিজেরে চালাও। এই অবস্থায় ইন্টারনী থেকে জমানো বিশ হাজার টাকা নিয়ে ঢাকায় চলে আসলাম। ঢাকায় এসে ডাক্তারদের বস্তি আজিজ সুপার মার্কেটে একটা রুমে একটা সিট নিলাম এবং কোচিং এ ভর্তি হলাম। এখন নিজের খরচ চালানর জন্য খ্যাপ যোগার করার জন্য ৩০ থেকে ৪০ টা সিভি দিলাম ঢাকায় এবং ঢাকার আসেপাশে বিভিন্ন হাসপাতালে, ক্লিনিকে এবং মেডিকেল কলেজে। অনেক দিন হয়ে যায় সিভি থেকে কোন ডাক আসেনা, আবার বড় কোন ভাইয়ের কাছ থেকেও ঢাকার আশেপাশে কোন খ্যাপ যোগার করতে পারছিনা যেখানে ৩/৪ দিন ২৪ ঘণ্টা ডিউটি করব। এদিকে আবার জমানো টাকাও শেষের পথে। তার ওপর কোচিং, পড়ালেখা, পেট চালানোর চিন্তা সব মিলিয়ে দুর্বিশহ অবস্থা এবং চারিদিকে তখন অন্ধকার দেখতাম শুধুই। তখন শুধু কোচিংইয়ে যেতাম এবং কোচিং থেকে বের হয়েই বড় ভাইদের কাছে ছুটতাম খ্যাপের আশায় যেন সাপ্তাহিক খরচটা যোগাড় হয়। এভাবে ছুটতে ছুটতে মাঝে মাঝে পেয়ে যেতাম বড় ভাই, সিনিয়রদের কাছ থেকে খ্যাপ। খ্যাপে যেতাম নোয়াখালী, নরসিংদী, মাওনা, গাজীপুর সহ আরো অনেক জায়গায়। এতে করে পড়ালেখা থেকে অফ- ট্র্যাক হয়ে গেলাম। কোচিং করতাম ঠিকই কিন্তু রুমে এসে আর পড়ালেখা করার এনার্জি থাকতো না। খ্যাপে যাওয়া বাদও দিতে পারতাম না কারন এখন বাদ দিলে পরে আর ডাকবেনা। এভাবে চলতে চলতে আমার প্রথমবার এফ,সি,পি,এস পরীক্ষার সময় চলে আসলো। সাতহাজার টাকা দিয়ে ফর্ম পূরণ করলাম। পরীক্ষার হলে বসে বুঝতে পারলাম আমার পরীক্ষার প্রস্তুতি কোনভাবেই যথাযথ না,এমন কি কোথা থেকে প্রশ্ন হল তা ই বুঝলাম না। কোচিংয়ে শুধু ক্লাসই করে গেছি কিন্তু বাসায় পড়তে পারিনি এবং কোচিং এর পরীক্ষাতেও ভাল করতে পারিনি। তখন প্রথম বুঝতে পারলাম এই বড় বড় ডিগ্রী পাওয়া আসলে এত সোজা না, অনেক পড়তে হবে এবং এম,বি,বি,এস পাশ করার পরের লাইফটা খুবই সংগ্রামময় ।

বিভিন্ন জায়গায় সিভি দেয়ার ৬ মাস পর আমি প্রথম ডাক পাই বনানীর প্রেসক্রিপশন পয়েন্টে এবং চাকরিটা হয়ে যায়। এর মাঝে আরও ডাক পাই মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে এনাটমি এর লেকচারার হিসাবে। কিন্তু সপ্তাহে ৬ দিন শাহবাগ থেকে উত্তরা যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না, তারপর বেতন ছিল মাত্র ১৭৭০০ টাকা। এর মধ্যে আরও কিছু প্রাইভেট মেডিকেলে সিভি দিলাম কিন্তু কোথাও থেকে ডাকেনা। উপায় না পেয়ে খ্যাপ মারতে থাকলাম এবং এভাবে মোটামুটি অর্ধেক বাংলাদেশ ঘোরা হয়ে গেছে। এর ফাকে ফাকে পিজির লাইব্রেরীতে পড়া শুরু করলাম। এই অবস্থায় আমি আমার বড় ভাবির কাছে গেলাম যিনি নিজেও ডাক্তার। উনাকে বললাম ভাবি আমাকে কিছু দিন চালিয়ে দেন যেন আমি একটানা পড়ালেখা করতে পারি এবং উনি রাজি হয়ে গেলেন। এতদিন যেহেতু খ্যাপের গণ্ডি বড় হয়ে গেছে এবং দেখা যায় একটানা ১০ দিন ডিউটি করলে প্রায় ২০০০০ হাজার টাকার মত পাওয়া যায় তাই এটার একটা নেশা চলে এসেছিল। যারফলে দেখা যেত পড়ালেখা করতাম অল্প অল্প এবং খ্যাপমারা ও চাকরিও করতে থাকলাম। এভাবে আমি দ্বিতীয়বার পরীক্ষায় বসলাম। পরীক্ষা মোটামুটি ভালই হল কিন্তু রেজাল্ট যখন দিল তখন দেখালাম যে আমার ফিজিওলজি পার্টটা একটু খারাপ হয়েছিল এবং ফেল আসল। কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা হিসাবে দেখলাম যে আমার অনেক বন্ধুরই চান্স হয়ে গেছে এবং পুরো দুনিয়া তখন বিতৃষ্ণা লাগত। জীবনটা আরও দুর্বিষহ করে দিত আমার গার্লফ্রেন্ড। সে সরাসরি তার হতাশা প্রকাশ করত। বলত যে সবার ডিগ্রী হয়ে যাচ্ছে, তার ফ্রেন্ডদের বয়ফ্রেন্ডদের হয়ে যাচ্ছে ডিগ্রী শুধু আমার কেন হচ্ছে না। জীবনটা তখন অন্ধকার লাগত, কোনদিকেই কোন আশা দেখতাম না। একদিকে চাকরি সংর্ঘষ, বাসা থেকে কথা শোনায় চান্স না পাওয়াতে আবার অন্য দিকে গার্লফ্রেন্ড দাম দেয়না ডিগ্রী না হওয়াতে।

এরপরের বার ঠিক করলাম যে এবার শুধু পড়ালেখাই করব এবং আর কিছুই করবনা। শাহবাগে যেহেতু থাকতাম সেহেতু পিজির লাইব্রেরীতে যাওয়া শুরু করলাম। পিজির লাইব্রেরী সকাল খুলত ৮ টায়, সকাল ৭:৩০ টায় ঝাড়ু দেয়ার জন্য খুলত। আমি দেখা যেত ঐ ধুলার মধ্যেই চোখ মুছতে মুছতে ঢুকে যেতাম যেন ভাল একটা জায়গায় সিট পাই। কথায় আছে অভাগা যেদিকে যায় সাগর শুকিয়ে যায়, সেরকমই লাইব্রেরী কার্ডের দাম ৮০০ টাকা থেকে এক লাফে ২৫০০ টাকা করে দিল। ৬ মাসের জন্য শুধু পড়ব লাইব্রেরীতে তার জন্য এত টাকা দেয়াও কষ্টকর লাগল। সারাদিন লাইব্রেরীতে পড়তাম শুধু দুপুরে খাওয়ার সময় বিরতি নিতাম। খ্যাপ যেহেতু কমিয়ে দিয়েছিলাম তাই টাকাও ছিল কম তাই খেতাম পিজির লাইব্রেরীর ওপরে ক্যান্টিনে যেখানে খুব কম টাকায় খাওয়া যেত। ৩০ টাকার মত মিল চার্জ ছিল তখন। পিজির লাইব্রেরীতে পড়া শতকরা ৭০ ভাগ ডাক্তারই ওখানে খেত ওখানকার বিস্বাদ খাবার শুধু মাত্র টাকা বাঁচানোর জন্য। এইরকম একদিন সন্ধ্যায় নাস্তা করে আসার পর দেখলাম কিছু দূরে বসে পড়ছে আমার এক জুনিয়র। তাকে দেখে বললাম কিরে তোর ক্ষুধা লাগে না ? নাস্তা টাস্তা করবি না ? এই প্রশ্নের এমন এক উত্তর পেলাম যা শুনে আমার অনেক খারাপ লাগল। সে বলল, “ভাই,নাস্তার টাকা পাব কই ? আমি তো খ্যাপ দেইনা এবং বাসা থেকেও টাকা দেয়না তাই আমার অনেক হিসাব করে চলতে হয়”। তখন বুঝলাম যে একজন সদ্য পাশ করা নবীন ডাক্তারকে কতটা সংগ্রাম করতে হয় পাশ করার পর। এভাবে ২ মাস পড়ালেখা চলল। সকাল ৭ টায় ঢুকতাম, দুপুরে রেস্ট নেয়ার জন্য একটু বের হতাম আবার রাত ১০ টায় বের হতাম লাইব্রেরী থেকে। এরপর আবার পরীক্ষায় বসলাম। পরীক্ষা শুরু হল এনাটমি দিয়ে, এনাটমি প্রিপারেশন যেহেতু ভাল ছিল তাই পরীক্ষাও অনেক ভাল হল, ভাবলাম এবার ৮০ এর ওপর নাম্বার থাকবে। কিন্তু ফিজিওলজি পরীক্ষা এর দিন প্রশ্ন এত কঠিন হল যে মনে হচ্ছিল হল থেকে সসম্মানে বের হতে পারলে বাঁচি। আর প্যাথলজি ভালই হল। সব মিলিয়ে মনে হল পাশ এবার হবে। এরপর বিকালে যখন আমার নামের পাশে ফেল লিখা দেখলাম তখন এতটাই খারাপ লাগল যে, মনে হল আল্লাহ বলে কেউ নাই, থাকলে আমার কষ্টের প্রতিদান দিল না কেন। তখন আল্লাহর ওপর থেকে বিশ্বাসই উঠে গিয়েছিল, মনে হত এই যে এত অমানবিক কস্ট করলাম আল্লাহ কেন ফল দিলনা। তখন মনে হত বেঁচে থেকে লাভ নেই। না হচ্ছে একটা ডিগ্রী , না হচ্ছে ভাল চাকরি, বন্ধুরা মোটামোটি সবাই চান্স পাচ্ছে, পরিবারে অনেক কথা শুনতে হয় বাবার কাছ থেকে তার ওপর গার্লফ্রেন্ডের সাথে সম্পর্ক তখন চরম খারাপ। সব মিলিয়ে একেবারে করুণ অবস্থা । এর ভেতর একটাই মাত্র আশার বানী ছিল এই যে বি,সি,এস এর লিখিত পরীক্ষা দিয়ে বসে ছিলাম তখন। এই অবস্থায় মনে তখন একটাই প্রবল ইচ্ছা ছিল যে যেভাবেই হোক ডিগ্রী আমাকে একটা নিতেই হবে এবং এরই মাঝে আমার বিসিএস হয়ে গেল এবং আমি গ্রামে চলে আসলাম। এরপরের বারের পরীক্ষাটা আর দিলাম না। ভাবলাম যে আপাতত আগে পড়ালেখাটা করে নেই এবং একটু সামর্থবান হয়ে নেই তারপর আবার দিব।

জানুয়ারি ২০১৬ এর এফসিপিএস পরীক্ষাটা দেয়ার কোন ইচ্ছাই ছিলনা তাও কি ভেবে যেন ফর্ম পূরণ করেছিলাম খুবই গোপনে। পড়ালেখা তেমন করিনি, টুকটাক দিলিপ স্যার এর বই ঘেটেছি শুধু। পরীক্ষার আগের দিন রাতেও বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারলাম। বাসায় বললাম যে আমার ট্রেইনিং আছে ৩ দিনের ঢাকায় এবং চলে আসলাম ঢাকায়। কোন আত্মীয়ের বাসায় না উঠে উঠলাম আমার সিনিয়র এক বড় ভাই এর সাথে মহাখালীর এক হোটেলে। ওখানে টানা ৩ দিন পড়ালেখা করে পরীক্ষা দিলাম। পরীক্ষাটা এভারেজ হল এবং একটু আফসোস লাগল যে এবার যে প্রশ্ন হয়েছে তাতে আরও একটু ভাল করে পড়লে হয়ত চান্স হয়ে যেত। পরীক্ষা দিয়ে চলে গিয়েছিলাম আমার বড় আপার বাসায়। বড় আপার বাসা থেকে মহাখালী হোটেলে আসার পথে , ঐদিন বিকালে আমার এক বান্ধবী ফোন করে বলল যে, “দেখতো তোমার পাশ হয়েছে কিনা ? আমার হয়নি” আমি বললাম যে আমার কোনদিনও হয়না এবারও হবে না। এরপর আমার এক রুমমেট ফোন করে বলল যে তার চান্স হয়ে গেসে, তারও অনেক দিন চান্স হচ্ছিলনা। তখন খানিকটা ঈর্ষাবোধ হল যে ঐ বেচারারও হয়ে গেল শুধু আমারই হল না, আমার কি কোনদিনও হবে না ? জানতাম যে পাশ হবে না তাই কোনমতেই রেজাল্ট দেখতে রাজি ছিলাম না, কিন্তু তারপরেও মনকে অনেক বুঝালাম যে বেশি কি আর হবে ফেলই তো হবে, জীবনতো আর থেমে থাকবেনা বা শেষ হয়ে যাবেনা। এভাবে অনেকক্ষণ মনকে বোঝানোর পর মোবাইল এর নেট টা অন করলাম এবং আমার রোলটা ইনপুট করলাম। এরপর রোলের পাশে যখন লিখা দেখলাম পাশ তখন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না এবং নিজের অজান্তেই মনে হল যে চোখে ২ ফোটা পানি চলে আসল। বিশ্বাস হলনা তারপরও। সাথে সাথে স্ক্রীনশট নিলাম এবং কমপক্ষে ১৫ বারের মত সাইটে গিয়ে চেক করলাম আসলেও আমি ঠিক দেখছি কিনা। তারপর আমার এক বান্ধবিকে রোলটা দিয়ে বললাম, ‘দেখতো আমি কিছু বুঝতে পারছি না’। সাথে সাথেই সে দেখে বলল যে আমার চান্স হয়েছে এবং খোঁচা দিয়ে বলল যে, “ তোমার তো চান্স হয়ে গেছে ,আমার তো এরপরের বার একাই পরীক্ষা দেয়া লাগবে’। এরপর আমার খানিকটা বিশ্বাস হল যে আমি চান্স পেয়েছি। তখন আমি ভাবলাম এই যে আমি, কিছুদিন আগেও চান্স পাইনি আর এখন চান্স পেলাম। কি পরিবর্তন হল আমার ? হাত একটা বেশি হয়নি , চোখ একটা বেশি হয়নি কিন্তু মানুষ হিসাবে দাম বেড়ে গেছে। এতদিন ডিগ্রী হয়নি দেখে কেউ আমাকে দাম দেয়নি না পরিবারের কেউ, না বন্ধুবান্ধব, এমনকি নিজের গার্লফ্রেন্ডও অনেক দূরে সরে গেছে কারণ তার মনে হয় আমার ক্যারিয়ার ভাল না বিসিএস হওয়া সত্ত্বেও। এরকম অনেকরকমের স্মৃতি মাথায় ভেসে আসল এবং এই ঘোরের মাঝেই মহাখালীর হোটেলে চলে আসলাম। ঐ সিনিয়র ভাই যার সাথে হোটেলে উঠেছিলাম তারও হয়নি তাই অনেকক্ষণ দুঃখ টুঃখ করার পর আস্তে করে তাকে বললাম যে আমার চান্স হয়ে গেছে। যেহেতু আমরা একই হেলথ কমপ্লেক্সের তাই উনি জানত যে আমি বেশি পড়ালেখা করিনি তাই উনি মহাআশ্চর্য যে কিভাবে চান্স পেলাম এবং অনেক কংগ্র্যাচুলেট করলো। এরপর আমি আমার বাকি ২ জন রুমমেট মেডিকেলের যাদের চান্স হয়নি তাদের জানালাম তারাও প্রথমে আশ্চর্য হল এবং পরে অনেক খুশি হল। তখন তাকে বললাম যে এবারের রেজাল্ট আমার বিশ্বাস হচ্ছে না, কারণ যেবার আমি সব থেকে বেশি কষ্ট করে পড়েছিলাম সেবার হয়নি কিন্তু এবার প্রিপারেশন ভাল ছিলনা কিন্তু হয়ে গেল। এরপর আমার ঐ বন্ধু বিসিপিএস ভবনে টাঙ্গানো রেজাল্ট শীট এর ছবি তুলে যখন পাঠাল তখন আমার বিশ্বাস হল যে আমি আসলেও চান্স পেয়েছি। এরপর গার্লফ্রেন্ডকে জানালাম, সে হল দায়সারা খুশি, এরপর জানালাম বাবা মাকে। বাবা তো আলহামদুলিল্লাহ বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলার মত অবস্থা। এরপর আস্তে আস্তে অন্যান্যদেরও জানালাম। তখন নিজেকে অন্য রকম একটা মানুষ মনে হল। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলাম কারণ উনি আমার কষ্টটা দেখছেন।

পোস্ট গ্রাজুয়েশনে একটা কথা ঠিক যে প্রিপারেশন আপ-টু-দা মার্ক না হলে চান্স হবে না। আর প্রিপারেশন ভাল হলে চান্স যে কোনবার হবে তা আল্লাহ ছাড়া কেউ ভালতে পারেনা। লাক কখন কাকে ফেভার করবে বলা যায়না কিন্তু প্রেপারেশন থাকতে হবে ভালমতো। এই জন্য ২/৩ বার পরীক্ষায় ফেল করলেও হতাশ হওয়ার কিছু নাই। অনেক কঠিন সময় পার করে এসেছি এবং আমার থেকেও আরও কঠিন সময় মানুষ পার করে। এই ডিগ্রীর জন্য আমার পার্সোনাল লাইফ অনেক চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আমার যে জুনিয়র যার পিজির লাইব্রেরীতে খাওয়ার টাকা ছিলনা তার কার্ডিওলজিতে এফসিপিস , এমডি হয়ে গেছে ঢাকাতে।

আমার মতো প্রতিটা সদ্য পাস করা ডাক্তারকে অনেক কস্ট করতে হয় একটা চাকরি জোটাতে, খাবারের টাকা জোটাতে। এইরকম অনেক বাঁধা পার হয়ে আমি বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেলের সহকারী রেজিস্ট্রার হিসাবে নিয়োগ পেলাম, আস্তে আস্তে হয়তো আমি মেডিকেল এর টিচার হতে পারব অথবা বড় পোস্টে যেতে পারব। তাই এখন মনে হয় যে আল্লাহর কাছে যাই চাই তার প্রতিদান আল্লাহ কোন না কোন বার দিবে।

আমার মত প্রতিটা ডাক্তারেরই এইরকম স্ট্রাগল করতে হয়, কিন্তু কথা হল একটাই যে হাল ছাড়া যাবেনা, হতাশ হওয়া যাবেনা ঠিক মত প্রিপারেশন নিতে হবে এবং লাইনে থাকতে হবে। অনেক ব্যক্তিগত সমস্যা, পারিবারিক, মানসিক এবং পারিপার্শিক সমস্যা থাকার পরও হতাশ হওয়া যাবেনা । ঠিকমত চেস্টা করে গেলে সফল হওয়া সম্ভব। তাই তো বলি হাল ছেড় না বন্ধু যেতে হবে অনেক দূর।

>> কালেক্টেড পোস্ট <<

No comments:

Post a Comment